হোটেল সোনারগাঁয়ে স্বপ্নের ইফতার বাস্তবায়নঃ
জব করি সনামধন্য একটা এন জি ও তে। প্রটোকল জনিত দ্বায়িত্ব পালন করতে বিদেশী মেহমানদের নিয়ে প্রায়ই যেতে হয় হোটেল সোনাগাঁয়।বাসায় ফিরে মাঝে মাঝে স্ত্রী সন্তানদের সাথে হোটেল সোনারগাঁর যৌলুশের গল্প করি...। ৯ এবং ৭ বছরের মেয়ে দুটা অনেকবার বায়না ধরেছিল-এক দিন হোটেল সোনারগাঁয় নিয়েযেতে-শুধু দেখবে বলেই। যা বেতন পাই-তা দিয়ে মোটামুটি ভালোভাবেই চলে যায় আমার ছোট্ট পরিবারের। প্রতি মাসে গ্রামে থাকা মা-বাবা, ভাই-বোনদের জন্যও সাধ্যমত সহায়তা করতে পারি। কিন্তু মাসশেষে বাড়তি টাকা পয়শা জমা থাকেনা মোটেই। আমি চেস্টা করছিলাম কিম্বা সুযোগ খুঁজতেছিলাম কোনো উপলক্ষে যদি স্বপরিবারে একবার হোটেল সোনারগাঁ গিয়ে সকলকে নিয়ে এক বেলা খাওয়াতে পারি...সেই সংগে অবশ্যই হোটেলটি ঘুরিয়ে দেখানো। আমার সেই সুযোগ নিতে গতকাল গিয়েছিলাম হোটেল সোনারগাঁ-এ স্বপরিবারে ইফতার করতে।
১২ টি আইটেমের জন্য আমরা ফিক্সড প্রাইসের ইফতারের অর্ডার দেই-প্রতি জন ৬শত টাকার ইফতার বক্সের(প্লেট)। যথা সময়ে ইফাতার সাজানো প্লেট আমাদের চার জনের সামনে হাজির করা হলো।ইফতারের আইটেম দেখে আমার স্ত্রীর চোখ ছানাবড়া। আমারো খারাপ লাগছিল-কিন্তু সন্তান দুটির মুখের দিকে তাকিতে কস্ট গোপন করলাম। প্রতি প্লেট ৬ শত টাকার ইফতারীতে যেকটা আইটেম ছিল-যা পাঠকদের সাথে শেয়ার করছিঃ-
১। লেবুর শরবত-১ গ্লাশ
২। বেগুণী - ২ পিস
৩। জিলাপী - ১ পিস(অমন ছোট্ট জিলাপী আমার স্ত্রী আগে কোনো দিন দেখেনি)
৪। আলুর চপ - ১ পিস (অমন ছোট্ট আলুর চপ আমার স্ত্রী আগে কোনো দিন দেখেনি)
৫। শশা/গাজর/লেটুশ পাতা -২ পিস
৬। পিয়াজু -২ পিস
৭। ছোলা - কাঁচা ছোলা গুণে গুণে ১০ টি এবং সিদ্ধ ছোলা টেবিল চামচের এক চামচ পরিমান।
৮। নিমকী - ১ টি
৯। খেজুর -২ টি
১০। হালিম -১ কাপ পরিমান
১১। মুড়ি -এক মুষ্ঠী
১২। ছোট্ট পানির বোতল-১ টি।
ভেবেছিলাম-১২ পদের ইফতারী সব খেয়ে শেষ করা যাবেনা। ২ প্লেট ৪ জনে খেয়ে নেবো। বাকী ২ প্লেট প্যাকেট করে বাসায় নিয়ে যাবো। দুর্ভাগ্য এমনই-আমাদের ৪ জনকে যে পরিমান ইফতারী দেয়া হয়েছে-তার থেকে অনেক বেশী ইফতারী প্রতিদিন আমরা প্রত্যেকেই বাসায় খাই। ৬ শত টাকার ইফতারীর দাম যেকোনো রেস্টুরেন্টে সাকুল্যে ২৫/৩০ টাকার বেশী হবেনা-(পানির বোতল প্রতিটা ১০ টাকা হিসেবে ধরে)।
ইফতারী শেষে আমার স্ত্রী এবং সন্তানদের মন খারাপ(আমারও মন খারাপ)। আমি তখন সত্যজিত রায়ের বিখ্যাত "হীরক রাজা" সিনেমার একটা ডায়লগ বল্লামঃ-
"বেশী খেলে বাড়ে মেদ
অনাহারে নাই ক্ষেধ"!
ইফতারী খেয়ে যারপর নাই বিমর্ষ হয়ে বাচ্চাদের একটু ঘুরিয়ে দেখাই......। পেস্টি শপ থেকে সামান্য কিছু কিনে ফেরার সময় দেখি-"ক্যাফে বাজার" ইফতারীর মুল্য তালিকা। ভোজনবিলাসীরা টাকার শ্রাদ্ধ করতে তাদের ইফতারটি সেরে নিতে পারেন ক্যাফে বাজারের মনোরম আয়োজনে। ক্যাফে বাজারে রয়েছে জন প্রতি-৬০০ টাকায় ফিক্সড ইফতারী(যা আমরা খেয়ে পাঠা সেজেছি)১০০০ টাকা মূল্যের ব্যুফে ইফতার। আরো রয়েছে পার্সেল বক্স। প্রিমিয়ার ৭৫০/৮৫০ টাকা, ডিলাক্স ৯৫০/১০৫০ টাকা। সেট মেন্যু ইফতার পাওয়া যাবে চার রকমের। মেন্যু ১. ৬০০ টাকা; মেন্যু ২. ৭০০ টাকা; মেন্যু ৩. ৮০০ টাকা; মেন্যু ৪. ১৫০০ টাকা। মেন্যু ৪-এ ইফতারের সাথে ডিনারও পাবেন। এখানে স্পেশাল হিসেবে পাবেন জিলাপী ও হালিম। জিলাপী (এখানে ৩ ধরনরে জিলাপী পাওয়া যায়)দাম যথাক্রম- ১ কেজি ৪০০, ৬০০ এবং ৮০০ টাকা, হালিম-ফ্যামেলী সাইজ-১৪০০ টাকা(৬-৮ জনের জন্য) (মিডিয়াম) ৮০০ টাকা, হালিম (ছোট) ৫০০ টাকা।
ব্যুফে ইফতারে রয়েছে ৪০টির বেশি আইটেম। ভাজা-পোড়ার মধ্যে আছে বেগুনি, আলুর চপ, পেঁয়াজু, কয়েক ধরনের কাবাব, ফ্রাইড চিকেন ইত্যাদি। ফ্রুট আইটেমে রয়েছে তরমুজ, জাম্বুরা, শশা, গাজর, টমেটোসহ পুষ্টিকর সব ফল। পানীয়তে আছে দুধ, শরবত, মাঠা, আপেলের জুস। মিষ্টান্ন আইটেমে আছে ফিরনী, সেমাই, বাকলায়া মিষ্টি, ওমো আলী মিষ্টিসহ বেশ কয়েক পদের মিষ্টান্ন। আরো আছে মাটন ও বিফ হালিম।