গত বছর ক্যামেরা নির্বাচন নিয়ে পোস্ট দিয়েছিলাম একটা। মাঝে নিজের সব পোস্ট মুছে দিলেও একটা কপি আবার ফিরায়া দিছিলাম সামুতে। সেই পোস্টে আমি ডিজিটাল ক্যামেরা বিশেষ করে বলতে গেলে ডিএসএলআর এর উপর জোর দিয়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছিলাম

আমি প্রায়ই একটা কথা শুনি ফেলো সিপি মেম্বারদের কাছে - ভাই, কার কাছে একটা ডিএসএলআর আছে? আমি একটা শর্ট ফিল্ম বানাবো, ক্যামেরা সংকটে আছি।
ওয়েট আ মিনিট - আপনি কবে জানতে পেরেছেন যে ডিএসএলআর দিয়ে হাই ডেফিনেশন ভিডিও ক্যাপচার করা যায়? আমি যখন ডিএসএলআর দিয়ে রাস্তায় শুট করতাম তখন আমাকে শুনতে হতো আমি নাকি রাস্তা মাপতেছি

অথচ আজ সবাই কম বেশী ডিএসএলআর বিশেষজ্ঞ হয়ে গিয়েছে; আর এটাই তাদের কাল হয়ে দাড়িয়েছে। তারা এখন ডিএসএলআর ছাড়া শর্ট ফিল্ম বানানোর কথা কল্পনাও করতে পারছেনা

আরেকবার ভাবুন - আপনার কি সত্যিই ডিএসএলআর প্রয়োজন?
১... "একটা ভালো ক্যামেরা থাকলে আমার শর্ট ফিল্মের কাজ শুরু করে দিতাম..."
ক্যামেরা নয়, ক্যামেরার পেছনে মানুষটা গুরুত্বপূর্ন - এই কথাটা আর কতোবার বললে আপনাদের মাথায় ঢুকবে? আপনাকে ৩৫মিমি ক্যামেরা ধরিয়ে দিলেও আপনি যে কে সেই থাকবেন যদি আপনি ভালো সিনেমাটোগ্রাফার না হোন... ভালো সিনেমাটোগ্রাফার মানেই এই নয় যে আপনি ভালো ক্যামেরা প্রফেশন্যালি চালাতে পারেন, ক্যামেরা অনেকেই চালাতে পারে... আপই আসলে জানেনই না একটা শট কিভাবে কম্পোজ করতে হয় সিকোয়েন্স অনুযায়ী, আপনি হাই ডেফিনেশন ক্যামেরা দিয়ে কি করবেন? আপনি জানেন না থ্রী ওয়ে লাইটিং কাকে বলে, আপনি আলো ফেলবেন কি করে? ডিএসএলআর আপনাকে ভালো ক্যামেরাম্যান বানাতে পারবে হয়তো কিন্তু সিনেমাটোগ্রাফার বানাতে পারবেনা...
২... "সবাই চায় একজন অভিজ্ঞ সিনেমাটোগ্রাফার দিয়ে নিজের কাজটি করাতে, এখন আমাকে যদি সুযোগ না দেয়া হয় আমি কিভাবে অভিজ্ঞ হবো?"
আমি অবশ্যই চাইবো আমার কাযে একজন অভিজ্ঞ লোক থাকুক... সিনেমাটোগ্রাফার বানানোর দায়িত্ব ডিরেক্টরের না... এটা নিজের দায়িত্ব... আপনি সিনেমাটোগ্রাফার হতে চান? তাহলে যেখান থেকে যা পান তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ুন... যে কোন ডিভাইস যেটা ভিডিও ক্যাপচার করতে সক্ষম, সেটা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ুন... যদি ভেবে থাকেন একটা ভালো ক্যামেরা আপনাকে ভালো সিনেমাটগ্রাফার বানাবে, যদি মনে করেন একটা প্রোজেক্টে সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করলেই আপনি ভালো সিনেমাটোগ্রাফার হয়ে যাবেন, তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন...
আপনার নিজেকে প্রুভ করতে হবে... আপনার রেকর্ডকৃত শট দেখে আমি বুঝবো আপনি ভালো করতে পারবেন... কোন কাজ যদি নাই করেন, আমি কেনো নিবো আপনাকে? আমার ঠেকা না... ঠেকা আপনার...
৩... ডিএসএলআরে ম্যানুয়াল সেটিংস করা যায় , এটা খুব ইফেক্টিভ। আর লো-লাইটে দূর্দান্ত শুট করা যায়।
তার মানে কি এই যে ডিএসএলআর না থাকলে আপনি ভালো শর্ট ফিল্ম বানাতে পারবেন না? ৫ বছর আগেও যখন দূর্দান্ত শর্ট ফিল্ম বানানো হতো সেগুলো কি দিয়ে বানানো হতো? এই সময়েও কি আপনার চোখে ডিজিটাল ক্যামেরা, হ্যান্ডিক্যাম বা মোবাইল দিয়ে শুট করা একটা ভালো শর্ট ফিল্ম চোখে পড়েনাই? ম্যানুয়াল সেটিংস এর কাজটা কি আপনি সত্যিই বুঝেন? লো লাইটের যে কথা বলছেন, আপনি কি জানেন যে ডেলাইটে শুট করে আপনি সেটাকে সন্ধ্যা বা রাত বানাতে পারেন খুব সহজে? আপনি কি আপনার সন্ধ্যা বা রাতের সীন কে পরিবর্তন করে দিনের বেলা নিয়ে আসার জন্য মাথা খাটিয়েছেন? আপনার সে দৃশ্যটা কি রাতের বেলা করতেই হবে? সেই দৃশ্য দিনের বেলায় করলে কি গল্পে খুব বেশী পরিবর্তন হবে?
৪... ডিএসএলআরে প্রিন্ট ভালো; পরিষ্কার ঝকঝকে তকতকে
ঝকঝকে তকতকে প্রিন্ট দিয়ে আপনি কি করবেন যদি আপনার গল্প ভালো না হয়? এই প্রিন্ট দিয়ে আপনার বাজে শট ঢাকতে পারবেন? স্মার্টফোনের ক্যামেরা দিয়ে কি খুব খারাপ প্রিন্ট আসে? ট্রাই করেছেন কখনো? ভালো প্রিন্ট আপনার বাজে ডিরেকশনকে ঢাকতে পারবেনা...
৫... ডিএসএলআর দিয়ে শুট করলে ব্রডকাস্ট করা যাবে
ব্রডকাস্ট নিইয়ে আপনার ধারনা খুব সম্ভব বেশীদুর না। ডিএসএলআর দিয়ে শুটকৃত ক্লীপগুলোর দুই থেকে আড়াই ভাগের একভাগ রেজুলেশন ব্রডকাস্টের জন্য এনাফ। খেয়াল করে দেখুন, ৭২০ বাই ৫৭৬ [অথবা ৪৮০] পিক্সেল ব্রডকাস্টের জন্য এনাফ... এই সুত্র ধরে বলতে হয় স্মার্টফোন বা হ্যান্ডিক্যাম দিয়ে শুট করেও আপনি চ্যানেলে জমা দিতে পারবেন... শুধু খেয়াল রাখবেন আপনার ক্যামেরা হাই ডেফিনেশন সাপোর্টেড কিনা; কারন টিভিতে আমি ভালো প্রিন্টই দেখতে চাইবো... কিন্তু যদি ইয়ুটিউবের জন্য হয়, আমার কাছে ১০৮০ যা, ৩৬০ ও তাই [এখানে আমি মানে দর্শক]
৬... আচ্ছা, মেনে নিলাম আপনার কথা। কিন্তু সবার মোবাইলে তো হাই কোয়ালিটির ক্যামেরা নেই।
অবশ্যই নেই। সেক্ষত্রে ডিজিটাল ক্যামেরা? নিজের না থাকলে বন্ধুর? বন্ধুর না থাকলে বান্ধবীর? তাদের কারো কাছে না থাকলে পাশের বাসার? আত্মীয়স্বজন? কোন হাই কোয়ালিটি ক্যামেরা সহ মোবাইল বা ডিজিটাল ক্যামেরা বা হ্যান্ডিক্যাম নেই? একটা ক্যামেরা জোগার করা কি খুব কষ্টের এই সময়ে?
এরকম আরো অনেক অনেক প্রশ্ন আসে, আমাকে আলাদা ভাবে উত্তর দিতে হয়। এখন থেকে এইটা কপি পেস্ট করে দিবো

মোদ্দা কথা হলো - আপনি যদি ডেডিকেইটেড থাকেন, তাহলে সে কোন সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন। আপনার আসলে ডেডিকেশনের অভাব। আপনি হয়তো ফেসবুক বা ব্লগে লাফাইতে পারেন যে ফিল্ম বানাবেন, কিন্তু আমি মনে কর আপনাকে দিয়ে কিছু হবেনা। আপনি বরং যারা ডেডিকেইটেড তাদের সাহায্য করুন... আপনি যে কাজে ডেডিকেইটেড হতে পারবেন সেই কাজ করুন। যে কাজই করুন না কেনো, শিখুন এবং করুন... আর শেখার জন্য কোন সহজ পথ নেই... ধ্যান করেই যদি মার্শাল আর্ট শিখা যেতো তাহলে আপনি আমি প্রায় সবাই মার্শাল আর্টিস্ট হয়ে যেতাম... নিজের সীমাবদ্ধতা জানুন, সেই অনুযায়ী কাজ করুন...
অনেকের ইচ্ছা প্রবল, কিন্তু সংসারের চাপে কিছু করতে পারেন না। তাদের ব্যাপারে আসলে আমার কিছু বলার নেই। সংসারের চাপ আসলে অনেক বড় চাপ। কিন্তু, ফেসবুক/ব্লগে যদি আপনি নিয়মিত সময় দিতে পারেন, তাহলে একটা শর্ট ফিল্মের প্রি প্রোডাকশনে সময় দিতে পারেন না কেনো? যদি এতোই ইচ্ছা থাকতো থাহলে রাতে ফেসবু/ব্লগে না বসে স্ক্রিপ্টিং এ পোলাপানদের সাহায্য করতে পারতেন। আবার সেই একি কথা - আপনার ইচ্ছাশক্তি দূর্বল।
সম্পূরক তথ্যঃ শুধু dSLR হলেই হয়না, এর সাথে যদি গিয়ার না থাকে তাহলে একটা ডিএসএলআর আপনাকে ভালো আউটপুট দেবেনা। আপনি যদি এক লাখ টাকা দিয়ে ডিএসএলআর কিনে থাকেন, তাহলে ধরে নিন আরো এক লাখ টাকা দিয়ে লেন্স/ট্রাইপড সহ অন্যান্য গিয়ার কিনতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৫০