ঢাকা মেডিকেলের নতুন যে ব্যাচটির ক্লাশ শুরু হওয়ার কথা ৭১ এর শুরুতে , তার একজন আমার বাবা । বয়স তখনো ১৮ পার হতে বেশ কয়েকমাস বাকি । মার্চের শুরুর দিন গুলোতে বাবা ঢাকাতেই ছিলেন ।৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর মিটিংয়ে অংশ নেন । পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে এমন আশংকায় ৭ মার্চের পরেই বাবা ঢাকা ছেড়ে দেশের বাড়ি চলে যান।
ঢাকা-আরিচা সড়কে তখন অনেকগুলো ব্রীজ ছিল না ,মাঝের নদীগুলো পাড়াপাড়ের একমাত্র উপায় ছিল নৌকা।যাবার পথে দেখেন হতে গিয়ে দেখেন অসংখ্য মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে ।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিল মাসে বাবা রাজশাহী চলে যান ভারত সীমান্তে অস্ত্রের ট্রেনিং নিতে। রাজশাহী থেকে পাবনা আসার পথে নাটোরের কাছাকাছি পাক আর্মির ৪/৫ জন যাত্রীবাহী বাস থেকে সবাইকে নামিয়ে সার্চ শুরু করে । ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়েসীদের আলাদা একটা লাইনে দাড় করিয়ে বলা হয় , তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হবে ।বাস ড্রাইভারকে বলা হয় নারী শিশু সহ অন্যান্যদের নিয়ে চলে যেতে । বাবা ছিলেন লাইনে সবার পেছনে , বাসের পেছন দরজার কাছাকাছি ।লাইনে দাড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করা ছিল পাক আর্মির নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা । জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে বাবা তখন কালেমা পড়ছেন । এর মাঝে খেয়াল করেন লাইনের শুরুর দিকে পাক সৈন্যদের জটলা করে খুব মনযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখতে । বাসে একজন বৃদ্ধ যাত্রী খাচায় ভরে কামরাঙা নিয়ে যাচ্ছিলেন । পাকিস্তানি গাধাগুলোর কাছে অচেনা এ ফলটিকে সন্দেহজনক মনে হয় । গ্রেনেডের সাথে আকৃতিতে সামান্য মিল থাকায় তারা দাবী করে এগুলো গ্রেনেড । বৃদ্ধ তখন ফল খেয়ে প্রমাণ করছেন এগুলো গ্রেনেড না , আর তাকে ঘিরে দাড়ানো গ্রেনেড বিস্ফোরণের ভয়ে তটস্থ ৪/৫ জন পাক সেনা ।
বাবা সহ লাইনে দাড়ানো আরও একজন সুযোগটা কাজে লাগাতে সক্ষম হন,কামরাঙাতে নিবদ্ধ সেনাদের দৃষ্টি এড়িয়ে পেছনের দরজার পা-দানিতে বসে পড়েন , শরীরটা ক্রল করে করে বাসের পাটাতনে টেনে তোলেন । এর সাথে সাথেই বাস ছেড়ে দেয় .......