ব্লগার নাফিজ মুনতাসির বেশ কিছুদিন আগে দিপের ব্লগে গিয়ে দারাশিকোর সাক্ষাতকার পোস্টে একটা প্রশ্ন করেছিলেন। একি প্রশ্ন তিনি সিনেমা পিপলস গ্রুপেও করেছেন। প্রশ্নটা হল -
রেড ক্যামেরা জিনিসটা আসলে কি??? এটার সাথে নরমাল ক্যামেরা এর পার্থক্য কোন জায়গায় ???
ফিল্ম ক্যামেরা
আগে ফিল্ম ক্যামেরা নিয়ে একটু জেনে নেই। জানা কথাই, আমি শুধু একটু ছোঁয়া দিয়ে যাচ্ছি।
dSLR বা ডিজিটাল কম্প্যাক্ট ক্যামেরা তো খুব বেশিদিন আগের না, এর আগে আমরা কি দিয়ে ছবি তুলতাম? রীল কিনে ক্যামেরায় ভরে ছবি তুলতাম আমরা, ওয়াশ করার পর প্রিন্ট করে দেখতে পেতাম কি তোলা হয়েছে। এই রিল ক্যামেরা বা ফিল্ম ক্যামেরার বড় ভার্সন হলো মুভি ক্যামেরা। মুভি ক্যামেরাতেও এরকম রিল থাকে। মুভি ক্যামেরা নিয়ে আদোপ্যান্ত লিখতে গেলে এই পোস্টে আর জায়গা হবেনা, তাই স্কিপ করতেছি। তবে এটা মাথায় রাখা উচিত যে মুভি ক্যামেরার রীল খুলে ল্যাবে নিয়ে ডেভেলপ করতে হয়।
ডিজিটাল ক্যামেরা
ডিজিটাল ক্যামেরা ইমেজ স্টোর করে ডিজিটাল স্টোরেজে, যেমন ধরুন - হার্ড ডিস্ক, মেমরী কার্ড ইত্যাদী। ডিজিটাল ক্যামেরার একটি বড় সুবিধা হলো - এতে আলাদা করে ফিল্ম কিনে ভরতে যেমন হয়না, তেমনি কোন কনভার্শন প্রসেসের মধ্য দিয়ে না গিয়ে সরাসরি ক্লিপ্স পিসিতে নিয়ে এডিট করা যায়।
রেড ক্যামেরা কি
এইতো আসল প্রশ্ন। রেড হইলো একটা কোম্পানির নাম। কোম্পানির পুরো নাম - Red Digital Cinema Camera Company । এই কোম্পানী ডিজিটাল সিনেমাটোগ্রাফী ক্যামেরা এবং ক্যামেরার এক্সেসরিস তৈরী করে থাকে।
রেড এর তিনটি ব্র্যান্ড আছে। রেড ওয়ান, এপিক, স্কারলেট। রেড ওয়ান 4.5 K রেজুলেশনে (৪৪৮০X১৯২০) ছবি তুললেও, স্কারলেট এবং এপিক ছবি তুলে 5K রেজ্যুলেসনে (৫১২০X২৭০০)...
রেড ক্যামেরার শো রীল
একটা মজার ব্যাপার হলো - রেড ছাড়াও ডিজিটাল ক্যামেরা আছে। এর মধ্যা ফ্যান্টম একটি। ফ্যান্টম হলো সেই ধরনের ক্যামেরা যেটা দিয়ে সুপার স্লো-মোশন কাজ করা হয়। কিন্তু রেড তার স্বতন্ত্রতা দিয়ে ডিজিটাল ক্যামেরা ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব করছে।
রেড ক্যামেরার সাথে ফিল্ম ক্যামেরার সাধারন কিছু পার্থক্য
সাইজ
ফিল্ম ক্যামেরার সাইজ অনেক বড় হয়। একজনের বেশী ক্যামেরা অপারেটর লাগে এটা হ্যান্ডেল করতে। মুভ করাটাও অনেক কষ্টের কাজ। এর ওজোন ও মাশাল্লাহ অনেক। অন্যদিকে রেড ক্যামেরা হাতে নিয়া মুভ করানোর মত হালকা। মোটে ৩কেজি। এক্সেসরিস সহ অবশ্য এর ওজন বেড়ে ১০ কেজি পর্যন্ত দাঁড়ায়, কিন্ত আমার মতো হালকা পাতলা ছেলে ১০ কেজি নিয়ে মুভ করতে পারলে নাফিজের মতো বিশাল বপুওয়ালা ছেলের জন্য এটা কোন ব্যাপারই না

খরচ
ফিল্ম ক্যামেরার দাম ডিজিটাল ক্যামেরার দামের তুলনায় অনেক বেশী। ডিজিটাল ক্যামেরার উত্থানের পেছনে দামের ব্যাপারটা লক্ষনীয়। এই যেমন রেড ক্যামেরার শুধু বডি আপনি কিনতে পারবেন ২০ হাজার ডলারে, ওদিকে ARRI এর ফিল্ম ক্যামেরার বডি'র দাম হলো ৩০ থেকে ৪০ হাজার ডলার। পুরো সেটাপ বানাতে যেখানে রেড এর পিছনে খরচ হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার ডলার, সেখানে ফিল্ম ক্যামেরার পিছনে খরচ হয় প্রায় দেড় লাখ ডলার।
এছাড়া আপনাকে ফিল্ম রীল কিনতে হবে শুট করার জন্য, যেটা আপনার খরচ বাড়াবে। অন্যদিকে রেড রেকর্ড করে RedMags নামে এক ধরনের SSD ড্রাইভে। তার মানে, আপনি এতাকে ক্যাবলের মাধ্যমে সরাসরি পিসিতে নিয়ে এডিট করতে পারবেন

ফিল্ম ক্যামেরা সাধারনত ভাড়া নিয়ে কাজ করা হয়। এতো বড় সেটাপ সাধারনত সিনেমাটোগ্রাফার রা কিনেন না। অথবা শুধু ক্যামেরা বডি কিনেন অনেকে, কিন্তু এক্সেসরিস ভাড়া নেন।
কোয়ালিটি
ইমেজ কোয়ালিটির কথা চিন্তা করলে অবশ্যই প্রথে নাম আসবে ফিল্ম ক্যামেরার কথা। ফিল্ম ক্যামেরায় ধারনকৃত ইমেজে স্ট্রং কালার এবং ডেপথ অফ ফিল্ড পাওয়া যায় যেখানে ডিজিটাল ক্যামেরায় ধারনকৃত ইমেজ অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে আছে।
এই যেমন উপরের দুটো ইমেজ দেখুন - Collateral সিনেমাই ডিজিটাল ক্যামেরায় শুট করা হয়েছিলো। ট্যাক্সির এই সিনটায় খুব সম্ভবত আলাদা লাইটিং করাই লাগে নাই। কিন্তু ইমেজ টা খেলা করলে দেখবেন কেমন আন-রিয়েলিস্টিক লাগতেছে; একটু বেশী উজ্জ্বল। অন্যদিকে The Departed এর সিকোয়েন্স টায় দিনের আলোয় ৩৫মিমি ফিল্ম ক্যামেরায় শুট করা। এটা কেমন ন্যাচারাল লাগতেছে খেয়াল করুন।
কেনো ডিজিটাল
- প্রোডাকশন খরচ কম। কিনতে গেলেও কম, ভাড়া নিলেও কম।
- পোস্ট প্রোডাকশন এ অনেক টাকা বেঁচে যায়। আপনাকে ডেভেলপ আর কনভার্শন এর খরচ করতে হবেনা বললেই চলে। একদিক দিয়ে শুট করবেন, অন্যদিক দিয়ে এডিট করবেন। আমি লন্ডনের রাস্তায় যাদের শুট করতে দেখেছি, তারা ল্যাপ্টপ নিয়েই শুত করে। একদিক দিয়ে তারা শুট করে, অন্যদিকে মেমরী কার্ড বা হার্ড ড্রাইভ নিয়ে এডিটর বসে বসে এডিট করে। দিনশেষে ডিরেক্টর জেনে যায় কি শুট করলো, এবং সেটার চেহারা ফাইন্যালি কেমন দাড়ালো।
- কম আলোতে শুট করা যায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে আপনি কম আলোতে ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে শুট করতে পারবেন। যেখানে ফিল্ম ক্যামেরায় আলর বড়সর একটা সেটাপ লাগে। তবে তারমানে এই নয় যে আপনাকে লাইটিং করতে হবেনা। ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে শুট করার সময় ও আপনাকে প্রোপার লাইটিং করা উচিত, নাইলে মনে হবে বিয়ের ভিডিও করছেন (আজকাল বিয়ের ভিডিও ও চরম ভাবে শুট করা হয়) ...
- আপনার ফিল্মে যদি অনেক স্পেশাল ইফেক্ট থাকে, তাহলে ডিজিটাল উত্তম। এছাড়া আপনি এমন কিছু কালার এপ্লাই করতে পারবেন ডিজিটালে, যা ফিল্মে দেয়া প্রায় অসম্ভব। কিছু মুভির কথা বলি - Inception, Book of Eli, Apocalypto, Valhalla Rising, Underworld - এগুলোর কালার আর স্পেশাল ইফেক্ট ফলো করলেই বুঝতে পারবেন কেনো ডিরেক্টররা ডিজিটাল ফরম্যাট পছন্দ করেছিলেন।
রেড ওয়ান ক্যামেরা টিউটোরিয়াল
অনেক বড় হয়ে গেলো। আপনারা প্রশ্ন করুন, আমি আমার জ্ঞান থেকে উত্তর দিবো । আর যদি মনে হয় অনেক কিছু কাভার করা হয়নি, তাহলে আরেকটা পোস্ট দিবো। লিখতে বসে টের পেলাম যে আমাড় জ্ঞান খুবই সামান্য, আর যে জ্ঞান আছে তাও গুছিয়ে লিখতে পারছিনা। একটা কথা বলে রাখা ভালো - তারান্তিনো বা স্পিলবার্গের মতো বড় বড় ডিরেক্টর রা কিন্তু ডিজিটাল থেকে ফিল্ম এর প্রতি বেশী দুর্বল। এবং তাদের দুর্বলতার যথেষ্ট কারন রয়েছে। তবে সেটা আজ নয়। শুধু তারান্তিনোর একটি সাক্ষাতকার দেখাই।
মাহদী হাসান [শামীম]
ফ্রীল্যান্স ফিল্মমেইকার
লন্ডন
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৪৭