বাসায় ঢুকে দেখবো রেজা রাগত কিংবা অস্থির হয়ে আমার বাসায় ফেরার অপেক্ষায় পায়চারি করছে ফ্ল্যাটের এ মাথা ও মাথা জুড়ে,এমনটা আমার কল্পনায় ছিলো না। তবে অন্যান্য সময় বাইরে থেকে বাসায় ফিরে আসলে আমার মাঝে যে প্রশান্তির ভাব কাজ করতো,দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়ার জন্য উন্মুখ একটা ভাব কাজ করতো,আজকে সে ভাবটা আমি পাচ্ছিলাম না। গতকালের একটা মিসম্যানেজমেন্টের জন্যই হয়তো এতোদিনকার জমা ক্রোধ গুলো বেশ নির্লজ্জ ভাবেই চোখের সামনে চলে এসেছে। আজকে এই ঘরটাও অচেনা লাগছে। ইতালি আসার পর গত বছর আগে মাত্র একবারই বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফিরে এসে এই ঘরটাকে আমার ভীষণ অচেনা মনে হয়েছিলো,আর এখন আমি সেই অনুভূতিটাই পাচ্ছি,একটা অচেনা অনুভব আমাকে অস্বস্তি দিচ্ছিলো। মনে হচ্ছে অপরিচিত কারো বাসায় রেস্ট নিতে থেমেছি। শোবার ঘরে ঢুকে বারান্দার দরজাসহ খুলে দিলাম। বিছানার উপরে এলোমেলো হয়ে রেজার কম্বল,গত রাতের কাপড়চোপড় পড়ে আছে। ঐ বিছানাটায় শুতেও গা কেমন রি রি করছে।
আমি আলমারি থেকে চাদর আর বালিশের কাভার বের করে বদলে নিলাম। রেজার বাসি কাপড় বাস্কেটে রেখে দিলাম,মনে চাইলে সেগুলো ওয়াশ করিয়ে আনবে হোটেল থেকে। ইসশ কতদিন হয়েছে আমি ঘর মুছি না! নাহ্ এখন আর ঘর মুছবো না,রান্নাঘরের দরজার পেছনে ঝাড়ু রাখা আছে,ঝাড়ু দিলেই চলবে শুধু। আমি মোবাইলটা ব্যাগ থেকে বের করে রিঙ্গার অন করে চার্জে দেই,ব্যাটারিতে চার্জ শেষ হবার পথে। রেজা এর মাঝে আরও কয়েকবার ফোন দিয়েছে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে মা আর ভাইয়ার ফোনও এসেছে। হাহহাহা নিশ্চয়ই রেজা গতকাল বা আজকে সকালে আমার মা বা ভাইকে কিছু জানিয়েছে আমার ব্যাপারে, দায়িত্ববান স্বামীর পরিচয় দিয়েছে! যা খুশী করুক গে,হু কেয়ারস। আমার মাঝে গুনগুনিয়ে গানের কোনও সুর বোধ হয় খেলা করছে। আমি গুনগুন করতে থাকি।
- বাহ্ নুহা খুব ফুরফুরে মুডে আছো নাকি ?
- ওহ তুমি এসে গেছো ? ভালো তো ! খারাপ কেন থাকবো তাই বলো !
- নাহ্ কী আর বলবো ! সারারাত বাইরে কাটালে তোমার দোষ হয় না আর তোমার স্বামী লিয়ানার সাথে শুয়ে এলেই দোষ হয় কীভাবে সেটাই ভাবছি। ভাবনা শেষে জানাবো।
- ভাবতে থাকো। কিছু যায় আসে না। তবে যদি ভেবে থাকো আমি নিনোর কিংবা নিনো আমার প্রেমে পড়েছে, সেটা ভুল ভাবনা হবে। এখন ভাগো তো এখান থেকে।
- প্রেমে পড়লেই বা দোষ কী? তুমি তো শরীরের চেয়ে মনের উপর বেশি জোর দাও,স্বামী থাকতেও যে নারী সন্যাস ভাবনায় ডুবে থাকে,শরীর যার সাড়া দেয় না,সে দশ বিশ জনের সাথে বাইরে ঘুরে বেড়ালেই কী !এর চেয়ে নিনোর সাথে প্রেম করো, ভালো হবে।
- হেই মাইন্ড ইওর ল্যাংগুয়েজ। গেট লস্ট !
- আচ্ছা তোমরা মানুষরা রেগে গেলে ইংরেজি বলো কেন ? হাহাহহাহাহা
আমি কাপড়চোপড় বের করে শাওয়ার নিতে ঢুকি। জ্বরটা ছেড়ে যাওয়াতে আর হেঁটে হেঁটে বাসায় ফেরা, ঘর ঝাড়ু দেয়ার কারণে একটু গরম লাগছিলো এখন। গা কেমন ঘামছে। তাই সময় নিয়ে গোসল সারি। গোসল করতে করতেই খিদে খিদে ভাব উঁকি দিচ্ছে পেটের ভেতর। এখন রান্না করে খাবার মতো ইচ্ছে নেই। রুটি, দুধ যাইই আছে, খেয়ে ঘুম দিবো। শ্যাম্পুর বোতলে দেখি শ্যাম্পুও প্রায় শেষ। কিনতে হবে, কিন্তু হাতে তো টাকাও ফুরিয়েছে। টাকার জন্য রেজার কাছে হাত পাতবো ! ওহ মনে পড়েছে, আইরিন তো বাসা ভাড়া বাবদ পাঁচশো ইউরো দিয়েছিলো যা রেজা আমার কাছেই রাখতে বলেছে। গ্যাস বিল দিতে বলেছিলো পোস্ট অফিসে গিয়ে। হাতে টাকা পয়সা না থাকলে মেজাজটাই বিগড়ে যায়। ইশশ ভাতটা চুলায় বসিয়ে এলেই পারতাম! কী আশ্চর্য আমার মাথা থেকে খাবার চিন্তা যেন নামছেই না। শাওয়ার সেরে নিয়ে বারান্দায় আসি টাওয়েল মেলে দিতে কাপড় ছড়াবার হ্যাঙ্গারে। দুপুরের এই সময়টা কেমন ঝিম ধরা। চারদিক শুনশান হয়ে যায়। তিন তলার বারান্দায় কিয়ারা খেলছে মনে হয়। ওর হাসির আওয়াজ পাচ্ছি। আমি আমার বারান্দা থেকে ঝুঁকে কিয়ারাদের বারান্দার দিকে তাকাতে চেষ্টা করি। কিয়ারা, কিয়ারা বলে দুই একবার ডাকি। কিয়ারা আমাকে সালুতে বলে সম্ভাষণ করে। ওকে জিজ্ঞেস করি কী খেলছ? ও উত্তর দেয় -
- জকাতলি ( giocattoli - খেলনা ) দিয়ে খেলছি । বাবা বারবির জন্য একটা বাড়ি কিনে দিয়েছে। পিঙ্ক কালার।
- ওকে। ভালো থেকো পরী মেয়ে। চাও
ছোটবেলায় আমিও পুতুল দিয়ে খেলতাম। আপার পুতুলগুলো সব আমি নিয়েছিলাম,হাঁড়িপাতিলও। স্কুলের কিছু মেয়েদের সাথে খেলতাম ওর বিকেলে স্কুল ছুটির পর বাসায় ফিরলে। আপা বলতো,ওরা তোর বন্ধু না। বন্ধু হলে কী হাঁড়িপাতিল চুরি করে নিয়ে যেতো নাকি? একটা সময় আপার হাঁড়িপাতিলের খেলনা গুলো না দিলেও পুতুলগুলো দিয়ে দিয়েছিলো। মনে আছে আমার শিক্ষক কমল আপা আমাকে একটা পুতুল বানিয়ে দিয়েছিলন কাপড়ের সুতার কাজ করা চোখ,ভ্রু,চুল আর ঠোঁটটা ছিল লাল সুতার। কী সুন্দর সেই পুতুল। আমরা জুতোর বাক্সে পুতুলের ঘরবাড়ি বানাতাম। ভাবতেই নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছি। তখন হয়তো ক্লাস থ্রী ফোরে পড়তাম। আর এখনকার বাচ্চারা কতো আধুনিক বাড়ি ঘরের মতো ডামি দিয়ে খেলে। সময়ের বিবর্তনে আধুনিকতা! বারান্দায় এসে দুই তলায় নিনোদের বারান্দার দিকে চোখ গেলো,এমনিতেই,যদিও এখন নিনোর থাকার কথা না। থাকলে কী করতা ?
- উফফ নুহা যাও তো ! কী আবার করতাম, কিছুই করতাম না
- তাহলে নিনোর কথা ভাবো কেন?
- আমি ভাবলে তোমার কী? অসহ্য। আমি রান্নাঘরে আসি।
ভাত রান্না করতে হবে। দুই পট চালের পরিমানে ভাত বসিয়ে দেই একেবারে রাতের জন্য সহ। ফ্রীজ থেকে এক পিস ইলিশ মাছ বের করে পানিতে ভিজিয়ে রাখবো চিন্তা করে যখন ফ্রীজ খুলতে নিলাম, আমার জন্য দেখি আরেক বিস্ময় রেজা ফ্রীজের গায়ে ঝুলিয়ে রেখে গেছে। এটা তো সে শোবার রুমে রাখলেও পারতো। স্কচ টেপ দিয়ে আঁটা একটা কাগজ ফ্রীজের গায়ে লাগানো। আহারে আমার কেনা নতুন খাতাটার একি পরিনতি ! হাহাহাহা। মাছের টুকরোটা পানিতে ভিজিয়ে আমি চেয়ারে বসি ভাতের চুলার আঁচটা কমিয়ে দিয়ে। হাতটা মুছে রেজার চিঠিটা খুলি। চিঠির গায়ে উপরে লেখা ছিলো -
" তোমার জন্য "। ঢং কতো !
" নুহা,
তুমিই আমার আপন হইতে পারলা না,সবচেয়ে দূরের মানুষ হইয়া যাইতাছো। আমার অপরাধ কী?আমি তোমার মতো শিক্ষিত না,সুন্দর কইরা কথা বলতে পারি না এই তো ?এখন নিশ্চই কইবা আমি মিথ্যা কথা বলি,বান্ধবী নিয়া ঘুরি ! বান্ধবী নিয়া ঘুরি আর যাইই করি,অন্য পুরুষদের মতো তো দুই তিনটা বিয়া করি নাই। আর লিয়ানার সাথে আমার সম্পর্ক তো আজ নতুন না, বারো বছরের সম্পর্ক,সে আমার বন্ধু,চাইলেই তাকে ছাড়তে পারি না। তাই বলি,মাইনা নাও যেভাবে যা চলতাছে। আর আমিও চেষ্টা করতাছি ওর কাছ থেকে মুক্ত হতে কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব নিয়া তুমি কিছু বলতে পারবা না।
অনেক রাত হইছে। জানি না তুমি কই যাইয়া ঘুরতাছো এতো রাতে। একদিন তুমি আমারে বলছিলা,তোমার মাথায় রাগ উঠে গেলে আমি যাতে কখনোই তোমারে না আটকাই,রাগ কমলে তুমি এমনেই ফেরত আসবা। সেই কারণেই আমি তোমাকে আটকাই নাই যখন তুমি আমার চোখের সামনে দিয়াই বের হইয়া গেলা। নাইলে আমি কী পুলিশরে ভয় পাই নাকি? তোমার মতো এমন একটা হাঁটুর বয়সী মেয়েকে এক চিপা দিয়া ধরলে হাত পা নাড়াইবার ক্ষমতা থাকবো না আর তুমি আমার সাথে দেখাও জিদ।
বাসায় আইসা জানি দেখি তুমি স্বাভাবিক আচরণ করতাছো। অনেকদিন তোমারে ধইরা ঘুমাই না।
ইতি
রেজা "
চিঠিটা পড়ে আমার রাগে গা জ্বলছে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই এক কথা " মেনে নাও "। মানবোটা আমি কী? ওর লিয়ানার অবৈধ সম্পর্ক? ওর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো যে ও আমাকে খাওয়াচ্ছে,পরাচ্ছে,বিশ্বের একটা উন্নত দেশে এনেছে এই কারণে শুধু মাত্র? এখানে আর কিছুর দরকার নাই? ভাতের মাড় চুলায় পড়ে ছ্যাত ছ্যাত আওয়াজ হওয়াতে চুলায় চাপানো ভাতের কথা মনে পড়ে। ভাতের মাড়টা ঝরাতে দিয়ে আমি ইলিশ মাছে হালকা হলুদ আর মরিচ মাখিয়ে ভাজতে দেই ফ্রাইপ্যানে,আর একটা পেয়াজ কুঁচিয়ে নেই সাথে ধনেপাতা। খেতে বসে টের পাই কতটা ক্ষুধার্ত ছিলাম আমি। নাহ্ খেতে বসে অন্য কিছুই ভাববো না। এতো ভাবনা চিন্তা করতে করতে আমার ছোট মাথাটা আর কুলিয়ে উঠতে পারছে না ইদানীং।
খাওয়া শেষে প্লেট ধুয়ে আমি শোবার ঘরে ঢুকি। খাটে বসে মাথাটা হেলান দিয়ে রাখি একটা বালিশে আধা শোয়া হয়ে। খেয়েই সাথে সাথে বিছানায় যাওয়া ঠিক না তবুও ভালো লাগছিলো না ঘরে পায়চারি করতে। কর্ডলেসটা টেনে নেই শবনমকে ফোন করতে। ওপাশে রিসিভ হতেই বলি -
- কি রে কেমন আছিস ?
- তার আগে বল তুই কেমন আছস? মোবাইলে এতবার ফোন দিলাম ধরস না কেন?
- ভালো ছিলাম না রে। শরীরটা ভালো নেই। খুব জ্বর আর মাথা ঘুরায়। তোর কি অবস্থা? এখন শরীরটা একটু ভালো?
- আছি ভালোই মরার অসুখ নিয়া। কাল তোরে নিয়ে খুব খারাপ স্বপ্ন দেখছি রাত্রে। টেনশন হইতাছিলো তাই তোরে অনেকবার ফোন দিছি। তার উপর তোর জামাই ফোন দিছে, আমি তো আরও ভয় পাইছি। তারে তো আর জিগাইতে পারি না সে ফোন দিছে কেন।
- হহাহহা তাই নাকি? কী বলে ফোন করে?
- এমনেই কয়,ঐদিন শুনলাম আপনার হাসপাতালে যাইতে হইছে তাই খোঁজ খবর নিলাম এখন কেমন আছেন। আর কইলো বাসায় আইসা বেড়াইয়া যাইতে। কিন্তু এরে কেমন জানি বিমনা বিমনা লাগলো। তোর জামাই কি বাসায় নাকি ?
- আরে নাহ্,কাজে গেছে।
শবনের সাথে আজ আমার কথা অন্যান্য দিনের মতো জমে ওঠে না বলেই ও বারবার জানতে চায় - কি রে নুহা,সত্যি করে বল তো তোর কি হইছে? তোকে এমন লাগে কেন ?
আমি শুধু হাসি। ও আমার হাসিতে আরও বিভ্রান্ত হয়। এক সময় বলি - এখন রাখি রে শবনম,ঘুম পাচ্ছে,ঘুমাবো।
শবনমের ফোন রেখে দেয়ার পর মনে পড়ে সন্ধ্যায় তো আইরিনের এ বাসায় ওঠার কথা। এখন ঘুমিয়ে গেলে রাত আটটা নয়টার আগে ঘুম ভাঙবে না। যেহেতু তার কাছ থেকে বাসা ভাড়ার জন্য অগ্রীম টাকা নিয়েছি অন্তত তার রুমটা ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করে একবার হলেও মুছে দেয়া দরকার আর আলমারির ভেতর থেকে পুরনো জঞ্জালও পরিষ্কার করতে হবে। বিছানায় আধা শোয়া হয়ে থাকতে আরাম লাগলেও উঠে বসি। কোণার দিকের ঐ দরজাটা খুলতেই একটা গুমোট ভাব টের পাই। জানালা খুলে দিয়ে আমি রান্নাঘর থেকে ঝাড়ু নিয়ে আসি আর বালতিতে পানির সাথে ঘর ক্লিনের মেডিসিন মিশিয়ে নেই। ঘর ঝাড়ু বা মোছার আগে আলমারিটা পরিষ্কার করা দরকার ভেবে আমি আলমারিটাই আগে খুলি। পুরনো একটা কম্বল, রেজার ব্যবহৃত কিছু কাপড় বের করে একটা কাপড়ের টুকরো দিয়ে আলমারির তাকগুলো মুছে নেই। ড্রয়ার খুলে দেখি কিছু পুরনো বিলের কপি, কিছু অন্যান্য এডভারটাইজমেন্টের কাগজ আর একটা এনভেলাপ। অনেক ধুলো পড়ে আছে এনভেলাপটায়। ধুলো ঝেড়ে প্যাকেটটা খুলতেই দেখি কিছু ছবি। রেজার ছবি। যে সময়টায় এই ছবি তোলা রেজা তখন মিলানে বেড়াতে গিয়েছিলো। তীব্র শীত পড়েছিলো বলে আমি সে সময়টায় বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়েছিলাম, ওর কাজের চাপ আছে ও যেতে চায়নি। ছবিতে তারিখটা দেখে হিসেব করলাম। একটার পর একটা ছবি দেখতে দেখতে এমন কিছু ছবি মাঝে এসে পড়ে যার জন্য প্রস্তুতি ছিলো না অবশ্য। রেজা আর লিয়ানার ছবি। আমাকে সে সময় ও বাংলাদেশেও ফোন করতো। অবশ্য ফোনে তো আর দেখা সম্ভব না ও কাজ শেষ করে বেরিয়ে ফোন করলো নাকি লিয়ানার কোমর জড়িয়ে গল্প করতে করতে ফোন দিতো।কিন্তু আমার সাথে এতো নাটক, লুকোচুরির মানে কি? একেকটা ছবিতে কী পোজ মেরে মেরে তুলেছে ! আমি যে ওর বৌ তাও তো কখনো ওর সাথে এভাবে ছবি তুলিনি!
- এজন্য বুঝি কষ্ট হচ্ছে? হাহাহহা কী দুঃখ!
- ধ্যাত বিরক্ত করবে না। যাও এখান থেকে
- যুদ্ধের প্রস্তুতি নেবে নিশ্চয়ই? ভালো ভালো। যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার আগে একবার নিজের দিকে তাকিও। গত রাত্রে তুমিও খুব একটা ভালো কাজ করো নি কিন্তু। অচেনা একটা ছেলের সাথে ধেই ধেই করে ঘুরতে চলে গেলে। তুমি অসুস্থ ছিলে বলে রক্ষা, আর যদি অসুস্থ না হতে তখন কী হতো?
- কী হতো? নিজের গলার আওয়াজই আমার কাছে অচেনা লাগে। কেমন কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে নুহাকে জিজ্ঞেস করি।
- স্রোতের জলে ভেসে যেতে। হহাহহাহা। ওর এমন ঘর কাঁপানো হাসি শুনে আমার ভয় লাগে। আরে নুহা তুমি নিজেও তো উপোসী। রেজার সাথে শারীরিক সম্পর্ক হচ্ছে ঠিকই কিন্তু মন থেকে তো তুমি উপভোগ করছ না। আর নিনোকে তো তোমার ভালোই লাগে। ওর সাথে ইন্টেমেসি হলে মন্দ হতো না অবশ্য
আমিও ভাবি, অন্তত ভাবতে চেষ্টা করি। কাল কি জ্বরের ঘোরেই এমন করে নিনোর সাথে বেরিয়ে গিয়েছিলাম? নাকি রেজার পৈশাচিক আচরণে একটু একটু করে আমার ভেতরটা গতকাল রাতে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিলো? আমি কি রেজাকে ভালোবাসতে চেষ্টা করিনি? ও তো সেই বিয়ের আগে থেকেই লিয়ানার সাথে জড়িয়ে আছে! আর কতো আমি নিয়মনীতি মেনে চলবো? এভাবে জোড়াতালি দিয়ে আর যাই হোক, সংসার হয় না। সেটা রেজা বোঝে না আর বোঝে না বলেই ও কখনো নিজেকে বদলাতে চায়নি। ইউরোপিয়ান হাওয়া গায়ে লাগিয়েই চলেছে আজ অবধি। সে যাই হোক, লিয়ানা যতই টুপি আর মাফলার দিয়ে ওকে আবৃত করে রাখুক, ওর কাঠামো আমার চেনা আর কিছু ছবি তো হোটেলের রুমেই তোলা। কিন্তু রেজা এসব ওর কাছে রেখেছে কেন ঠিক বুঝলাম না। সরাসরি আমাকে চলে যেতে বলতে পারছে না বলে একে একে ওর জাদুর ঝাঁপি খুলছে নাকি? তাহলে আমাকে বিয়েই বা কেন করলো! আমাদের গ্রামের ছেলে, চেনা ঘর, বংশ পরিচয় দেখেই না আমাকে ওর সাথে বিয়ে দিলো আমার পরিবার। আর এখন এসব কী দেখছি? জানি মা বাবাকে এসব বলে বা জানিয়ে লাভ নেই তবুও জানানো দরকার তাদের মেয়ের আদরের জামাই সম্পর্কে। আমার বাবা খুব কষ্ট পাবে শুনলে। কিন্তু এভাবে কী করে ঘর করা সম্ভব এর সাথে। লিয়ানা যদি রেজার অতীত কাহিনী হতো আমার কিছু বলার থাকতো না। কিন্তু এ তো এখন রোজকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি ইচ্ছে করলেই ওকে হয়রানি করতে পারি এ দেশের আইনের সহায়তায় কিংবা আত্মীয়দের দিয়ে কিন্তু তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপে কী ফাটলের দাগ মুছে যায়?
আলমারির বাতিল কাপড়চোপড়, কম্বল এগুলো নিয়ে আমি একটা বড় পলিথিনে ভরে আমাদের ফ্ল্যাটের মেইন গেটের কাছে রাখি আর বাকি কাগজপত্র নিয়ে রান্নাঘরের ময়লার বাস্কেটে ফেলে দেই। ঐ রুম পরিষ্কার করতে গিয়ে পুরো হাঁপিয়ে গেছি। এনভেলাপে রেজা আর লিয়ানার ছবি গুলো ভরে শোবার রুমে গিয়ে খাটের পাশের সাইড টেবিলে রেখে আমি ফ্রেশরুমে যাই হাত ধুয়ে আসতে। হাত ধুতে ধুতে মনে পড়ে আমাদের এই ফ্ল্যাটের বড় সমস্যা হচ্ছে ফ্রেশরুম মাত্র একটা। এই যে মহিলা কে ভাড়া দেয়া হলো, নিশ্চয়ই এই ফ্রেশরুমে যাওয়া আসা নিয়েও একটা সমস্যা হবে। আর সমস্যা না হোক, বাইরের একটা মানুষ এ বাসাটায় হাঁটাহাঁটি করবে, যখন তখন বারান্দায় আসবে, রান্নাঘরে আসবে। ধ্যাত! ভাবলেই মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়।
- হাহহাহাহহা মেজাজ খারাপ হবেই তো! টাংকি মারা বন্ধ হয়ে যাবে যে নিনোর সাথে ! হাহাহহাহা
- ধ্যাত কী সব বাজে কথা বলছো! টাংকি কবে মেরেছি আমি ওর সাথে! আর এগুলো কী ধরণের নোংরা ভাষা !
- টাংকি মারোনি বলে যে এখন মারবে না তার নিশ্চয়তা কি !
চলবে...