প্রশ্নঃ কুরবানীর জন্য পূর্বে ক্রয় করে রাখা পশু সংসারের অভাবের কারণে বিক্রি করা যাবে কি? এবং পরবর্তীতে উক্ত মূল্যে বা অতিরিক্ত মূল্যে পশু ক্রয় করে কুরবানী করলে বৈধ হবে কি-না জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তরঃ পূর্বে ক্রয় করে রাখা কুরবানীর পশু পরিবারের নিতান্ত অভাবের কারণে বিক্রি করে খরচ করতে পারবে। কেননা পরিবারের খরচ বহন করা তার জন্য আবশ্যক। অতঃপর পরবর্তীতে সামর্থ হলে পশু কিনে কুরবানী করবে। (ইবনে মাযাহ)
প্রশ্নঃ একই পরিবারের পক্ষ থেকে একজন কুরবানী করলে চলবে কি ? নাকি সামর্থবান সদস্যকে কুরবানী একাধিক করতে হবে ?
উত্তরঃ একটি পরিবারে পক্ষ থেকে একটি কুরবানীই যথেষ্ট। (মুসলিম) তবে একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিক পশুও কুরবানী করা যায়। রাসূল (সঃ) নিজ হাতে দু’টি শিংওয়ালা দুম্বা কুরবানী করেছেন। ( বুখারী ) বিদায় হজ্জে রাসূল (সঃ) একশ’টি কুরবানী করেছিলেন। ( বুখারী)
প্রশ্নঃ জনৈক হাজী সাহেব হজ্জ শেষে বাড়ি ফিরলেন। কিন্তু মসজিদে তিন দিন অবস্থানের পর বাড়িতে প্রবেশ করলেন। এরূপ বিলম্বে বাড়িতে প্রবেশ কি ঠিক? উত্তর দিয়ে জ্ঞাত করবেন।
উত্তরঃ তিন দিন মসজিদে অবস্থান করার কোন প্রমাণ নেই। তবে সুন্নত হচ্ছে দিনের বেলায় সফর থেকে ফিরে আসলে মসজিদে দু’রাকা‘আত নামাজ আদায় করে সরাসরি বাড়িতে প্রবেশ করা। আর রাত্রি বেলায় আসলে মসজিদে রাত্রি যাপন করে বাড়িতে প্রবেশ করা। আর যদি বাড়ির মানুষ আগে থেকেই আসার ব্যাপারে অবহিত থাকে, তাহলে যে কোন সময় বাড়িতে প্রবেশ করা যায়। রাসূল (সঃ) যখন সফর থেকে বাড়ি ফিরতেন তখন ওযু করে মসজিদে দু’রাকা‘আত নামাজ আদায় করে বাড়িতে প্রবেশ করতেন এবং রাত্রে আসলে মসজিদে রাত্রি যাপন করে সকালে বাড়িতে প্রবেশ করতেন। (আহমদ)
প্রশ্নঃ মৃত ব্যক্তির জন্য হজ্জ করা যায় কি?
উত্তরঃ মৃত ব্যক্তির জন্য হজ্জ করা যায়। বুরায়দা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (সঃ)-এর নিকট বসেছিলাম। ইতোমধ্যে একজন মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা মারা গেছেন। তাঁর উপর এক মাসের রোযা রয়েছে, আমি কি তাঁর পক্ষ থেকে রোযা পালন করব? রাসূল (সঃ) বললেন, তুমি তার পক্ষ থেকে রোযা পালন কর। মহিলা বলল, তিনি কখনো হজ্জ করেননি, আমি তাঁর পক্ষ থেকে হজ্জ করব? রাসূল (সঃ) বললেন, হাঁ কর। (মুসলিম) উল্লেখ্য যে, মৃত ব্যক্তির পক্ষে হজ্জ করার পূর্বে নিজের হজ্জ করতে হবে। ( আবু দাউদ)
প্রশ্নঃ আমার পূর্ণ নিয়ত ছিল হজ্জ করার। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে হজ্জ করা সম্ভব হচ্ছিল না, হঠাৎ সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে বন্ধুর কথা অনুযায়ী ৯ যিলহজ্জ তারিখে ফজরের পরে তার সাথে হজ্জ করার জন্য আরাফায় চলে যাই মদীনার মীকাত হতে। কিন্তু আমি ওমরা করিনি, মীনাতেও অবস্থান করিনি। ৯ তারিখ হতে বাকী সব কাজ করেছি। এমতাবস্থায় আমার হজ্জ হয়েছে কি?
উত্তরঃ প্রশ্নকারীর হজ্জ সম্পাদন হয়েগেছে। কেননা আরাফার দিনই মূলতঃ হজ্জ। ৯ তারিখ আরাফার ময়দানে হজ্জের নিয়তে অবস্থান করলে হজ্জ হয়ে যাবে। আব্দুর রহমান ইবনে ইয়া’মুর আদ-দায়লী বলেন, আমি নবী (সঃ) কে বলতে শুনেছি, আরাফা-ই হচ্ছে হজ্জ। সূর্যোদয়ের পূর্বে যে ব্যক্তি আরাফায় পৌঁছেছে, সে হজ্জ পেয়েছে। ( তিরমিযী আবু দাউদ নাসায়ী)
প্রশ্নঃ ‘হাজরে আসওয়াদ’ পাথরটি কোথায় ছিল, কে নিয়ে আসল, পাথরটি কি প্রকৃতই কালো ? বিস্তারিত জানাবেন।
উত্তরঃ ‘হাজরে আসওয়াদ’ পাথরটি জান্নাতের সাদা চকচকে পাথর ছিল। আদম (আঃ) জান্নাত হতে পৃথিবীতে আসার সময় পাথরটি নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে মানুষের পাপপূর্ণ হস্ত স্পর্শের ফলে তা কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর সূরা বাকারা ১২৭ নং আয়াতের তাফসীর) রাসূল (সঃ) বলেন; ‘হাজরে আসওয়াদ’ প্রথমে দুধ বা বরফের চেয়েও মসৃণ অবস্থায় জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হয়। অতঃপর বনী আদমের পাপের কারণে তা কালো হতে থাকে। (তিরমিযী)
অন্যত্র রাসূল (সঃ) বলেন; আল্লাহ কিয়ামতের দিন হাজরে আসওয়াদকে এমনভাবে উঠাবেন যে, তার দু’টি চোখ থাকবে, যা দিয়ে সে দেখবে, এবং একটি মুখ থাকবে যা দিয়ে সে কথা বলবে এবং ঐ ব্যক্তির জন্য সাক্ষ্য দেবে যে ব্যক্তি সঠিক অন্তরে তাকে স্পর্শ করেছে। ( ইবনে মাযাহ)
প্রশ্নঃ বদলী হজ্জ যার পক্ষ থেকে করা হয় সে কী পরিমাণ নেকী পাবে এবং যিনি করে দেন তিনি কী পরিমাণ নেকী পাবেন ?
উত্তরঃ বদলী হজ্জ যার পক্ষ থেকে করা হবে তিনি হজ্জের পূর্ণ নেকী পাবেন। ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত; এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন আমি শুবরুমার পক্ষ থেকে উপস্থিত। তিনি তাকে বললেন; তুমি কি নিজের হজ্জ করেছ? সে বলল না। তিনি বললেন; তাহলে তুমি তোমার হজ্জ কর অতঃপর শুমরুমার পক্ষ থেকে হজ্জ কর। ( আবু দাউদ) বদলী হজ্জ সম্পাদনকারীও পূর্ণ হজ্জের নেকী পাবেন। (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা)