আপনি কি একখানা শর্ট ফিল্ম বানিয়ে দেশবাসীকে আপনার ট্যালেন্ট দেখাতে চান?
আপনি কি আপনার জীবনের বা কল্পনার গল্প কে অন্যের সাথে শেয়ার করতে চান?
আপনার কি একখানা ক্যামেরা রয়েছে আর আপনি চাইছেন কিছু একটা করতে?
উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর 'হ্যাঁ' হোক বা 'না' হোক, আসুন খুব দ্রুত চোখ বুলিয়ে নেই নিম্নোক্ত দশখানা টিপস এর উপর।
স্ক্রিপ্ট কই আপনার?
শুরু করুন স্ক্রিপ্ট দিয়ে। ভালো স্ক্রিপ্ট = কাজের সময় সুবিধা = ভাল সিনেমা। কাজে ঝাপায়া পড়ার আগে ভাবুন। একটি ভালো স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজে নামা বুদ্ধিমানের কাজ।
প্রশ্নঃ ভাই, ভালো স্ক্রিপ্ট তো লিখতে পারিনা। গল্প আছে কিন্তু স্ক্রিপরাইটার কই পাই?
উত্তরঃ ভালো স্ক্রিপ্ট মানে যে ফরম্যাট মেনে লিখা তা কিন্তু নয়। ভালো স্ক্রিপ্ট মানে আপনার গল্পটাকে চিত্রায়ন করার কাগজিক ধাপ। একেবারে প্রথম ধাপ যদিও ব্রেইন-স্টোর্মিং মানে মাথার মধ্যে গল্পটাকে সাজানো, কিন্তু এই স্ক্রিপ্ট থেকেই শুরু হবে আপনার আসল কাজ। স্ক্রিপ্ট খারাপ = খারাপ চিত্রায়ন = অখাদ্য শর্ট ফিল্ম।
প্রশ্নঃ ভালো স্ক্রিপ্ট এর জন্য অপেক্ষা করছি। তাড়াহুড়োর কাজ খারাপ হয় তাই অপেক্ষা করছি। ভাল করছি না?
উত্তরঃ অবশ্যই না। অপেক্ষায় অপেক্ষায় আপনার পড়াশুনা শেষ হয়ে চাকরী বাকরী নিয়ে বউ ঘরে তুলে বাচ্চা কাচ্চা বানায়া ফেলবেন, কিন্তু সাধের ফিল্ম আর বানানো হবেনা। এখুনি ঝাপায়া পড়ুন। এখুনি সময়। এখুনি মানে এই মুহুর্তে । কাছের বন্ধুটাকে বলুন কিছুটা সময় দিতে। ও যদি কিছু না জানে তাহলে নিজে আগে জেনে ওকেও জানান যে কিভাবে কি হয়। মনে করুন এটা একটা গেম। কিন্তু সিরিয়াস গেম। জিততেই হবে তা নয়, কিন্তু লোকজন যেনো বলে ছেলেটা বা মেয়েটা ভাল খেলেছিলো।
বাড়ীর কাজ করুন - প্রফেশন্যাল হোন
আমি জানি আপনি প্রফেশন্যাল না। এমনকি আমিও না। কিন্তু আমরা যদি প্রো প্রো ভাব নিয়া থাকি তাহলে কি খুব বেশী দোষের কিছু হবে? প্রো প্রো ভাব কিন্তু এমনি এমনি নিলে দোষের হবে। আমাদের আগে বুঝতে হবে প্রো বা প্রফেশন্যাল লোকজন কিভাবে চিন্তা করে। মনে করুন, আপনি একজন ওয়েব ডেভেলপার। আপনি একটি ফার্মে কাজ করেন। ওয়েব ডেভেলপিং হলো আপনার প্রফেশন। আপনি কিভাবে চিন্তা করেন? আপনি চিন্তা করেন যে নিজেকে কিভাবে আরো ডেভেলপ করা যায়। আরো দু একটা ল্যাঙ্গুয়েজ শিখা উচিত। কাজের মান কিভাবে বাড়ানো যায়। কিভাবে কাজের সিক্যুয়েল মেনে কাজ করা উচিত। কারন? কারন হলো এটা আপনার প্রফেশন। এটা ঠিক মত না করলে হয় পেটে ভাত জুটবেনা, আর নয়তো বাদ বাকী সবাই যেখানে লিভাইস এর জিন্স পড়বে আপনি সেখানে বঙ্গবাজারেই পড়ে থাকবেন।
বুঝতে পেরেছেন তো যে কিভাবে প্রফেশন্যালরা চিন্তা করে থাকে? মনে করুন, ফিল্মমেকিং করেই আপনাকে খেতে হবে। ভালো না হলে পেটে ভাত জুটবেনা। এভাবে চিন্তা করুন।
প্রশ্নঃ ভাই, শখের বশে ফিল্ম মেকিং নিয়া নাড়াচাড়া দেই। প্রফেশন তো না। প্রফেশন্যাল এটিচুড নেয়ার কি কোন দরকার আছে?
উত্তরঃ প্রফেশন্যাল এটিচুড নেয়ার তখনি দরকার নাই যখন আপনি খালি এটিচুড নিয়াই থাকবেন। তখনি দরকার আছে যখন আপনি কাজ করবেন প্রফেশন্যালদের মত। চিন্তা করবেন তাদের মত। হালকা পাতলা পড়াশুনা করলেই আপনি বুঝতে পারবেন প্রফেশন্যাল ফিল্মমেকার রা কি করে। আমি এক লাইনে বুঝায়া দিতেছি - তারা ফিল্ম শুট করার আগে প্রচুর পরিমানে বাড়ির কাজ করে।
প্রশ্নঃ বাড়ির কাজ মানে কি রে ভাই? টাইটেলে লিখা রাখছেন কিন্তু এই ব্যাপারে কিছু কইলেন না তো? আমি কি এখন স্কুলে পড়ার মত বাড়ির কাজ নিয়া বসুম নাকি!
উত্তরঃ স্কুলের কথা মনে আছে তাহলে? গুড। হ্যাঁ, স্কুলে পড়ার সময় ফিরে যেতে হবে আবার। স্কুলের ওই ১২ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ২৪ টা খাতার পাতা শেষ করতে হবে লিখে লিখে। কি লিখবেন? আপনার প্ল্যান। প্রফেশন্যাল ফিল্মমেকার রা ফিল্ম শুট করার আগে প্রচুর কাগজ খায়। মানে, লিখা লিখি করে আর কি। গল্প-স্ক্রিপ্ট-শুটিং স্ক্রিপ্ট-কোথায় কি লাগবে-প্ল্যান-কিভাবে এডিট হবে-নায়ক নায়িকা কোথায় দাড়াবে- কোথায় ধরবে- কোথায় চুমু খাবে ব্লা ব্লা ব্লা মেলা কিছু লেখে তারা। আপনি অত কিছু না লিখেন কিন্তু অন্ততঃ আপনার স্ক্রিপ্টটা লিখুন। কয়েকবার লিখুন। আগের টা ছিড়ে ফেলে নতুন করে লিখুন। মনে রাখবেন - লিখায় লিখা আনে তাছাড়া আপনার উচিত হবে কোথায় কোন শট কিভাবে কখন নিবেন সে ব্যাপারেও লিখে ফেলা। মনে রাখবেন - ভাই বেরাদার যেভাবে মাথায় রেখে কাজ করে সেটা খুব উচ্চমার্গীয় কাজ। কিন্তু নিজের ব্রেনের উপর প্রেশার ফালায়া খারাপ কাজ প্রসব করার কি দরকার হুদাই?
নেটওয়ার্ক বাড়ান
নেটওয়ার্ক বাড়াতে হবে। পরিচিত হোন, নিজেকে পরিচিত করুন। শুধু স্বনামধন্য নির্মাতা নয়, বেনামধন্য (আমার মত) নির্মাতাদের সাথেও পরিচিতি বাড়ান। আপনি জানেন না কার মধ্যে কি জিনিস লুকিয়ে আছে। হয়তো আপনি পেয়ে যাবেন অবহেলায় পড়ে থাকা একজন দুর্দান্ত এডিটরের। একা কাজ করার চেয়ে একটি টিম বানিয়ে কাজ করা সব সময় লাভজনক। শর্ট ফিল্ম বানাইতে গিয়া দেখবেন আপনার বাজেট কম - একেবারেই নগন্য। টিমমেম্বার বেশী হলে এই কম বাজেটেই ভালো কিছু দেয়া খুব সম্ভব।
প্রশ্নঃ কাউরে চিনিনা ভাই। আমি একা, বড় একা, আমার আপনজন নাই। কিয়ারতাম?
উত্তরঃ প্রথমেই চেষ্টা করুন আপনজন বাড়াতে। প্রফেশন্যাল বা এমেচার অথবা সেমি-প্রো যাদের কে পারবেন আপনজন বানাবেন। একদিন এমন কাউকে পেয়ে যাবেন যার সাথে কাজ করার পর মনে হবে 'জীবনের এতগুল দিন, কেটে গেলো একা একা, তুমি কেনো আগে আসোনি, আগে কেনো দাওনি দেখা'
যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে একাই শুরু করে ফেলুন। শুরু করাটাই একটু কঠিন। একবার শুরু করলে আপনি আপন জনের দেখা পাবেন সহজেই। কিন্তু যদি না শুরু করেন তাহলে শুধু পিছিয়েই যাবেন, আপনজন আর পাবেন না। আর তাতেও কাজ না হলে, আমি আভিতাক জিন্দা আছি
সময় নষ্ট না করলে ভালো লাগে
দয়া করে সময় নষ্ট করবেন না। প্রথমে, কাজ শুরু করতে সময় খাবেন না। পরে, কাজের সময় সময় খাবেন না। কিন্তু তার মানে এই না যে দ্রুত কাজ করবেন। আপনি টাইমলাইন সেট করুন (আরে ধুর, ফেসবুকের না)
এবার টাইমলাইন অনুযায়ী কাজ করুন। ঠিক করুন, সাতদিন লাগাবে স্ক্রিপ্ট রেডি করতে। ৭ দিন লাগাবেন প্রি-প্রোডাকশন করতে। আর ১ দিন শুটিং। ৩ দিন এডিটিং। ইয়ুটিউবে আপলোড দিবেন ১ দিন লাগায়া (দেশের নেটের যা অবস্থা!!)
প্রশ্নঃ সময় নিচ্ছি। ভালো কাজের মুলমন্ত্র হল সময় নিয়ে করা। তাড়াহুড়োর কাজ ভালো হয়না। ঠিক হচ্ছেনা?
উত্তরঃ উহু, কোন ক্রমেই ঠিক হচ্ছেনা যদি আপনি বেশী সময় নিয়ে ফেলেন। মনে রাখবেন খুব সাধারন একটি হিসেব- ১০ বছরে আপনি ১০ টি ফিল্ম া বানিয়েছে। আর আমি ৯ বছর যাবত একটি ফিল্ম নিয়ে চিন্তা করছি। দশম বছরে আমি একটা ফিল্ম বানালাম। এবার বলুন তো ১১তম বছরে কার পক্ষে তুলনামুলক ভালো সিনেমা বানানো সম্ভব? এই ধাঁধাঁর জবাব যদি ভুল করেন তাহলে আপনার ব্যাংকের চাকরী টাই আসলে আপনার জন্য সুইটেবল।
বেশী এক্সপেরিমেন্ট করবেন না
আপনি যদি এই লাইনে নতুন হোন, তাহলে বেশী এক্সপেরিমেন্ট না করা ভালো। এক্সপেরিমেন্ট জিনিসটা তখনি করা উচিত যখন আপনি একটা ব্যাপারে খুব ভালো আইডিয়া রাখেন। মনে করেন, আপনি লাইটিং এর ব্যাপারে এক্সপার্ট লোক। তো, আপনার নতুন কাজটায় আপনি মনে করলেন একটু অন্যরকম কাজ করার জন্য। সেটা কিন্তু ঠিক আছে। কিন্তু, আপনি যদি শুধু লাইটিং এর বেসিক জেনেই এক্সপেরিমেন্ট করা শুরু করেন তাহলে কিন্তু সময় শুধু অপচয় করা হবে। বিশাল এক্সপেরিমেন্ট শেষে আবিষ্কার করবেন যে আপনার এই কাজ উনিশশো তেতাল্লিশ সালে এক ভদ্রলোক করে মরেও গেছে। বেহুদা এক্সপেরিমেন্ট থেকে সাধারন পথ অনেক ভালো।
প্রশ্নঃ বস, শর্ট ফিল্ম তো আমার নিজের জন্য। নির্মান শিখতেছি। তো, এখুনি তো উচিত বেশী বেশী এক্সপেরিমেন্ট করা। পরে ফিচার ফিল্ম বানাইতে গেলে কাজে লাগবে। ঠিক কিনা?
উত্তরঃ হয়তো ঠিক। কিন্তু শর্ট ফিল্ম কে আপনি কলিং কার্ড হিসেবে ধরছেন না কেনো? মনে করুন, আপনি আপনার ফিচার ফিল্ম এর গল্প নিয়ে কোন প্রডিউসার এর সাথে দেখা করলেন। উনি জিজ্ঞেস করলেন আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে। তখন আপনি কি দেখাবেন? আপনার আগের শর্ট ফিল্মের শো রীল। উনি হয়তো আপনার একটা দুইটা শর্ট ফিল্ম ও দেখতে চাইতে পারেন। এখন বলেন, প্রডিউসার রা কি সহজে আর্ট ফিল্ম বা এক্সপেরিমেন্টাল ফিল্ম দেইখা টাকা ঢালতে রাজী হবে? তবে হ্যাঁ, আপনার হাতে যদি বেশ কিছু শর্ট ফিল্ম থাকে, আপনি যদি অভিজ্ঞ লোক হোন, তাহলে অবশ্যই এক্সপেরিমেন্ট করবেন। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায়, রুলস মেনে চলাই ভালো।
চিন্তা ভাবনা করে লোকেশন ঠিক করুন
শর্ট ফিল্ম হোক আর ফিচার, আপনার লোকেশন এর উপর নির্ভর করবে অনেক কিছু। সহজ হিসেব, আপনার লোকেশন আপনার গল্পকে ভিজ্যুয়ালাইজ করতে সাহায্য করবে। আপনা বান্ধবীর রুম হয়তো আপনার রুম থেকে একটি নির্দিষ্ট সিকোয়েন্সের জন্য বেটার। প্রথমে চেষ্টা করবেন উনাকে যেভাবে হোক রাজী করানো। যদি একেবারেই না হয় তাহলে চেষ্টা করবেন আপনার রুম কে উনার রুমের মত সাজানো। কিন্তু, আপনার লোকেশন হওয়া উচিত ঝামেলাবিহীন। এর জন্য আপনার উচিত হবে লোকেশন কমিয়ে আনা। হয়তো খেয়াল করে দেখবেন যে একই গলির এই পাশ আর ওই পাশে দুইটা একেবারেই ভিন্ন সিকোয়েন্স নামিয়ে ফেলা যাবে অথচ দর্শক বুঝবেই না আপনি একই গলির দুই পাশ শুট করেছেন। আপনাকে চালাক চতুর হতে হবে।
আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখুন। আপনার হয়তো একের অধিক লোকেশন। চেষ্টা করুন এক লোকেশন থেকে আরেক লোকেশনের দুরত্ব কম রাখতে। তাহলে আপনার অনেক সময় বেচে যাবে।
প্রশ্নঃ ভাই, আমি অত চালাক চতুর না। কিন্তু ফিল্মমেকিং নিয়া বিশাল আগ্রহ। কি করণীয়?
উত্তরঃ বাংলাদেশে এই মুহুর্তে খুব সম্ভবত ১৭ টা চ্যানেল। ধরাবাঁধা গল্প, ধরাবাঁধা সেটাপ আর ধরাবাঁধা কাজ। লেগে যান।
বাজেটের মধ্যে থাকুন, স্কেজিউল মেনে কাজ করুন
হোক না ভাই আপনার নিজের কাজ, আপনার কি উচিত হবেনা আপনার কাজের জন্য একটা বাজেট নির্ধারন করা আর তারপর সময় বেঁধে কাজ করা? এর পিছনে খুব সুন্দর একটা কারন আছে - সীমাবদ্ধতা আছে বলেই আমাদের কাজ এত সুন্দর হয় (সোর্সঃ বহু মনীষী)
আপনি যদি গা ছেড়ে কাজ করেন, তাহলে আপনার কাজ ভালো না হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। আপনি প্রথমে আপনার স্কেজিউল ঠিক করে ফেলুন। কোথায় কত লাগবে তার কোন ধারনা না থাকলে ধারনা নিন। এই জন্য নেটওয়ার্কিং টা গুরুত্বপুর্ন। তারপর ঠিক করে ফেলুন বাজেট। এখন আপনার কাজ হবে এই বাজেট এর মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ করে ফেলা যদিও আপনি চাইলে পারবেন আরো কিছু এক্সট্রা টাকা খরচ করতে। আর স্কেজিউল এর বাইরে না গিয়ে লিখিত সময়ের মধ্যেই কাজ টা শেষ করার আপ্রান চেষ্টা করবেন।
প্রশ্নঃ ভাই, বাজেট নাই গরীব মানুষ। শিডিউল কেমনে করুম? জানিইতো না কোথায় কতদিন লাগবো।
উত্তরঃ ১০ টাকাও বাজেট হতে পারে আবার ১০ কোটি ও বাজেট হতে পারে। এটা নির্ভর করবে আপনি কিভাবে আপনার সেটাপ দাঁড় করাতে চাচ্ছেন। টাকা বেশী খরচ করলেই কিন্তু ভালো কিছু প্রডিউস হয়না। টাকা মাপ মত খরচ করতে হবে। প্রথম দিকে এদিক অদিক টাকা একটু বেশী খরচ হবেই। এটা আটকানোর উপায় হলো এক্সপেরিএন্সড প্রযোজকের সাথে কাজ করা। আর নয়তো কাজ করতে করতে ধারনা নেয়া। আর শিডিউল টাও অনেকটা বাজেটের মত। যদি অভিজ্ঞ কেউ আপনার সাথে না থাকে, তাহলে আপনি আপনার কমনসেন্স ব্যাবহার করুন।
গল্পের চিত্রায়ন করুন আধুনিকভাবে
মনে আছে ম্যাকগাইভারের কথা? বা, সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান, র্যাভেন, দি এ টিম, সিনবাদ, হারকিউলিস টিভি সিরিজ গুলোর কথা? যেগুলা এক সময় গোগ্রাসে গিলতাম। আপনি আজ ১৫/১৬ বছর পর সেগুলো আবার দেখতে বসেন - আগের সেই ভালো লাগাটা কিন্তু কাজ করবেনা। কেনো করবেনা? কারন আধুনিক সময়ের সাথে গল্পের সেই চিত্রায়ন যাচ্ছেনা। আপনি যে গল্প নিয়েই কাজ করুন না কেনো, চিত্রায়ন যদি স্মার্টলি করতে পারেন তাহলে একটা সাধারন গল্প ও হয়ে যাবে অসাধারন। নোটবুক মুভি এর প্রমান। সাধারন গল্পের অসাধারন চিত্রায়ন শুনেছেন, কিন্তু কখনো কি শুনেছেন যে অসাধারন গল্পের সাধারন চিত্রায়ন হওয়ার পর ও অনেকের ভালো লেগেছে? শোনবেন ও না।
প্রশ্নঃ আধুনিক চিত্রায়ন মানে কি এটাই যে আমাকে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করতে হবে?
উত্তরঃ উহু, আধুনিক চিত্রায়ন মানে আপনাকে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করতে হবে তা না। মনে রাখবেন, ক্যামেরা বা যন্ত্রপাতি আপনাকে আপনার গল্প চিত্রায়ন করতে সাহায্য করবে কিন্তু চিত্রায়ন করে দিবেনা। সো, ক্যামেরার পিছনের মানুষের উপর নির্ভর করে সব কিছু। আপনি পৃথিবীর সব চেয়ে দামী ক্যামেরা তা নিয়ে শুট করেও কিন্তু একটি অখাদ্য বানাবেন যদি না জানেন কিভাবে ফ্রেমিং করা উচিতবা কোন এঙ্গেলে শুট করা উচিত বা আপনার ফ্রেম এ কোন কোন সাব্জেক্ট থাকা উচিত আর কি থাকা উচিত নয়। আলোর ব্যাবহার জানাটাও অনেক গুরুত্বপুর্ন। ফেস এর কোন দিকটায় ক্যামেরা ধরলে আপনার অভিনেতার ইমোশনটা দর্শকদের স্পর্শ করবে সেটাও জানা উচিত। মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে যদি আপনি চমৎকার একটি শট নেন, তাহলেও মানুষ বাহবা দিবে।
শুটিং এর সময় সকল সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করুন
কখনো বলবেন না যে আমরা এই সমস্যা এডিট রুমে ঠিক করে নিবো। নিজে যদি এডিটর না হোন, তাহলে বুঝবেন না এডিটিং এ কোন বেঠিক জিনিস ঠিক করা কতখানি কষ্টের আর ক্ষেত্রবিশেষে ব্যায়বহুল। চেষ্টা করবেন সম্ভাব্য সমস্যার একটা লিস্ট বানিয়ে আগেই ঠিক করে ফেলতে যে কিভাবে সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করবেন। যাবতীয় সমস্যা কিন্তু ওই শুটিং এর সময়টাতেই হয়।
আর যদি আগে থেকে কোন ধারনা না দিয়েই কোন সমস্যা হাজির হয় তাহলে চেষ্টা করবেন শুটিং এর সময়টাতেই সমস্যার সমাধানের। পোস্ট বা এডিট রুমের জন্য কিছু ফেলে রাখবেন না।
প্রশ্নঃ কিছু কিছু সমস্যার সমাধান করতে গেলে সময় নষ্ট হবে, আর আমাদের ইকুইমেন্ট এর ভারা বাবদ খরচ বেড়ে যাবে। কি করনীয়?
উত্তরঃ খুব দ্রুত হিসেব করে ফেলুন সমস্যার সমাধান সেটে করতে গেলে কত এক্সট্রা খরচ হচ্ছে, আর এডিটিং এর সময় করতে গেলে কত সময়/টাকা খরচ হচ্ছে। ঠিক করুন কোনটা সবচেয়ে কম খরচের? সবচেয়ে ভালো হয় যদি এডিটরের সাথে যোগাযোগ থাকে আগে থেকেই। তাহলে এডিটিং সম্পর্কিত তথ্য পেতে সুবিধা হবে।
আপনার দর্শকদের জানুন - টার্গেট ঠিক করুন
সবসময় টার্গেট কাস্টমার নিয়ে কাজ করবেন। ঠিক করুন আপনার টার্গেত কাস্টমার কারা। কখনো এভাবে ভাববেন না যে আপনার টার্গেট কাস্টমার সবাই - আবালবৃদ্ধবনিতা। এমন একটা সিনেমার নাম বলুন যেটা সবার কাছেই ভালো লেগেছে একটা অপ্রাসঙ্গিক কিন্তু মজার তথ্য দিয়ে রাখি এই ফাঁকে - যে জিনিসে লাইক বেশী পড়তে থাকবে সেই জিনিসে ডিজলাইক ও বেশী পড়তে থাকে। লাইক ও ডিজলাইক এর কার্ভ সবসময় উর্ধমুখী :প
যাইহোক, আপনার টার্গেট ঠিক করে ফেলুন। আপনার শর্ট কি ফেসবুক আর ইয়ুটিবের জন্য? নাকী কোন চ্যানেলের জন্য? নাকী শুধুই ফিচার ফিল্ম বানানোর জন্য টাকাওয়ালা মাছ ধরার জন্য? নাকি শুধুই শখের বসে নিজের হার্ড ডিস্কে ফেলে রাখার জন্য? যারা বেশী বয়সী তাদের জন্য? নাকি অল্প বয়সী বাচ্চা-কাচ্চাদের জন্য? নাকী টিন-এজারদের জন্য? নাকী যুবযুবতীদের জন্য (১৮+)?
এবার আপনার দর্শক দের কে বুঝার চেষ্টা করুন। আপনার চেষ্টা থাকবে আপনার দর্শকদের কে তাদের পছন্দমত অথচ কোয়ালিটি খাবার খাওয়ানোর জন্য। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম - হলিউডের মার্কেটিং আইডিয়া ধার করে ইরানী ফিল্ম এর উপর খাটানো।
প্রশ্নঃ আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবো ভাই?
উত্তরঃ একটা শর্ট ফিল্ম বানিয়ে।
সোর্সঃ নেট ঘাটলে হাজার হাজার টিপস পাওয়া যায়। সেখান থেকে অনেক কিছু মাইরা নিজের কিছু অভিজ্ঞতা ফলায়া একটা কিছু দাড়
মাহদী হাসান [শামীম]
ফ্রিল্যান্স ফিল্মমেকার
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৪৯