দ্বিতীয় ভাগঃ কেইলং থেকে লাদাখ

এক
কেইলং এর শীতে ভোর চারটেতে উঠে যাত্রা করা যে কী কষ্টের! কিন্তু উত্তেজনায় কিছুই টের পাই নি; HPTDC এর নাশ্তার প্যাকেট রেখে দিলাম পরে খাবো বলে- ভোর চারটেতে তো আর নাশ্তা করা যায় না। যাই হোক, কেইলং থেকে আমাদের সাথে সহযাত্রী হল আমেরিকান তিন নাগরিক। আমি দমে গেলাম কারণ বাসের পিছন দিকে আমার ছবি তোলার জায়গাটা হাত ছাড়া হয়ে গেল



দুই
উপায়ান্তর না দেখে ড্রাইভারের পাসের ডেঞ্জারাস সীটে (আমাদের দেশে যেগুলো মহিলা সীট নামে খ্যাত) যাওয়ার চিন্তা করলাম যেখান থেকে ভিউও ভালো পাওয়া যাবে; চাই কিছু ছবিও নেওয়া যাবে। আমার সংগী সেখানে বিশ্বজিৎ দা আর তার ভাতিজা (কা-কু কা-কু করে যে অস্থির করে ফেলল!!), ওদের ক্যামেরার সেটিংস ঠিক করে দেওয়ার পর আমার সাথে একটু খাতির জমল যার সুবাদে ওদের কাছ থেকে একটু পর পর লজেন্স পাচ্ছিলাম। আর সাথে বোনাস হিসেবে বাবু্র (ওই মুছিয়াল) ন্যাকামী- 'কা-কু, কা-কু, হোমওয়ার্ক টা কী রকম করেচিলুম বল তো; বাবা তো বলল এতটুকু পড়া করলে আমি শিওর ফার্স্ট ক্লাশ পেয়ে যেতুম!!' বাবু সত্যিই অনেকটা হোমওয়ার্ক করেছিল- কখন কোন পাস আসছে , কী নদী বয়ে চলেছে- সবই পটপট করে বলে যাচ্ছে হাতের একটা মস্ত খাতা থেকে (ঠিক স্কুলের বাচ্চাদের মতো




তিন

চার
আমার ছটফট করে ছবি তোলা দেখে ওরা আমাকে সবচেয়ে ভালো জায়গাটায় বসতে হেল্প করল, মুছিয়ালটা দেখি আমায় 'তুমি' করে বলছে




পাঁচ

ছয়

সাত

আট
মাঝে একটা জায়গায় আমরা থামলাম এবং সত্যিকার দুর্গম এলাকায় ভ্রমণের অসুবিধাটা বোধ করলাম। চা এর দোকান থাকলেও কোন টয়লেট নেই


বাসে উঠে আমি আবারও ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, বিশ্বজিৎ দা আর ওই মুছিয়ালটার সংগী হলাম। রাস্তার দু'পাশের সৌন্দর্য দেখে আমি তো কাইত; আমার ক্যামেরার ব্যাটারী খতম হয়ে যাওয়ায় শি ভাই (উনি ততক্ষণে মাথা ব্যাথার শিকার)এর ক্যামেরার শাটার ফেলছি ঘন ঘন। কী যে রাস্তা! বেঁকে-বুঁকে কোনমতে নিজের মাথা বাঁচিয়ে একটুখানি জানালার ফাঁক দিয়ে ক্যামেরাবাজি করলাম। কিছুক্ষণ পর দেখলাম বিশ্বজিৎ দা পানি চাচ্ছেন- অক্সিজেনের অভাব টের পাচ্ছেন। হাই অল্টিচ্যুডে আমিও কেমন যেন একটু মাথা-ব্যাথা বোধ করছিলাম; মনে হচ্ছিল- অনেক কেরদানি দেখিয়েছি এখন নিজের জায়গায় গিয়ে একটু মাথাটাকে সীটে হেলান দরকার, রাতেও তো ঘুম হয় নি (পেটে গ্যাস হলো মনে হচ্ছে!), কিন্তু সেই সৌন্দর্যের সম্মোহন থেকে বের হতে পারি নি। ভাবছিলাম আরেকটা পাসে বাস থামলেই আমি লক্ষ্মী মেয়ের মতো আপন জায়গায় ফিরে যাব।ততক্ষণে আমার বেশ জোরেসোরেই মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেল (ভয় পাচ্ছিলাম- এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় না কি রক্তক্ষরণ হয়ে মানুষ মারাও যায়- আমার ভয় মৃত্যুর নয়, ট্যুরে অন্যদের অসুবিধায় ফেলার।)

নয়

দশ

এগার

বার। ইনারা মোটর সাইকেলে করে লাদাখ গমনের জন্যে বের হয়েছেন

তের। সাহস দেখেন, সাইকেলে কইরা নাকি লাদাখ যাইব!


চৌদ্দ
টাগলাং লায় (১৭,৪৭০ ফুট) বাস থামার পর জানি না- অল্টিচ্যুড সিকনেস অথবা রাতে ফর্ম করা গ্যাসের জ্বালায় বমিও করে ফেললাম (এরকম আমার কখনো হয় না




পনের

ষোল

সতের

আঠার

ঊনিশ
এত কিছু হয়ে গেলেও আমি Tso (লেক ) Kar এর ছবি তুলতে ভুললাম না।এভাবে চলতে থাকল। কন্ডাক্টরকে জিজ্ঞেস করা হল- আ---র কতক্ষণ! সেই অদ্ভুত অতিপ্রাকৃত সৌন্দর্য যেন আর সহ্য হচ্ছিল না। কিন্তু ওরাও তো জানে না! ল্যান্ড স্লাইডে রাস্তা নিশ্চিহ্ন হওয়ায় ওই রাস্তায় ওরা ওই প্রথম যাচ্ছে। আমাদের মহান ড্রাইভার টানা প্রায় বিশ ঘন্টা ড্রাইভ করে রাত দেড়টায় আমাদের লেহ শহরে পৌঁছে দিল।

বিশ। কার লেক

একুশ। লাদাখ, দ্য গেট অফ ইন্ডিয়া
(তৃতীয় পর্বের সমাপ্তি)
ওভারভিউঃ শিমলা-মানালি-লাদাখ ট্যুর
প্রথম পর্বঃ শিমলা
দ্বিতীয় পর্বঃ মানালি
তৃতীয় পর্ব-প্রথম ভাগঃ মানালি থেকে কেইলং