
নতুন বছরের প্রথম দিনটাতে যতটা অশ্রুবর্ষণ করেছিলাম, দ্বিতীয় দিনটা যেন ঠিক ততটাই আনন্দ নিয়ে এল আমার কাছে- বুয়েট দুবাই এর কনফারেন্স এর গ্র্যান্টটা মঞ্জুর করেছে! নাহ, এই খবরে আমি আহ্লাদিত হলাম না তাই বলে- আমার কপাল বলে কথা! ভিসা-টিকেট সব ঠিকঠাকমত না হওয়া পর্যন্ত কোন ভরসা নেই, কিন্তু ঘুড়নচন্ডী মন আমার ভিতরে ভিতরে উন্মুখ হয়ে থাকল জানুয়ারী এর ২৩ তারিখের জন্যে- প্রথম একা কোথাও যাচ্ছি, একদম একা; কতদিন থেকে আমি অপেক্ষা করে আছি এরকম সম্পূর্ণ নিজের করে সব কিছু থেকে দূরে কয়েকটা দিন থাকার জন্যে!

শান্ত পাম দেইরা
ফেসবুকে আবিষ্কৃত হলো আমার খুব কাছের এক বন্ধু সেই সময়টাতে দুবাই অবস্থান করছে। ওর সাথে যোগাযোগ করলাম শেখদের দেশে কী রকম খরচাপাতি লাগে জানার জন্যে- চামে দিয়ে শা-- আমাকে ভয় দেখাল, দুবাই না কি পয়সা খরচের জায়গা! বুয়েটের পয়সা তো সব এয়ার ফেয়ার আর কনফারেন্স এর রেজিষ্ট্রেশন ফিতেই শেষ- ওখানে থাকা-খাওয়ার খরচ যোগানোর জন্যে প্রায় চান্দাবাজি শুরু করে দিয়েছিলাম আর কী! ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলাম- ট্যাকা দেও, দুবাই যামু!! সে যাক, জানলাম জুবায়ের দেশে ফিরবে ২৫ তারিখ, আমাকে সে ২৩ আর ২৪ সারাদিন সময় দেবে, জুবায়েরের থ্রুতেই পরিচয় রফিক ভাইয়ের সাথে যাকে অনুরোধ করলাম আমার কনফারেন্স ভেন্যুর আশেপাশে কোথাও দুবাই এর সবচেয়ে সস্তা হোটেলে বুকিং দেয়ার ব্যবস্থা করতে!২৫-২৭ আমার কনফারেন্স, ২৫ এ পেপার প্রেজেন্ট করে ২৮ পর্যন্ত সারা আরব আমিরাত একা একাই চষে বেড়াব এই প্ল্যান নিয়েই যাত্রা, তবে তা শুরু হলো দুম করেই ২১ তারিখে ৫০ ডলার গচ্চা দিয়ে জুবায়েরের বিশেষ অনুরোধে- এরকম জোশ দুবাই এ না কি ওর একটাও জোশ ছবি নেই- আমার ২৫ পর্যন্ত ঘোরাঘুরি আর খাওয়ার সমস্ত খরচ শা... বহন করবে এই শর্তে বিমানে চড়ে বসলাম!
২২ তারিখ সকালে দুবাই দেখা শুরু হয়েছিল আমার Palm Deira এর বীচের পাশ ধরে শান্ত সুন্দর সকালে একা একা হেঁটে- মনে হচ্ছিল একে মানুষ সমুদ্র বলছে কেন, নালার মতো একটা জিনিস, পরে জেনেছিলাম সমুদ্র ভরাট করে এখানেই গড়ে ওঠার কথা ছিল আরেকটা Palm Island এর, Recession এর কারণে যার কাজ এখন বন্ধ রয়েছে। জুবায়ের জোর করে আমাকে নিয়ে এসে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে থাকল- কিন্তু রফিক ভাইকে পেয়ে গেলাম সার্বক্ষণিক সংগী। অনন্য স্থাপতিক নকশার অনন্য সব সুউচ্চ ভবনের পাদভূমি দুবাই এর প্রথম যে দর্শনীয় জায়গায় গেলাম তা হলো হেরিটেজ ভিলেজ়- ভাবলাম ভালোই হলো পুরাতনকে দেখেই নতুনের দিকে যাত্রা শুরু হোক। আপ্যায়িত হলাম আরবের ট্রাডিশনাল কফি আর খেজুর দিয়ে। অবাক লাগে, সরকার এই ঐতিহাসিক বাড়ীগুলোর সংরক্ষণ আর মেইনটেন্যান্স করছে নিজ খরচে, ট্যুরিস্টদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে দুবাই এর ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সাথে কোন রকম ফি ছাড়া সাথে আছে আতিথেয়তা। খুব পুরনো নয় দুবাই এর ইতিহাস অথচ কী গভীর মমত্ববোধ আর আমাদের সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্য অবহেলিত, অসংরক্ষিত!

হেরিটেজ ভিলেজ ১,দুবাই

হেরিটেজ ভিলেজ ২,দুবাই

আরবী কফি আর খেজুর

দুবাই ক্রীক


Deiraর Creek এর চারপাশটা খুব সুন্দর, সকালে আবরা (নৌকা যেগুলো চালায় মূলত বাঙ্গালী মাঝিরা) দিয়ে Creek পার হয়েছিলাম, পার করে আসলাম দুবাই এর বিখ্যাত গোল্ডসোক, স্বর্ণের চেয়ে আমার দৃষ্টি ছিল তার ছাদের কনস্ট্রাকশন ডিটেইল এর দিকেই। বিকেলে জুবায়ের আমাদের সাথে জয়েন করলে গেলাম Palm Jumeirah এর আটলান্টিসে, এর আগেই আমার জন্যে একটা মেট্রো বা বাসের কার্ড করিয়ে এনেছিল যার বদৌলতে আমি সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন হয়ে গেলাম দুবাই শহরে। আমার মতো গরীব কেউ যদি দুবাই যান, বলব যে ভুলেও ট্যাক্সিতে চইড়েন না, এক্কেবারে কোপ- একটা কার্ড করিয়ে নিলে মেট্রো বা বাসে চলাফেরা করা অনেক রিজনেবল!

এবাকাডো, এপেল ও অরেঞ্জ জুস

মেট্রো থেকে ১

মেট্রো থেকে ২
আটলান্টিস থেকে মেট্রোতে করে রাতের পাম জুমেইরাহ দেখতে দেখতে আসলাম- বুঝতে পারলাম দিনের বেলার সৌন্দর্য দেখতে আবার আসতে হবে এ জায়গায়! সে রাতে আনকোরা HP Probook কিনে হোটেলে ফিরলাম- মহা খুশী আমি নতুন ল্যাপটপের মেটালিক দেখতে কাভারে, যাওয়ার আগে প্রেজেন্টেশন বানানোর টাইম মিলে নি, এখন রাত জেগে তাকে বাগে আনতে হবে! আমাদের প্ল্যান আগামীকাল ভোরে আবু ধাবীর উদ্দেশ্যে যাত্রা- এক কনস্ট্রাকশন সাইট ভিজিট করবো আমরা, হেব্বী পার্ট নিয়েছে ওখানে জুবায়ের- বিশিষ্ট বাংলাদেশী স্থপতি ও স্থাপত্যের শিক্ষক নিয়ে ভিজিট করতে যাচ্ছে


অসমাপ্ত রোটেটিং টাওয়ার

রাতের আটলান্টিস
(চলবে)
দুবাই থেকে ফিরে ২
দুবাই থেকে ফিরে ৩
দুবাই থেকে ফিরে- শেষ পর্ব