somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : লুক থ্রু, সি থ্রু

০১ লা জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাহবুব মোর্শেদ
সোহেল নামে আমার পরিচিত লোক ষোলজন। প্রতিদিন দেখা হয় তিন জনের সঙ্গে। সোহেলে সোহেলে যাতে ক্লাশ না লাগে তাই সবচেয়ে ঘনিষ্ট সোহেলকে আমি বলি বন্ধু সোহেল। বন্ধু সোহেল লোক ভাল। আমার জন্য বেশ দরদ তার। বলতে গেলে সে আমার ফ্রেন্ড, ফিলোসফার অ্যান্ড গাইড। কিসে আমার ভাল আর কিসে মন্দ তা নিয়া সে দিনে দুই মিনিট হলেও চিন্তা করে। এই গল্পের বিষয় অবশ্য সোহেল না। তবু সোহেলকে দিয়া শুরু করলাম। সোহেল পড়লে খুব খুশি হবে। সে অনেকদিন ধরে বলতেছে, বন্ধু তুমি আমারে নিয়া একটা গল্প লেখো। সোহেলরে নিয়া কী লেখা যায় আমি ভেবে পাই না। তাই আর লেখা হয়ে ওঠেনি। সোহেলের জীবনটা সাদামাটা। মগবাজার মোড়ে ওদের একটা অ্যাডফার্ম আছে। ফার্ম অবশ্য নামেই, কামে মুরগি। মানে সোহেল অ্যাডের কাজ পায় না। খালি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়া ছবি তোলে। আজ জন্মদিন তো কাল বিয়ে, পরশু এক্সিবিশন। সে হলো প্রোফেশনাল ফটোগ্রাফার। পসার মোটামুটি ভাল। ডাক পড়ে নিয়মিত। আমরা যতটা ভাবি ততোটা কিন্তু সত্য না। শহরের লোকজনের জীবনে উৎসব নাই, ইহারা সর্বদা মুখ গোমড়া করিয়া কাজ করে। ঘটনা কিন্তু তেমন না। নতুবা সোহলের এত ডাক পড়ার কথা না। সোহেল আমারে অনেক দিন থেকে বলতেছে, বন্ধু চলো একদিন আমার সঙ্গে। তোমারে একটা পার্টি দেখাইতে নিয়া যাই। আমি বলি, এইটা কী কও, পার্টিতে গিয়া আমি কী করবো। তুমি তুলবা ছবি, আর লোকে ফূর্তি করবে। ওইখানে আমি গিয়া কী করবো। কী যে কও বন্ধু, তোমার অভিজ্ঞতা হবে। গল্প লিখতে পারবা। বিনাপয়সায় তোমারে একটু অভিজ্ঞতা দিতে চাইতেছি আর তুমি রাজি হইতে চাইতেছ না। এই ধরনের কথা সে রেগুলার বলে। দুনিয়ার গল্প লেখার মতো ঘটনাগুলো ওই পার্টিগুলাতেই ঘটতেছে। কিন্তু আমার মনে ধরে না। কিন্তু কিন্তু লাগে। এমনিতে আমি কাজ করি একটা বেসরকারি ব্যাংকে। ব্যাংকের নাম এইখানে বলা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারতেছি না। অফিস নয়টা টু পাঁচটা। কিন্তু বের হইতে দেরি হয়, কোনো কোনো দিন সন্ধ্যা। তারপরও শহরে যাদের জীবনে বিকাল বলে একটা ব্যাপার আছে, সেই ভাগ্যবানদের মধ্যে আমি একজন। অফিস ছুটি হলে বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে না। তাই সোহেলের অ্যাডফার্মে গিয়া আড্ডা পেটাই। আজকে অফিসে কী কী হইলো। কেমন কেমন কাস্টমার আসলো এইসব নিয়া সোহেলের সঙ্গে কথাবার্তা বলি। সোহেলের আচার-অনুষ্ঠানের গল্প শুনি। সোহেল বলে, বন্ধু তুমি ছিলা কই? কালকে একটা পার্টিতে গেছিলাম। কিসের পার্টি জানো? গালিব ভাইয়ের মেয়ের ম্যারেজ ডে। গালিব ভাইটা কে? গালিব ভাইরে চিনলা না? বাংলাদেশে তুমি চিনোটা কী? কচু? দেশটা কারা চালায় তার কোনো খবরই রাখো না দেখি তুমি। সেই পার্টিতে ইউএস অ্যাম্বাসেডর পর্যন্ত ছিল। ছবি দেখবা? ছবি দেখায় সোহেল। তুমি ভাবতেছ ফাও। এই দেখ। আমি দেখি, ঠিকই। গালিব ভাইকে সাধারণ মানুষজন চিনতে না পারে, কিন্তু যাদের চেনার তারা ঠিকই চেনে। সেই ম্যারেজ ডের অনুষ্ঠানে সবাই উপস্থিত। স্টার, সুপারস্টার, মেগাস্টার, মিনিস্টার। কিন্তু ম্যারেজ ডে টা কার? কেন গালিব ভাইয়ের মেয়ের। গালিব ভাইয়ের মেয়ে কোনটা। হায় হায় তোমারে বলি নাই? সে তো আমেরিকায়, তার স্বামীর সঙ্গে থাকে। তার বাবা এইখানে নিজের মতো করে মেয়ের ম্যারেজ ডে পালন করতেছে। ব্যাপারটা আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লাগলো। এই ধরনের পার্টি তাইলে হইতে পারে। সোহেলকে বললাম, তোমার এই পার্টিতে একদিন যাইতে হয়। ঠিক আছে, চলো আজকে সন্ধ্যাতেই চলো। আজকে মন্দিরা আপার (জলরং) এক্সিবিশন। আচ্ছা আজকে থাক। কালকে তিন্তির জন্মদিন। কালকেও থাক। পরশু চলো। তোজা ভাইয়ের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান। স্বাভাবিকভাবেই আমার মনে প্রশ্ন জাগে, তোজা ভাইটা কেঠা। প্রশ্ন করলে সোহেল বলবে কেঠা না বলো কেউকেঠা। ২০২৫ সালে বাংলাদেশে যে পাতাল রেল হবে তার কণ্ট্রাক্টটা কে পাইছে জানো? এই তোজা ভাই। তাই আমি আর জিজ্ঞেস করি না। ১২ তারিখে অনুষ্ঠান। সোহেলের ক্যামেরা ক্রু দুইজন। কাগজে-কলমে আমিও ক্রু। মানে আমরা মোট চারজন। আমার একটু ইতো ইতো লাগে। নিজেরে অবৈধ অতিথি মনে হয়। সোহেল ব্যাপারটা বোঝে, মানে অনুধাবন করে । বলে রোসো, চোখ ধাঁধাঁনো মেয়েগুলা আসা শুরু করুক। দেখতে থাকলে সময় কোনদিক দিয়া চলে যাইতেছে বুঝতেও পারবা না। তারপরও আমার উশখুশ কমে না। মেয়েগুলা আসার অপেক্ষা করতে থাকি। সন্ধ্যা সাতটা থেকে অনুষ্ঠান। লোকজন আসতেছে, যাইতেছে। খাওয়া দাওয়া করতেছে। মঞ্চে বসা বর-বউকে গ্রিট করতছে। তোজা ভাইয়ের বড় ছেলে অতিথিদের রিসিভ করতেছে। একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম, এক দফায় যারা আসে তারা ঘণ্টাখানেকের বেশি স্থায়ী হয় না। লোকে রিসেপশন থেকে অনুষ্ঠানের প্যান্ডেলে ঢুকতেছে। দাঁড়ায়ে থাকা লোকজনের সঙ্গে হাসছে, কথা বলছে। হ্যান্ডশেক করছে। এদিক সেদিক হাঁটছে। খাবার হাতে নিয়ে হাঁটাচলা করছে। আবার চলে যাচ্ছে কোন ফাঁকে। তাই ভিড়টা বাড়ছেও না কমছেও না। রাত নয়টার দিকে তোজা ভাই এসে রিসিপশন কিউতে দাঁড়ালো। তোজা ভাই দাঁড়াতেই ক্যামেরাগুলো তার দিকে ঘুরে গেল। এতক্ষণ কই ছিল তোজা ভাই? ভিডিও ক্যামেরার ফাশ লাইটে তোজা ভাইয়ের গলকম্বল চিকচিক করতে থাকলো। সোহেল ও তার ক্রুরাও দৌড় দিল। মনে হইলো কিছু একটা ঘটতে যাইতেছে। পাশ থেকে একজন বললো, হোম মিনিস্টার আসতেছে। তোজাভাই হোম মিনিস্টারের ঘাড়ে হাত দিয়ে প্যান্ডেলের ভেতরে নিয়ে এসে বসালো। মিনিস্টার আসার পর পার্টির দ্বিতীয় পর্ব শুরু হলো। একে একে নায়ক সাদ, নায়িকা সোয়েনা, গীতিকবি তরুণ কোতোয়াল, আবৃত্তিকার পীতাম্বর দাশ, গায়ক সাইফ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামাত সবাই আসলো। সময় দেখি ধারেও কাটে, ভারেও কাটে। স্টার দেখতে দেখতে কখন এগারোটা বেজে গেছে বুঝতেও পারি নাই। বারোটার দিকে অতিথিদের আসাআসি কমে গেছে। মন্ত্রীর অনুরোধে গায়ক সাইফ তার বিখ্যাত চিরদিনই চিরকালই চিরচেনা গানাটা গাইতেছে। হঠাৎ রিসেপশনের দিকে তাকায়া দেখি বয়স্ক এক ভদ্রলোকের হাত ধরে নুসরাত ঢুকতেছে। তাজ্জব ব্যাপার। নুসরাতকে চেনাই যাচ্ছে না। সেনসেশনাল গেটআপ। এমনিতে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখছি বলে মনে পড়ে না। আজকে পরছে। চুল ফুলিয়ে ঢেউ বানিয়ে ফেলেছে। বোঝা যায় আসার আগে বিউটি পার্লারে মোটামুটি সময় ও টাকার বেশ খানিকটা সাশ্রয় করে আসছে। ব্যাংকে নুসরাত আমার কলিগ। পিএফসিতে বসে। কিন্তু উনি যে ভেতরে ভেতর এলিট সোসাইটির অংশ তা আমি ভাবি নাই। তাই অবাক লাগে। নুসরাতের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। মানে চিনি। কিন্তু চেনার বাইরে আর কিছু না। আমার ডেস্ক থেকে পিএফসির দিকে তাকালে তাকে দেখা যায়। সে সুন্দরী বটে। কিন্তু কবিগুরুর ভাষায়, তাহার সৌন্দর্য আবিষ্কার করিয়া লইতে হয়। তাই মনে হয় ভাল করে তাকানো হয়নি। কেন তাকাইনি ভাবতে ভাবতে নুসরাত অনুষ্ঠানে ঢোকার পর থেকে আমি তার দিকে তাকাতে থাকি। তার দৃষ্টি যাতে এই জনপরিচয়হীন পার্টিতে আমার দিকে পড়ে তার চেষ্টা করতে থাকি। নুসরাত প্রথম আধঘণ্টা ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটায়। বোঝা যায়, উপস্থিত লোকদের অনেকের সঙ্গেই তার চেনাজানা, মিলমিশ আছে। আধঘণ্টা পর নুসরাত একটু অবসর পায়। ভদ্রলোকটির ঘাড়ে ভর দিয়ে মঞ্চে উঠে তোজা ভাইয়ের ছেলে ও ছেলেবউকে গ্রিট করে। ওইখান থেকেই প্রথম আমার দিকে তার নজর পড়ে। নজর দিয়েই অবাক হয়ে যায়। ঝটিতি চোখ সরিয়ে আবার নতুন বউয়ের সঙ্গে ছবি তোলায় মন দেয়। মঞ্চ সামলে, গায়ক সাইফ যে ছোট জটলা বেধেছে সেটা ডান দিকে রেখে, গায়িকা তমার জটলাটা এড়িয়ে সোজা চলে আসে আমার দিকে। হোয়াই হোয়াই একটা ভাব। মনে হয় প্রশ্ন করে বসবে তুমি এইখানে কী করো? কিন্তু সেটা শুধু মুখম-লেই, মুখে অন্য কথা। হোয়াইটস আপ ম্যান, তখন থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? ধরা খেয়ে আমি কাতর হয়ে পড়ি। তার মানে নুসরাত প্রথমেই আমাকে দেখেছে। নাকি প্রথম দেখেই বুঝে গিয়েছে আমি তাকে অনেক্ষণ ধরে দেখছি, মানে ফলো করছি। আমি একটু দোনামোনার মধ্যে পড়ি। সে আমার বুকে একটা ঠুসি দিয়ে বলে, বলো হাও অ্যাম আই লুকিং? বলেই হি হি হো হো করে হাসে। টিভিতে বাচ্চাদের অনুষ্ঠানে গান গইতে গাইতে বাচ্চারা যেরকম দোলে সে রকম একটা ডানে বামে দোলা দেয়। মার্ডার কেস। বলে কী মেয়ে। তার মানে কি এই দাঁড়ায় যে, আমি এতক্ষণ ওর সৌন্দর্যই দেখছিলাম। আসলে তো তা না। আমি প্রথমত সোহেল ছাড়া এত লোকের মধ্যে পরিচিত কেউ আছে কি না খুঁেজ দেখছিলাম। নুসরাতকে পেয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছিলাম। দ্বিতীয়ত, নুসরাত কী করে সেটা দেখছিলাম। প্রশ্ন শুনে বোঝা গেল, সে এনোয়েড হয় নাই। রিসিভিং মোডে আছে। একমাত্র একটা উত্তরই কানের পাশ দিয়ে ঝাঁ করে সরে গেল। সেক্সি। কিন্তু পজিশন রিস্কি বলে সেটা বলতে পারলাম না। বললাম, স্টানিং। নুসরাতের সঙ্গে আমাকে কথা বলতে দেখে সোহেল এগিয়ে এলো হন্তদন্ত হয়ে। মনে মনে সে যে আমারে হিপোক্রেট বলতেছে বুঝতে পারি। এখন সবচেয়ে নিরাপদ হলো ঝটাপট তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। তা-ই করলাম। সোহেলের মুখে একটা অর্থপূর্ণ হাসি ফুটলো। নুসরাত আমাকে ওর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে ভিড়ের দিকে নিয়ে গেল। আসো আমার ভাইয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই। কে ভাইয়া, কোন ভাইয়া বোঝার আগেই একেবারে ভাইয়ার মুখে পড়ে গেলাম। ভাইয়া, এ হলো রিপন, আমার কলিগ। ভাইয়া হাত বাড়িয়ে দিলো। আর রিপন, এ হলো আমার ভাইয়া। কীসের ভাইয়া কেমন ভাইয়া কিচ্ছু জানা হলো না। কিন্তু নুসরাতের সঙ্গে যেন বেশ একটা পরিচয় হয়ে গেল, এমন ভাব পরিস্থিতির। পরদিন অফিসে ঢুকেই নুসরাত বললো, ঘুম হয়েছে তো? একান্ত ব্যক্তিগত প্রশ্ন তবু মনটা একেবারে ভরে গেল। গুণধর মেয়ে। একরাতেই তার ফোলা চুল ডাউন হয়েছে। গতরাতে চুলে যে লালচে রং উঁকি মারছিল তা আজ উধাও। পোশাকে ভাল রাখঢাক অ্যাপ্লাই করেছে। ক্যাজুয়াল অ্যাপিয়ারেন্স। বুঝলাম, মেকআপ গেটআপের ক্ষেত্রে এ হলো পার্টি বনাম অফিস। নুসরাত আসলেই খেয়াল করার মতো একটা মেয়ে। ইজি, স্মার্ট অ্যান্ড বিউটিফুল। নুসরাতকে আমি (দেখে) বোঝার চেষ্টা করি। নগদ জমার কাউন্টার থেকে নুসরাতের দিকে খেয়াল করি। ঘাড় তুললেই দেখা যায়, কিন্তু এতদিন দেখি নাই কেন? নিজের বেখেয়ালি অ্যাটিচুডে একটু আফসোস হয়।
বিকাল পাঁচটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে ইন্টারকমে নুসরাতের ফোন করে। রিপন, উড ইউ মাইন্ড ইফ...। আমি চুপ করে থাকলাম। ছয়মাস ধরে সে আমার কলিগ। সেদিক দিয়ে পরিচয় অনেক দিনের এটা ধরে নিতেই হবে। কিন্তু আরেক ভাবে ধরলে তার সঙ্গে পরিচয় মাত্র গত রাতে। আজ সারাদিনে একটা এক পলকা কথা আর বার কয়েক চোখাচোখি। দেখি কী বলে। ...আই অফার ইউ আ জার্নি বাই রিকশঅ। রিকশাকে রিকশঅ বলার কারণ পিএফসি ডেস্ক। ওইখানে বসলেই কাস্টমারের সঙ্গে ঢঙ করে কথা বলতে হয়। উচ্চারণ ডিফরেন্ট না হলে কাস্টমার চমকায় না। আর না চমকালে সার্ভিসের প্রতি তাদের সমীহও তৈরি হয় না। একদিনের মাথায় রিকশায় ঘুরতে চায়, ব্যাপার কী? এখন চোরাগোপ্তা বর্ষা কাল। আকাশে মেঘ। সন্ধ্যার আগে রিকশা ভ্রমণের প্রস্তাব, মন্দ না। তৎক্ষণাৎ বললাম, হোয়েন অ্যান্ড হাউ। সো কাইন্ড অব ইউ, আইল বি রাইট আন্ডার দি হোর্ডিং অব নাইন টু নাইন অ্যাট ফাইফ ফিফটিন। তার মানে অফিসের কারও চোখে না পড়েই আমার সাথে দেখা করতে চায়। বেশ তো। কাওরান বাজার মোড়ে নাইন টু নাইনের বিজ্ঞাপনের নিচে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণ পর নুসরাত হাজির। ফ্রেন্ডলি পরিস্থিতি। অফিসের আলাপ আলোচনা। কী ভালো লাগে, না লাগে। বাড়িঘর কই এইসব আলাপ হয়।
এইভাবে বেশ কয়েকটা কোইন্সিডেন্সের মাধ্যমে শুরু হয়ে বিষয়টা আগাইতে থাকে। কিছু একটা আগাইতছে বুঝি কিন্তু কোনটা আগাইতেছে, কোনদিকে আগাইতেছে বুঝতে পারি না। তাছাড়া নুসরাতকে নিয়ে এক সপ্তাহে আমার মনে বারোটা প্রশ্নের উদয় হয়েছে। বন্ধু সোহেলকে সব খুলে বলি আমি। সোহেল বলে, তোজা ভাইয়ের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানের পর হঠাৎ করে তোমার দিকে নুসরাতের দৃষ্টি পড়াটা বা তার ওপর তোমার দৃষ্টি পড়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু প্রতিদিন অফিসের পর বেড়াতে যাওয়া, রিকশায় ঘোরা হ্যানত্যান এইগুলা কিন্তু ধরতে গেলে একটু বেশিই। আমি একটু দমে যাই। তারপরও সোহেল যখন বলে তখন মনে হয় কোনো একটা গড়বড় নিশ্চয়ই আছে। সোহেল জানে চালু ব্যক্তি। সবচেয়ে বড় কথা ভাল অবজারভার। সে বলে, আমার মনে একটা খটকা কিন্তু লাগতেছে। তুমি বললা, নুসরাত তিন বছর আগে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স করে দুই বছর এনজিওতে কাজ করছে। তারপর তোমাদের ব্যাংকে এসে ঢুকছে। ওর অ্যাটিচুড কিন্তু তা বলে না। এইরকম ম্যাচিউর ডিলিং, স্মার্ট কথাবার্তা এত সহজে কিন্তু আসে না। তার মানে ইতিহাসের অনালোকিত একটা অধ্যায় জানা বাকি আছে। তার আগে বলো তুমি আবার ওর প্রেমে ট্রেমে পড়ছো নাকি? আমি একটু সাবধান হই। প্রেমে পড়ি নাই, কিন্তু পড়তে কতক্ষণ। অফিসের বাইরে ঘোরাঘুরি তো চলছেই, এসএমএস বিনিময় চলতেছে। যে কোনো সময় যে কেনো এসএমএস স্লিপ খাইতে পারে। আচ্ছা, নুসরাতের সঙ্গে যে ছেলের প্রেম ছিল সে ছেলের নাম কি কইলা। সোহেল জিজ্ঞেস করে। কখন নাম কইলাম? ওই ছেলের প্রসঙ্গ উঠলে নুসরাত বলে, ছেলেটা। তার সঙ্গে কলেজে প্রেম ছিল। কিন্তু নাকি নেশা করে সে উচ্ছন্নে গেছে। তাই তার সঙ্গে কোনে যোগাযোগ রাখে না। কিন্তু জানো সত্যিকার ভালো যদি কাউকে বেসে থাকি সে হলো ওই ছেলেটা। এই হলো স্মার্ট নুসরাতের প্রেম কাহিনী। কিছুক্ষণ পরপর বাষ্প জমলে সে ওই ছেলেটা ওই ছেলেটা বলে ফোঁসফোঁস করে। সোহেল বলে, আরেকটা ব্যাপার। ওর ভাই যদি রকিবুল হাসান হয় তবে তো তার কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে পড়ার কথা না। কেন? রকিবুল হাসান বড় শিল্পপতি, বাড়ি বরিশাল। সামনের ইলেকশনে নমিনেশনের চেষ্টা করতেছে। লেক্সাস গাড়িতে চলাফেরা করে। ঢাকা শহরে কমছে কম চারটা বাড়ি আছে ওনার। সেই ভাইয়ের বোনের কিন্তু এনজিওতে চাকরি করার কথা না, ব্যাংকেও না। কেন, চাকরি করলে কী হয়? এই যে রিপন, তোমার এই এক সমস্যা, তুমি খুব দ্রুত ইনভলব হয়ে যাও। সব কথা ইমোশনালি নেও। এই জন্যই তোমারে নিয়া ভয়। আচ্ছা যাও, তোমার আর্গুমেন্ট আমি শুনতে পারি যদি তুমি আমারে বলতে পারো রকিবুল হাসান নুসরাতের কেমন ভাই। তারে সোজা জিগাইতে পারবা?
সোহেলকে কথা দিয়ে আসার পরও আমি আর নুসরাতকে জিগাইতে পারি না যে, রকিবুল হাসান তোমার কেমন ভাই। কোয়েশ্চেনটা জেন্টেল না। তুমি আমার বন্ধু ঠিকাছে, কিন্তু কে আমার কেমন ভাই এইটা তুমি জিজ্ঞেস করার কে? একদিন নুসরাতই বলে, চলো একদিন ভাইয়ার ওখানে যাই। ওখানে মানে, ভাইয়ার চেম্বারে। মতিঝিলে অফিস। কেন চেম্বারে কেন? কেন ভাইয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারি না? বাসায় দেখা হয় না? বাসায় দেখা হবে কেন? আমি কি ওনার বাসায় থাকি? কেন উনি তোমার ভাই না? ভাই হলো তো কী? আমি একটু বিচলিত হই। আমার ব্যাপারটা নুসরাত মনে হয় বুঝতে পারে। বলে, তুমি একটা গাধা। তুমি কি ভাবছিলা যে রকিবুল হাসান আমার নিজের ভাই? একদিক থেকে ভাই-ই, কিন্তু নিজের না। আমি ওনারে খুব অনার করি। এতো কেয়ারিং। আমাকে একেবারে মেয়ের মতো স্নেহ করে। প্রথমে উনি আমাকে মেয়েই বলতেন। আমি একদিন বললাম, কেন জানি আপনারে আমার বাবার মতো ভাবতে ইচ্ছা করে না। তখন উনি বললেন, আচ্ছা তাহলে ভাইয়াই বলো। সেই তেকেই তিনি আমার ভাইয়া। বুদ্ধু, তুমি ওনার সাথে আমার বয়সের পার্থক্যটা খেয়াল করলা না? ওনার বয়স আটান্ন। আর আমার ছাব্বিশ। নিজের ভাইবোন কেমনে হয়? চলো আজকেই ভাইয়ার কাছে নিয়ে গিয়ে তোমারে পঁচাবো। তুমি না একটা...। সে আমাকে জোর করে মতিঝিলে রকিবুল হাসানের চেম্বারে নিয়া যায়। দারুণ অফিস। শিপিং-এর ব্যবসা। অফিসের ডেকোরেশন দেখলে মনে হয় ঢাকা না, সিঙ্গাপুরে বসে আছি। নুসরাতকে অফিসের সবাই চেনে। ম্যাডাম ম্যাডাম করে। রকিবুল হাসান বোন বোন করে একেবারে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। নুসরাতকে পেয়ে তিনি অফিসের সব কাজ ভুলে গেলেন। নুসরাতের কি জানি একটা সমস্যা হয়েছে। আকারে ইঙ্গিতে বললো তার ভাইয়াকে। আচ্ছা তুই কি আমাকে ভাই মনে করিস না নাকি? কোনো সমস্যা হলে বলবি তো। এই ছেলে, শুধু নুসরাত না তোমার কোনো সমস্যা হলেও সোজা চলে আসবে। আমার ফোন নাম্বার আছে তোমার কাছে? ঠিক আছে, নুসরাতের কাছ থেকে নিয়ে নিও। আচ্ছা, এখনই তোর ব্যাংকের এমডিকে ফোন করে দিচ্ছি। আমার বোনটার দিকে যদি খেয়াল না রাখে তো আমার বন্ধু হয়ে সে করেটা কী? আচ্ছা শোন, তুই কর্পোরেট ব্রাঞ্চে ট্রান্সফার হতে চাস? নুসরাত যতই না না করে তিনি ততোই কর্পোরেট ব্রাঞ্চের ব্যাপারে লেগে থাকেন। মৃদু মৃদু তর্ক হয়। আমি বুঝি আমার কারণেই তর্কটা ঠিক লেগে উঠতে পারছে না। তবে ওনার আদর যতেœর কমতি হয় না। খাইয়ে দাইয়ে গাড়িতে করে বিদায় দেন। ওনার গাড়ি কাওরান বাজারে আমাদের দুজনকে নামিয়ে দিলে নুসরাত নিজে থেকেই খলবল করে ওঠে। বলে তার ভাইয়াকে দেখে আমি অবাক হয়েছি কি না। ভাইটা কত ভাল, তাই না। এইসব। আমি ভাবি, সোহেলের কাছে যাওয়া দরকার। অনেকগুলা খটকা জমেছে। এইগুলা নিয়া খোলাখুলি কথা হওয়া দরকার। কিন্তু নুসরাতের কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই। আচ্ছা তোমার খোঁজে কি কোনো চাকরি আছে? কেন চাকরি কেন? ব্যাংকের চাকরি তোমার ভাল লাগে না? লাগবে না কেন? এই না তুমি ভাইকে বলে আসলা যে কর্পোরেট ব্রাঞ্চে ট্রান্সফার নিতে চাও? আমি কখন বললাম, ভাইয়াই তো বললো। তোমারে কেমনে যে বলি। কী যে বলি। এইসব বলতে বলতে নুসরাত একটু আনমনা হয়ে যায়। আচ্ছা, তোমাকে সোহেলের কথা বলছি না? কোন সোহেল? ওই যে যার সাথে আমার প্রেম ছিল। তার নামও সোহেল নাকি? জানো, ইদানিং সে আমারে খুব ডিস্টার্ব করে। অফিসে আসে। নেশা করার জন্য টাকা চায়। ভাইয়াকে বললাম। ভাইয়ার ওই এককথা, বদলি নাও। কর্পোরেট ব্রাঞ্চে চলে আসো। আমার পাশাপাশি থাকবা। সমস্যা হলে আমি দেখবো। কী করি বলোতো? আচ্ছা ছেলেটাকে কি আমি চিনি? না তুমি দেখো নাই। আমার ইদানিং কী মনো হয় জানো ও আমারে সবসময় ফলো করতেছে। রাতে জানালা খুলতে পারি না। মন হয় ও হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলবে, টাকা দে। নেশা করবো। তুমি ঠিক বুঝতে পারতেছ না আমি কি পরিস্থিতিতে আছি। তুমি কি আমার জন্য কিছু করত পারো? আমাকে একটু হলেও ভালোবাসা দিতে পারো। আমার পাশে দাঁড়ানোর মতো একটা লোক নাই। সহসা মুখে আমি কিছু বলতে পারি না। কিন্তু নুসরাতের হাতটা হাতে নিয়ে সামান্য চাপ দেই। মনটা একটা বিরু বিরু ভাবে ভরে যায়। রাতে সোহেলের সঙ্গে কথা বলার জন্য মনটা আমার আকুপাকু করতে থাকে। ফোন দিয়ে শুনি ও বাড়ি চলে গেছে। সোহেলের বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে এগারোটা। বলি আরেকটা সোহেল পাওয়া গেছে। তোমারে বন্ধু সোহেল বললে এরে বলতে হয় শত্রু সোহেল। সব শুনে সোহেল গম্ভীর হয়ে মাথা নাড়ে। হু হা করে। ঝটিতি কোনো কমেন্ট করে না। আমি নুসরাতের হাত হাতে চেপে ধরা বাদে সব বলি। সব শুনে সোহেল বলে, বন্ধু তোমার শেষ। তুমি ফেঁসে গেছ। নুসরাত আসলে হাতে টেক্কা রেখে ট্রাম খেলতেছে। দোস্ত আমি তাস বুঝি না। তুমি আমারে বুঝাইয়া বলো। আমার আকুতি সোহেল বুঝতে পারে। সে বলে, আসলে নুসরাতের কাহিনী চলতেছে রকিবুল হাসানের সঙ্গে। সোহেলরে সে চেক দিতে চায়। তোমারে সে ঢাল হিসাবে ব্রবহার করতেছে। বি কেয়ারফুল। নুসরাত খুব প্লেফুল মেয়ে। তোমারে চিবায়ে খায়ে ফেলবে। আমি পুরাটা মেনে নিতে পারি না, আবার ভয়ও লাগে। বলি, দোস্ত এখন উপায়? আমি ঠিক বলতে পারতেছি না, কিন্তু উপায় নিশ্চয়ই একটা আছে। আগে দেখতে হবে তুমি রকিবুল হাসানের ট্রাপে পড়ছো না নুসরাতের ট্রাপে পড়ছো। নাকি দুইজনে যুক্তি করে তোমারে টার্গেট করছে। সোহেল তোমারে চিনে কিনা। দোস্ত আমি একটু চিন্তাভাবনা করি, তারপর তোমারে বলবোআনে। তুমি চিন্তা কইরো না।
আমার মন কেমন কেমন করে। আমি কি নুসরাতকে ভালোবেসে ফেলেছি? পুরা ব্যাপারটা এলোমেলো হয়ে গেছে। অফিসে নুসরাতের নরোম হাতটার কথা বারবার মনে হতে থাকে। ওর দিকে তাকাই। সে হাসি দেয়। আড়ালে আবডালে এইসব চলতে থাকে। প্রেম একবারই এসেছিল নিরবে...। লাঞ্চের আগে দেখি সুদর্শন এক ছেলে নুসরাতের ডেস্কের সামনে তড়বড় করতেছে। ব্যাটা ক্রেডিট কার্ড হাইরাইছে নাকি চেক? অতিপরিচিতের মতো নুসরাতের ডেস্কে হেলান দেয় সে। এই মামাটি আবার কে? নিজের মনে বিড়বিড় করি আমি। চোখে ভারি লেন্সের চশমা। হাতে ব্যাগ। পরনে সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট, গলায় টাই। দেখে তো মনে হয় না সোহেল হতে পারে। যেই হোক, ভাবা বন্ধ করে দেই আমি। আর বেশি ইনভলব হওয়া যাবে না। লাঞ্চের জন্য দ্রুত বাইরে পা চালাই আমি। লিফটের কাছে গিয়া দাঁড়াই। ঘামতে ঘামতে ওই ভদ্রলোকও লিফটের কাছে আসে। দুজনেই লিফটে উঠি। লিফটের আয়নার দিকে তাকায়ে লোকটা কথা বলা শুরু করে। বলে, ভাইয়া আপনি আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দিতে পারবেন? আমি চমকে উঠি। আপনি মনে হয় নুসরাতের বন্ধু। ওর সঙ্গে প্রায়ই দেখি আপনাকে। হাত বাড়িয়ে দেয়, বলে, আমার নাম সোহেল। আমার মনে ভয় ধরে। পেটে চাকু বসিয়ে দেবে না তো? আপনি হয়তো আমাকে হেল্প করতে পারবেন। লাঞ্চ করতে করতে সোহেলের পুরা রহস্য জানা হয়। বন্ধু সোহেল হলে বলতো, লীলা। নুসরাত আর সোহেল ছিল ল্যাপ্টালেপ্টি জুটি। একসঙ্গে বাড়ি পালিয়ে ঢাকা এসেছিল চাকরি-বাকরি পেয়ে বিয়ে করবে বলে। নুসরাত থাকতো কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে। আর সোহেল থাকতো মেসে। এক সময় নুসরাতের চাকরি হলো একটা এনজিওতে। সোহেলের আগে। ওই এনজিওর এক মেয়ের সঙ্গে রকিবুল হাসানের প্রেম ছিল। আসাযাওয়া করতো। সেই মেয়ে মানে শিউলির সঙ্গে মাঝে মাঝে থাকতো নুসরাত। এমনে চলতে চলতে নুসরাত তাকে অথবা সে-ই রকিবুল হাসানকে রিক্রুট করে। রকিবুল হাসানের সঙ্গে ভাইয়া পাতানোর পর সোহেলকে প্রায় ভুলে যায় নুসরাত। রকিবুলের চেম্বারে জয়েন করে। তার সঙ্গে কিছুদিন সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক করে। সবাই জানতো, নুসরাত রকিবুলের পাতানো বোন। কিন্তু রকিবুলের বউয়ের সন্দেহ হয়। বউয়ের সন্দেহের কারণে বন্ধুকে বলে ব্যাংকের চাকরি দেয় নুসরাতকে। সেন্সরবিহীনভাবে এইসব বলতে থাকে সোহেল। গালিগালাজ করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার এক কথা। নুসরাতকে চাই। সে এখন একটেলে চাকরি পেয়েছে। ভাল বেতন পায়। এখনও যদি নুসরাত চাকরি ছেড়ে তার কাছে আসে তবে সে একটা টু শব্দও করবে না। আমি কি বলবো? সোহেলের দিকে তাকায়ে থাকি। তাজ্জব প্রেম কাহিনী। আপনি কি নেশা করেন? ও একটা মিথ্যাবাদী, হিপোক্রেট। ওরে হাতের কাছে পেয়ে নেই। ভাইয়া আমাকে দেখছেন না আপনি, নেশা তো করিই না। সিগারেটও খাই না। সোহেলকে বিদায় দিয়ে বন্ধু সোহেলকে ফোন দেই আমি। পুরো ঘটনা বলতে আমার কার্ড শেষ। সোহেল রিং ব্যাক করে বলে, বন্ধু তুমিই এখন বলো কী করবা। আমি সোহেলের ফোন নাম্বারটা রাখছি। ভাল করছো। আমার কি মনে হইতেছে জানো? বলো দেখি। রকিবুল হাসানই আসলে নুসরাতকে ট্রাপ করে কর্পোরেট শাখায় নিজের কজ্বায় নিয়া যাইতে চাইতেছে। আমারও কিন্তু তাই মনে হইলো দোস্ত। কিন্তু নুসরাত সোহেলের কাছে না গিয়া আমার কাছে আসতে চাইতেছে কেন? আমি জানি না বন্ধু, কোনো ঘটনা থাকলেও থাকতে পারে।
ব্যাংকে ঢুকে পিএফসিতে তাকাই। নুসরাত কার সঙ্গে যেন কথা বলতেছে। এই এক আশ্চর্য প্রতিভা, মুখে কাছে কান নিলেও বোঝার উপায় নাই কার সাথে কী কথা বলতেছে। আমাকে দেখে হাসে। আমিও হাসি। লাঞ্চের পর ক্যাশে চাপ কম। দুই তিনজন কাস্টমার রিলিজ করে আমি একটু ভাবি। ঘটনা কী? শুরু থেকে বোঝার চেষ্টা করি। এক হইতে পারে, রকিবুল হাসানের সঙ্গে পার্টিতে দেখা হওয়ার ব্যাপারটা চেক দিতে নুসরাত আমার সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ গড়ে তুলতে চেয়েছে। কিন্তু নুসরাত বা রকিবুল হাসান সাধারণ নিয়মে কাউকে কেয়ার করে বলে মনে হয় না। তার মানে কি ওদের দুইজনের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। এমডিকে দিয়া রকিবুল হাসান নুসরাতের ওপর চাপ দিতেছে যাতে সে আবার তার কব্জায়, মানে কর্পোরেট ব্রাঞ্চে যায়? এমন হইতে পারে বিপদ দেখে নুসরাত নিজেরে সোশালাইজ করতে চাইতেছে। কিন্তু তাহলে অফিসে স্পষ্ট দোস্তি সে দেখায় না কেন? দুই, ধরা যাক, নুসরাত চায় সোহেল আমাকে নিয়া সন্দেহ করুক। তার নজর আমার দিকে সরে যাক, এই সুযোগে সে আর রকিবুল হাসান মিলে মৌজ করবে। সে পদক্ষেপ তো মনে হয় ব্যর্থ। সোহেলের মনে আমার সম্পর্কে সন্দেহ জাগা তো দূরের কথা, সে উল্টা আমার হেল্প চায়। তিন, প্লানটা হইতে পারে নুসরাত ও সোহেলের। তার দুইজনে প্লান করে রকিবুল হাসানের কাছ থেকে সটকে পড়তে চাচ্ছে। আর এটা করতে গিয়ে রকিবুল হাসানের সন্দেহ আমার দিকে ফিরিয়ে নিজেরা ভেগে পড়ার তাল করতেছে। চার, নুসরাত আসলে রকিবুল হাসান আর সোহেলের মধ্যে পড়ে বোর হয়ে গেছে। সে নতুন সম্পর্ক চাইতেছে। পাঁচ, আসলেই আমাকে তার ভাল লেগে গেছে। একটা কাগজে পয়েন্টগুলা টুকে নিয়ে আমি বের হয়ে পড়ি। নুসরাতকে ইন্টারকমে বলেছি, এমার্জেন্সি একটা কাজ পড়েছে। আজকে আর সোহেল না, সোজা বাসায়। তৃণা কী বলে শুনি। তৃণা আমাকে খুব ভাল বোঝে। হাজার হলেও সে আমার বউ তো, সব শুনে নিশ্চয়ই ভাল একটা সামাধান দিতে পারবে। ##
গল্পটা ২০০৬ সালে প্রথম আলো পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় ছাপা হইছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৪৫
২৪টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×