আমার আব্বা আর মা দুই টাই নোয়াখাইল্লা

। বেশীর ভাগ নোয়াখাইল্লার মতই আব্বা অনেক রাগি । উনার রাগ এর চোটে মা আর আমরা চার ভাই বোন থরথরি কম্পমান


। পায়ের শব্দ পাইলে আমরা টিভির সামনে থিকা দৌড়। উনি আমাদের চার ভাই বোনরেই নিজেই পড়াইছে। এক্কে বারে অনার্স পর্যন্ত। ক্যান জানি না, আমার উপর তার নজর ছিল বেশি

। তার পরেও ক্লাস এইট পর্যন্ত উনি নিজে আমারে পড়াইতে পারছে । ইংরেজি গ্রামার, অঙ্ক আর নোট করা। ফাকিবাজ আছিলাম। মাইর ও খাইছি অনেক। কান্তে কান্তে

অনেক সময় খাতা ভিজায়া ফালাইসি। পরে উনার টেকনিক সব শিখা নিয়া বলছি- আপ্নের কাছে আর পড়ুম না, আপ্নে খালি মারেন।



রাগ এর কাহিনী পরে লেখুম। অন্য কিছু লেখিঃ
তখন আমি ছুডু। ক্লাস ফাইভ কি সিক্স এ পড়ি । বই এর পোকা আছিলাম।

আব্বা অনেক বই কিন্না দিত- নিউ মার্কেট, ইসলামী ফাউন্ডেশন আর বাংলাবাজার থিকা। তো একদিন রিকশা কইরা বই কিনতে যাইতাছি বাংলাবাজার । পথে সেইন্ট ফ্রান্সিস ইস্কুল এর সামনে দুইটা মাইয়া রে দেইখা মাথা তে বানরামি চাপল



। দিলাম ভেংচি

। আব্বা যে খেয়াল করছে বুঝি নাই।
ইকটু পরে জিগাইলঃ কিরে তর জিব্বায় কি হইছে?
আমি কইঃ জিব্বায় পেইন।
আব্বাঃ ও
তো বই-মই কিন্না আব্বা দেখি আজিমপুর এর রিকশা লইল। আমি মনে মনে কই- ব্যাটা যাইতাছে কই? আজিমপুর মনোয়ার ডাক্তার এর চেম্বার এ নামল। ডাক্তার চাচা আব্বার বন্ধু মানুষ । ডাক্তার এর সামনে গিয়া কয়ঃ 'ডাক্তার, তোমার কাছে পেইন কিলার ইঞ্জেকসন আছে না? অরে দাও তো। দুই হাতে দুই টা আর জিব্বা তে এক টা

। ' হালার ডাক্তার ও ফাজিল

। এত বড় একটা সিরিঞ্জ আর সুই লইয়া রেডি। পারলে আমারে তখনি ফুটা কইরা ফালায়। আমি তো ভয়ে কান্তে কান্তে কইলামঃ আমার ব্যাথা নাই, ব্যাথা কমি গেছে



। আব্বা কয় 'নাঃ দিয়া দেও ইঞ্জেকসন। পথে আবার কোন ইস্কুল পড়লে ব্যাথা শুরু হইব।'
যাই হোক ওই দিন বাইচ্চা গেছিলাম। ইঞ্জেকসন আর দেয় নাই।


ভয় পাইয়েন না, এইডা আমার শোকের স্মৃতি কথা না। আব্বা এখনও বাইচ্চা আছেন

। এখন ও আমারে চোখে চোখে রাখেন। রাত ৮ টার পর অফিসে থাকলেই ফোন দিয়া তার ঝাড়ি শুরু হয়, সাথে ডায়লগঃ 'এত কষ্ট করার দরকার নাই। চাকরি ছাড়ি দে'।
আমার জীবনের এইডা প্রথম ব্লগ লেখা, আমার রাগি আব্বার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১১ ভোর ৪:৩৬
১. ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:০০ ০