প্রথমেই বলে নেয়া ভালো আমি এই পোস্টে হাই-এন্ড ক্যামেরা নিয়ে আলোচনা করবোনা। যারা শর্ট ফিল্ম বা নাটক বানাতে চান, তাদের জন্য এই পোস্ট। ফিচার ফিল্ম বানাতে হলে আপনার হাই-এন্ড ক্যামেরা ব্যাবহার করা উচিত। যদিও আপনার ক্যামেরা টা বড় ব্যাপার নয় কিন্তু আপনার গল্প ও সেটা বলার স্টাইল টাই মুখ্য।
আমি প্রায়ই একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হই - কোন ক্যামেরা ব্যবহার করবো?
প্রশ্নের ধরন হয়তো ভিন্ন থাকে কিন্তু সবাই জানতে চায় কম দামের মধ্যে ভালো কোন ক্যামেরা ব্যবহার করা যায়। আমি কি প্রফেশন্যাল ব্যবহার করবো নাকি অ্যামেচার দিয়েও কাজ চালানো যাবে? আমার টাকা আছে, তো আমি যদি একটা ৩৫মিমি এর ক্যামেরা কিনি তাহলে কি পিকচার ভালো আসবে?
আমি নিজেও এমন প্রশ্ন অনেককেই করেছি। তারপর মোটামুটি একটা ধারনা লাভ করেছি। আজকে সেই ধারনাটাই আপানাদের সাথে শেয়ার করবো। ধারনাটা হলো -
"IT’S NOT THE CAMERA, BUT WHO’S BEHIND THE CAMERA."
হুম, বড়ই কমন একটা কথা কিন্তু সত্য কথা। আপনার হাতে ভাল ক্যামেরা থাকা মানেই কিন্তু আপনার কাজ ভালো হবে, তা কিন্তু নয়। হতে পারে আপনার কাজ অনেক ভালো কিন্তু ৩৫মিমি এর জায়গায় সাধারন ডিজিটাল ক্যামেরা ইউজ করায় আপনি ভালো আউটপুট পাচ্ছেন না। সেটা ভিন্ন ব্যাপার।
আমি ধরে নিচ্ছি আপনি ক্যামেরা কিনবেন কিন্তু বুঝছেন না কি ক্যামেরা কিনবেন। আমি খুব জোর দিয়ে বলেছিলাম যে আপনার মোবাইল সেট টাও হতে পারে আপনার শর্ট ফিল্ম বানাবার জন্য একটা ভালো ক্যামেরা। কিন্তু, আপনার যদি খরচ করার মত টাকা থাকে তাহলে আপনার কি উচিত না একটু ভালো ক্যামেরা কিনা? একতা ভালো ক্যামেরা আপনাকে অনেক সুবিধা দিবে যা আপনার মোবাইল ক্যামেরা হয়তো দিবেনা।
আমি খুব ডিটেইলস এ কখনোই যাইনা। আজকেও যাবোনা। একেবারে নতুনদের খুব ডিটেইলস এ নিয়ে গেলে তাদের মাথা ঘুরাতে থাকে (আমার ঘুরায় তাই ধরে নিলাম আপনার ও ঘুরায়)... আমি তাই শুধু সংক্ষেপে ক্যামেরা নির্বাচন করার জন্য কি কি জানা থাকে লাগে সেটা নিয়ে কথা বলবো।
আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনার ক্যামেরায় কি ম্যানুয়াল কন্ট্রোলের সুবিধা আছে কিনা। ম্যানুয়াল কন্ট্রোল মানে আপনি কি ISO (যত বেশী থাকবে তত ভালো), exposure, focus, shutter speed, fps (সিনেমাটিক লুক পেতে হলে 24fps এ শুট করুন) - ইত্যাদি আপনার মত করে কন্ট্রোল করতে পারবেন কিনা। এখন অনেক লো রেঞ্জের ক্যামেরায় এই সুবিধা গুলো পাওয়া যাচ্ছে।
যে ক্যামেরাটা কিনতে যাচ্ছেন সেটা কি HD মুডে ভিডিও রেকর্ড করে কিনা। এখন প্রায় সবাই HD মুডে চলে যাচ্ছে। মোবাইল গুলোতে পর্যন্ত HD ভিডিও রেকর্ডিং এর সুবিধা দিচ্ছে।
ক্যামেরার রেকর্ডিং ফরম্যাট টাও অনেক গুরুত্বপুর্ন। আপনাকে আপনার ফুটেজ এডিট করতে হবে, তাই কোন ফরম্যাটে রেকর্ড হচ্ছে সেটা একটা বড় ব্যাপার। সবচেয়ে সুবিধাজনক হলো ক্যামেরা যদি মেমরী কার্ড বা হার্ড ডিস্কে ফুটেজ স্টোর করে। তাহলে আপনি অতি সহজেই কার্ড রিডার বা USB দিয়ে ফুটেজ কে আপনার পিসি তে ট্রান্সফ্যার করতে পারবেন। এ কারনে আমি অনেকাংশে (তবে পুরোপুরি না) ডিভি/মিনিডিভি ক্যামেরা রিকমেন্ড করিনা।
Shallow Depth of Field - সিনেমাতে খেয়াল করে দেখেছেন যে অনেক শটে স্ক্রিনের একটা অংশ ফোকাস থাকে আর পিছনের বা পাশের বেশ কিছু অংশ আউট অফ ফোকাসে থাকে! এটা করা হয় যখন ফিল্মমেকার চান বা শট টা ডিমান্ড করে স্ক্রিন এর কোনো স্পেসিফিক অংশ ফোকাসড থাকুক। পেছনের অ্যাক্টিভিটিজ হয়তো ভিডিও তে একটা নয়েজ তৈরী করতে পারে। যেমন ধরুন, দুজন হয়তো কথা বলছে। একজনের ক্লোজ শট নিচ্ছেন যেনো তার মুখের এক্সপ্রেশন টা দর্শকের কাছে ফুটে উঠে। কিন্তু তারা আছে একটা শপিং সেন্টারে। পিছনে লোকজন হাটাহাটি করছে। এখন আপনার স্ক্রিনে যদি পেছনের লোকজনের হাটাহাটি স্পষ্ট ধরা পরে তাহলে কিন্তু দর্শকের মনোযোগ পেছনে চলে যেতে পারে। তাই ফিল্মমেকার দের পছন্দ হলো তেমন ক্যামেরা যেগুলার ডেপথ অফ ফিল্ড কম। আর সেটা হয় যদি ক্যামেরার সেন্সর বড় হয়। যত বড় সেন্সর তত বেশী আলো ক্যামেরায় ঢুকে আর তত কম ডেপথ অফ ফিল্ড পাওয়া যায়। dSLR গুলো বড় বড় সেন্সর থাকে কিন্তু তুলনামুলক দাম অনেক কম।
ক্যামেরায় যেনো বিভিন্ন লেন্স ব্যাবহার করা যায়। আপনার ক্যামেরায় যদি একটাই লেন্স থাকে আর সেটা যদি হয় ফিক্সড, আর অন্য কোন লেন্স যদি লাগানোর সুযোগ না থাকে তাহলে আপনি অনেক শট চাইলেও ভাল করে নিতে পারবেন না। ফিল্মমেকার দের কাছে dSLR জনপ্রিয় হওয়ার আরেক কারন হলো এটার Interchangeable Lens system সুবিধা।
আরো অনেক ব্যাপার আছে যেগুলো খেয়াল করা উচিত যখন আপনি একটা ক্যামেরা কিনতে যাবেন। আপনার বাজেটের মধ্যে যতটুকু পারা যায় এসব সুযোগ সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করবেন। আর ক্যামেরা কিনার আগে আরো ভালো মত স্টাডি করে নিন। হয়ত আপনি একটা ক্যামেরা পছন্দ করেছেন কিনবেন বলে, কেনার আগে সেই ক্যমেরা নিয়ে একটা রিসার্চ করুন। দেখুন , যাদের এই ক্যামেরা আছে তারা কি বলে। আপনার কাজ কি হবে এই ক্যামেরায়? এর চেয়ে কম দামে ক্যামেরা কিনলে কি আপনার কাজ চলে যাচ্ছে? আর কয়েক হাজার বাড়ালে কি আপনি আরো অনেক বেশী সুবিধা পাচ্ছেন কিনা - এই সব ব্যাপারেও খেয়াল রাখা উচিত।
আপনি যদি ক্যামেরা ভাড়া নেন, তাহল এসব ব্যাপারে জানা থাকা ভালো। তাহলে কোন ক্যামেরা আপনার ভাড়া নেয়া উচিত সেটা নিজ থেকেই বুঝতে পারবেন।
কেনো আমি সবসময় dSLR রিকমেন্ড করি?
আপনি যদি সাধারন মানের একটা মিনিডিভি ব্রডকাস্ট ক্যামেরা কিনতে যান (টিভি নাটকের জন্য যেগুলো ব্যবহার হয়), আপনাকে শুধু ক্যামেরার পেছনে খরচ করতে হবে ১ থেকে ২ লাখ টাকা। তারপর লেন্স/ফিল্টার/ট্রাইপড তো আছেই। তার জন্য এক্সট্রা বাজেট লাগবে। কিন্তু আপনি মাত্র ৬০/৭০ হাজারে একটা dSLR কিনতে পারবেন। তার মানে আপনি কমপক্ষে ৩০ হাজার বাঁচাতে পারছেন। অথচ, আপনি একটা dSLR এ ম্যানুয়ালি আইএসও, এক্সপোজার, ফোকাস, শাটার স্পীড ও ফ্রেম পার সেকেন্ড কন্ট্রোল করতে পারবেন। আপনি এইচডি রেকর্ডিং সুবিধা পাচ্ছেন। অল্প আলোতে ভালো আউটপুট পাবেন। মেমরি কার্ডে ডাটা স্টোর করায় আপনাকে এক্সট্রা খরচ করতে হচ্ছেনা। কার্ড রিডার দিয়ে সরাসরি পিসি তে। এটার ডেপথ অফ ফিল্ড চরমতম শ্যালো। আপনি সহজেই লেন্স পরিবর্তন করতে পারবেন। ছোট, তাই আপনি যে কোন জায়গায় অতি সহজে নিয়ে যেতে পারবেন।
কোন ডিএসএলআর কেনা যায়?
এটা নির্ভর করবে আপনার বাজেটের উপর। তবে একটা জিনিস স্পষ্ট বুঝিয়ে দেই - Canon 550D & 7D এর মধ্যে ভিডিও মুডে আদতে কোন পার্থক্য নেই। Canon 600D & 60D কেনার ইচ্ছে থাকলেও আপনি চিন্তা করে দেখুন Canon 550D তে আপনার কাজ চলবে কিনা। কারন, Canon 550D এর দাম তুলনামুলক ভাবে কম। Canon 550D, 600D, 60D, 7D - এগুলোর মধ্যে কিছু ফিচারের এদিক ওদিক ছাড়া মুল পার্থক্য কম। তবে আপনার যদি বাজেট বেশী থাকে তাহলে আমি বলবো Canon 5D MarkII কে বিবেচনা করতে।
পোস্ট টা একটু এডিট করতে হলো। আমার রিকমেন্ডেশন হল - গো ডিজিটাল। দিস ইজ দ্যা হাই টাইম।
এত ছোট পোস্টে অনেক কিছু কাভার করা গেলোনা। প্রশ্ন করুন, আমি উত্তর দিবো।
আর যে ক্যামেরাই ইউজ করেন না কেনো, দয়া করে ট্রাইপড ইউজ করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৪৮