somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিসপোজেবল মানবীদের কথা- আরেকটি ছবি, আরেকবার ভুলে যাবার পালা!!!

০৫ ই নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সাথে ডিসপোজেবল প্লেট, গ্লাস কিনে থাকি। জিনিসগুলোর রং, আকার আর স্থায়িত্ব, ব্যবহারের উপোযোগিতা বিচার করে পছন্দ মতো ডিসপোজেবল তৈজস ঘরে নিয়ে আসি। কিছু সময়ের ব্যবধানে দৈনিন্দিন প্রয়োজনে ব্যবহার শেষে খুব স্বাভাবিকভাবেই ছুঁড়ে ফেলি আবর্জনার স্তুপে।


ছোট্ট শিশু কন্যা বাবা, মা'র আদরে লালিত হয়ে কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে উপনীত হলেই নিজের অজান্তে তাঁরও যাচাই শুরু হয়ে যায়। সবমিলিয়ে পছন্দ হলে তাঁকে বধু সাজিয়ে তুলে নেয় কোন ঘরে... এপর্যন্ত প্রায় অধিকাংশ বাংলাদেশি নারীর জীবন চিত্র এক। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে, পরবর্তীতে একদল মানবীর ভাগ্যটা হয়ে যায় ডিসপোজেবল তৈজসের মতো। ব্যবহার শেষ হলে বা সংসারে তাঁর উপস্থিতি অপ্রয়োজনীয় মনে হলে অত্যন্ত নির্বিকার ভাবে তাঁকেও ছুঁড়ে ফেলা হয় আস্তাঁকুড়ে।


সিলেটের মৌলভীবাজারের জনি নামের একবছরের ছোট্ট শিশুর মা হতভাগ্য রুবি, শশুড়বাড়ির নরপশুরা তাঁকে নির্যাতন করে হত্যার পর ডিসপোজেবল তৈজসের মতোই ছুঁড়ে ফেলেছে আস্তাকুঁড়ে। সবচেয়ে নির্মম এই যে, মৃতদেহটির সাথে সাথে তারা পরিত্যক্ত করেছে আরেকটি জীবন্ত প্রাণ- ছোট্ট দুগ্ধপোষ্য শিশু জনিকে!!!


এই পোস্টটির পাঠকে পাঠিকারা অনেকে জনির মতো সন্তানের পিতা মাতা তাঁরা হয়তো ছোট্ট জনির মাঝে নিজেদের সন্তানের মুখ খুঁজে পাবেন। জনক জননী নাহলেও আমরা প্রত্যেকেই জন্মেছি কোন না কোন নারীর গর্ভে.. এই ছবিটির ক্রন্দনরত শিশুটির স্থানে নিজেকে আর পাশে শায়িত মানবীর মাঝে নিজের মা'কে কি একবারের জন্য কল্পণা করতে পারি?




করুন এই দৃশ্যটি কোন যুদ্ধবিদ্ধস্ত এলাকার নয়, কোন দুর্ভিক্ষপীড়িত জনপদের নয়। স্বাভাবিক সময়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ছবি।।


নরপিশাচরা সম্পত্তির লোভে কি নির্বিকার ভাবে ছিনিয়ে নেয় এক মানবীর জীবন, একজন মায়ের জীবন! রাতের আঁধারে লাশটি পশুপাখির থাবায় ক্ষত বিক্ষত করার আশায় আবর্জনার মতোই ছুঁড়ে রেখে যায়! মা'হারা শিশুর ক্রন্দনে নিজেদের উত্যক্ত করতে চায়না বলেই হয়তো তাকেও ফেলে আসে নিষ্প্রাণ দেহটির সাথে!

ছোট্ট শিশু, আঁধার ঘনিয়ে এলে হয়তো ভয় পেয়েছে, ক্ষুধার যন্ত্রনায় ছটফট করেছে! হামাগুড়ি দিয়ে ছুটে গেছে মায়ের নির্জীব শরীরের কাছে, ভেবেছে স্নেহময়ী মা তাকে পরম আদরে বুকে টেনে নিবেন! মায়ের নির্লিপ্ততায় অভিমানে ঠোঁট ফুলিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠেছে। খাদ্যের সন্ধানে এক সময় নিজেই খুঁজে নিয়েছে মায়ের বুক.. অভিমানী অবোধ শিশুটি বুঝতেও পারেনি পরম মমতাময়ী এই মা আর কোনদিন তাকে কোলে তুলে নিবেনা, মায়ের বুকে সে আর কোনদিন খুঁজে পাবেনা ক্ষুধা তৃষ্ণা আর ক্লান্তি নিবারনের পরম নির্ভরতার আশ্রয়!!!

আর দশটি ছবির মতো, ঘটনার মতো আমরা ভুলে যাবো এই ছবি, এই ঘটনাটি। জানবোনা কি ঘটলো দুর্ভাগা এই শিশুর জীবনে! তার বাবা তাকে নিজের আশ্রয়ে ঠাঁই দিলো কিনা, তার মা'র হত্যাকারীদের শাস্তি হলো কিনা! হয়তো তাকেও বরণ করে নিতে হবে হতভাগ্য মায়ের মতো ডিসপোজেবল জীবন! হয়তো পথের ধারে পড়ে থাকা হাজারো শিশুর মতো সেও বেড়ে উঠবে অবহেলা আর বন্চনায়! কিংবা, কে জানে... যে সমাজ তার মা'কে নিরাপত্তা দিতে পারেনি, সেই সমাজ তাকে ঠেলে দিবে বারবণিতার অন্ধকার কোন জীবনে।


দুঃসহ মর্মস্পর্শী ছবিটি দেখার পর খুব ইচ্ছে করছে শিশুটিকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে। হাজার হাজার মাইলের দুরত্ব, সামাজিক রীতিনীতির কারনে অক্ষমতা আর অসহায় বোধ করা ছাড়া আর কোন সমাধান বা পরিণতি নেই এই ইচ্ছের।
নিজের আশ্রয়ে নিতে না পারলেও জনির জন্য কিছু একটা করা সম্ভব! জনির প্রবাসী বাবা, সব জানার পর যদি শিশুকন্যার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে নিজ কন্যাকে পরিত্যক্ত করে, আমরা নিজেদের সাধ্যমতো প্রচেষ্টায় ছোট্ট জনির একটি সুস্থ সুন্দর নিরাপদ জীবনের ব্যবস্থা কি করতে পারিনা!

শুধু সমবেদনা আর দুঃখপ্রকাশ না করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারিনা এই অবোধ অসহায় শিশুটির দিকে!


ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা: ভাস্কর চৌধুরী
সম্পূর্ণ ছবিটি পোস্ট করার মতো মানসিক শক্তি সন্চার করা সম্ভব হলোনা, আগ্রহীরা সম্পূর্ণ ছবিটি এখানে দেখতে পাবেন।



সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০০৮ ভোর ৬:০৭
১০১টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×