মা'কে নিয়ে কিছু লিখবো ভাবছি বহু আগ থেকে| গুছিয়ে উঠতে পারিনি| এই মা দিবসকে সামনে রেখে পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন মানুষের মা নিয়ে অনুভুতি পড়ে একটু উৎসাহ পেলাম| তবে নিরুৎসাহিতও হয়েছি কিছুটা!
লেখকদের অধিকাংশৈ সেলিব্রিটি| সাধারন যারা আছে তারাও উচ্চবিত্তের দৃষ্টিকোন থেকে তাদের মায়ের বর্ননা দিয়েছে| আমার গল্পটা কেমন যেন বেখাপ্পা লাগে| কারো মায়ের সাথেই আমার মা'কে মিলাতে পারলাম না!
আসলে এই টীন এজ বয়সেই মায়ের প্রতি ভক্তি দেখানোটা কিছুটা আনকোরা লাগছে| মা'কে কতটা অবহেলা করছি তার উপর বোধয় নির্ভর করে কতটা মিস করবো!
এভাবে মনে হওয়ার একটা কারন আছে| কলকাতার একটা চ্যানেলে দেখেছিলাম, লোকটা তার মা'কে সেলফিশ বলছিল| ছোটবেলায় তাকে ছেড়ে, তার বাবাকে ছেড়ে অন্য লোকের হাত ধরে ঘর ছাড়ায়!
তো বলতে যাচ্ছিলাম আমার মায়ের কথা| নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মা'দের গল্প অন্যরকম হয়| এই মা'রা জানেইনা যে তাদের উদ্দেশ্যে দিবস উদযাপিত হয়!
আমরা তিন ভাই এক বোন| সবার ছোট এবং রুগ্ন হৌয়ার কারনেই সম্ভবত মা আমাকে বেশি ভালোবাসে| মায়ের এই অধিক ভালোবাসার কারনে আমি একটু ট্যারা প্রকৃতীর হয়েছি| তাই বোধয় বাবা ভাইয়ারা আমাকে এতটুকু সহ্য করতে পারেনা!
বাবা চেয়েছিলেন আমি মাদ্রাসা লাইনে পড়ালেখা করি| সেই সুত্রে প্রায় আট বছর হাফেজ হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছি!
তিনটি হেফজখানা পরিবর্তন করেছি| একটু একটু করে ত্রীশ পারা শেষ করেছি(সার্টিফিকেটেড)| কিন্তু হাফেজের নিদর্শন হলো একসাথে সম্পুর্নটা মুখস্থ রাখা| আমি সর্বোচ্চ পাঁচ পারা একসাথে রাখতে পেরেছি!
কত্ত ঔষধ তাবিজ করা হলো মেমরী স্পেস বাড়ানোর জন্য তার ইয়ত্তা নেই| প্রতিদিন সকাল বিকেল এক চিমটি করে কালোজিরা ফেলে দিতাম মাদ্রাসার পেছনে! অন্য ছেলেরা যেখানে মাসে একবার বাড়িতে যেত, সেখানে এক সপ্তাহ হলেই নাকি আম্মু কান্নাকাটি লাগাতো!
আম্মুর দুর্বলতা প্রকাশকেই আমার হাফেজ না হৌয়ার কারন হিসেবে দেখা হয়| কিন্তু আমি জানি, আম্মুর বাড়তি আদর দেখানোটাও ছিল আমাকে উৎসাহীত করা| তবু আমার দ্বারা হলোনা!
সবাই ঐক্যমত পোষন করলো, আমার দ্বারা কিছুই হবেনা| আম্মুর অবস্থা দেখে বুজলাম তিনি বিশ্বাস করলেও নিজের কপাল ভেবে মেনে নিয়েছেন| আমার প্রতিটি পদক্ষেপে আম্মুর এমন বোকা সমর্থন একেক সময় আমারো খুব বিরক্ত লাগে!
এইতো গেল আম্মুর সাথে আমার এবং আর সকলের বর্তমান অবস্থা| এখন বলি আমাকে শুধু পেলে বড় করতেই তাকে কত কষ্ট করতে হয়েছে...
উল্যেখ করার বিষয় হলো জন্মের পর আরো দুবার শিশু পালনের মতো আমাকে পালতে হয়েছে মা'র| দশ বছর বয়সে পোলিওতে (রোগ ধরতে না পারা মেডিকেল বোর্ডের বক্তব্য এটি| #জ্বীনের_আছর নামক নোটে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আছে) সম্পুর্ন প্যারালাইজড হয়েছিলাম প্রায় চার মাস| আংগুল, চোখের পাতা, হৃদপিন্ড আর অল্প অল্প চোয়াল নেড়ে কথা বলতে পারতাম শুধু!
এর আগে আম্মু এতৈ পর্দানশীল ছিল যে বড় ভাইয়ার বন্ধুদের সাথেও দেখা করতোনা| সেই মহিলাকে মধ্যরাতেও মেডিকেল ষ্টুডেন্টদের কাছে তার ছেলের জীবন বৃত্তান্ত বর্ননা করে যেতে হয়েছে গোমটা মেরে!
আপু তখন স্কুলে পড়তো| পাশের বাসার এক বুড়ি যাকে আমি নানি ডাকতাম, তাকে চট্টগ্রাম শিশু হসপিটালে আমার জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল| কিন্তু আমার প্রয়োজনের তুলনায় তার সামর্থ ছিল অপ্রতুল!
প্রথম দিকে আমাকে সাহায্য করলে হেটে টয়লেটে যেতে পারতাম| যখন তাও আর পারছিনা তখন আম্মুকে আসতেই হলো!
কিছুদিন দশ বছর বয়সি আমাকে কোলে করে টয়লেটে যাতায়াত করতে গিয়ে আম্মুর হাঁপানি বেধে গেল| পরে ভ্রাম্যমান কমোডের ব্যাবস্থা হলো| ময়লা গুলো পরিষ্কার করাও কি কম হ্যাপা? তার উপর যখন আমি মলদ্বারের নিয়ন্ত্রন হারালাম তখন তো রিতিমত আজাব চলছিল আম্মুর উপর!
মাসখানিক পর ধিরেধিরে সদ্য জন্ম নেয়া শিশুটির মতো করে আজ বসতে পারি তো সপ্তাহ পর দাড়াতে পারি... এরপর ২০০৯সালে কোচিং থেকে পিকনিকে গিয়েছিলাম কক্সবাজার| ফেরার পথে আরেক বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্স!(বিস্তারিত পরে আলাদা নোট করে লিখার ইচ্ছা আছে)
ডান পায়ের নলার মাজ বরাবর ভেংগে গেছে| ব্যাস, আবারো তিন মাস ভ্রাম্যমান কমোডর হলাম| এবার আমার জন্য কমোড কিনতে হয়নি| এক বছর বয়সি ভাতিজির কমোডটি শেয়ার করেছি! তো, বলছিলাম আম্মুর কথা| এবারো তার একার অক্লান্ত পরিশ্রমে সুস্থ হলাম| আম্মুটা এমন করে প্রতিবার যেন নতুন করে পালছে!
এইতো কিছুদিন আগে জ্বরে পড়েছিলাম| সারাদিন ঘুমিয়ে রাতে কাঁথা মোড় দিয়ে ফেইসবুকে ছড়ছিলাম| কিছুক্ষন পরপর নিঃশব্দে লাইটের জ্বলা নেবা অনুভব করলাম আর বড় করে শ্বাস নিলাম!
আমি কখনো মায়ের বাধ্য হতে পারবোনা| এটা আমার নেচার| আমার মনে হয় আম্মুকে কিছুটা জ্বালাতন করলেই বুজি তার ভালো লাগে!
আমি চাইনা আব্বুর মতো আম্মু এমন কোন অবস্থায় পড়ুক যার জন্য তার ঋন কিছুটা শোধ করেছি বলে কখনো আমার মনে হয়| আম্মুর জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে আবেদন একটাই, যতদিন বেচে থাকেন সুস্থ শরীর এবং শান্ত মন নিয়েই যেন থাকতে পারেন!
ভালো থাকুক আম্মুরা...