একদিনের ঘটনা, আমি যথারীতি কেন্দ্রীয় কারাগারে ইসলাম বিষয়ক আলোচনার জন্য গেলাম। দেখলাম কিছু নতুন মুখ। আলোচনা শেষে নতুনদের পরিচয় নিচ্ছিলাম। একজনকে দেখে চেনা চেনা মনে হচ্ছিলো! লোকটি বললো; মামুন ভাই আমাকে চিনেত পেরেছেন? আমি বললাম কোথাও যেন দেখেছি কিন্তু স্মরণ করতে পারছি না। লোকটি বললো আমি আপনার সঙ্গে ২০০৬ সালে উমরা করতে গিয়ে ছিলাম। (সেই বছর আমার তত্ত্ববধানে ৩২ জন বাংলাদেশী বিনা পয়সায় উমরা করে।)
আমি বললাম; আপনি জেলে কেন? কী অপরাধ করেছেন? লোকটি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো, অতঃপর বললো ভাই! আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমাকে ও আমার ছোট ভাইকে খুনীর আসামী করা হয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, প্রকৃত খুনী কে? লোকটি বললো; কুমিল্লা জেলার রমজান আলী।
আমার জানা মতে ইকবাল নামের লোকটি ভদ্র ও শান্ত, যাকে আমি উমরার ভ্রমণে ১০ দিনে অনুমান করেছি। রমজান আলী নিজে আরো দুই জন্য বন্ধুর সহযোগিতায় অন্য এক বাংলাদেশীকে হত্যা করার পর লাশ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। রমজানকে পুলিশ গ্রেফতার করার পর বন্ধুদের কথা না বলে নিরপরাধ দুইজনকে ফাঁসিয়ে দেয়। আমার কাছেও রমজান স্বীকার করেছে, যে ইকবাল ও তার ভাই খুন করার সময় ছিল না। কিন্তু রমজান আলী কোটে গিয়ে মিথ্যা কথা বলে যে, ইকবাল ও তার ভাই খুন করার সময় আমাকে সাহায্য করেছে। কোন মতেই রমজান আলী আর সেই মিথ্যা কথাটি ছাড়ছে না!
আজও জেলখানায় গিয়ে ছিলাম, ইকবাল আমার আলোচনায় উপস্থিত হলো, আমাকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো, মামুন ভাই! আমার ও আমার ছোট ভাই ও রমাজানের ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে। এ কথা শোনে আমিও চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। হায়রে! চোখের সামনে দুটি নিরপরাধ প্রাণ ফাঁসিতে ঝুলবে... ভাবতেই আমার শরীর শিহরে উঠলো। তখন আমার বুঝ দেওয়া ছাড়া আর কোন পথই বাকী রইলো না। আলোচনা শেষে জেলখানা থেকে চলে আসলাম ঠিকই কিন্তু তাদরে জন্য আমার মন এখনও কাঁদছে...
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১১ রাত ২:৪১