somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানালি থেকে লাদাখের পথে: (তৃতীয় পর্ব-প্রথম ভাগ)

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক

প্রথম ভাগঃ মানালি থেকে কেইলং

৩ সেপ্টেম্বর সকাল এগারটায় বাস ছাড়ল মানালি থেকে লেহ (লাদাখের রাজধানী) এর উদ্দেশ্যে; বাসে আমাদের সংগী কলকাতার একটি গ্রূপ- তিনটি পরিবার যার কর্তাব্যক্তিরা বি এস এন এল এ চাকুরি করে আর এক জার্মান ভদ্রমহিলা। আমি আর আ বসলাম একদম সামনে- আমাদের জানালার অংশটা খুব ছোট; আমার তো দেখেই মন খারাপ হয়ে গেল। এ জানালা গলিয়ে বাইরের ছবি তোলা অসম্ভব, অ এর মোশন সিকনেস থাকায় ওকে দিতে হলো জানালার পাশে। আর তাই আমি ক্যামেরা বাক্সবন্দী করা সোজা সামনের দিকে দৃষ্টি দিলাম, ড্রাইভার আর কন্ডাক্টর এর ফাঁক দিয়ে যতটুকু প্রকৃতি দর্শন করা যায়।


দুই

বাসে উঠে নিশ্চিত হয়ে নিলাম যে, রোটাং পাস আমাদের পথিমধ্যে পড়বে। বাস ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম জার্মান ভদ্রমহিলা কাইত; ক্যালকেশিয়ান পরিবারে দুইজন ইয়াং সদস্যের একজন সব সময়ই তার মায়ের পাশে বসে, মাকে ছাড়া বসতেই পারে না। লি আপু অসুস্থ হয়ে যায় শিমলায়, তা জানতে পেরে ওই গ্রুপ বেশ সহমর্মিতা জানায় আমাদের; আমাদের বারবারই বলছিল- এপার ওপার দুই পারে হলেও আমরা তো একই জাতি। কিন্তু যে যাই বলুক ওদের পশ্চিমবংগীয় নাটুকে সংলাপে কিছুক্ষণের মধ্যে অ এর মাথা ধরে যায়। (পশ্চিম বংগীয় কেউ থাকলে আগেই আমি দুঃখিত; আমার কিন্তু মাথা ধরে নাই!)


তিন। রোটাং পাসে


চার। পাহাড়ের কান্না ১

আস্তে আস্তে চারপাশ বদলে যাচ্ছিল, বড় বড় পাইন গাছের সারি হারিয়ে যাচ্ছিল। বিশাল বিশাল সবুজ সবুজ পাহাড় আর একটু পর পর সুন্দর সুন্দর ঝর্ণা (ব্লগার পাহাড়ের কান্না এর কথা মনে পড়ে গেল):P আ তো পাগল হয়ে গেল, বাস থামানোর জন্যে- ও ছবি তুলতে চায় ঝর্ণার সামনে। মানালি থেকে রোটাং পাস (১৩০৫১ ফুট) পর্যন্ত যারা যায় তাদের অনেকেই এসব অদ্ভুত সুন্দর সব ঝর্ণার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিল। আমাদের তো দূর পাল্লার জার্নি, তাই ঝর্ণার সামনে বাস থামানো হয় নি। আ তো প্রায় কেঁদেই ফেলছিল- ও যে এত্ত সুন্দর সব ঝর্ণা দেখেছে ওর বন্ধুদের কীভাবে বিশ্বাস করাবে ছবি না থাকলে এই দুঃখে।বেচারী তখনো বুঝতে পারে নি একটু পর পাহাড়ের কান্না দেখতে দেখতে ওর কান্না পেয়ে যাবে- একটু পর পরই ঝর্ণা!

এত্ত সুন্দর সব জায়গা ছেড়ে যাচ্ছি; অথচ ছবি তুলছি না! এক সময় আ কে চেপ্টা করে দিয়ে ওর উপর দিয়েই ক্যামেরা চালানোর চেষ্টা করছিলাম; সফলকাম না হয়ে বাসের একদম পেছনে সীটটা খালি ছিল- সেখানে চলে গেলাম (পাহাড়ী আঁকা-বাঁকা রাস্তায় বাসের পেছনের সীট মানে কী বুঝিয়ে বলতে হবে না নিশ্চয়!)। কিছুদিন আগে হওয়া ল্যান্ড-স্লাইডে তখন এই রুটের অবস্থা খারাপ; বলতে ভুলে গেছি ভূমি ধ্বসের পর মানালি থেকে লাদাখের বাস সার্ভিস চালু হল ওই দিনই আর আমরাই প্রথম যাত্রী।বাসে উঠেই যা দুঃসংবাদটা শুনেছিলাম তা হলো- ভূমি ধ্বসে মানালি থেকে লাদাখের ইউজুয়াল রুটের অনেকটা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বলে আমাদের ১০০ কিমি রাস্তা ঘুরে যেতে হবে।

পাহাড়ের কান্নাকে ক্যামেরায় বন্দী করে খুশী হতে পারলাম না; দ্রুতগতিতে চলা বাস থেকে পেছনে বসে দুমড়ে মুচড়ে ফটো ধরতে ধরতে ঝর্ণা চলে যায়; ফটো ঝাপ্সা হয়ে যায়! এক সময় ক্ষান্ত দিয়ে ভাবলাম তার থেকে শান্তিতে বসে চর্মচক্ষের ল্যান্সে ধারণ করে নিয়ে যাই। রোটাং পাসে থামাল বাস কিছুক্ষণের জন্যে; এই এলাকায় এসে প্রথম বরফ দেখার উত্তেজনায় ফটোসেশন চলল, প্রচ্চন্ড ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলাম। বরফে ঢাকা হিমালয়ের চূড়াকে একটু পর পরই মেঘ এসে ঢেকে দিয়ে যায়- সে এক অপার্থিব দৃশ্য!


পাঁচ


ছয়


সাত

মাঝে এক জায়গায় থামানো হলো দুপুরের খাবারের জন্যে। ভেজ স্যান্ডউইচের নামে যা আসল তা দেখে আমার কান্না এবং বমি দুইই পেয়ে গেল- দুইটা পাউরুটির মাঝখানে একটু শসা; বুঝতে পারছিলাম সামনে দুর্দিন অপেক্ষা করছে। খাওয়ার সমস্যা তো আছেই; সামনে আর কিছুদূর গেলে শুরু হবে আসল সমস্যা যে ভয়ে পানি খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছি।


আট। বারলাচা পাসে

কেইলং পৌঁছার পূর্বে মাঝে বারালাচা পাসে (১৬০৫০ ফুট) বাস থামাল। চা খেলাম আর পেয়েবল টয়লেট দেখে তো খুশী হয়ে গেলাম। এখানে চেকিং হল আমাদের। কাছেই প্রবাহিত হচ্ছে নদী (চন্দ্র বা ভাঙ্গা যে কোন একটি) আর আরেক পাশে আছে ঝর্ণা যার সামনে আ এর ছবি তুলে দিয়ে ওকে ঠান্ডা করা হলো। চা খেয়ে বের হয়ে হঠাৎ দেখি আকাশে রংধনু; একটু আগেই খুব হালকা একটু বৃষ্টি হলো- দু-এক ফোঁটা। মজার ঘটনা হলো- হিন্দী বলতে গিয়ে সবচেয়ে বেশী যে সমস্যাটা হয় তা হলো আমরা সবাই চা খেতে চাই, পান করি না।;) আ এর দিল্লী ভার্সিটির বন্ধুরা তো ওকে পঁচায়- বাঙ্গালীরা না কি সব খায়- চা খায়, সিগারেট খায়, দুধ খায়।:P

পাহাড়ী পথে একটু পর পরই দেখা যাচ্ছিল হাজার হাজার মেষের পাল নিয়ে যাচ্ছে মেষশাবক; পাহাড়ী খাড়া ঢালে চড়ে বেড়ানো মেষ দেখে খুব অবাক হচ্ছিলাম। এই মেষের লোম যায় কাশ্মীরে যেখান থেকে কারীগররা সেই অসামান্য কাশ্মীরি শাল তৈরী করে। রোটাং এ প্রথম বরফ ঢাকা পাহাড় দেখে চোখ-মন ভরছিল না; কিন্তু যতই উপরের দিকে উঠলাম পাহাড়ের সবুজ হারিয়ে গেল- এখন শুধু বরফের চূড়াওয়ালা পাহাড়। অনেক গ্ল্যাসিয়ার দেখলাম এটুকু রাস্তায়; ক্রমাগত প্রকৃতির রূপ বদলাচ্ছিল, চোখ সরাতে পারছিলাম না, সরালেই তো কিছু না কিছু খুইয়ে ফেলব।


নয়। পাহাড়ের কান্না ২


দশ


এগার


বার


তের


চৌদ্দ। যে তাঁবুতে রাত কাটিয়েছিলাম

রাত নটার দিকে পৌঁছুলাম কেইলং এ; তাঁবু পাতা হলো সারি সারি আমাদের জন্যে। রাতে খাওয়ার ব্যবস্থা করল HPTDC। তাঁবুর ভিতরে হু হু করে বাতাস ঢুকছিল, শীতের দাপটে ডাবল কম্বলের ভিতরে ঢুকে গেলাম- আ খুব ভয় পাচ্ছিল। আর অ এর চকিটা দেখে মনে হচ্ছিল ওটা যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়বে। আমাদের তাঁবুতে চারজন গল্পগাছা করে ঘুমাব ভাবছি একটু পর কে যেন এসে বলল- excuse me। আ ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠল; আসলে শি ভাই আমাদের আড্ডাবাজীতে অংশ নিতে চলে এসেছিল। উনি যাওয়ার পরও আ কে শান্ত করা যাচ্ছিল না; জনমানবশূণ্য জায়গায় বেচারির ভয়টা হয় তো অমূলক ছিল না।

কেইলং এ সেই ক্যালকেশিয়ান গ্রুপের সাথে কথা হলো অনেক- ওরা অনেক ঘুরে বেড়ায় শুনে ভালো লাগল। তবে আশ্চর্য হলাম শুনে যে, যে মোটা মুছিয়াল লোকটা কা-কু কা-কু বলে কোন একজনকে ডেকে আমাদের মাথা ধরিয়ে দিয়েছিল তার বয়েস নাকি ছাব্বিশ মানে আমার সমান! অথচ একে দেখলেই আমার কা-কু ডাকতে ইচ্ছে করছিল। ;) :P

ঘুমানোর চেষ্টা করলাম; ভোর চারটেতেই তো আবার যাত্রা শুরু করতে হবে............

(চলবে)

পাহাড় আর পাহাড়ের কান্না দেখে আসলাম :) (ঘুরে এলাম শিমলা, মানালি আর লাদাখ)

প্রথম পর্বঃ শিমলা

দ্বিতীয় পর্বঃ মানালি
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১:২৩
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×