somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসহায় কাঁদে চট্টগ্রাম সাথে কাঁদি আমি

১৩ ই জুন, ২০০৭ বিকাল ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(কল্পিত)
।১।
জমিলা সারাটাদিন মানুষের বাসায় কাজ করে বাচ্চা দুটোর মুখে ভাত জোগাতে পারে না। চেয়ে চিন্তে কোন রকমে চলে। বড়টা চার বছর বয়স। ছোটটা এক। চার বছরের বাচ্চাটার কাঁধে ছোটটার দায়িত্ব চাপিয়ে সকালে, দুপুরে আর সন্ধ্যায় তিন জায়গায় কাজ করে।

সেদিন সন্ধ্যায় ঝড় বৃষ্টির মধ্যে ভাত আনতে পারেনি জমিলা। শুকিয়ে যাওয়া স্তন মুখে দিয়ে ছোট বাচ্চাটা অনেকক্ষন ধরে কাঁদছিল। রাত বাড়লে ক্ষিদের যন্ত্রনায় সেই সাথে যোগদিল বড়টাও। কাঁদতে কাঁদতে জমিলা তাই বলছিল, 'মরস না কেন তরা?'

বাচ্চাদুটোকে যখন আর্মির লোকেরা তুলে আনল তখন বিলাপ করতে করতে করতে জমিলা বলছিল, 'বাচ্চা দুইটারে আল্লাহ খালি পেটে নিয়া গ্যালা! আল্লাহ এই তোমার বিচার!! ও আল্লা আল্লা গো!!!'

।২।
মাটিকাটার কাজ করা করিমের পাঁচ সন্তান, মা আর বউ নিয়ে চলতে হিমসিম খেতে হয়। বড় মেয়েটার বয়স দশ। আশেপাশের ছেলেমেয়েদের দেখে মেয়েটা স্কুলে যেতে চায়। কিন্তু করিম কিছুতেই রাজি হতে চায় না। বরং কাজে পাঠালে কিছু আয় হবে।

এমনিতে সারাদিন কাজ করতে পারেনি দূর্যোগে, তার উপর সন্ধ্যায় ঘ্যানর ঘ্যানর করায় বাচ্চাগুলোকে ধরে দিয়েছে বেধড়ক। করিমের মা বাঁচাতে এসেছিল বাচ্চাগুলোকে। ধাক্কা দিতে গিয়ে মাও পড়ে গিয়ে কোমরে ব্যাথা পেল।

পরদিন তাই শোকাহত করিম মিয়া। খালি বুকের ভিতরটা মুচড়ে মুচড়ে উঠছে বারে বার। মা, সন্তানের কথা ভাবে আর কিছু ক্ষন পর আহাহা করে উঠে। চোখের পানি কাদার সাথে মিলেমিশে একাকার। মাটির দিকে চেয়ে বলে, 'মাটিরে তুইই আমার সব নিলিরে, সব নিলি'।

।৩।
দূর্যোগ এসেছে। সাহায্য সংগ্রহ চলছে। সে মিছিলে আমি-আমরা সবাই আছি। অথচ মরেছে কিন্তু দরিদ্ররাই। আবার দুদিন পরে আমরা এসব ভুলে যাব। যে যার পথে চলতে থাকব - একদল আরেক দলের দিকে কাদা ছুঁড়ে বলব, তুই শালা নোংরা।

কিন্তু এই জনগোষ্ঠী এইরকমই থেকে যাবে - দরিদ্রসীমার দুই আঙ্গুল নীচে, যে কোন দূর্যোগে অপ্রস্তুত, গন হারে লাশ হয়ে যাওয়া অচ্ছ্যুত একদল। কান্না কাটি শেষে কেউ কেউ ক্লোজড ফোরামে বলে বসবে, ভালই হয়েছে জনসংখ্যা একটু কমেছে।

আসলেই এরা ভিক্ষারই উপযুক্ত। কি দরকার এদের জন্য আরেকটু নির্ভরযোগ্য আবহাওয়া পূর্বাভাসের ব্যাবস্থা করা? কি দরকার আরেকটু নিরাপদ বাসস্থান সুনিশ্চিত করা? আমরা কিছুদিন পরেই এগুলো ভুলে গিয়ে ধ্বসে পাহাড়ের চুড়ায় গড়ে তুলব আমাদের সুরম্য বাগান বাড়ি। মেয়র সাহেব পকেট ভারি করে বলবেন, 'উন্নয়নের দেকেছেন কি? উন্নয়নের জোয়ারে তো সব ভাসিয়ে দিলাম'। আমরা প্রবাসে দামী বিএমডাব্লিউ হাঁকিয়ে বলব, 'স্টিংকি দেশটা আমাদের মুখটা আর রাখল না'।

শুধু ভিক্ষা আর ত্রানেই ঘুরপাক খেতে থাকব আমরা সারাজীবন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০০৭ বিকাল ৩:০৯
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×