এডিটিং নিয়ে অনেককেই ঝামেলায় পড়তে দেখলাম। বেসিক এডিটিং খুব সহজ একটা জিনিস। আপনি ছোটখাটো টুলস দিয়েও এডিটিং টা সারতে পারবেন। কিন্তু আপনার জানতে হবে কিছু টিপস ও রুলস যেনো আপনার এডিটিং টা প্রফেশন্যাল দেখায়।
আমি নিজে খুব বেশি এডিটোর ঘাটিনি, কিন্তু একটা বেপার ঠিক বুঝেছি যে বেসিক এডিটিং করতে গেলে আপনাকে হাই-এন্ড সফটওয়ার জানতে হবেনা. আপনাকে জানতে হবে কিভাবে সম্পাদনা করতে হয়। কোথায় কাটতে হবে, কোথায় কোন ট্রানজিশন দিতে হবে, কোন কোন ব্যাপার গুলোতে খেয়াল রাখতে হবে।
আগে দেখে নেই প্রফেশন্যাল রা কি কি সফটওয়ার ব্যবহার করে থাকে।
Final Cut Pro
Avid Media Composer
Adobe Premier Pro
Sony Vegas Pro
আপনি চাইলে মুভি মেকার বা আই-মুভি দিয়েও এডিট করতে পারবেন। কিন্তু একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখুন। মাত্র ২০০ মেগাবাইটের একটা টুলস দিয়ে যদি আপনি অনেক সুবিধা পান, তাহলে কেনো করবেন না?
অনেকে এডিয়াস ব্যাবহার করেন। খুব সম্ভবত ভালো টুলস যেহেতু অনেকে প্রফেশন্যালি এডিয়াস ব্যাবহার করে। আমার নিজস্ব রিকমেন্ডেশন হলো যদি আপনার ম্যাকবুক থাকে তাহলে ফাইনাল কাট অবশ্যই। আর যদি উইন্ডোজ হয় তাহলে প্রিমিয়ার প্রো। কারন আপনি সহজেই প্রিমিয়ার প্রো আর আফটার ইফেক্ট ইন্টার-রিলেট করতে পারবেন। বাই দা ওয়ে, আফটার ইফেক্ট হলো ইফেক্টস দেয়ার জন্য বিশেষ টুল, এটাতে কাট/কপি করা যায় কিন্তু খুব ঝামেলা।
আসুন কিছু বেসিক রুলস জেনে নেই।
আপনি যেই এডিটরই ব্যাবহার করুন না কেনো, আপনাকে কিছু রুলস/ট্রিক্স/টিপ্স জানতে হবে। আমি আপনাকে একটা ধারনা দিচ্ছি।
১... প্ল্যান তৈরী করুন এবং প্ল্যান মাফিক এগুতে থাকুন। আপনাকে যদি ডিরেক্টর স্ক্রিপ্ট দিয়ে দেয় তাহলে আপনি জানেন আপনি কি করতে যাচ্ছেন। কিন্তু যদি নিজের কাজ হয় তাহলে আপনার স্ক্রিপ্ট আপনার কাজে আসবে। তাছাড়া, আপনি ঠিক করে ফেলতে পারেন আপনার প্রোজেক্ট টাকে আপনি কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। কোথায় কোথায় কাট করবেন, কোথায় কি ট্রাঞ্জিশন দিবেন, কতটুকু লেংথ হবে।
২... কখনোই পজিটিভ কোন কারন ছাড়া ক্লিপ কাটবেন না। আপনার কাট এর কারনে যেনো পরের শটের শুরুটা অর্থবহ হয়ে দাঁড়ায়। আপনাকে বুঝতে হবে আপনি কি কাট করছেন। আপনি কি কোন একশন সিকোয়েন্স কাট করছেন? তাহলে কাটা ক্লিপ গুলো হবে ছোট ছোট। আবার ড্রামা সিকোয়েন্স ডিমান্ড করে একটু লং কাট।
Make the hard sacrifices to keep it short. Just because a scene is pretty doesn’t mean you should spend five minutes on a scene that could achieve the same impact in two minutes. If something isn’t working, try doing the exact opposite. Filmmaking is not a science, and there’s no formula to follow to get you through the thousands of little decision involved in editing a scene. Trust your instincts. - Tim Squyres
৩...আপনি যদি un-decided থাকেন যে আপনার ক্লিপ টা কতটুকু করা উচিত তাহলে একটু বড় করে কাটুন, তাহলে পরবর্তিতে ছোট করতে পারবেন। বড় ছোট দুটো ক্লিপ কেই আপনি প্রিভিউ করে দেখতে পারবেন কোনটা যায় পরের শটের সাথে।
৪... দুটো শটের মাঝে কি কোন কাট-এওয়ে শট ব্যাবহার করা যায় যেটা ওই সিকোয়েন্স টাকে আরও অর্থবহ করে তুলবে? তাহলে সেটা করুন। বুঝে দেখুন কোথায় কোথায় কাট এওয়ে (বা ইন্সার্ট শট) ব্যাবহার করা যায়। কখনো ওভার-ইউজ করবেন না।
৫... ৩০ ডিগ্রী রুলের কথা বলেছিলাম একটা পোস্টে। আপনি এডিটর হিসেবে এটাকে আরো ১৫ ডিগ্রী বাড়িয়ে দিন। আপনি খেয়াল রাখবেন দুটো শটের এঙ্গেলের মাঝে যেনো অন্ততঃ ৪৫ ডিগ্রী পার্থক্য থাকে।
I’m not really sure you can learn editing from someone, but you can certainly see someone who does it in a very interesting way. - Steven Rosenblum
৬... চেষ্টা করুন মুভমেন্ট বা মোশনের মাঝে কাট করতে। ধরুন আপনি শোয়া থেকে উঠে বসার একটা শট এ দুইটা এঙ্গেল থেকে কাটবেন। আপনি হয়তো এভাবে কাটতে পারেন - এঙ্গেল ১ থেকে কবির শোয়া থেকে উঠে বসলো। এঙ্গেল ২ থেকে কবিরা বসে থাকা অবস্থায় মুখে হাত দিলো। এখন দেখুন, এভাবে কাটলে মনে হতে পারে আপনি শট কেটেছেন। মানে দর্শক ব্যাপারটা চোখ দিয়েই ধরতে পারবে। তো, আপনি যদি খাট থেকে উঠে বসার মাঝে এঙ্গেল টা পরিবর্তন করেন, তাহলে আপনি একটা মোশনে কেটেছেন। আর দর্শক তখন ঘটনার সাথে একাত্ম হয়ে থাকবে।
৭... যখন আপনার হাতে অনেক গুলো এঙ্গেল থেকে শুট করা ক্লিপ থাকবে তখন চেষ্টা করবেন খুব বেশী সময় একই এঙ্গেলে না থাকতে।
৮... ধরুন, আপনি একটা বিয়ের অনুষ্ঠান এডিট করবেন। চেষ্টা করবেন একটা শতের সাথে পরের শটে একটা রিলেশন রাখতে। তো, ফুলের শট থেকে খাওয়ার শট টা রিলেট না করলেও কেকের শট কিন্তু করে।
৯... কন্টিনিউটি রাখুন। প্রপস কন্টিনিউটি যদি মেইন্টেইন করতে পারেন তাহলে খুব ভালো যদিও এটা আপনার দায়িত্ব না। এটার জন্য আলাদা লোক আছে যার কাছ শুটিং এর দিন এই কাজ করা। কিন্তু আপনি মুভমেন্ট বা মোশন কন্টিনিউটি রাখবেন। ধরুন, কবিরের ওভার দ্যা শোল্ডারে পিয়াস হাত দিয়ে মাথা চুলকাচ্ছে। এর মধ্যে আপনি কাট করলেন। পরের শট ফেললেন পিয়াসের পেছন থেকে। আর দর্শকজ দেখতে পেলো যে পিয়াসের হাত আসলে মাথায় নেই, অন্য যায়গায় আছে। আপনাকজে এটা মেইনটেইন করতে হবে।
১০... সীন শুরু করুন কোন একশন দিয়ে। মানে বুঝিয়ে বলি। ধরুন, সিকোয়েন্সের শুরু হলো আকাশ দিয়ে। তারপরের শট টা হলো নায়িকা প্লেট ধুচ্ছে। এখন পরের শট আপনি কাটবেন ধোয়ার মাঝামাঝি থেকে। শুরু থেকে নয়। সীনের শেষ টাও করবেন কোন কন্টিনিউ একশন দিয়ে।
Don’t accept that there are rules. In editing the whole point is to challenge every convention. - Martin Walsh
আমি আসলে একটা ধারনা দেয়ার চেষ্টা করি। আপনি ধারনা নিয়ে নিজে নিজে প্র্যাকটিস করবেন। ইয়ুটিউবে খুজুন, গুগল করুন। নিজে নিজে প্রচুর প্র্যাক্টিস আপনাকে দিবে ভালো কাজ করার আত্মবিশ্বাস।
মাহদী হাসান [শামীম]
ফ্রীল্যান্স ফিল্মমেকার
সিনেমা পিপলস নেটওয়ার্ক
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৪৯