কিছু কিছু সিনেমা থাকে যেগুলো আমার সমস্ত চিন্তাভাবনাকে এলোমেলো করে দিয়ে যায়, ভাবনার কোন এক বদ্ধ দুয়ার অবমুক্ত করে দিয়ে যায়। ভাবনার পাখি সেই দুয়ার দিয়ে বেরিয়ে পরে কোন একটা সদুত্তর খোজার আশায়। মনের আকাশে বাতাসে ডানা মেলে বেড়াতে থাকে সে, কিন্তু উত্তর নিয়ে ফেরা আর তার হয় না। ভাসতে ভাসতে দূর দিগন্তে মিলিয়ে যেতে থাকে ভাবনার সেই পাখিটা। এই পারফিউম মুভিটার কিছুটা দেখে বিমুগ্ধ আমি তখনি লিখে রেখেছিলাম -
"আহ! সিনেমা! মনোমুগ্ধকর সিনেমা। সুগন্ধে মৌ মৌ করতে থাকা সিনেমা। আমার সমস্ত অনুভূতিকে নাড়িয়ে দিয়ে যাওয়া সিনেমা। প্রণতি সিনেমাকে, প্রণতি এই সৃষ্টিকে। প্রণতি এর সৃষ্টিকারককে।"
কিন্তু সিনেমার এই মৌ মৌ সৌরভটা যে কোন এক ভোমরা এসে এমন করে সুধারস পান করে নিবে সে জানতে পারলে হয়তো উপরের লাইন ক'খানা আমি লিখতামই না। সম্ভব হতোনা, মুভিটা দেখে উঠে এমন করে লিখবার। কারণটা তার লোমহর্ষক, শিউরে উঠবার মতোন পরের অংশগুলো।
ট্রেইলার খুজতে বসে দেখলাম, দুই মিনিটের ট্রেইলারে অনেক কিছুই বলে দিচ্ছে যেটি দেখলে আনন্দ অনেকাংশেই ম্রিয়মান হয়ে যাবে। তাই খুজে পেতে কম প্রকাশ করে এমন একটা ট্রেইলার নীচে দিলাম।
কাহিনীর সারসংক্ষেপ হচ্ছে - ১৮শ শতাব্দীর প্যারিসে Jean-Baptiste Grenouille নামে একজনের জন্ম হয়েছিল যার ছিল, তার নিজের জবানীতে, "পৃথিবীর সেরা ঘ্রানশক্তিসম্পূর্ণ নাক"। তার এই দাবীটা অযৌক্তিক ছিল না মোটেও। ছোটকাল থেকে সে চোখ বন্ধ করে শুধু ঘ্রাণের সাহায্যেই অনেক কিছু বলে দিতে পারতো। নতুন নতুন ঘ্রাণের জন্য তার চিত্ত সদাই ব্যাকুল থাকতো। সে কাজ করতো একটা ট্যানারিতে, যেখানে তার সেই চিত্তের ক্ষুধা অনেকাংশেই মিটতো (সেই ট্যানারিটা পুরো প্যারিসের মধ্যে নোংরাতম জায়গায় হোক না কেন), কিন্তু তার বরাবরেই মনে হতো শহরের অন্য প্রান্তে আরো কত না জানা ঘ্রাণ তার জন্য অপেক্ষা করছে।
একবার তার সুযোগ হয় তার মনিবের সাথে শহরের অভিজাত একটা এলাকায় চামড়া ডেলিভারী দিতে যাওয়ার। এই যাত্রাটায় মূলত Grenouille-র বাকী জীবনটা বদলে দেয়। যাওয়ার পথে সে অভিভূত হয়ে যায় নতুন নতুন ঘ্রাণের সন্ধান পেয়ে। তার নাক তাকে ঠেনে আনে শহরের নামকরা এক পারফিউম দোকানের সামনে। শিহরিত হয়ে সে দেখতে থাকে দোকানের ভেতর শিশিগুলোর ভেতর বন্দী নাম না জানা শতশত বিভিন্ন রকমের পারফিউম। কিন্তু এই সুগন্ধ গুলো ছাপিয়ে হঠাৎ বাইরে থেকে অন্য একটা গন্ধ তার নাকে ভেসে আসে। সেটি হচ্ছে যুবতী এক মেয়ের ঘোর লাগিয়ে দেয়া গায়ের সৌরভ। কিন্তু মেয়েটার পিছু নিতে
নিতে তাকে হারিয়ে ফেলে সে। Grenouille-র মনে হতে থাকে এই নেশা জাগানিয়া সৌরভ এভাবে হারিয়ে দিতে দেয়া যায়না। এই সুভাস যাতে সে সবসময় নিতে পারে তার পন্থাগুলো তাকে জানতে হবে। তাকে বুঝতে হবে কিভাবে সুগন্ধ বন্দী করে রাখতে হয়। একসময় তার সুযোগ হয় প্যারিসের অন্য এক প্রান্তে সংগ্রাম করতে থাকা এক পারফিউমারকে দারুণ একটা সুগন্ধী বানিয়ে তাক লাগিয়ে দেওয়ার। Grenouille তাকে বলে, সে পারফিউমারকে পুরো দুনিয়ার মধ্যে সেরা পারফিউমার বানিয়ে দিবে যদি সে Grenouille-কে বলে কিভাবে গন্ধ বন্দী করে রাখতে হয়। পারফিউমার তাকে গন্ধের নানা দিক বাতলে দিয়ে এই বলে যে, একটি খাঁটি সুগন্ধীর ১২টা দিক থাকে। সে Grenouille-কে এও বলে যে একবার ইজিপ্টে এক মমির কফিন থেকে এমন একটা সৌরভ বের হয় যেটা অনুভব করে পুরো পৃথিবীর মানুষ কিছুক্ষণের জন্য নিজেদেরকে স্বর্গে রয়েছে ভাবতে থাকে। কথিত আছে সেই পারফিউমে ১২টা উপাদানের সাথে সাথে অন্য একটি ১৩তম উপাদানও ছিল। যেটি আজ পর্যন্ত কেও উদ্ধার করতে পারেনি। Grenouille সিদ্ধান্ত নেয় সে বানাবে পৃথিবীর সেরা সুগন্ধী। ১৩তম উপাদানটা সহ। পুরো পৃথিবীটাকে বুঝিয়ে দিবে তার নাকের ক্ষমতা।
ট্রেইলারঃ
অনলাইনে দেখুন এইখানে
IMDB-র রেটিং ১০ এ ৭.৫
http://www.imdb.com/title/tt0396171/
উৎস্বর্গঃ পরম সুহৃদ কাঊসার রুশো-কে
আমার দেখা ভালোলাগা কিছু মুভির তালিকা
আমার দেখা ভালোলাগা কিছু মুভির তালিকা - ২
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:৩৪