আমি পোলা বড় হইছি। যৌবন আছে। বিপরীত মেরুর প্রতি আকর্ষন থাকব। কারো কোন সমস্যা! ওই মিয়া যান রাস্তা মাপেন। আমার এলাকা আমি যা ইচ্ছা করুম! যারা হত যৌবনা তারাই কেবল ইভিটিজিং ইভটিজিং নিয়া এত তাফালিং মারে! ভিতরে পুরুষ থাকে তা এদিক সেদিক দিয়া বাইর হইবই। আর আদম যখন আছে, ইভ যখন আছে, ইভ টিজিং থাকবই!
ইভটিজিং মোকাবেলায় দরকার ব্লগের লেখক পাঠক সামাজিক আন্দোলন: একটি গঠনমুলক প্রস্তাবনা।
না, ব্লগার মৌ-মাছি সবসময় বাঁকাচোখে দেখে থাকে। এবার সোজা চোখে দেখতে চাইছে। অাপনিও দেখবেন নাকি। আসুন ভেবে দেখি। ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে আমরা সবাই সোচ্চার, শাস্তি দিতে আমরা সবাই আগ্রহী। স্টিকি পোস্ট ঝুলিয়ে রেখেছি প্রায় এক সপ্তাহের উপরে। তিনশতাধিক ব্লগারের ভালো লেগেছে, এক হাজারের উপরে মন্তব্য পড়েছে, একচল্লিশ হাজার বার পঠিত হয়েছে, ফেসবুকে শেয়ার দেয়া হয়েছে প্রায় অাট হাজার চারশত বার, টুইটারে পঞ্চাশের কাছাকাছি, গুগলে প্রায় পঁচিশ। সামহোয়ারইন ব্লগের প্রথম পাতার বাম পাশে সবসময় ঝুলে রয়েছে ইভটিজিং বিরোধী শ্লোগান "ইভটিজিং - রুখে দিন, সামাজিক আন্দোলন গড়ুন।" এছাড়া বিভিন্ন পত্রিকায় এসেছে, বিবিস ও ডয়েচ ভেলেতেও সম্ভবত কিছু প্রচার করা হয়েছে। এ সবই আমাদের সচেতনতার বহিপ্রকাশ। অামি বেশ আনন্দিত এই সব তৎপরতা দেখে। তবে এরপরে আমি কিছু নিরাশার কথা বলব তারপরে বলব আশার কথা, প্রস্তাবনার কথা।
আমাদের বর্তমান যে তৎপরতা তার ফলাফল কী? আমরা যদি ঠান্ডা মাথায় ভাবি, সেটা নিরাশারই। আপনি ভাববেন আমি নিরাশাবাদী লোক, লড়াকু নই। বিষয়টা তাও নয়। টিনএজ কালে ভুক্তভোগী হিসাবে একসময় ইভটিজিং জাতীয় বিষয় মোকাবিলায় সরাসরি সংঘর্ষে যেতে হয়েছিল, থানা পুলিশ, শালিস, চেয়ারম্যান সব করতে হয়েছিল। যা হোক আমি আসলে বাস্তবতার নিরীখে ভাবছি। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি ঐ কিছু লোককে সনাক্ত করতে যারা ইউল্যাবের ছাত্র অথবা আশে পাশের কেউ। এখানে ইউ ল্যাব কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের দেন দেরবার হচ্ছে তদন্ত কমিটি নিয়ে। সবাই বেশ উদগ্রীব, আপডেট আসছে, আসলে কাজের কাজ কি কিছু হচ্ছে? হচ্ছে না। কাজের কাজ কি কিছু হবে, হবে না। কী কী হতে পারে ঠান্ডা মাথায়, মনে রাখবেন ভাবাবেগে আক্রান্ত না হয়ে, ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখি। অকর্মন্যের নৈরাশ্যজনক চিন্তা মনে করে গালি দিবেন না অনুরোধ করছি।
সম্ভবত ইউল্যাবের তদন্তে কাজের কিছু বের হবে না। সেটা যে কোন কারণেই হোক। তারা এর সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়া থেকে কৌশলে সরে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। সেক্ষেত্রে একটা দায়সারা তদন্ত প্রতিবেদন আসবে ইউল্যাবের কেউ জড়িত নয় বলে। সেক্ষেত্রে অনেকে যেরকম সন্দেহ করেছেন সেরকম ডকুমেন্ট ও এভিডেন্স ট্যাম্পারিংও হতে পারে। অথবা কাউকে জড়িত পাওয়া গেলে কি হবে, আশাবাদী হয়ে সেটাই যদি ভেবে দেখি, বড়জোড় ইউল্যাব তাদের বহিস্কার করবে। তারপর তারা কোর্টে যাবে, স্টে অর্ডার অানবে, শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যাবে। এসব মামলায় বাদী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো জিতে না, জিততে চায় না। অন্যদিকে এই বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে কি না অামি এখনও জানিনা। সেখানকার তদন্ত অাদৌ কি কিছু হচ্ছে? অামি জানিনা। মামলা হয়ে থাকলেও হাজারো মামলার ভিড়ে এই মামলা কতটা গুরুত্ব পাবে? তারপর কত সময় লাগবে তদন্ত হতে, মামলা হতে, রায় আসতে? ততদিন কি ব্লগার সর্বনাশা বা অপ্রিয় সত্য বা আরো যারা সাক্ষী আছেন তারা চালিয়ে যেতে পারবেন? হয়তো পারবেন, বাস্তবতার নিরীখে বলা যায় পারবেন না।
তাহলে আমাদের কি করার আছে? একটা হতে পারে অাইন হাতে তুলে নেয়ার, ভাল অর্থেই বলছি। মানে ঘটনাস্থলে গায়ের জোরে পারার অবস্থা থাকলে সেখানে মার দিয়ে তাৎক্ষনিক শাস্তি নিশ্চিত করা। ব্লগার সর্বনাশা বা অপ্রিয় সত্য সেটা যথা সম্ভব করেছেন। ঘটনাস্থলেই ওরকম পদক্ষেপ যে কোন বিচারে খানিকটা গ্রহনযোগ্য, যদিনা সেটা চরম শাস্তি যেমন পিটিয়ে মেরে ফেলা জাতীয় না হয়। তবে মারপিট পরেও করা সম্ভব, যদি তাদের সনাক্ত করা সম্ভব হয়। তবে তখন যারা মার দিতে যাবে, কারা যাবে সেটা নিয়ে না ভাবলেও, তারা নিশ্চিত ভাবেই অাইনের চোখে আরেকটি নতুন অপরাধ করবে। কাজেই ও পথে যাওয়ার উপায় নেই। আমাদের কি করার কিছুই নেই। হতাশ হবেন না। অবশ্যই আছে।
আজকাল মোবাইলের যুগ, সস্তা ফোনে ক্যামেরাও থাকে। অাজকেই কোন একটা পোস্টে দেখলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে কেউ একজন ছবি উঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট নিপীড়কের। আমি বলতে চাই যদি কখনও আপনার সামনে এ ধরনের ঘটনা ঘটে, আপনার ব্যবস্থা হওয়া উচিৎ আক্রান্তের ও আপনার নিজের নিরাপত্তার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু ব্যবস্থা গ্রহন। এরপর গন্ডগোল না বাড়িয়ে যতদুর সম্ভব চেষ্টা করুন প্রমাণ সংগ্রহে, কৌশলে ঘটনার সময়েও যতটা পারুন করুন। দরকার হলে এবং সময় থাকলে একটু পরেই আবার ঘটনাস্থলে ফিরে যান, উপস্থিত লোকজন কিছু তখনও থেকে যেতে পারে, সাথে সাথে তাদের নাম ঠিকানা ও বক্তব্য সংগ্রহ করুন। পারলে মোবাইলে বক্তব্য, ভিডিও, বা অডিও রেকর্ড করুন। এসবই প্রমান হিসাবে কোন না কোন সময় কাজে লাগবেই।
মনে রাখবেন অাইনের উপরে আস্থা রাখা ছাড়া আমাদের তেমন কার্যকর কোন উপায় নেই। তবে মুশকিল হল আমাদের দেশে আইন আদালত পুলিশ ঠিক সময় মতো বা যথাযথ ভাবে কাজ করে না। অনেক সমস্যার মধ্যেও একটা বড় সমস্যা হল তারা তদন্ত ও প্রমান যোগাড় করতে পারে না। সদিচ্ছার অভাব বা দুর্নীতির কথা বাদ রাখলাম। কাজেই আমাদের কাজ হচ্ছে প্রমান, সাক্ষী, ইত্যাদি সংগ্রহ করে আইনকে সাহায্য করা। স্টিকিপোস্ট কেন্দ্রীক আজকের এই তৎপরতা আমি বিশ্বাস করি সেই জন্যেই হচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন।
এবার আসি ব্লগ ফোরাম বা এর সদস্য হিসাবে আসলে আমাদের জন্য কি করা আদর্শ। ওয়েল, নতুন করে ভাবার কিছু নেই। সামহোয়ারইন তার বামপাশে শ্লোগান ঝুলিয়েই রেখেছে "সামাজিক আন্দোলন গড়ুন"। আমার এই পোস্ট আসলে এখান থেকে শুরু। প্রথম আলো সহ বিভিন্ন পত্রিকার রয়েছে পাঠক ফোরাম। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝে মাঝে বন্ধু সভা করে থাকে। আমরা যেটা করতে পারি তা হল " ব্লগের লেখক পাঠক সামাজিক আন্দোলন" ফোরাম। সারাদেশে এখন ব্লগার ছড়িয়ে আছে। বোধ করি সাধারণ পত্রিকা পাঠকদের চেয়ে ব্লগাররা বেশী নিবেদিত, স্বেচ্ছাসেবার মনোভাব লালন কারী, ন্যায় পরায়ন সমাজ গঠনে আগ্রহী। ব্লগ সমুহে বিচরণ করে আমি সে রকম ইতিবাচক মনোভাবই পোষণ করি। কাজেই সারা দেশে আমাদের এ রকম ফোরাম গড়ে তোলা কঠিন কিছু নয়। একবারে সারা দেশে না হলেও যে সব এলাকায় সম্ভব সেগুলো থেকেই শুরু করা সম্ভব।
এ পর্যন্ত নতুন কি বললাম। আসলে নতুন কিছুই বলবনা, কারো না কারো বলা কথাই বলছি। আমরা যেটা করতে পারি তা হলো আমাদের টার্গেট গ্রুপ কারা, কাদের নিয়ে আমরা কাজ করব সেই দিকে মনোযোগ দেয়া। ইভটিজিং যে কোন বয়সের লোকের উপরে, যে কোন বয়সের লোকের দ্বারা সম্ভব হলেও আমরা মোটামুটি ভাবে ভাবতে পারি টিনএজ বা এর আশে পাশের বয়সের লোকজনই আক্রান্ত ও আক্রমন কারী। কাজেই সারাদেশের হাইস্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোই হতে পারে আমাদের তৎপরতার স্থান। এর মাধ্যমে আমরা দেশের একটা বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে বার্তা পৌছাতে পারব। আমাদের সামাজিক আন্দোলন সেটাই। মনে রাখুন এই আদলে ইতিমধ্যে আমরা অারো কিছু করছি। সেগুলো হল গণিত অলিম্পিয়াড ও এই জাতীয় কার্যক্রম গুলো, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগীতা সহ আরো অনেক কিছু। এ সবের সাথে বিজ্ঞাপণ ও যুক্ত হতে পারে। আখেরে আমাদের কিছু না কিছু খরচ করতেই হবে। তবে সেটাকেই আবার কেউ সামনে আনলে হবে না। যা হোক এটা বাদ দিলেও কিছু ব্লগার একত্রিত হয়ে কোন একটা হাইস্কুল বা কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটা সচেতনতা প্রোগ্রাম করা কঠিন কিছু বলে আমি মনে করি না।
তাহলে শুরু করা হউক সারা দেশে নিয়মিত ভাবে এ ধরনের কার্যক্রম। দরকার হলে গণিত অলিম্পিয়াড জাতীয় প্রোগ্রাম গুলোর সাথেও সমন্বয় করা যেতে পারে। এই ধরনের প্রোগ্রাম প্রতিবছর এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠানের গ্রুপ তৈরী করে করা যেতে পারে। স্থানীয় ব্লগাররা এগুলো নিজেরাও আয়োজন করতে পারেন। সম্ভবত কেন্দ্র থেকে শুধু দরকার কিছু উদ্দীপনা ও সমর্থন। ধরা যাক ঢাকা শহরের ধানমন্ডী এলাকায় অবস্থিত বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়কে টার্গেট করে ব্লগারদের নিয়ে একটা প্রোগ্রামের মাধ্যমেই এটা শুরু হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১২ বিকাল ৩:৫০