বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শাবিতে বর্তমানে ৯টি ব্যাচ অধ্যয়নরত রয়েছে। এর মধ্যে শেষ ৫টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাদের সেমিস্টারগুলো যথাসময়ে শুরু ও সম্পন্ন করেছে। তবে অন্যান্য ব্যাচে সেশনজট থাকলেও তা তুলনামূলকভাবে অনেক কমেছে। এখানে বর্তমানে ৫২ জন বিদেশি শিক্ষার্থীসহ ৯ হাজার ২৬২ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে, যার মধ্যে ২ হাজার ২৯ জন ছাত্রী এবং ৭ হাজার ৩৩ জন ছাত্র রয়েছে। আর তাদের পাঠদানে রয়েছেন ৩৭২ জন শিক্ষক।
সর্বশেষ ২০০৯-১০ এবং ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ১ সেমিস্টার এগিয়ে আছে। শাবিতে বছরে ২টি সেমিস্টারে তথা জানুয়ারি-জুন এবং জুলাই-ডিসেম্বর—এই সেশনে যথাসময়ের মধ্যে সেমিস্টার শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ছিল সেশনজট কমিয়ে আনার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয়ী। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ফলাফলের এ বিন্যাস শাবিকে এনে দিয়েছে স্বাতন্ত্র্য মর্যাদা। সিলেবাস প্রণয়নে বিশ্বের খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুসরণ করা হয়। এখানে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধীনে সিসিএনএ ও পিজিডি কোর্স এবং ইংরেজি বিভাগের অধীনে ইএলপিসি কোর্স পরিচালিত হয়। ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের নূর জাহান শিমু বলেন, সেশনজট কমে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য খুবই ইতিবাচক। তবে এ অবস্থা ধরে রাখাটাই বড় ব্যাপার।
কিন্তু যাত্রা শুরুর পর গত ২০০০ সাল থেকে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ও শিক্ষা কার্যক্রমে বিচ্ছিন্ন অচলাবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়টির সেশনজট বাড়তে থাকে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগের মধ্যে বিভিন্ন সময় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শিক্ষা কার্যক্রমে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। এরপর ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হত্যাকাণ্ড ও সংঘর্ষের ঘটনায় শাবিতে ঘটেনি কোনো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। নিয়মিত চলেছে ক্লাস-পরীক্ষাসহ একাডেমিক কার্যক্রম। এছাড়া সেশনজট কমানোর লক্ষ্যে শিক্ষক, প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং ছাত্রসংগঠনগুলোর সদিচ্ছা ফিরিয়ে দিয়েছে শাবির একাডেমিক কার্যক্রমের গতিশীলতা।
এমনকি থেমে নেই শাবির উন্নয়ন কার্যক্রম। ৪ তলাবিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ভবন, ২টি আবাসিক ছাত্র ও ছাত্রী হল, অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো, সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য মুক্তমঞ্চ, মুক্তিযুদ্ধ কর্নার ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এদিকে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে নির্মাণাধীন কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামের অসমাপ্ত কাজ বর্তমান ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ সালেহ উদ্দিন যোগদানের পর সমাপ্ত করার বিশেষ উদ্যোগ নেয়ায় এরই মধ্যে অধিকাংশ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সর্বপ্রথম মুঠোফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তি পদ্ধতি উদ্ভাবক ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাত শাবিতে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে আইসিটি বিল্ডিং নির্মাণ হতে যাচ্ছে। একমাত্র শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরো ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলগুলো তারবিহীন ইন্টারনেট ওয়াইফাইয়ের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পাসকে সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিচ্ছন্ন রাখতে ভিসির নেতৃত্বে স্যাটারডে ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য হলের পাশে ব্যয়বহুলভাবে গভীর নলকূপ স্থাপন উন্নয়নের অনন্য উদাহরণ। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ এগিয়ে চললেও আবাসিক ছাত্রদের দীর্ঘদিনের দাবি হল মসজিদের সংস্কার কাজে অর্থ বরাদ্দ হওয়া সত্ত্বেও কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
শাবি ভিসি প্রফেসর ড. মো. সালেহ উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষা কার্যক্রমের গতিশীলতায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এক্ষেত্রে তিনি প্রথমেই ধন্যবাদ জ্ঞাপন
করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এবং
শিক্ষকদের আন্তরিকতার সঙ্গে পরিশ্রম করে যাওয়া ও শিক্ষার্থীদের প্রশাসনকে সহযোগিতা করাকে। এছাড়া তিনি শিক্ষক সঙ্কট নিরসনের ব্যাপারে বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর এরই মধ্যে কিছু শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং কিছু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১৭