ঘটনা ১: গ্রামের দরিদ্র কৃষক রহিম মিয়া, তার ছেলেকে মাদ্রাসায় দিয়েছিলেন। ছেলে এবার দাখিল পরীক্ষা দিয়েছে। মাদ্রাসায় গিয়ে হুজুরের কাছে তিনিও শুনতে পান, তার ছেলে জিপিএ ৫ পেয়েছে। ছেলের সাফল্যে উল্লাস করবার সময় তার নেই। কারণ, গত ৫ই মে হুজুররা তার ছেলেকে নিয়ে ঢাকা গেছে! হুজুররা চলে এসেছে, কিন্তু ছেলে এখনও আসেনি। ছেলে ফোন করেছিলো, গ্রামের দোকানে। বলেছে যে, সে এখন হাসপাতালে আছে। তার কাছে টাকাও নেই ঢাকা আসার! রহিম মিয়া ছেলের সাফল্যে খুশি, কিন্তু তার মাথায় এখন ছেলের চিন্তা। ঢাকা গিয়ে ছেলেকে নিয়ে আসার চিন্তা!
ঘটনা ২: আজ বাবুলেরও এসএসসি পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। কিন্তু ফল দেখতে যেতে পারেনি আজ। সাভারে রানা প্পলাজায় তার মা কাজ করত! এখনও সে ওখানেই ঘোরাফেরা করছে, মায়ের খোঁজে! হঠাৎই একটা ফোন পায় সে, সেনাবাহিনীর কেউ ফোন করেছে। তারা এক মহিলার লাশ খুঁজে পেয়েছে। বাবুল যেন শনাক্ত করতে আসে। বাবুল দৌড়ে যায়। পচা-গলা লাশ দেখে মায়ের চেহারা চিনতে পারে না সে, কিন্তু ঠিক বুঝে এটাই তার মা! কান্নায় ভেঙে পড়ে সে! তখনই তার ফোনটা বেজে উঠে, এক বন্ধু ফোন করে বলে, "বাবুলও জিপিএ ৫ পেয়েছে!" বাবুল শুনেই ফোন রেখে দেয়। জিপিএ ৫ শোনার সময় এখন তার নেই, মায়ের দাফন-কাফন করতে হবে!
ঘটনা ৩: সিএনজি চালক সবুজ মিয়া আজ হরতালের মধ্যে সিএনজি চালাতে বের হয়েছেন। প্রথমে ফুটপাতে দোকানে বসতেন, সেটা একবার উচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিলো। এখন অনেক কষ্টে সিএনজি চালিয়েই পরিবার চালান! তার মেয়েটা এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। মেয়ে আজীবনই পড়াশোনায় ভালো! হঠাৎ ফোন আসে মেয়ের। মেয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে! দরিদ্র সবুজ মিয়া জিপিএ ৫ বুঝেন না। কিন্তু এতটুকু বুঝেন মেয়ে খুব ভালো ফল করেছে। ফোনে মেয়েকে বলেন, "তোমার আম্মাকে কও, আইজকা বাসায় পোলাও পাকাইতে! পুরা বস্তিতে খাওয়ামু! আমি আইতাসি।" বাসায় আসতে আসতে আনমনেই সবুজ মিয়া ভাবতে থাকেন, "মেয়েকে নিয়ে তার কত্তো স্বপ্ন। মেয়ে বড় কিছু হবে।" হঠাৎ-ই কয়েকজন মানুষ তার সিএনজিটা থামিয়ে দেয়। এরা হরতাল সমর্থক! কিছু বুঝে উঠার আগেই, সবুজ মিয়া ভিতরে থাকতেই তারা সিএনজি তে আগুন ধরিয়ে দেয়! সবুজ মিয়া ভিতর থেকে বেরুতেও পারেন না! ওদিকে বাসায় সবুজ মিয়ার স্ত্রী আজ তার সবচেয়ে দামী শাড়িটা পড়েছেন, বস্তিতে পোলাও রাঁধছেন। মেয়েটাকে নিয়ে বস্তিতে হইহই পড়ে গিয়েছে! রাত পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করে। সবুজ মিয়া আর আসে না!
--
উপরের প্রত্যেকটা ঘটনাই কল্পিত ঘটনা! হয়তোবা এর একটা সত্যি হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে! কিন্তু কাল এসএসসি পরীক্ষার ফল বেরুবে! সবাই তার প্রত্যাশামাফিক ফলাফল অর্জন করুক। এমনকি আত্মীয়ের বাসায় মিষ্টি দিতেও যেন সবাই নিরাপদে যেতে পারে সেটাই কামনা। আর খারাপ হলে হতাশার কিছু নেই, জীবন এখানেই শেষ না, বরং শুরু মাত্র!
সকল মাধ্যমিক ফলাফল প্রত্যাশীদের প্রতি শুভকামনা এবং দোয়া!