আজ থেকে ২৫ বছর আগের কথা বলছি। আমার কোন ভাই নেই, বাবাও নেই। স্বাভাবিক ভাবেই আমার বিয়ের কোন প্রস্তাব আনার মতো কেউ নেই। এক কথায় মেনে নিতে হলো, যে আমার আর বিয়ে হবে না।
তখন একজন শুভাকাংখী দাদা উদ্যোগী হলেন। তিনি ছিলেন একজন উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা।
তিনি কয়েক জায়গায় আমার বিয়ের ব্যাপারে যোগাযোগ করতে লাগলেন। সব জায়গা থেকে বিমুখ হলেন। একই সমস্যা। আমার বাবা নেই।তাদের শ্বশুর বাড়ী হবে না। তারা শ্বশুর বাড়ী এলে বাজারের ব্যাগ নিয়ে কে মুরগী আনতে যাবে?তা ছাড়া শ্বশুর না থাকলে কি শ্বশুর বাড়ী হলো?
আমার কোন ভাই নেই, তাদের বাচ্চারা মামা বাড়ী যেতে পারবে না। ইত্যাদি অসংখ্য অজুহাত্ শেষে তিনি হাল ছেড়ে দিলেন।
এর প্রায় ১০ বছর পরের কথা।আমার ইজ্ঞিনীয়ার দেবর বিয়ের মেয়ে দেখে বেড়াচ্ছে।
তার মন্তব্য ছিল এরকম: কোন মেয়ের ঘাড় খাট, কোন মেয়ের ভাই নেই, কোন মেয়ের রং কালো, কোন মেয়ে মোটা,কোন মেয়ে রোগা, কারও চুল নেই, কারও মাতুলে কেই নেই, কোন মেয়ের পরিবার আবার মাতুল ঘেষা। যোগ্যতা নিয়ে কোন মেয়েকে কিছু বলতে পারে নি।
আর আমাদের মধ্যে কাস্ট এর সমস্যা এখনও প্রবলভাবে রয়েছে। মনে হয় যেন লেখা পড়া শিখে আমরা কত উদার হয়েছি। কিন্তু না । আসল জায়গাতে ঠিকই আছি। সেটা বোঝা যায় বিবাহ ক্ষেত্রে। এখনও এই প্রথা প্রবল যে ভিন্ন কাস্টে বিবাহ হবে না।
আমার মনে হয় এ পর্যন্ত যে গুলি অসবর্ন বিয়ে হয়েছে তার প্রায় সবগুলিই প্রেম ঘটিত।
এবং এই বিয়েগুলিকে এখনও সামাজিক মর্যাদা দিতে মুরুব্বী গন আধুনিক হলেও তাদের মননশীলতাই বাধে।
কাস্ট প্রথা যে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এখনও কি হারে বিরাজ করছে তা কেবল বিয়ের বাজারেই প্রস্ফুটিত হয়।হোক না পাত্র পাত্রী শিক্ষিত।
আর পাত্রীর গায়ের রং তো এখনও বিয়ের বাজারে প্রধান ফ্যাক্টর হিসাবে পরিগনিত হয়।তাতে করে কন্যা যতই শিক্ষিত হোক না কেন?
মেয়ে যে দেখতে অপরূপা হতেই হবে!
যুগ শুধু ২৫ বছর নয়, শত বছর এগিয়েছে, আমরা লেভা পড়াতে এগিয়ে গিয়েছি, পোশাকে সভ্য হয়েছি, কাসার থালা ছেড়ে কাঁচের প্লেটে ভাত খেতে পছন্দ করি,, শাড়ীর পরিবর্তে সালোয়ার কামিজ প্রিয় হয়েছে ,তুলসী তলায় প্রণাম করতে লজ্জা পাই,যুগের হাওয়া বদলে গেছে কিন্তু মনের কোসে আমাদের এখনও সেই কু সংস্কার গুলো আকড়ে বসে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৪৭