সময়ের প্রয়োজনেঃ
রক্তে আমি রক্তিম হয়ে গেছি। ঘিন ঘিন করছে শরীর। হাতে চিকচিক করছে একটি খাপখোলা ছুরি, যা থেকে চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে রক্ত। পাশে পড়ে আছে একটি হায়েনা। যার চোখ একসময় ছিলো জ্বলজ্বলে তা আজ নিস্প্রভ। যার জ্বীহবা ছিলো লোলুপ তা আজ মিয়ম্রান। যার দাত ছিলো শক্ত এবং স্থায়িত্বের প্রতিক তা আজ ভঙ্গুর ক্যালসিয়াম। তাকে সময় দেয়নি একফোঁটাও। আমার চোখের আগুনেই সে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছিলো, শুধুমাত্র প্রয়োজন ছিলো কন্ঠনালি উৎপাটনের। যা করতে মোটেও সময় নেয়নি। তার ভীতি এবং লালসাপুর্ন কথাকে উপেক্ষা করে মিটিয়েছিলাম আমার অপুর্ণ সাধকে।
সময়টাকে নিরুত্তাপ মনে হচ্ছে। নিকষ অন্ধকারে বসে আছি। বসে আছি একাকী নিঃসঙ্গ। অপেক্ষায় আছি। স্থিরময় অপেক্ষা। মনে হচ্ছে আমার নিঃশ্বাসের সাথে সময়টাও থেমে আছে। নিস্থব্ধতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে রক্তভুক মশা ঘুর ঘুর করছে আমার চারপাশে। হয়তো সেও সুযোগের অপেক্ষায় আছে কিংবা রক্তের স্বাদ নিতে সঠিক যায়গাটি নির্বাচন করছে ঘুরে ঘুরে। আমি অসহয়ায় হয়ে রক্ত দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছি। কারন নিরবতা ভঙ্গ করার অধীকারকে আমি বিসর্জন দিয়েছি কিছুক্ষন আগেই।
প্রতারনাঃ
আমার পথপ্রদর্শককে হারিয়ে ফেলেছি কিংবা সে আমাকে হারিয়ে দিয়েছে। বিবর্ন আলোতে বসে আছি। সোডিয়ামের আলোকে ঘিরে উড়াউড়ি করে আলোকে আরো মিয়ম্রান করে দিচ্ছে কিছু পতঙ্গ। সঙ্গীবিহীন, অতীত ভবিষ্যতহীন পথে বিদ্ধস্ত আমি। আমার যা দেওয়ার ছিলো তা নিঃশেষিত। আমার যা নেওয়ার ছিলো তা উপেক্ষিত। বিশ্বাস, ভালোবাসা, সম্পর্ক, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় সবকিছু আজ অর্থহীন বরঞ্চ আমিই যেনো আজ ঐগুলো। কারো কাছে প্রতারক, কারো কাছে বিশ্বাস ভঙ্গকারী মিথ্যাবাদী, কারো কাছে ভালোবাসাহীন নরপশু, কারো কাছে পদলেহনে ব্যস্ত রক্তসরবরাহকারী।
স্বপ্ন এবং বিশ্বাসঃ
আমাকে সে কথা দিয়েছিলো উষ্ণতার চাদরে মুড়ে রাখবে। শীতল রাতের জন্য যা ছিলো পরম প্রার্থনীয়। কথা দিয়েছিলো ভবিষ্যতের আলোতে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দেবে যা অন্ধকারে আশার রেখা ছিলো। জানিয়েছিলো আমাকে তার অতীত নির্ভেজাল যখন তার অতীত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলাম। আরো বলেছিলো এগুলো শুধুই রটনা। বিরুদ্ধাচারীরা শুধুমাত্র তাদের সৎ পথকে অপছন্দ করে বলে তাদের বিরোধীতার খাতিরে অতীতকে টেনে আনে। আমাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলো অতীত থেকে ভবিষ্যত ভালো, কি দরকার অতীত নিয়ে পড়ে থাকার। ভুলে গিয়ে গিয়েছিলাম বায়োজৈষ্ঠদের অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা। আমার বিশ্বাসকে জমা রেখেছিলাম তাদের হাতে। সেইসাথে অসংখ্য হাতকে বুঝিয়েছিলাম বিশ্বাসকে জমা দেওয়ার কথা। ছিনিয়ে আনার কথা আলোকে। স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম তাদের কথানুযায়ী উষ্ণ রাতের। গল্প বলেছিলাম স্বর্নময় উদ্যানের, যেখানে আছে পরম প্রার্থিত সুখ।
সাক্ষাতঃ
আমার পা তাকে ব্যবহার করতে দিয়েছিলাম তার অসুস্থ পায়ের অনুপস্থিতি না বুঝতে দেওয়ার জন্য। তার সাথে দেখা হয়েছিলো আমার আনমনে চলার পথে। পথের একপাশে অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে কুকড়ে শুয়েছিলো। মায়া লেগেছিলো তাকে দেখে। তার গল্প শুনে আরো জড়িয়ে পড়েছিলাম তার সাথে। তাকে সবাই অবিশ্বাসী বললেও আমার কাছে ছিলো পরম বিশ্বাসী বন্ধু। আশ্রয় দিয়েছিলাম পরিবারকে উপেক্ষা করে। ব্যবহার করতে দিয়েছিলাম আমার শরীরকে। তার শরীরে বল ফেরত আসা পর্যন্ত। সে কৃতজ্ঞে ঝলমল করতো আর স্বপ্ন দেখাতো আমাকেও ফেরত দিতে চায় শতগুনে। আমি কিছু ফেরতের আশায় হাত না বাড়ালেও স্বপ্ন দেখতে বাধতোনা। তাই আমি আর সে স্বপ্ন দেখতাম কিংবা শুধুই আমি।
শিরোনামঃ শিরোনামটা প্রিয় গল্পকার, চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হানের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পের শিরোনাম থেকে নেওয়া।