We were born into the world
One day
The sun in the late afternoon
Will beck on us to the window
By chance we shall spiritualize
An unusual sunset
- Boris Pasternak
অনেকদিন পর সেদিন সকালে ব্লগে ঢুকে দেখি ইমন জুবায়ের নেই ।
মুহূর্তেই মাথাটা ঘোলা হয়ে গেল , আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না ।
আমি উদাসশুন্য হয়ে গেলাম । পাশে ছিল শুভ । ওর পিসি থেকে ব্লগে
ইন করেছিলাম ।
শুভ বলল - কি হয়েছে ?
আমি বললাম - ইমন জুবায়ের নেই !
তারপর থেকে ইমন জুবায়ের নিয়ে একের পর এক পোস্ট এল , আমি গোগ্রাসে পরে গেলাম । ইমন জুবায়ের এর ছবি দেখা সেই প্রথম ।
মাথায় বার বার একটা নাম ভাসছিল ।
ইমন জুবায়ের ! ইমন জুবায়ের !
শুভ বলল - ভাই দেখেন ইমন ভাই মরছে কতজনে কত পোস্ট দিচ্ছে ।
আমি মরলে কেউ খবর ও নিবেনা ।
আমি চমকালাম । কারণ একথা সত্যি । আমি মনে মনে বললাম -
কিন্তু তোমার মা কাঁদবে , হাউ মাউ করে । আর কেউ না কাঁদুক , মা কাঁদে।
জানে অর্থহীন , তবু কাঁদে । জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাঁদবে ।কিভাবে কেঁদে কেঁদে যাবে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না !
আমি জানি । আমি এমনটা অনেক দেখেছি । দেখব ও ।
এই ত সেদিন কাদের মোল্লার ফাসি দেবার আগের দিন আমার প্রতিবেশী
জলিল ভাই এর বস্তাবন্দি লাশ নদীতে পাওয়া গেল । জমি নিয়ে প্রভাবশালী দের সাথে তার বিরোধ ছিল । ওরা জলিলকে বলল - ৩ দিনের মাথায় দেখে । দেখে নিয়েছে বটে !
জলিয়ের লাশ ঠিক এইভাবে পাওয়া গেছে - জিহবা নেই , কান নেই , হাত নেই , লিঙ্গ নেই , বুকের পাজর ভাঙ্গা । শরীরে ছ্যাকার দাগ আছে , হাঁটুর হাড্ডিটা ভাঙ্গা আছে । সবকিছু মিলে ফাইনালি এই জলিল ।
মর্গে লাশ সনাক্ত করতে হবে । কে যাবে ? পুলিশ বলল মাত্র একজন যান । সবাই যাওয়া ঠিক হবে না । সবাই বলল - হ্যা , সবার যাওয়া ঠিক হবে না ।
মা তখন পা বাড়াল । বউ দাঁড়িয়ে । প্রসব বেদনা সহ্য করা মা সেদিনও
অসীম ধৈর্যের পরিক্ষা দিলেন । নতুন করে চিনে নিলেন ছেলেকে।
আমার মা বললেন , জলিলের মা প্রতিদিন কাঁদে । আমার খুব খারাপ লাগে রে ।
আমি বললাম - হু ।
মা বললেন - তুই কোথাও একা একা যাবি না ।
আমি বলি - আচ্ছা ।
মা বললেন - দিনকাল খুব খারাপ । মানুষ আর মানুষ নেই ।
আমি বলি - হু ।
মা বললেন - গণ্ডগোল এর মধ্যে একদম থাকবি না ।
আমি বলি - আচ্ছা ।
মা বললেন - খুব চিন্তা করি তোর জন্য । মন টা কাপে । তুই ত আলাভোলা। হাটার সময় হুশ থাকে না তোর । দেখে শুনে চলিস ।
মা বললেন - তোকে আমি আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিছি । আল্লাহই তোকে দেখবেন ।
আমি বলি - আচ্ছা । তুমি ভেবনা মা। আমি ঠিক আছি । আমি সাবধানে আছি ।
মনে মনে বললাম - সব কিছু থেকে আমি পালিয়ে আছি । কোন চিন্তে নেই । বোমা ফুটলে আগেই খবর পাই । আমি আর সেই রাস্তায় যাই না ।
আমি নিরাপদে আছি । এইত আমি ব্লগে ফেসবুকে তামাশা করি ।
আমি কোন খেলায় নেই ,গ্যালারিতেও নেই ।আমি ভাল আছি । ভাল থাকা আমির ইমন জুবায়েরের কথা মনে পড়ে । আহ ! ইমন জুবায়েরের জীবন !
রাস্তার টোকাই - তার জীবন ও জীবন , ইমন জুবায়ের এর টাও জীবন ।
কত ফারাক ! এই শুভ ভেবে দেখ কত ফারাক ! ১৫০০ পোস্ট । জীবন
কিভাবে ইমন জুবায়ের কে তাড়িয়ে নিয়ে গেল । ইমন জুবায়ের
এমন এক সমুদ্রে পড়েছিলেন , তার কোন তলা নেই । জ্ঞানের ভেতর ভ্রম আছে ,
বিভ্রম , মায়া আছে , । ছল ও আছে । জানা মানে আরো জানা , খালি অতল , বিদিশার নিশার মত অন্ধকার । মানুষ প্রথমে এটা টের পায় না ।
কারণ জ্ঞান সুড়ঙ্গমুখে অপার আনন্দ ঝিলিমিলি করে ।পরমানন্দে
চলে অবগাহন । সে সাঁতরাতে থাকে , হাতড়াতে থাকে ।
হাতরিয়ে হাতরিয়ে যাও হে পথিক , হাহাহ । তুমি আর পথের দেখা পাবে নাকো । কিভাবে পাবে ?
মুসা নবী ( আং ) এক মজলিশে বললেন - আমি সবচেয়ে জ্ঞানী ।
আল্লাহ বরদাস্ত করলেন না । বললেন - হে মুসা ! তোমার চেয়েও জ্ঞানী আছে । তোমার ত ইলমে লাদুন্নি ( গোপন জ্ঞান ) নেই । তা আছে খোয়াজ
খিজিরের( আং ) কাছে । মুসা খিজিরের ( আং ) এর কাছে গেলেন । সে আরেক কথা ।
সমুদ্র হতে পাখি কেবল তার ঠোঁটের আজলা পর্যন্ত পানি নিতে পারে ।
আল্লাহ বলেন - হে মানুষ ! তোমার জ্ঞান ও এরুপ ।পাখির মত । এর বেশি তুমি নিতে পারবে না ।
তারপর ও এই জ্ঞানের দিকে আল্লাহ মানুষকে ঠেলে দেন । হযরত মুহাম্মদের ( সং ) প্রতি আল্লাহর প্রথম নাজিল কৃত আয়াত ই হল '' পড়'' ।
আর কিতাবের এখানে - ওখানে বার বার জ্ঞান অর্জনের তাগিদ । নবী বললেন - দরকার হলে সুদূর চীনে যেতে । ত মানুষ জ্ঞান নিতে থাকে । সে জ্ঞানের কি দাপট ।কোথাও অর্থনীতিকে নাকচ করে হিসেব বিজ্ঞান ,
কোথাও সমাজবিজ্জান কে ভেংচি কাটে নৃতত্ত্ব । পাখির ঠোঁটে আটা জ্ঞানে জ্ঞানে মানুষ গিট্টু লাগিয়ে ফেলে । মহান আল্লাহ সেই খেলা পরমানন্দে উপভোগ করেন । হাহাহহ , না বাপু এই খেলায় থাকতে আমি রাজি না। এ খাঁচা ভাঙব না । এই বোচকা টানতে আমি রাজি নই ।খেলব না খেলা - আড়ি , আড়ি ।
আমি তখন নিঃশ্বাস ফেলতে সাহিত্ত্যে চলে আসি । ওমা ! এখানেও দেখি খেলা । কবিগুরু নিজেই খেলছেন - '' আমি পরানের সাথে খেলিব আজিকে
মরণখেলা , নিশীথ বেলা । '' বাবারে ! রবীন্দ্রনাথের খেলার মূলধন কি ছিল ? -
সাহিত্যকর্ম ? ব্যক্তি রবিন্দ্রনাথ ? শান্তিনিকেতন ?
মূলধন যাই হোক রবিন্দ্রনাথ জিতে গেছেন । তার শেয়ার মূল্য উত্তরোত্তর
বৃদ্ধি পাচ্ছে । জীবিতকালে ঝাটা - জুতা খেলেও এখন তিনি বাঙ্গালির
কাছে নমঃ নম: ।
ইমন জূবায়ের ও জিতে গেছেন । ভদ্রলোক নির্মোহ ছিলেন , নির্লোভ ছিলেন , সর্বোপরি ঘোরে ছিলেন । ঘোরে থেকেই মরণ ঘরে চলে গেছেন ।
আমি কি করলাম ? একখান অবিস্মরণীয় গাইড ও বের করলাম না !
তখন গাইডের পেছনে আমিও বলতে পারতাম - '' আমি এমন কি করিলাম যার জন্য এদেশের মানুষ আজীবন আমাকে স্মরণ করবে ? ""
হাহাহা । জীবনের ছাপ কোথাও রাখা হচ্ছে না । প্রবাহমান কালের
স্রোতে আমিও কচুরিপানার মত ভেসে যাব । আরো লাখ লাখ , কোটি কোটি
মানুষের মত । গেলে গেলাম । দুঃখ নেই । জীবন কালে নিজআত্মা
নিজ কব্জায় থাকলেই হল । what shall it profit a man if he gain the whole world and loss his own soul .
অমরকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছে । আমিও চেয়েছিলাম একসময় । এখন ছায়া ও হতে চাইনা । খেলাঘরে তাই আমি যাচ্ছি না । দরকার নেই । যাব না । ইমন জুবারের শত ডাকলেও ।
ডান দিকের ছবিটা তাই দেখেও দেখব না । তার চেয়ে বরং চাঁদকে রুটি বানিয়ে ভাজি দিয়ে খেয়ে ফেলব । সূর্যকে বেলা বিস্কুট বানিয়ে চায়ের সাথে চুবিয়ে খাব । আমি আল মাহমুদের পাখির মত বন্য হব । সেটাই ভাল ।
তবু খেলব না , খেলব না । কেন খেলব ?when we are born , we cry that we are come, To this great stage of fools . KING LEAR. বোকাদের সাথে কে খেলে ?
হে ইমন জুবায়ের ! আপনি ভাল থাকুন । ওপারের জগতে
জানার যন্ত্রণা নেই , ছটফটানি নেই । আপনি শান্তিতে থাকুন ।
এদিকটায় আমিও ভাল থাকি ।
জেনে রাখুন আমি আপনাকে মনে রাখব ।
Any man's death diminishes me
Because I am involved in mankind.
- John Donne