somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুলিশের মহানুভবতা বনাম দায়িত্ব

২৮ শে এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৩ এপ্রিল বাংলাদেশের একটি খ্যাতনামা দৈনিকের ভেতরের পাতার একটি সংবাদ শিরোনামে চোখ আটকে গেল। বক্স আইটেম করে ছাপানো সংবাদটির শিরোনাম ‘পুলিশ কর্মকর্তার মহানুভবতায়Ñ’। সংবাদটি শুরু করা হয়েছে ঠিক এভাবে “মানুষ, মানুষের জন্য। আবার তা প্রমাণ করলেন মিরপুর বিভাগের উপ কমিশনার আনোয়ার হোসেন।.....”। সংবাদে বলা হয়েছে, আশুলিয়া থানার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম, সারা রাত ধরে স্ত্রীর ওপর অমানবিক নির্যাতনের পর বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে ঘর থেকে বের করে গাড়ির চালক মতিউর রহমানের হাতে তুলে দেয়। গাড়ির চালকও মহিলাটিকে নিয়ে ঢাকায় আসার পথে তার ওপর নির্যাতন চালায় এবং শ্লীলতাহানি করে।
গাড়িটি গাবতলীতে পৌঁছলে ঐ মহিলা আত্মরক্ষার জন্য গাবতলি পুলিশ ফাঁড়িতে আশ্রয় নেয়। গাড়ির ড্রাইভারও তার পিছু নেয়। সেসময় আরেকজন ভদ্র মহিলা এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট পত্রিকা অফিসে ফোন করে জানালে পত্রিকার পক্ষ থেকে মিরপুর বিভাগের পুলিশ কমকর্তা আনোয়ার হোসেনকে জানিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করা হয়।
পরবর্তীতে পুলিশের ঐ কর্মকর্তা দারুস্ সালাম পুলিশকে মহিলার চিকিৎসাসহ জড়িতদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দিলে পুলিশ ড্রাইভারকে আটক করে এবং ঐ মহিলাকে একটি কাপড় কিনে দেয়। তাছাড়া অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। চিকিৎসা শেষে তার ইচ্ছা অনুযায়ী নিরাপদ স্থানে পৌছে দিয়ে আসে। মহিলার স্বামীকেও গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
এতক্ষণ ধরে ঘটনাটির যে বিবরণ দিলাম সেটি সবাইকে জানানো আমার লক্ষ্য নয়। আমার লক্ষ্য ভিন্ন। এবার সে বিষয়ে বলছি। পত্রিকাটি তার শিরোনামে লিখেছে- ‘পুলিশ কর্মকর্তার মহানুভবতায়-’। পুলিশের এই কর্মকর্তা কিংবা পুলিশ যা করেছে, তা কি আসলে মহানুভবতা? তাহলে পুলিশের দায়িত্ব কী? একজন অসহায় নারীকে রক্ষা করতে পুলিশ এগিয়ে আসবে এটাই তো স্বাভাবিক। একজন নাগরিকের জান মাল রক্ষা করাই তো পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এখানে মহানুভবতার কী আছে? আসলে পুলিশ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা যা করেছেন এটা করা ছিল তাদের দায়িত্ব।
বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে এবং হচ্ছে। ব্রিটিশ আমল থেকে পুলিশকে ব্যবহারের পদ্ধতির কারণে এটি আসলে জনগণের রক্ষাকর্তা কিংবা বন্ধু হিসেবে গড়ে ওঠেনি। বরং বিভিন্ন সময় সরকারকে দেখা গেছে এই বাহিনীকে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে ব্যবহার করতে। ফলে ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর মানসিক দূরত্ব।
ছোট বেলায় দেখতাম, যখন ছোটরা দুষ্টুমি করত তখন বড়রা পুলিশের ভয় দেখাতো। তার মানে তখনও জন সাধারণের মনে পুলিশ মানে আতঙ্কের কোন জীব হিসেবে বিবেচিত হতো। বর্তমানেও গ্রামাঞ্চলে এ অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয়নি। এখনও কোনো বাড়িতে পুলিশ আসলে আশে পাশের বাড়ির অনেকে আতঙ্কে নীরব হয়ে যায়। তাছাড়া পুরো গ্রামে নানা কথাবার্তা ছড়িয়ে পড়ে ঐ বাড়ি সম্পর্কে।
যাই হোক, পুলিশ বাহিনীকে জনবান্ধব তথা জনগণের প্রতি বন্ধুসুলভ হিসেবে গড়ে তোলার যে উদ্যোগ বিগত সময়ে নেয়া হয়েছিল তার দ্রুত পূর্ণ বাস্তবায়ণ হোক আমরা সে কামনাই করি। পুলিশ জনগণের বন্ধু হলে এ ধরণের ঘটনাকে আমাদের আর মহানুভবতা বলে আখ্যা দিতে হবে না। বরং এর চেয়েও আরও অনেক বড় মহানুভবতাকে (!) আমরা পুলিশের দায়িত্ব হিসেবে দেখতে পাব। সেই দিনের প্রত্যাশায় আছি। আর দাবি করছি উপরোক্ত ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দোষীদের শাস্তি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঠকানোটাই ভাল শিখেছি আমরা

লিখেছেন ফেনা, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৭



এই বিশাল মহাকর্ষীয় বস্তু সবকিছু নিজের দিকে টেনে নেয়—এমনকি আলোও পালাতে পারে না। কিন্তু কৃষ্ণ গহ্বরের ভিতরে কী ঘটে? সেখানে সময় ও স্থান কেমন আচরণ করে? এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরব বিশ্বে নারীরা অপমানিত? আমার অভিজ্ঞতা বলছে ভিন্ন কথা

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬



বহুদিন ধরে একটি কথা শুনে আসছি—“নারীরা আরব দেশে অসম্মানিত অবস্থায় থাকে।”
কিন্তু আমি আরব দেশে গিয়েছি, থেকেছি, এবং প্রায় দুই মাস ধরে একাধিক জেলায় ঘুরেছি।
সত্যি বলছি—আমি সেখানে কোথাও নারীদের অসম্মানিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় দাবিদাওয়া নিষ্পত্তি সংস্থা : অরাজকতার পালে নতুন হাওয়া!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:০৩


বাংলাদেশে আজকাল দাবি না জানালে কেউ আর মানুষ থাকে না—ছাত্র, শিক্ষক, গৃহিণী, পুলিশ, পিয়ন, কবি, কুস্তিগির, সবাই 'অধিকার' চায়। তবে অধিকার মানে এখানে মোটেই দায় বা কর্তব্য নয়, বরং ছিনিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্পা এবং দেহ ব্যবসায়ীদের কথা শুনলে রেগে যাবেন না

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৪৯



পুরো পৃথিবীতে স্পা এর সংখ্যা ১ লক্ষ ৮১ হাজার। এইসব স্পা-গুলোর বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে ইউরোপে। এশিয়া - প্যাসিফিকের দেশগুলোতেও স্পা-এর সংখ্যা কম নয়। ৫১ হাজারেরও বেশি। বাংলাদেশে স্পা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মিরর ডোল, নিজের মনের অশান্তি অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে ফ্যাসিস্টের মতো আচরণ করবেন না

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩৫

ব্লগার মিরর দৌলাকে বলছি।
আপনাকে কিছু কড়া কথা আজ বলবো। ব্লগে বর্তমানে আপনার কোন অবদান নেই। সামুর যে ব্লগপেইজটা আপনি চালান, সেখান থেকে সব পোষ্ট আপনি ড্রাফটে নিয়েছেন। সেটা আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×