somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে ২০১৪ বিশ্বকাপ, পর্যটনের এক বিশাল সম্ভাবনা

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে যখন বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেট হয়েছিলো তখন আমি পর্যটন বিষয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম। সেই লেখাটার কিছু অংশ এখানে প্রথমে তুলে ধরি। এরপর বর্তমান পরিস্থিতিতে এখনই যে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন সেটি বলব।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১১ এর আগে আমার লেখাঃ

"আমার এক ডাচ বন্ধু সেদিন আমাকে বলছিল, বিশ্বকাপ দেখতে বাংলাদেশে যাওয়ার ইচ্ছার কথা। বাংলাদেশ বনাম নেদারল্যান্ডের ম্যাচ চট্টগ্রামে হবে। ইংল্যান্ডের ম্যাচও চট্টগ্রামে হবে। পাহাড়-বন-সমুদ্রে ঘেরা চট্টগ্রামের সৌন্দর্যের কথা সে গুগলে সার্চ করে পেয়েছে। তো সে চাইছিল এই সুযোগে খেলা দেখার পাশাপাশি কক্সবাজারে সমুদ্র ঘুরে আসবে। কিন্তু সে যাবে না। আমি কারণ জানতে চাইলে সে বলল, “তোমাদের দেশে খেলা দেখার জন্য কোন বিশেষ ‘ট্যুর প্যাকেজ’ নেই। আমি আমার পরিবার নিয়ে তো শুধু খেলাই দেখতে যাবো না। ঘোরার জন্য গাইড প্রয়োজন। সেজন্য নাগপুরে খেলা দেখতে যাবো। তাদের অনেকগুলো ‘ট্যুর প্যাকেজ’ আছে। আমি চিন্তায় আছি কোনটা বেটার জানার জন্য।” আমি বিশাল ধন্ধে পরে গেলাম। গত কয়েকদিন ধরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে অনেক কিছু পড়েছি। কিন্তু এই ব্যাপারটা ভাবিনি। সে আমাকে একটা বিজ্ঞাপনী ম্যাগাজিন দেখালো। সেখানে ভারত-শ্রীলঙ্কা তো বটেই, এমনকি পাশ্ববর্তী দেশ নেপালেরও বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে বিশেষ ট্যুর প্যাকেজ আছে। বিশ্বকাপ শেষে দেশ ফেরত দর্শকদের জন্য স্বল্পমূল্যে হিমালয় দেখানোর ব্যবস্থা। আর ভারত-শ্রীলঙ্কার কথা তো বাদই দিলাম। বিভিন্ন কোম্পানী কত আকর্ষণীয়ভাবে ট্যুরিস্টদের কাছে নিজেদের এলাকাকে প্রদর্শন করবে সে নিয়ে অবিশ্বাস্য সব অফার! কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, অনেক খোঁজার পরও বাংলাদেশের কোন একটি ট্যুর প্যাকেজও সেই ম্যাগাজিনে খুঁজে পেলাম না। গুগল করলাম। বাংলাদেশি কোন ট্যুর ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানীর কোন খবর নেই। শুধু ক্রিকইনফোর কল্যাণে যেসব জায়গায় খেলা হচ্ছে সেসব জায়গার কিছু হোটেলের বর্ণনা দেয়া আছে। কিন্তু কোন বিশেষ প্যাকেজ নেই ট্যুরিস্টদের আকর্ষিত করার জন্য। আমি বাংলাদেশ পর্যটন মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে গেলাম। বিশ্বকাপ বলে যে একটা কিছু বাংলাদেশে হচ্ছে তার কোন খবরই নেই। http://www.mocat.gov.bd/

আমাদের দেশটা অনেক ছোট একটা দেশ। কিন্তু ছোট্ট এই দেশটাকে প্রকৃতি কি কম কিছু দিয়েছে?? বরং সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি বলে দুহাতে ভরিয়ে দিয়েছে। পর্যটন মন্ত্রণালয় বসে বসে কী করছে? জনগনের টাকায় এই মন্ত্রণালয়ের দরকারটাই বা কি? বিসিবি কি পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে এই বিষয়ে একটা বৈঠকও করেছে? আমাদের প্রাইভেট ট্যুরিজম কোম্পানী গুলোই বা কি করল? আমার যে ডাচ বন্ধুটির কথা বললাম তার মতো আরো অনেকের কাছে কি কক্সবাজারকে তুলে ধরা যেত না? আমাদের কি জাফলং, মাধবকুন্ডু নেই? একটি বিশ্বকাপ আয়োজন শুধু খেলা আয়োজন নয়। বরং একটি দেশের পরিচয়, সংস্কৃতি পুরো বিশ্বের কাছে তুলে ধরার জন্য সবচেয়ে বড় উপায়। আমরা এই উপায়টা আগে কখনো পাইনি, ভবিষ্যতে কখনো পাবো কিনা তা জানিনা। এই সুযোগটা আমরা এভাবে হেলায় হারালাম কেন? আমরা শুধু খেলা আয়োজন বাদে আর কি করছি? ট্যুরিস্টদেরকে টার্গেট করে তো কিছু করা দরকার।"


বর্তমান পরিস্থিতিঃ

আমার লেখাটার একটা ভালো রকমের জবাব পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়েছিলো যখন "Beautiful Bangladesh" শিরোনামের ভিডিওটি বানানো হয়। বিদেশে বসে সেই ভিডিও দেখে আবেগে চোখে পানি আসেনি এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। কিন্তু তবুও সেটা শুধু এক ভিডিওতেই সীমাবদ্ধ ছিল। একটিভলি সেই বিশ্বকাপে পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে সেরকম কিছু করা হয়নি। হয়তো আরও অনেক বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যেতো। যেটা করা যায়নি। ২০১১ এর বিশ্বকাপ ছিল তিন দেশের সম্মিলিত আয়োজনের বিশ্বকাপ। এবার ২০১৪-তে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপটা সম্পূর্ণই আমাদের নিজেদের! এবার আমার ডাচ বন্ধুর মতো কোন বন্ধুর সাথে এখনও দেখা হয়নি। তবে এবার খেলা হবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে (২টি কোয়ালিফায়িং ম্যাচ)। মেয়েদের বিশ্বকাপ পুরোটাই হবে সিলেটে! আমাদের দেশে তথা উপমহাদেশে মেয়েদের ক্রিকেট এখনো এতোটা জনপ্রিয় না হলেও অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে কিন্তু অনেক জনপ্রিয়। ইংল্যান্ডে মেয়েদের দলেরও আলাদা বার্মি-আর্মি গ্রুপ আছে। মূল পর্বের খেলার অর্ধেকই হচ্ছে চট্টগ্রামে। ইংল্যান্ডের খেলা সেখানে আছে। তার মানে বার্মি-আর্মির বিশাল দল আসছেই। দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, নিউ জিল্যান্ড আছে। চট্টগ্রাম, সিলেটের পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে কিন্তু আমরা প্রায়ই অনেক গর্ব করি। সিলেট ডিভিশনাল স্টেডিয়ামকে বলা হচ্ছে সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর স্টেডিয়ামগুলোর একটি। গ্যালারিতে বসলে নাকি মনে হয় চারপাশের সবুজ টিলাভরা বাগানের মাঝে বসে আছি। চট্টগ্রাম হচ্ছে পাহাড়ের সৌন্দর্যের এলাকা, রাঙামাটি আছে, বান্দরবান আছে। আর আছে কক্সবাজারের সমুদ্র!!! ট্যুরিস্ট আকর্ষণের জন্যে এর চেয়ে বড় সুযোগ আমাদের আর কী থাকতে পারে? ২০১০ সালে ভারতে যখন কমনওয়েলথ গেমস হয়, তখন দেখেছিলাম কমনওয়েলথ গেমস নিয়ে ওদের পর্যটন ওয়েবসাইটে আলাদা করে একটা পেজ খোলা হয়েছিলো। আলাদা করে ট্যুর প্যাকেজের ব্যবস্থা।

কিছুদিন আগে আমি কানাডায় গিয়েছিলাম। নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখতে। সেখানে গিয়ে পর্যটনের মাধ্যমে কানাডা সরকার কী পরিমাণ টাকা আয় করে, কী অসাধারণ systematic উপায়ে তার একটা নমুনা দেখতে পেয়েছিলাম। লাখ লাখ মানুষ আসছে নায়াগ্রা দেখতে। দূরের থেকে দেখতে চাইলে ভালো। কিন্তু যখনই নায়াগ্রার আরও কাছে গিয়ে দেখতে হয় তখনই ওদের বাঁধাধরা নিয়মের মধ্যে যেতে হয়। পুরো নায়াগ্রার আশেপাশে তারা মোটামুটি সুন্দর সুন্দর আরও কিছু মিউজিয়াম, পাখির conservatory, প্রজাপতির conservatory করেছে। সেসব জায়গায় যেতে হলে নায়াগ্রার প্রধান বুথ থেকেই টিকেট কিনতে হবে। অন্য কোনভাবে সেগুলো দেখার উপায় নেই। এসব জায়গায় নেয়ার জন্যে তাদের আলাদা বাস সার্ভিসও আছে। পুরোটাই "সিটি অফ নায়াগ্রা ফলস" এর অফিস থেকে কন্ট্রোল করা হয়। পুরো টাকাটাই সরকার পায়। এখানে এমনকি প্রাইভেট কোন কোম্পানির সাথেও ট্যুরিস্টদের ডিল করবার কোন ব্যবস্থা নেই। যে বাস কোম্পানি এখানে সার্ভিস দিচ্ছে সেই কোম্পানি হয়তো সরকারের সাথে ডিল করেছে। কিন্তু ট্যুরিস্ট হিসেবে আপনাকে টিকেট কিনতে হবে নায়াগ্রা কর্তৃপক্ষের মূল বুথ থেকেই। তারা আলাদা করে সবকিছু দেখানোর ব্যবস্থাও করেছে। আবার প্যাকেজ কিনলে একবারে "Journey to Behind the Falls", "Butterfly Conservatory", "Flower Garden" ইত্যাদি জায়গায় যাওয়া যাবে। যারা সেখানে যায় তারা যেহেতু ঘুরতে যায় সুতরাং বাধ্য হয়ে এগুলোর টিকেট কেটে দেখে। এছাড়া আর কোন উপায় নেই। তারা প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকদের কাছ থেকে লাখ লাখ ডলার আয় করে নিচ্ছে! এতো বিশদভাবে এই ব্যাখ্যা দেবার একটাই কারণ, বাংলাদেশ পর্যটন কী কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সুন্দরবন অথবা চা-বাগানকে ঘিরে এমন কোন ব্যবস্থা নিতে পারে না?

মূল কথা হচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপটা সম্পূর্ণ আমাদের আয়োজনে করা। মার্চ মাসের শুরু থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পুরোটাই আমাদের দেশটা বিদেশী দর্শকদের পদচারণায় মুখর থাকবে। এই পুরো ব্যাপারটা যদি এখন থেকেই হোটেলগুলোর সাথে কথা বলে সমন্বয় করা যায় তাহলে আমাদেরই লাভ। বিসিবি, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উচিত যেভাবেই হোক আমরা যদি আমাদের পর্যটনের সুন্দর জায়গাগুলোকে এখন থেকেই ঠিকমতো পরিকল্পনা করে আমাদের পর্যটনের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দিতে পারি। নানা ধরনের "ট্যুর প্যাকেজ" ঘোষণা করতে পারি, তাহলে লাভটা আমাদের পর্যটন মন্ত্রণালয়েই যাবে।

সরকার কী এখন থেকেই একটু ভেবে দেখবে? একটিভলি কাজ করবে?

-শেখ মিনহাজ হোসেন
নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র,
ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×