গোলাম আজমের মগবাজারের বাড়িটার ছয়তলায় উনি থাকেন, এখন হাতে লাঠি ব্যবহার ও একটু কুজোঁ হয়ে চলেন বয়সের ভারে। অনেক অনুরোধের পর একটা সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হলেন। ওই সাক্ষাৎকার টি নিচে দেওয়া হইলো।
মগবাজারঃ প্রায় ৮৭ বছরের জীবনটাকে আপনি কিভাবে দেখলেন?
গোলাম আযমঃ চেয়েছিলাম এইদেশ পাকিস্তান হয়ে থাকবে,আমি থাকবো ক্ষমতায় ,জামাতে ইসলামী দেশটাকে শাসন করবে,কিন্তু তা আর হলো না। ইন্ডিয়া আর মুজিবের চক্রান্তে সব নসাৎ হয়ে গেছে।
মগবাজারঃ ১৯৭১ সালটাকে ব্যাখ্যা করবেন কিভাবে আপনি?
গোলাম আযমঃ দেখ, ৭০ এর নির্বাচনে আমরা চরমভাবে হেরে যাই।আমরা তা মেনে নেই। ক্লাইভের দরুন নবাব হওয়ার সেই করুন ইতিহাস স্বরন রেখে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্বে অংশগ্রহন করিনি।
মগবাজারঃ আপনি বললেন আপনারা যুদ্বে অংশগ্রহন করেন নি,কিন্তু অনেক পত্রিকা ঐ সময় আপনাদের রীতিমত যুদ্বে অংশগ্রহন করার কথা ছেপেছিলো।
গোলাম আযমঃ ঐসব মিডিয়াকে বিশ্বাস করতে নেই।
মগবাজারঃ এবং কি আপনি যে জেনারেল টিক্কা খানের সাথে বৈঠক করেছেন, ঐ ফটোটা তো পত্রিকায় ছাপা হয়েছিলো।
গোলাম আযমঃ ঐ বৈঠকেরতো ফটো আছে,ভিডিওতো নাই। ঐ বৈঠক করেছিলাম পাকিস্তানি জেনারেলের সাথে, যেন ওরা যুদ্ব বন্ধ করে। আমার জীবনী গ্রন্হ "জীবনে যা দেখলাম " বইতে আমি উল্লেখ করেছি ,বাড্ডাতে পাকিদের হামলার সময় আমি অনেক বাঙ্গালির জীবন বাচিয়েছি।
মগবাজারঃ আপনি মিথ্যা বলছেন, এই দেখুন আপনাদের পত্রিকা সংগ্রাম আপনাদের যুদ্ব করার আহবান জানাত বাঙ্গালীদের বিরুদ্বে(আমার ব্যাগ হতে কয়েকটা পুরোনো ১৯৭১ এর সংগ্রাম তাকে দেখালাম)। বুড়ো হয়ে গেছেন, কয়দিন পর মারা যাবেন, একটু সত্যটা বলুন।
গোলাম আযমঃ দেখ, পাকিস্তান হচ্ছে একটা মুসলিম দেশ, এটা মসজিদের মত।এটা ভেঙ্গে দুই ভাগ হোক তা মুসলমানদের জন্য হারাম।আমরা ভালো দেশপ্রেমিক ছিলাম, তাই দেশ ভাঙ্গুক তা চাইনি।
মগবাজারঃ কিন্তু তাই বলে ৩০ লক্ষ লোককে এবং ২ লক্ষ নারীকে ধর্ষন করলেন?
গোলাম আযমঃ বাঙ্গালী পোলা,বুড়া সবাই দেশটা(পাকিস্তান) ভাঙ্গবার চায় ,তাই ৩০ লক্ষ লোক মারার দরকার ছিলো,যদিও কাম হয় নাই। তারপর ও আমরা প্রচার করছি যে শেখ মুজিব তিন লাখ কইতে গিয়ে ভুলে তিন মিলিয়ন বলে ফেলেছেন।
মগবাজারঃ আর ধর্ষন টা?
গোলাম আযমঃ পাকিস্তানি এত ফৌজি বাংলাদেশে এসেছে তদের স্ত্রী কে পাকিস্তান ফেলে রেখে। স্ত্রী ছাড়া ওরা কলিজা ঠান্ডা করবে কি আমেরিকায় গিয়ে?
মগবাজারঃ তাই বলে নিজ দেশের মা বোনদের পাকিদের সাথে ধর্ষন করতেন?
গোলাম আজমঃ ওয়ে ইয়্যার, ইছ মুল্লুককি বাত ছোড়ো, হামারে লিয়ে সবকুছ হালাল থা।
মগবাজারঃ আপনিতো নাকি বাংলা ভাষার সৈনিক? উর্দুতে কথা বলেন কেন?
গোলাম আযমঃ বাংলাতো হিন্দুদের ভাষা, তাই আমি উর্দুকে প্রাধান্য দেয়। ভাষা সৈনিকের ব্যাপারটা হচ্ছে , বাইচান্সে একটা মানপত্র পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে তাই।
মগবাজারঃ হিন্দুদের ভাষাতো সংস্কৃত ,আগে হিন্দু রাজারা প্রজাদের উপর সংস্কৃত ভাষা চাপিয়ে দিতো, এবং মুসলিম রাজারা চাপিয়ে দিত ফার্সী ভাষা বাঙ্গালীদের উপর। বাংলাতো বাঙ্গালীদের ভাষা।
গোলাম আযমঃ বাংলাতে কথা বলে আনন্দ পাইনা। উর্দু মুসলমানদের ভাষা।
মগবাজারঃ আচ্ছা আপনিতো রংপুরের কারমাইকেল কলেজের প্রভাষক ছিলেন অল্প কয়দিনের জন্য , কিন্তু নামের আগে অধ্যাপক লাগান কেন?
গোলাম আজমঃ তুমি দেখ, কেউ যদি আমাকে ডাকে প্রভাষক গোলাম আজম , প্রভাষক গোলাম আজম তাইলে কেমন অন্যরকম শুনায়। তাই অধ্যাপক লাগিয়েছি। কতো সুন্দর নাম অধ্যাপক গোলাম আজম।


মগবাজারঃ পাকিস্তানের পরাজয়ের পর কোথায় ছিলেন?
গোলাম আজমঃ পাকিস্তান ছিলাম, পরে পাকি হয়ে সৌদী আরব গিয়েছি। পাকি গুলাতো ফকিরনী, গরীব। সৌদী ঐ সময় পেট্রোডলারে ভাসতেছে, সৌদী গুলান আবার বলদ মার্কা। মানে ব্যাংক হিসাব বুঝতোনা, ঐ সময় লেবানিজ দেহব্যাবসায়ীদের দালালরা অনেক টাকা বানিয়েছে সৌদিতে। আর প্রত্যেক রমজানে প্রচুর যাকাতের টাকা হইতো। আমি ইয়াতীম মিসকিন কইয়া যাকাতের টাকা নিতাম, ঐ টাকা দিয়ে লন্ডনে বাড়ি করছি।
মগবাজারঃ বাংলাদেশে ফিরলেন কবে?
গোলাম আজমঃ পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়া জিয়ার আমলে তিন মাসের বাংলাদেশী এসেছি পরে আর যাই নাই। জিয়ার আমলতো আমাদের জন্য ছিলো স্বর্ন যুগ। তাইতো তাকে আমরা ইসলামী শাসক বলি।
চলবে.................................
২০/১১/১০










সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:০১