উপাসনাহীন জীবন অপবিত্র। যে জীবন দিবা-রাত্রির কোন সময় প্রভুর অনন্ত প্রেমের কথা স্মরণ করে না -- সে জীবন এক অফুরন্ত সম্পদ থেকে বঞ্চিত থাকে। কিন্তু যেভাবে মুসলমান জাতি বর্তমানে উপাসনার অভিনয় করে থাকেন -- তা নিরর্থক। আত্মার সঙ্গে যে উপাসনার যোগ নেই তাকে কোনমতে উপাসনা বলা চলে না। প্রভুর সম্মুখে আত্মার পরম নির্ভরতা, পরম অনুতাপের অবস্থা, হৃদয়ের বিগলিত অবস্থার নাম উপাসনা। আবৃত্তি কখনও উপাসনা নয়।
প্রভুর পথে অন্যান্য জাতির তুলনায় মুসলমান জাতি হিসাবে প্রত্যহ পঞ্চাশ মাইল পিছিয়ে পড়ছে। তার আধ্যাত্মিক অগ্রগতি নেই। এ ক্ষতি কোনকালে পূরণ হবে না। কেউ কি প্রাণকে ফেলে দেহের পূজা করে? প্রাণহীন দেহের মূল্য কি? অথচ মোহবশত অনেকে দেহের পূজা করে। তোমাদেরও মোহ জন্মেছে। বোঝ না। ভাষার অর্থের প্রতি লক্ষ্য কর না -- শুধু আরবী ভাষাকে সম্মান কর। অক্ষর কি ভক্তির যোগ্য? অমন যে পূজিত রাজার শরীর, যা জীবনে কত যত্নে, কত সুখে পালিত হচ্ছে, প্রাণহীন হলে তাও দুর্গন্ধ এবং ঘৃণিত হয়ে ওঠে -- সে শরীর কেউ ঘরে রাখে না। যখন অর্থবোধ হয় না -- তখন আরবী ভাষায় কোন মূল্য নেই। তোমরা শুধু মোহবশত ভাষাকে ভালবাস -- এ তো পৌত্তলিকতা। তোমরা তো পৌত্তলিক। অন্তরে যদি ভাব না থাকে, অনুভূতি না থাকে, তবে আল্লাহ্ তোমাদের প্রার্থনা গ্রহণ করতে পারেন না -- কারণ অন্তরে তোমার কোন ভাব বা অনুভূতি নেই। ভাষা তো মানুষের তৈরি -- ভাব মানবচিত্তে প্রথম জাগে, মানুষ নিজেদের প্রস্তুত ভাষায় তাই প্রকাশ করে। যে চিত্তে ভাব নেই, অনুভূতি নেই, তার ওষ্ঠের ভাষা আল্লাহ্ বোঝেন না। আল্লাহ্র কাছে তা পৌঁছে না। কি তুমি চাও তা নিজেই জান না -- আল্লাহ্ তোমায় কি দেবেন?
না বুঝে প্রার্থনার ভঙ্গি করা, কোরান পড়া মহাপাপ। এই মহাপাপে মুসলমান জাতের সর্বনাশ হয়েছে, তার সমস্ত উন্নতির পথ বন্ধ হয়ে গেছে। মুসলমান নরনারী ধর্মহীন, আল্লাহ্হীন, শক্তিহীন জীবনের সর্বকল্যাণ আর্শীবাদ হতে সে বঞ্চিত। তার জীবন ভয়াবহ অন্ধকারে ভরা, ঘোর অশান্তিতে পূর্ণ, আগুনে সে পুড়ে মরে।
আল্লাহই মানুষের শক্তি ও প্রেরণার উত্স। মুসলিম জীবনে শক্তি ও প্রেরণা নেই -- তার জীবনে কোন পরম ভরসা ও নির্ভরতা নেই। একটি মৌখিক বিশ্বাস সে করে মাত্র। জাতি হিসেবে তার যে সর্বনাশকর ক্ষতি হচ্ছে, তার মীমাংসা কোনকালে হবে না।