somewhere in... blog

দুবাই থেকে ফিরে...৩

২০ শে মে, ২০১১ বিকাল ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বুর্জ খালিফা

সারারাত কাজ করে পরদিন সকালে গেলাম দেইরা রোডে, কনফারেন্স ভেন্যু হোটেল হলি ডে ইন এ। জানতে পারলাম আমার প্রেজেন্টেশন এর সময় পরিবর্তন হয়েছে, শেষের দিন মানে ২৭ তারিখে। কনফারেন্সে আসা পেপারগুলোর টাইটেল দেখে চরম বিরক্ত, থীমের সাথেও মোটেও মিল নেই কোন পেপারের। Sustainable Design and Construction Engineering এর উপর কনফারেন্সে এবিষয়ক কোন পেপারই পেজেন্টেড হলো না প্রথম দিন; ক্যালকুলাস আর কী কী সব বিশাল সূত্র সম্বলিত পেপার দেখে বোরড হয়ে নানান মধ্যপ্রাচ্যীয় দেশ থেকে আসা সুন্দর মেয়েগুলোকে দেখছিলাম। আমার পাশেই ছিল জর্ডানের এক মেয়ে, অদ্ভুত সুন্দর আর স্মার্ট, পি এইচ ডি করছে জার্মানীতে। দুপুরে এক বোরিং প্রফেসরের সাথে বসে ব্যুফে খাওয়ার সময় ডিসিশান নিলাম, পরের দিন আর আসবই না, বাং মেরে চলে যাব আল আইনে, ওখানকার ওয়াইল্ড লাইফ পার্কে বাঘ, সিংহের সাথে সময় কাটাবো, সেই বেশী ভালো।

বিকেলে গেলাম দুবাই মলে, টিকেট কাটলাম ২৭ তারিখে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টাওয়ারে একবার দ্বিতীয় দ্রুততম (আমি ঠিক নিশ্চিত না এ ব্যাপারে) এলিভেটারে চড়ে ঘুরে আসার; দেইরা সিটি সেন্টার ঘুরলাম, স্টারবাক্স এর কফির চনমনে গন্ধে লোভাতুর হলাম। সন্ধ্যায় আমি, রফিক ভাই,কামাল ভাই আর তার একজন বন্ধু গেলাম শারজাহ তে, শাহারা সেন্টার দেখতে আর আরব আমিরাতের রাস্তার গোলক ধাঁধায় পড়ে চক্কর কাটলাম সমস্ত শারজাহ।


শাহারা সেন্টার, শারজাহ

পরদিন একটা গাড়ী ভাড়া করে রওনা দিলাম আল আইনের উদ্দেশ্যে- লক্ষ্য আরব আমিরাতের দ্বিতীয় সুউচ্চ পাহাড়ের উপর থেকে মরুভূমির সৌন্দর্য অবলোকন, আল আইন ওয়াইল্ড লাইফ পার্ক দেখা। ঢাকা চিড়িয়াখানার ফিজিবিলিটি রিপোর্ট তৈরীর কাজে জড়িত থাকার জন্যেই আমার উদ্দেশ্য ছিল দেখা বিভিন্ন প্রাণের আচার-আচরণ ও ওয়েলফেয়ারের কথা চিন্তা করে কীভাবে ওদের এনভায়রনমেন্ট এর ডিজাইন করা হয়। মুগ্ধ হলাম আরব জাতির আতিথেয়তায়, শেখা জায়েদ প্যালেসকে মিউজিয়ামে রূপান্তর করে সকল মানুষকে তা বিনামূল্যে দেখার সুযোগ করে দেওয়া এবং আরবী কফি ও খেজুর দিয়ে আপ্যায়ন করা সবই মুগ্ধ করল।ভালো লাগল দুবাই মিউজিয়াম।


শেখ যায়েদ এর জন্মবাড়ীতে


জেবেল হাফীতের উপর থেকে মরুভূমির দেশ


আল আইল ওয়াইল্ড লাইফ পার্কের প্রবেশ লবী


হালুউউউউম


দুবাই মিউজিয়ামে

রাতের দুবাই মনোমুগ্ধকর, ভীষণ সুন্দর রাতের সমুদ্র। মামজার বীচে বসে দূরে বুর্জ খালিফা আর তার লাইট এর শো দেখতে এত ভালো লাগছিল! সারা রাতই যদি বীচে বসে থাকতে পারতাম!এনজয় করছিলাম হাঁটতে হাঁটতে চা খাওয়া যা আমি সবচেয়ে মিস করি দুবাই এর।


মামজার বীচ পার্ক

পরদিন আমার প্রেজেন্টেশন, তাই রাত এগারটাতেই ফিরলাম হোটেলে, লাস্ট একটু টাচ দিতে হবে ফাইলটাতে। ২৭ তারিখের বেশ কিছু পেপার ছিল থীমবেজড, এনজয় করলাম। আমার পেপার প্রেজেন্টেড হওয়ার পর সেশান চেয়ারের প্রশংসা আর ভার্টিক্যাল ল্যান্ডস্কেপিং এর ব্যাপারে অনেকের আগ্রহ, কনফারেন্সের বোরডম কাটিয়ে দিল; সুন্দর সময় কাটল লাঞ্চের সময় দুই জাপানীজ আর নাইজেরিয়ান প্রেজেন্টার এর সাথে। জাপানীজ এর এরোনটিক্যাল এঞ্জিনিয়ারিং এর পি এইচ ডি-র স্পন্সর করছে আবার মাজদা- এই কনফারেন্সের সমস্ত খরচও তারাই বহন করছে জেনে আমি চরম হিংসিত হলাম, তার পরামর্শেই নিজের জন্যে কনফারেন্স এর একটা এক্সট্রা প্রসিডীংস চেয়ে নিলাম নিজের জন্যে।

হলি ডে ইন থেকে বেরিয়েই দৌড় লাগালাম, হাতে একদম সময় নেই, দুবাই এ থাকার দিন ফুরিয়ে এসেছে; যা যা বাকী আছে সব দেখে ফেলতে হবে! সাথে সাথেই চললাম মেট্রোতে ইবনে বতুতায়, সাথে রফিক ভাই এবং স্যুইট করে একটা আপু (নাম ভুলে গেছি, আমার এ রোগ কখনোই ছিল না)। ওখানকার হাউজিং দেখা উদ্দেশ্য এবং সাথে ইবনে বতুতা শপিং মলও। সন্ধ্যায় বুর্জ খালিফা-র ১৪০ তলার (এলিভেটারে উঠতে সময় লাগল ৫০ সেকেন্ডের মতো) টেরাস থেকে দেখলাম রাতের আলোকোজ্জ্বল শহর। দুবাই মলের ওয়াটার ডান্সিং আর একুরিয়ামের শোভা তো অপূর্ব!


বুর্জ খালিফা-র উপর থেকে দুবাই


গোল্ড কয়েন এর এ টি এম বুথ বুর্জ খালিফা-র ভিতরে


দুবাই মলে ওয়াটার ডান্সিং


দুবাই মলে একুইরিয়াম


ইবনে বতুতা শপিং মল

আজ রাত আমার ঘরে না ফেরার রাত, আজ রাত দুবাই শহরটাকে পুরোপুরি করে উপভোগ করার রাত। একেক রাতে একেক বীচে সময় কাটাব এই মিশনে আজ রাতে এলাম জুমেইরাহ বীচে। ছবি তোলার জন্যে লেন্স বদলাতে গিয়ে আমার ক্যাপটা পড়ে গেল পাথরের ফাঁক দিয়ে অনেক নীচে। রফিক ভাই কীভাবে ক্যাপটা তুলে আনল সেই লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা না দিই শুধু আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম ভাইয়ার ভালোবাসা দেখে, ক্যাপটা না পেলে দিন শেষে ছোট্ট বোনটার খানিক মন খারাপ হতো (অবশ্য দুবাই এ সবাই জানত আমি ভাইয়ার 'ছোট ভাই') সেই ভেবেই তিনি এতটা কষ্ট করলেন! সত্যিই আমার কপালটা বিশাল বড় নইলে এতখানি ভালোবাসা কার জন্যে বিদেশ বিঁভূয়ে জমা থাকে!


রাতে জুমেইরাহ বীচ থেকে জুমেইরাহ জামে মসজিদ

(দুবাই এর সাত দিনের কাহিনী নিয়ে তিনটা পোস্ট, এর কোন মানেই হয় না! কিন্তু তারপরেও আমি ছোট করতে পারি নি, মনে হচ্ছিল প্রত্যেকটা দিন প্রত্যেকটা মুহূর্তকে ধরে রাখি ডায়রীর পাতায়! অনেক দিন হয়ে যাওয়ায় অনেক নাম ভুলে গেছি, ভুলে গেছি অনেক ঘটনাও; আরো আগেই এর সমাপ্তি টানা দরকার ছিল! আজও হলো না! তবে নেক্সট পর্বেই এই একঘেঁয়ে লম্বা কাহিনীর পরিসমাপ্তি ঘটবে এই আশ্বাস দিচ্ছি!)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:১৭
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শেখ হাসিনার পালানো ও নতুন ষড়যন্ত্র: জনগণ কি এবার তার বিচার দেখবে?

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৮:০৯

শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। অথচ এখন আবার দেশে ফেরার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এক সময় নিজেকে দেশের একমাত্র অভিভাবক দাবি করা এই স্বৈরাচার এখন কলকাতার বাবুদের সঙ্গে বসে নতুন খেলার ছক... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার মিশন কিংস পার্টির

লিখেছেন sabbir2cool, ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৩



মুহাম্মদ ইউনূসের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল রাজনৈতিক দল গঠন করার। নব্বই দশক থেকে শুরু করে অদ্যাবধি সরাসরি পেরে উঠতে পারেননি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি সরাসরি না করলেও তার অধীনস্থরা এটা করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

=খন্ড কাব্য ১-৪=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:৫৮


১।মনের অসুখ, মন আকাশ বৃষ্টির ভারে নুয়ে পড়েছে
চোখে বৃষ্টি নামার আগেই তুমি, বলো ভালোবাসি
অথবা চোখে তাকিয়ে বলো এ কাজল চোখে মানায় না বৃষ্টি
বলো, তুমি হাসো মন খুলে
ব্যস! চাই না কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

“বিবেকহীনদের জন্য কিছু প্রশ্ন”

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০

ফেসবুকে দেখি কিছু মানুষ “আপা আপা” বলে চাটুকারিতার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। মনে হয় তাদের আত্মা পর্যন্ত বেরিয়ে যাবে, তবু তারা অন্ধভক্তি ছাড়বে না! প্রশ্ন হলো—আপনারা কি সত্যিই অন্ধ, নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সারজিস আলম : শূন্য থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া একজন স্বপ্নবাজ তরুণ

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৫০


জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের তরুণদের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাংলাদেশের অগণিত তরুণ তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের উদ্দেশ্যে রাস্তায় নামলে সৃষ্টি হয় নতুন উপাখ্যান। বিগত সরকারের আমলের ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির বলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×