somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিচার ব্যবস্থা......

০৪ ঠা জুন, ২০১৪ সকাল ৮:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানবতাবিরোধী অপরাধ জিনিষটা আসলে কি? বিগত কয়েক বছর ধরে এই ক্রিয়াপদটি প্রচুর ব্যবহৃত হচ্ছে নানান মাধ্যমে। চিহ্নিত একটি দলের কিছু নেতৃস্থানীয় বৃদ্ধ লোককে নিয়ে টানাহেঁচড়া চলছে, এরা নাকি ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত ছিল। তাদের ফাঁসির দাবী নিয়ে বেশ অনেকদিন পর্যন্ত কিছু ভুইফোঁড় সংগঠন শাহবাগে যানজট সৃষ্টি করে এখন নিজেরাই দ্বিধাবিভক্ত হয়ে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করছে। এমনকি, এসব অপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া পরিচালনা করার জন্য যে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে, সেখানেও নাকি শুনলাম দুই গ্রুপ তৈরী হয়ে বিচারপ্রক্রিয়া থেমে রয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধ - এই কথাটার সঠিক সংজ্ঞা আমার জানা নেই। তবে যতটুকু বুঝি, যেই অপরাধ মানবতার পরিপন্থী কিম্বা মানবতার প্রতি হুমকিস্বরূপ, সেটাই মানবতাবিরোধী অপরাধ (এই বিষয়ে কোন মুনিষীর সংজ্ঞা জানা থাকলে শেয়ার করুন ;) ) হওয়া উচিত। কিন্তু যদি তাই হয়, আমাদের চারপাশে তো প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানবতাবিরোধী অপরাধ হচ্ছে, কই তাদের তো কোন বিচার দেখিনা।
আমাদের দেশের অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত কৃষক বা খামারীদের এত রাসায়নিক বিদ্যা থাকার কথা না যে তারা গবেষনা করে বের করে ফেলবে কোন কেমিকেল মেশালে ফল পাকবে, তরিতরকারি মাছ মাংস অধিক সময় তাজা রাখা যাবে। এসব উদ্ভাবন নিশ্চিতভাবেই উচ্চশিক্ষিত শ্রেনীর মানুষের যারা পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করে। তারা ভাল মতই জানে যে এসব কেমিকেলের প্রভাব কত সুদূরপ্রসারী এবং মারাত্মক। তো তারা যেটা করছে, সেটা কি মানবতাবিরোধী অপরাধ না? এত বছরেও তো খাদ্যে ফরমালিন ব্যবহারের মত জঘন্য 'আবিষ্কার' কে বা কারা করেছিল তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়ার কোন উদ্যোগ কেউ নেয়নি। ৪২ বছর আগে যুদ্ধকালীন গনহত্যা/ধর্ষন যদি মানবতাবিরোধী হয়, তাহলে অনাগত প্রজন্মকে পৃথিবীতে আসার আগেই হুমকির মুখে ঠেলে দেয়াটা অপরাধের কোন শ্রেনীতে পড়ে?
মাধ্যমিক / উচ্চ মাধ্যমিক সহ নানা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া নিয়ে দেখি প্রায়ই হইচই হয়, কিন্তু কিছুদিন পরেই সব ঠান্ডা। পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন হাতে পেয়ে কত গন্ডমূর্খ পাশ করে 'জিপিএ ৫' নিয়ে। এভাবে পাশ করা ছাত্র/ছাত্রীরা ভবিষ্যতে কতদূর যেতে পারবে? কি ভূমিকা রাখতে পারবে এই দেশের উন্নয়নে? এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যবসা কি এক অর্থে মানবতাবিরোধী অপরাধ নয়? তাহলে কেন আমরা এই অপরাধীদের ধরে এমন শাস্তি দিতে পারি না যাতে তারা আর আমাদের উঠতি প্রজন্মের ভবিষ্যত নিয়ে খেলতে না পারে?
দেশের সব সরকারি হাসপাতালগুলোতে দালাল চক্র সক্রিয়। তাদের কাজ হচ্ছে সরকারি চিকিৎসা লাভের আশায় আসা অসহায় মানুষদের ফুসলিয়ে ডাক্তারদের প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া। এর বিনিময়ে তারা মোটা কমিশন পায়। কত দরিদ্র রোগীরা এদের পাল্লায় পড়ে চিকিৎসার নামে সর্বস্ব হারায়। নিম্নমানের চিকিৎসার বিপরীতে বেপরোয়া টাকা আদায় চলে, ক্লিনিকের নিজস্ব ভবন তৈরী হয়, ডাক্তার কেনেন অত্যাধুনিক মডেলের গাড়ী। এগুলো কি মানবতাবিরোধী অপরাধ নয়? অথচ এরকম কয়টা দালাল / ডাক্তারকে শাস্তি দেয়া হয়েছে? সম্ভবত একটাও না।
আমাদের পাশের দেশে যেই ফেন্সিডিল ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এখনো বিক্রি হয়না, সেই জিনিষ সীমান্ত পেরিয়ে আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংস করার জন্য এই দেশে কারা এনেছিল? তারা কি মানবতাবিরোধী অপরাধ করেনি? কত অসংখ্য সম্ভাবনাময় যুবক-যুবতী এই ভয়াল নেশার খপ্পরে পড়ে অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়েছে এবং হচ্ছে। এভাবে একটা দেশের ভবিষ্যতকে সুকৌশলে শেষ করে দেয়াটা অপরাধের কোন শ্রেনীবিভাগে পড়ে, কোন আইন বিশেষজ্ঞ বলবেন কি?
আসলে, আমার মত মাত্র ৩৩ জন FB Follower ওয়ালা মানুষের এসব উচ্চমার্গীয় বিষয় নিয়ে উচ্চবাচ্য করার কোন মানে হয়না। তাতে খুব বেশী উপকার হবে বলে আমি মনেও করিনা। কিন্তু একজন সাধারন মানুষ হিসেবে আমার যেটা মনে হয়, সবার আগে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। কোন একটা ঘটনা/দুর্ঘটনা/আকর্ম/কুকর্মের বিচার কি ৩০/৪০ বছর পরে আদৌ করা সম্ভব? আদৌ কি কোন সাক্ষ্য প্রমান অবশিষ্ট থাকে এতদিন পরে? এত লম্বা সময়ের কথা বাদ দিলাম, অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের কথা যদি বলি, আসলেই কি এই হত্যাকান্ডের কোন তদন্ত হচ্ছে? এতদিন পার হয়ে যাবার পর কোন আলামত কি আসলে অবশিষ্ট থাকে? দেখা যাবে, তথাকথিত আইনের নানান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মামলার তারিখ পড়তে পড়তে সব আলামত-প্রমান ধ্বংস হয়ে যাবে, সম্ভাব্য সাক্ষীরা নিজস্ব কারনে অনুপস্থিত থাকবে এবং একটা সময় উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমানের অভাবে মামলা বাতিল হয়ে যাবে, অপরাধীরা কলঙ্কমুক্ত হয়ে যাবে। এভাবে অসংখ্য সাগর-রুনির হত্যারহস্যের কোন কূল-কিনারা হয়না বছরের পর বছর।
আমি আইনের প্রতি পরিপূর্ন শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু আমি কোনভাবেই বুঝিনা যে ব্রিটিশদের তৈরী করা শত শত বছরের পুরনো আইনকে ভিত্তি করে কেন এখনো আমাদের আইন বা বিচার ব্যবস্থা চলছে। যদি মেনেও নিই যে, সেই সময়ে আমরা হয়তো আইন প্রনয়নের মত 'সভ্য' ছিলাম না, তাই বলে এখনো কি আমরা এতোটুকু সভ্যতা বা শিক্ষা অর্জন করতে পারিনি যে, আমাদের নিজস্ব কোন বিচার ব্যবস্থা তৈরী করতে পারিনা? সেই আমলে ব্রিটিশ বিচারকগন বছরে কয়েকবার নিজ দেশ বিলেতে বেড়াতে যেতেন তাই বছরে প্রায় কয়েক মাস আদালত বন্ধ থাকতো। আজব ব্যাপার হল, ব্রিটিশের রাজত্ব শেষ হবার অনেক যুগ পরেও আমাদের দেশের আদালতগুলো এখনো শীতকালীন গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে লম্বা সময় বন্ধ থাকে। অথচ আমাদের মাননীয় বিচারপতিগন কেউই তো বিলেতি নন। তাহলে কেন অযথা এত লম্বা সময় আদালত বন্ধ রেখে মামলা মোকদ্দমায় সেশন জট তৈরী করা?
ব্রিটিশ আইনের ভিত্তি বলে, অপরাধী বেঁচে যাক ক্ষতি নেই কিন্তু কোন নিরপরাধ মানুষের যেন শাস্তি না হয়। কয়েকশ বছরের পুরনো এই আইনী মহানুভবতার ফাঁক গলে বেরিয়ে যায় বড় বড় সব মামলার আসামি।
দুই/এক জন আর্ন্তজাতিক সন্ত্রাসীকে পাকড়াও করতে আমেরিকা যদি অসংখ্য নিরীহ মানুষের জীবননাশ করতে পারে এবং সেটা যদি এই যুক্তিতে আইনসম্মত হয় যে, মানবজাতির বৃহত্তর স্বার্থে করা হয়েছে, তাহলে যদি অনেক প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে গিয়ে দুই/এক জন নিরপরাধ মানুষেরও শাস্তি হয়, তাতে কি এমন ক্ষতি??
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঠকানোটাই ভাল শিখেছি আমরা

লিখেছেন ফেনা, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৭



এই বিশাল মহাকর্ষীয় বস্তু সবকিছু নিজের দিকে টেনে নেয়—এমনকি আলোও পালাতে পারে না। কিন্তু কৃষ্ণ গহ্বরের ভিতরে কী ঘটে? সেখানে সময় ও স্থান কেমন আচরণ করে? এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরব বিশ্বে নারীরা অপমানিত? আমার অভিজ্ঞতা বলছে ভিন্ন কথা

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬



বহুদিন ধরে একটি কথা শুনে আসছি—“নারীরা আরব দেশে অসম্মানিত অবস্থায় থাকে।”
কিন্তু আমি আরব দেশে গিয়েছি, থেকেছি, এবং প্রায় দুই মাস ধরে একাধিক জেলায় ঘুরেছি।
সত্যি বলছি—আমি সেখানে কোথাও নারীদের অসম্মানিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় দাবিদাওয়া নিষ্পত্তি সংস্থা : অরাজকতার পালে নতুন হাওয়া!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:০৩


বাংলাদেশে আজকাল দাবি না জানালে কেউ আর মানুষ থাকে না—ছাত্র, শিক্ষক, গৃহিণী, পুলিশ, পিয়ন, কবি, কুস্তিগির, সবাই 'অধিকার' চায়। তবে অধিকার মানে এখানে মোটেই দায় বা কর্তব্য নয়, বরং ছিনিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্পা এবং দেহ ব্যবসায়ীদের কথা শুনলে রেগে যাবেন না

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৪৯



পুরো পৃথিবীতে স্পা এর সংখ্যা ১ লক্ষ ৮১ হাজার। এইসব স্পা-গুলোর বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে ইউরোপে। এশিয়া - প্যাসিফিকের দেশগুলোতেও স্পা-এর সংখ্যা কম নয়। ৫১ হাজারেরও বেশি। বাংলাদেশে স্পা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মিরর ডোল, নিজের মনের অশান্তি অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে ফ্যাসিস্টের মতো আচরণ করবেন না

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩৫

ব্লগার মিরর দৌলাকে বলছি।
আপনাকে কিছু কড়া কথা আজ বলবো। ব্লগে বর্তমানে আপনার কোন অবদান নেই। সামুর যে ব্লগপেইজটা আপনি চালান, সেখান থেকে সব পোষ্ট আপনি ড্রাফটে নিয়েছেন। সেটা আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×