
এক (ছবিটি আমার ভাগ্নের তোলা)
কোন এক টার্মে স্যার ক্লাশে বলছিলেন, মানুষ অনেক সময় তার আশেপাশের পরিবেশের দ্বারা sensitized হয়ে যায়, তখন সে ওই জায়গাটাকে দিয়েই অন্য জায়গা গুলোর বিচার করে। ছোটবেলা থেকে কেউ যদি খুব পরিপাটি আর সুন্দর পরিবেশে বড় হয়, এর থেকে অপেক্ষাকৃত কম সুন্দর অথবা অসুন্দর পরিবেশে তার খাপ খাওয়াতে সমস্যা হয়।
ক্লাশে ব্যাপারটা থিওরেটিক্যালী বুঝে গেলেও অনুভব করতে পেরেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শুরুতে যখন আমি, জ আর ক যাই ময়মনসিং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রচন্ড গরমে ওষ্ঠাগতপ্রাণ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ব্রহ্মপুত্রের তীরে গিয়ে যেন প্রাণ ফিরে পাই। নদের পাশে চরম আনন্দে বিগলিত জ আর ক যারা আজন্ম লালিত হয়েছে একজন রিয়াদ (সৌদি আরব) আর অন্যজন ঢাকাতে। দুজনই নদের রূপ দেখে মুগ্ধ। ওদের উচ্ছ্বসিত আনন্দে আমি একটু অবাকই হচ্ছিলাম। কারণ বাঁধ দেওয়া নদীর পাড় আমাকে অতটা বিমোহিত করতে পারছিল না। ওদেরকে বলছিলাম- তোরা এই নদের পাশে এসে এত মুগ্ধ! তাহলে আমার বাড়ীর পাশে মেঘনা নদীর রূপ দেখলে তো মারা যাবি।
জন্ম আমার মেঘনা নদীর পাশের সেই সুন্দর সবুজ মফস্বলে- যার রূপে sensitized আমার অন্য কোন জায়গা সহজে ভালো লাগতে চায় না। অথচ কত বড় ঐশ্বর্যের অধিকারী ছিলাম তা বুঝতে অনেকটা সময় পার করতে হলো, এমন সময়ে যখন চাইলে দু'মিনিট হেঁটে ওই নদীর পাড়ে গিয়ে বসে থাকা যায় না। জ্যোৎস্না রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে নদীর পাশের মাঠটাতে আড্ডা পেটানো যায় না। বর্ষা আসে, মেঘনা নদীর দু'কূল উপচায়, পানি চলে আসে আমার বাসার একদম কাছের বালির ভিটাটার পাশে- আমি সেই সৌন্দর্য নয়ন-মন ভরে উপভোগ করতে পারি না। হায় রে! কী দুর্ভাগা আমি !


প্রতি বর্ষায় আমি কয়েকবার মেঘনায় নৌভ্রমণ দিতে চাই, ই ভাই এর ছোট্ট নৌকাটা ভাইয়া বয়ে নিয়ে যায় আর দরাজ গলায় গান গায়। মায়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে আমি আর আমার দুই ভাগনে বিকেলে বাসা থেকে পালাই (দেখতে পেলে যে রক্ষে নেই, মায়ের আমার জলে বড় ভয়) আর ফিরে আসি আধাভেজা হয়ে নদীর বুকে সূর্যাস্ত দেখার পর

যত দিন যাচ্ছে, আমার সেই নৌভ্রমণের সময় কমে যাচ্ছে। শ্রাবণ মাস শেষ হয়ে এল, নানান চাপে যাওয়া হয় নি মেঘনার পাড়ে। দেখতে দেখতে বর্ষা চলে যাচ্ছে- আর আমি কর্মময় জীবনের চাপে পিষ্ট হচ্ছি আত্মীয়-পরিজনহীন এই যান্ত্রিক শহরে- আমার মেঘনা নদী থেকে অ-নে-ক দূরে।

দুই

তিন

চার

পাঁচ

ছয়

সাত

আট

নয়

দশ

এগার

বার

তের

চৌদ্দ

পনের
ক্ষমা প্রার্থনাঃ
ক। খুবই বাজে হ্যান্ডিক্যাম দিয়ে তোলা ছবি, যাতে ফ্রেমিং ঠিক করা যায় না কোনভাবেই

খ। আমি ছবি ভালো তুলি না, তাই ছবির দোষ-গুণ ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে বাধিত হবো
মেঘনা পাড়ের মেয়ে আমি-২...(এই গরমে একটু শীতের আমেজ!

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১:৩৮