ভাবতে পারেন এমন একটি পৃথিবীর কথা যেখানে পুরুষের সংখ্যা দিন দিন কমতে কমতে একেবারে ‘নাই’ হয়ে গেছে! ডাইনে-বামে চোখ ফেললে দেখা মিলবে শুধু নারীর! সৃষ্টির ভারসাম্যের প্রতি বিশ্বাস রাখলে এটি নিছক পাগলের কল্পনা মনে হতে পারে। কিন্তু এই ভবিষ্যদ্বাণীটি যিনি করেছেন তিনি কোন পাগল নন; মানুষের সেক্স ক্রোমোজম নিয়ে গবেষণা করা একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী। জেনিফার গ্রেভ্স নামের ওই ব্রিটিশ বিজ্ঞানী বলেছেন, পুরুষের জীন ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে এবং এর গতিমুখ হচ্ছে বিলুপ্তির দিকে। তিনি আরো বলেন, ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণের জন্য প্রয়োজন যে ‘ওয়াই’ ক্রোমোজম তা দিন দিন মারা যাচ্ছে। এমন সময় আসতে পারে যখন পুরুষের শুক্রাণুতে কেবল থাকবে ‘এক্স’ ক্রোমোজম। ফলে জন্ম নেবে কেবল কন্যা সন্তান। অল্প যে কয়েকজন পুরুষ জীবিত থাকবেন সময়ের সাথে সাথে তারা গত হলেই দুনিয়া হবে ‘নারীময়’।
তবে এই বিজ্ঞানী একটি আশার বাণীও শুনিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পুরুষের জীনগত পরিবর্তন হচ্ছে এবং শুক্রাণুতে ‘ওয়াই’ ক্রোমোজমের সংখ্যা যে কমে যাচ্ছে এটা প্রমাণিত সত্য। তবে ‘ওয়াই’ ক্রোমোজম একেবারে নিঃশেষ হতে ৫০ লাখ বছর লেগে যাবে। এই সময় অনেক ব্যাপক। তাই নারী কিংবা পুরুষের অতিশীঘ্র ‘সঙ্গীহারা’ হবার ভয় নেই।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নারীদের ডিম্বাণুতে কেবল থাকে ‘এক্স’ ক্রোমোজম এবং পুরুষের শুক্রাণুতে ‘এক্স’ এবং ‘ওয়াই’ উভয় ধরনের ক্রোমোজম থাকে। পুরুষের এক্স ক্রোমোজম নারীর এক্স ক্রোমোজমের সঙ্গে মিলে কন্যা সন্তান এবং পুরুষের ওয়াই ক্রোমোজম নারীর এক্স ক্রোমোজমের সঙ্গে মিলে ছেলে সন্তান তৈরি করে। পুরুষের দেহে ওয়াই ক্রোমোজম না থাকা মানেই কেবল কন্যা সন্তান জন্ম নেয়া।
ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জেনিফার আরো বলেছেন, তিনশ মিলিয়ন বছর আগে পুরুষের ওয়াই ক্রোমোজমে ১ হাজার ৪০০ রকম জীন ছিল। কিন্তু কমতে কমতে এই সংখ্যা বর্তমানে মাত্র ৪৫তে দাঁড়িয়েছে। এই হারে কমতে থাকলে ৫০ লাখ বছর পর এটি জিরোতে নামবে।
ওয়াই ক্রোমোজম নিঃশেষ হয়ে গেলে পৃথিবী কি সত্যিই পুরুষশূন্য হবে? এই প্রশ্নের জবাবে জেনিফার বলেন, আসলে এখনই বলা কঠিন যে ঠিক কি ঘটবে। তিনি ইঁদুরের একটি প্রজাতির উদাহরণ দেন যেটির দেহে ওয়াই ক্রোমোজম তৈরির জীন না থাকলেও নিজ থেকেই বিশেষ প্রক্রিয়ায় ওয়াই ক্রোমোজম পুনরুৎপাদন করতে পারে। পুরুষের শরীরে তেমন কোন পরিবর্তনও আসতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে বিবর্তনের মাধ্যমে মানবজাতির একটি নতুন প্রজাতিরও উদ্ভব ঘটতে পারে।-সূত্র দ্য টেলিগ্রাফ ও দ্য হেরাল্ডের