১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি নিধনযজ্ঞ শুরু হলে পাকিস্তানী হায়েনাদের সঙ্গে যোগ দেয় তাদের দোসর বাংলাদেশেরই কিছু বিশ্বাসঘাতক নরপশু। যাদেরকে পরবর্তীতে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস্ প্রভৃতি নামে চিহ্নিত করা হয়। এদের মধ্যে একদিকে যেমন ছিল নিজামী, মুজাহিদের মতো বিকৃত মস্তিষ্কের কিছু দালাল, অন্যদিকে আবার ছিল কিছু শিক্ষক নামের কলঙ্ক, সমাজের (তথাকথিত) বুদ্ধিজীবী হিসাবে পরিচিত। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জড়িত ছিল পাকিস্তানী হায়েনাদের দালালিতে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষক এ সময় পাকিস্তানি বাহিনীকে বিভিন্নভাবে সাহায্যে সহযোগিতাও করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১ অক্টোবর ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিভিন্ন মেয়াদে বাধ্যতামূলক ছুটি, চাকরি থেকে বরখাস্ত ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমস্ত দালাল শিক্ষকের অনেকেই বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বরের পর ৩৫০, নাখালপাড়ায় আল-বদর বাহিনীর প্রধান আশরাফুজ্জামান খান যে বাড়িতে থাকত, সেখান থেকে তার ব্যক্তিগত ডায়েরিটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়। ডায়েরির দুটি পৃষ্ঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন বিশিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ডা. গোলাম মূর্তজার নাম এবং তারা বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টারের কত নম্বর বাড়িতে থাকতেন তা লেখা ছিল। এ ২০ জনের মধ্যে মোট ৮ জন ১৪ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন। এরা হচ্ছেন-মুনীর চৌধুরী (বাংলা), ড. আবুল খায়ের (ইতিহাস), গিয়াসউদ্দিন আহমেদ (ইতিহাস), রশিদুল হাসান (ইংরেজি), ড. ফয়জুল মহী (শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট) এবং ডা. মূর্তজা (চিকিৎসক)।
আশরাফুজ্জামানের গাড়ির ড্রাইভার মফিজুদ্দিনের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, আশরাফুজ্জামান খান এদের নিজ হাতে গুলি করে মেরেছিল। মফিজুদ্দিনের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে রায়ের বাজারের বিল এবং মিরপুরের শিয়ালবাড়ী বধ্যভূমি থেকে অধ্যাপকদের গলিত বিকৃত লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। ডায়েরিতে এ ছাড়াও আরো যাদের নাম ছিল তারা হচ্ছেন- ওয়াকিল আহমদ (বাংলা), ড. নীলিমা ইব্রাহিম (বাংলা), ড. লতিফ (শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট), ড. মনিরুজ্জামান (ভূগোল), ড. কে এম সাদউদ্দিন (সমাজতত্ত্ব), এ এম এম শহীদুল্লাহ (গণিত), ড. সিরাজুল ইসলাম (ইসলামের ইতিহাস), ড. আখতার আহমদ (শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট), জহিরুল হক (মনোবিজ্ঞান), আহসানুল হক (ইংরেজি), এবং কবীর চৌধুরী (ইংরেজি)।
ডায়েরির আরেকটি পৃষ্ঠায় ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ষোলোজন দালাল অধ্যাপকের নাম। আল-বদর হাই কমান্ডের সদস্য আশরাফুজ্জামানের ডায়েরিতে দালাল হিসেবে উল্লিখিত ষোলো শিক্ষকসহ মোট ২৯ জন শিক্ষক ও ৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামের তালিকা পাওয়া যায়।
১৯৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বর্বরপাকবাহিনীর আক্রমণের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল এ দেশের ছাত্র-বুদ্ধিজীবী সমাজ। ২৫ মার্চের নারকীয় হত্যাকান্ডের সূচনা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে এবং হত্যাকান্ডের প্রথম দিনেই শহীদ হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথিতযশা অধ্যাপকবৃন্দ। যুদ্ধের নয় মাস বুদ্ধিজীবীদের উপর উৎপীড়ন নিগ্রহ অব্যাহত ছিল এবং হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রাক্কালে আল-বদরদের সহায়তায় ব্যাপক সংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়। এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী সচেতনভাবে পাকিস্তানি গণহত্যাকে সমর্থন করেছিল। এই সমস্ত বুদ্ধিজীবীর নৈতিকতা ও বিবেকবোধ কোন পর্যায়ে নেমেছিল তার একটি উদাহরণ দিলে কিছুটা বুঝা যেতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন অধ্যাপক আহমদ হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার অঙ্গনে জনসমক্ষে ঘোষণা দিয়েছিলেন-“পাকিস্তানি বাহিনী যদি বাঙালি নারীদের শ্লীলতাহানি করে তবে তাদের কোনো পাপ হবে না, কারণ তারা ইসলাম রক্ষার জন্য ‘জেহাদে’ নিয়োজিত। তাদের জন্য এই কাজ মুতা বিবাহের পর্যায়ে পড়ে” (দৈনিক গণকণ্ঠ- ২৬ এপ্রিল ১৯৭২)।
দালাল শিক্ষকদের তালিকা
নাম পদবি/বিভাগ
* ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন- ভিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
□ বেগম আখতার ইমাম- প্রভোস্ট, রোকেয়া হল
* ড. কাজী দীন মুহম্মদ- বাংলা বিভাগ
□ ড. মীর ফখরুজ্জামান- মনোবিজ্ঞান বিভাগ
□ ড. আবদুল জব্বার- ফার্মেসি বিভাগ
□ ড. মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান- আরবি বিভাগ
** ড. ফাতিমা সাদিক- আরবি বিভাগ
□ ড. গোলাম ওয়াহেদ চৌধুরী- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
** ড. রশিদুজ্জামান- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
□ ড. এ কে এম শহীদুল্লাহ- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
** এ কে এম জামান উদ্দীন মোস্তফা- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
□ ড. হাসান জামান- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
□ মোঃ আফসার উদ্দীন- সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ
□ ড. মোঃ শামসুল ইসলাম- পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
□ ড. মাহবুব উদ্দীন ইসলাম- পরিসংখ্যান বিভাগ
** মোঃ ওবায়দুল্লাহ (আসকর ইবনে শাইখ নামে পরিচিত)- পরিসংখ্যান বিভাগ
□ মোঃ হাবিবুল্লাহ- শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট
** আবদুল কাদের মিয়া শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট
□ ড. শাফিয়া খাতুন- শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট
□ ড. লে. ক. (অব.) মতিউর রহমান- স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট
□ আতিকুজ্জামান খান- সাংবাদিকতা বিভাগ
□ ড. মোহর আলী- ইতিহাস বিভাগ
□ এ কে এম আবদুল রহমান- গণিত বিভাগ
□ ড. আফতাব আহমেদ সিদ্দীক- উর্দু ও ফার্সি বিভাগ
** ফজলুল কাদের- উর্দু ও ফার্সি বিভাগ
□ নুরুল মোমেন- আইন বিভাগ
□ ড. এস এম ইমামুদ্দিন- ইসলামের ইতিহাস বিভাগ
** মোঃ মাহবুবুল আলম- উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ
ফাইজুলজালাল উদ্দিন- ................................
□ এস ডি দলিলুদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেয়ারটেকার
দালাল কর্মচারীদের তালিকা
নাম পদবি
* নাসির আহমেদ- শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উচ্চমান সহকারী
** জহীর খান- চীফ ইঞ্জিনিয়ার অফিসের পেইন্টার
□ শাহজাহান- ইঞ্জিনিয়ার অফিসের পিয়ন
** মোহাম্মদ মুস্তফা- সলিমূল্লাহ হলের পিয়ন।
১ অক্টোবর ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নামের শেষে (*) ও (**) চিহ্নিত ব্যক্তিরা যথাক্রমে চাকরি থেকে বরখাস্ত ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন এবং বাকিদের ছয় মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়। (সূত্র : দৈনিক বাংলা- ৩/১০/১৯৭৩)
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাভুক্ত দালাল শিক্ষক ও কর্মচারীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন
বিশ্ববিদ্যালয় দালাল শিক্ষকদের মধ্যে মুখ্য ব্যক্তিটি ছিলেন ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে তিনি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ জন বাঙালি অধ্যাপক এবং ২ জন বাঙালি অফিসারের একটি তালিকা তৈরি করে সামরিক হেডকোয়ার্টারে দাখিল করেন। এই তালিকায় অধ্যাপকদের ৪টি শ্রেণীতে বিভক্ত করে চার ধরনের শাস্তির (১. হত্যা ২.কারাদণ্ড ৩. চাকরি থেকে বহিষ্কার ৪. ধরে নিয়ে গিয়ে প্রহার) সুপারিশ করা হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত অধ্যাপকদের অনেকেই আল-বদর বাহিনীর হাতে নিহত অথবা নির্যাতিত হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রস্তুত সমাপ্ত হওয়ার পর প্রাদেশিক গবর্নর টিক্কা খানের নির্দেশে সাজ্জাদ হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।
সাজ্জাদ হোসেনের প্রস্তুতকৃত এই তালিকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড তথ্যানুসন্ধান কমিটির হস্তগত হলেও এর কোনো সুষ্ঠু বিচার হয়নি। সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পাওয়ার পর তিনি সৌদি আরব চলে যান এবং সেখানকার কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। (দৈনিক আজাদ-৭ ফেব্র“য়ারি’৭২)।
২. ড. মীর ফখরুজ্জামান (মনোবিজ্ঞান)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মীর ফখরুজ্জামান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক। বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের নায়ক জেনারেল রাও ফরমান আলীর মেয়ে তার বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। সেই সূত্রে রাও এবং শেষ পর্যন্ত তিনি তার মুখ্য সহচর হিসেবে কাজ করেন। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব নিহত হওয়ার পর ফজলুল হক হলের প্রোভোস্ট হওয়া সত্ত্বেও একই সঙ্গে তাকে জগন্নাথ হলের নাম পরিবর্তন করে এর মুসলিম নামকরণের প্রস্তাব করেছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের শেষ লগ্নে বঙ্গোপসাগরের সপ্তম নৌবহর প্রবেশের খবরে আনন্দিত হয়ে তিনি গরু জবাই করে কাঙ্গালিভোজের আয়োজন করেছিলেন। গবর্নর ডা. আবদুল মুত্তালিব মালিকের প্রতিরক্ষা তহবিলে অর্থ সংগ্রহের জন্য শিক্ষকদের কাছে বাধ্যতামূলক চাঁদা আদায়ের ব্যাপারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশপন্থী শিক্ষক এবং ফজলুল হক হলের নেতৃস্থানীয় ছাত্রদের নামের তালিকা তিনি জেনারেল রাও ফরমান আলীর কাছে সরবরাহ করেছিলেন বলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের অভিযোগ ছিল। মনোবিজ্ঞান বিভাগের বাংলাদেশমনা যে সমস্ত শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন, বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞ শুরু হওয়ার পূর্বমুহুর্তে তিনি তাদের টেলিগ্রাম করে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এর পর সমস্ত শিক্ষকদের বাড়িতে আল-বদর বাহিনী হানা দিয়েছিল। কিন্তু ব্যাপারটি আঁচ করতে পেরে অন্যত্র পালিয়ে যান বলে তারা রক্ষা পেয়ে যান। (দৈনিক আজাদ ২৯ জানুয়ারি’৭২)
৪. এ এফ এম আবদুর রহমান
গণিত বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম আবদুর রহমান আরো একজন উল্লেখযোগ্য পুনর্বাসিত স্বাধীনতা বিরোধী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের গোড়া থেকেই তিনি এর বিরোধিতা করে এসেছেন। ১৯৬৭-৬৮ সালে যে ৫৩ জন বুদ্ধিজীবী পত্রপত্রিকায় রবীন্দ্র বিরোধী বিবৃতি দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে আবদুর রহমানের নাম প্রথম ছয় জনের মধ্যে ছিল। ৬৯-৭০ সালের গণঅভ্যত্থানের সময়ও আবদুর রহমান পাক-সামরিক জান্তার পক্ষে ছিলেন। ‘৭১-এর ২৫ মার্চের পর স্বাভাবিকভাবেই ঢাকা বিশ্বইবদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় তৎকালীন সামরিক আইন প্রশাসকের দপ্তর থেকে ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার যে উদ্যোগ নেয়া হয় এ এফ আবদুর রহমান ছিলেন তার পুরোধা। তিনি কিছু দালাল শিক্ষক নিয়ে রাও ফরমান আলীর সঙ্গে দেখা করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে আশ্বাস দেন। রাও ফরমান আলী এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, শতকরা ২০ জন ছাত্রছাত্রী উপস্থিত থাকলেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে। ফরমান আলীর এই কথা আবদুর রহমান সদম্ভে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্য করে তিনি যে সমস্ত মন্তব্য করেন তাও উল্লেখ করার মতো। এ প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ দেয়া যায়। জগন্নাথ হলে পাক-বাহিনীর নৃশংস হত্যাকান্ডের কথা সবারই জানা। এ বিষয়ে তার বক্তব্য ছিল, ‘২৫ শের রাতে জগন্নাথ হল থেকে ছাত্ররা পাকিস্তানী বাহিনীর ওপর রকেট বোমা ছুড়েছিল বলেই তারা হল আক্রমণ করেছিল, না হলে করত না।’
বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের অন্যতম ছিলেন তিনি। ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিনের হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল।
স্বাধীনতার পর অন্যান্য দালাল শিক্ষকদের সঙ্গে তাকেও ছুটি দেয়া হয়। কিন্তু ১৯৭২ সালের ২৮ মার্চ ছুটি ভোগরত অবস্থাতেই তিনি ক্লাস নিতে আসেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা এ সময় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন শুরু করে। কিন্তু আবদুর রহমানের পুনর্বাসনকে তারা ঠেকাতে পারেনি। (দৈনিক সংবাদ- ৩০ মার্চ’৭২)
৫. প্রফেসর এ্যামিরেটাস আবদুল জব্বার
ফার্মেসি বিভাগের প্রফেসর এ্যামিরেটাস আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধেও বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। বুদ্ধিজীবী হত্যা পরিকল্পনার অপারেশনাল ইনচার্জ চৌধুরী মঈনুদ্দীন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তার কক্ষেই দালাল শিক্ষকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার আলোচনা করত। পাক-সামরিক অফিসাররাও নিয়মিত তার কাছে যাতায়াত করত বলে তখনকার পত্রপত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। শহীদ মিনার ছিল তার ভাষায় পূজার বেদী। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার ভেঙে ফেলার পরামর্শ তিনিই দিয়েছিলেই। দখলদারী আমলে ছাত্রদের কাছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকান্ডের তিনি ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে অভিহিত করতেন। মুক্তিযোদ্ধারা ছিল তার ভাষায় ‘পাকিস্তানের জারজ সন্তান’ (দৈনিক গণকণ্ঠ, ২০ এপ্রিল’৭২) আবদুল জব্বার এখনো জীবিত এবং প্রফেসর এ্যামিরেটাস হিসেবে আজীবনে শিক্ষক পদে বহাল থাকবেন।
৬. নুরুল মোমেন
আইন বিভাগের শিক্ষক ও নাট্যকার নুরুল মোমেনকে দালালির অভিযোগে ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়। ‘৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বেতার ও টেলিভিশনে অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে নীলিমা ইব্রাহিম কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে নুরুল মোমেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে ‘বুমোরাং’ নামে একটি অনুষ্ঠান প্রচার করত এবং এ জাতীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশের আন্দোলনই ব্যাহত হয়নি, মুক্তাঞ্চলের অধিবাসী ও ভারতে আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থীদের ভেতর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির জন্য উস্কানি, মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী রাষ্ট্র ভারত সম্পর্কে অপপ্রচার ও মুক্তাঞ্চলের অধিবাসীদের মনে স্বাধীনতা সম্পর্কে হতাশা ও উদ্বেগের সৃষ্টি করা হতো। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও সংহতির কথা বিবেচনা করে তাকে বাংলাদেশ রেডিওর সকল কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন মাধ্যমের কোনো প্রকার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ অথবা অনুষ্ঠান উপযোগী সঙ্গীত, সুরারোপ, বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার, নাটক, কথিকা, নাটিকা বা অনুরূপ কোনো বিষয়ে অনুষ্ঠানলিপি (ঝপৎরঢ়ঃ) রচনা করতে না দেয়ার জন্য এই কমিটি সুপারিশ করে।
৭. বেগম আখতাব ইমাম
আখতার ইমাম রোকেয়া হলের প্রভোস্ট ছিলেন। ‘৭৩ সালে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় পুনরায় কাজে যোগদান করেন। এ ব্যাপারে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি রোকেয়া হলের প্রভোস্ট ছিলেন এবং সে সময় হলে ডাকাতির ঘটনা ঘটে, যার সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জড়িত ছিল। মুদ্ধপরবর্তী সময়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতার অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। তিনি অবসর জীবনযাপনকালীন অবস্থায় মারা যান।
৮. ড. কাজী দীন মুহম্মদ
আল-বদর হাইকমান্ড আশরাফুরাজ্জামানের ব্যক্তিগত ডায়েরিতে যে সব দালাল শিক্ষকের তালিকা পাওয়া যায় তার মধ্যে বাংলা বিভাগের শিক্ষক কাজী দীন মুহম্মদের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ ছাড়াও ৫৫ শিক্ষকের প্রদত্ত বিতর্কিত বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী হিসেবেও তাকে চিহ্নিত করা হয়। ১ অক্টোবর ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
৯. আতিকুজ্জামান খান
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আতিকুজ্জামান খান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ঢাকা বেতার থেকে মুক্তিযদ্ধের বিপক্ষে প্রচারণা ও অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। যে সমস্ত অনুষ্ঠান ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পরিপন্থী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বেতার ও টেলিভিশনে অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে নীলিমা ইব্রাহিম কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে তাকে বাংলাদেশ রেডিওর সকল কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন মাধ্যমের কোনো প্রকার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ অথবা অনুষ্ঠান উপযোগী সঙ্গীত, সুরারোপ, বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার, নাটক, কথিকা, নাটিকা বা অনুরূপ কোনো বিষয়ে অনুষ্ঠানলিপি (ঝপৎরঢ়ঃ) রচনা করতে না দেয়ার জন্য এই কমিটি সুপারিশ করে। স্বাধীনতার পর সিন্ডিটেকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে ছয় মাসের জন্য তাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় তিনি মারা যান। বর্তমানে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একমাত্র সেমিনার লাইব্রেরিটি তার নামে নামকরণ করা হয়েছে।
১০. ড. মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান
আরবি বিভাগের শিক্ষক মোঃ মুস্তাফিজুর রহমানকে দালালির অভিযোগে ছয় মাসের বাধ্যমূলক ছুটি দেয়া হয়। আশরাফুজ্জারমানের ডায়েরিতে ড. মোঃ মুস্তাফিজুর রহমানের নাম পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্বাসিত দালাল শিক্ষকদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
১১. ড. ফাতিমা সাদিক
দালালির অভিযোগে আরবি বিভাগের শিক্ষক ড. ফাতিমা সাদিককে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
১২. ড. হাসান জামান
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. হাসান জামান টিক্কা খান গঠিত প্রাদেশিক শিক্ষা সংস্কার কমিটির সদস্য ও ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারী তদানীন্তন পূর্ব-পাক প্রতিনিধি দলের সদস্য। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ড. হাসান জামান বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্র থেকে ‘ভুলে না যাই’ নামে অনুষ্ঠান করত যা ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পরিপন্থী। স্বাধীনতার পরে নীলিমা ইব্রাহিম কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী তাকে বেতার ও টেলিভিশনের সকল প্রকার অনুষ্ঠান প্রচার করতে না দেয়ার জন্য এই কমিটি সুপারিশ করে।
১৩. ড. গোলাম ওয়াহেদ চৌধুরী
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম ওয়াহেদ চৌধুরীকে দালালির অভিযোগে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়।
১৪. ড. রশিদুজ্জামান
দালালির অভিযোগে ড. রশিদুজ্জামানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং সেখানে বসবাস করেন।
১৫. ড. এ কে এম শহীদুল্লাহ
ড. এ কে এম শহীদুল্লাহকে দালালির অভিযোগে ছয় মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়। মেয়াদ শেষ হলে তিনি আবার চাকরিতে যোগদান করেন। এ কে এম শহীদুল্লাহ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ছিলেন।
১৬. এ কে এম জামান উদ্দীন মোস্তফা
রাজাকার হাইকমান্ড আশরাফুজ্জামানের ডায়েরিতে দালাল শিক্ষকদের তালিকাভুক্ত ছিলেন এ কে এম জামান উদ্দীন মোস্তফা। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
১৭. আফসার উদ্দীন
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আফসার উদ্দীনকে দালালির অভিযোগে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়। ছুটি শেষে তিনি আবার কাজে যোগ দেন।
১৮. ড. মোঃ শামসুল ইসলাম
পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. শামসুল ইসলামকে দালালিক অভিযোগে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়।
১৯. ড. মাহবুব উদ্দীন আহমদ
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ড. মাহবুব উদ্দীন আহমদকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়। পরে তিনি লন্ডন চলে যান এবং সেখানে ব্যবসা করেন।
২০. মোঃ ওবায়দুল্লাহ (আসকর ইবনে শাইখ নামে পরিচিত)
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন ও রেডিও বাংলাদেশের নাট্যকার। মুক্তিযুদ্ধে বেতার টেলিভিশনে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচার-প্রচারণা চালান। আল-বদও বাহিনীর জল্লাদ আশরাফুজ্জামান খানের ডায়েরিতে তার নামও উল্লেখ ছিল। ১ অক্টোবর ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেতে বহিষ্কার করা হয়। বর্তমানে তিনি ছদ্ম নামেই বেশি পরিচিত।
২১. মোঃ হাবিবুল্লাহ/ ড. শাফিয়া খাতুন
দালালির অভিযোগে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিউিটের এ দুই শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়। মোঃ হাবিবুল্লাহ পাকিস্তান চলে যান এবং সেখানে বসবাস করেন। ড. শাফিয়া খাতুন পনুরায় চাকরিতে যোগদান করেন।
২২. আবদুল কাদের মিয়া
আল-বদর বাহিনীর প্রধান জল্লাদ আশরাফুজ্জামানের ডায়েরিতে আবদুল কাদের মিয়া নাম অন্তর্ভূক্ত ছিল। তিনি শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। স্বাধীনতার পর তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
২৩. লে. ক. (অব.) মতিউর রহমান
স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষক। দালালির অভিযোগে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়।
২৪. ড. মোহর আলী
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ড. মোহর আলী টিক্কা খান গঠিত প্রাদেশিক শিক্ষা সংস্কার কমিটির সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বেতার ও টেলিভিশনে অসংখ্য প্রচার অনুষ্ঠান করেন যেগুলো বাংলাদেশ ও স্বাধীনতার পরিপন্থী ছিল। নীলিমা ইব্রাহিম কমিটির রিপোর্টে তাকে বাংলাদেশ রেডিও ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের সকল প্রকার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে না দেয়ার সুপারিশ করা হয়।
২৫. এ কে এম আবদুল রহমান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক আবদুল রহমান টিক্কা খান গঠিত প্রাদেশিক শিক্ষা সংস্কার কমিটির সদস্য ও ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারী তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন।
২৬. ড. আফাতাব আহমেদ সিদ্দিকী
উর্দু ও ফার্সি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। দালালির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হলে পাকিস্তান চলে যান এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।
২৭. ফজলুল কাদের
উর্দু ও ফার্সি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। জল্লাদ আশরাফুজ্জামান ডায়েরিতে তার নাম ছিল। স্বাধীনতার পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
২৮. এস এম ইমামুদ্দিন
ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। দালালির অভিযোগে চাকরি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর পাকিস্তানে গিয়ে বসবাস করেন।
২৯. মোঃ মাহবুবুল আলম
উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মোঃ মাহবুবুল আলমের নাম জল্লাদ আশরাফুজ্জামানের ডায়েরিতে উল্লেখ ছিল। স্বাধীরতার পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হলে পাকিস্তান পালিয়ে যান।
৩০. এস ডি দলিলুদ্দিন
দালালির অভিযোগে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়।
এ ছাড়াও কর্মচারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উচ্চমান সহকারী নাসির আহমেদকে দালালির অভিযোগে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। চিফ ইঞ্জিনিয়ার অফিসের পেইন্টার জহীর খানকে দাললির অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়। ইঞ্জিনিয়ার অফিসের পিয়ন শাজাহানকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়। সলিমূল্লাহ হলের পিয়ন মোহাম্মদ মুস্তফাকে দালালির অভিযোগে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্বাসিত দালাল বুদ্ধিজীবীদের বিচার প্রসঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন- ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আসতে বেশ সময় লাগবে। এ সমস্ত শিক্ষকের বিচার করতে হলে এদের সম্পর্কে সুনিদিষ্ট অভিযোগ থাকতে হবে। কেউ যদি কোনো শিক্ষক সম্পর্কে বিবৃতি দেন তাহলে তার বিচার করা সম্ভব হবে। তবে এ সমস্ত শিক্ষক ওই সময়কার চিহ্নিত ও পূনর্বাসিত দালাল।
তথ্য সংগ্রহ : মুনীর মমতাজ
ডাকসু সংগ্রহশালা