(আগের পর্বের পর...)
রেজাল্ট হবার কিছুদিন পরের ঘটনা। আমি তখন ঢাকায়। আব্বা, আম্মা আর ছোট ভাই তখনও চিটাগাংয়ে। মেট্রিক পরীক্ষার মার্কশীট এসেছে। স্কুল থেকে আব্বার সেটা তুলে নিয়ে আসবার কথা। সেদিন দুপুরে আব্বা ফোন করে জানালেন মার্কশীট আনতে গেলে তাকে স্কুলের যে লোক দায়িত্বে ছিলেন তিনি কথা শুনিয়েছেন। কি বলেছেন সেটা আর নাই টানি, কিন্তু আব্বা আমাকে দায়ী করে বললেন, ‘তোমার জন্য আজকে কথা শুনতে হল!’
বাঙলা কলেজে ভর্তি হবার পর সবার ভাব ভঙ্গী পাল্টে গেল আমার সাথে। যে যেমন পারে উপদেশ দিতো। আমার আম্মা এমনিতে খুব ঠান্ডা মানুষ। সেই আম্মাও একদিন আমাকে শুনিয়ে দিলেন যে আমাকে দিয়ে কিছু হবে না।
আজ যখন এত বছর পর সেগুলো নিয়ে ভাবছি তখন কতগুলো ব্যাপার আবিষ্কার করছি। তখন এই বাস্তবতার উপলব্ধি আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছিল যে পৃথিবীতে আসলে সব কিছু অর্জন করে নিতে হয়। মেধা জিনিসটা চর্চার একটা জিনিস। আপনা আপনি খুব কমই সেটা আয়ত্বে আসে – তাকে আয়ত্বে আনতে হয়।
আরেকটা উপকার হয়েছিল আমার। ভাল স্কুল আর ভাল কলেজে বেশীর ভাগ ছেলে পড়াশুনা ছাড়া আর কিছু বোঝে না। স্কুলে একটাও ছেলে দেখিনি যে পড়াশোনার বাইরে কিছু করত। ওয়েল করত: যেমন স্কাউটিং বা বইপড়া এসব। কিন্তু একেবারে আউট-অফ-দ্যা-বক্স কিছু কেউ করত না। বাংলা কলেজে ঢুকে দেখলাম পড়ালেখায় সেখানে সবাই সাধারন মানের। কিন্তু তাদের অনেকেরই অনেক বিষয়ে পারদর্শীতা আছে। আমি এদের সাথে মিশে মিশে বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠলাম।
প্রথম বন্ধু পাই প্রলয়কে। একটা বির্তক প্রতিযোগীতার বাছাই পর্বে দেখা প্রলয়ের সাথে। আমার বির্তক খুবই বাজে হয়েছিল। কিন্তু প্রলয়েরটা অসাধারন, অসাধারন ছিল। ছেলেটা গলা কাপিয়ে টুকরো কবিতা আবৃত্তি করে এমন একটা বির্তক দিল যে আমরা মুগ্ধ। তারপরের দিন দেখি ব্যাটা মাঠের ধারে বসে আছে। আমি গিয়ে কথা বললাম। সে থেকেই বন্ধুত্ব শুরু। পরে আমরা দুজন আবৃত্তি নিয়ে বহুদুর গিয়েছি। সেটা আরেকটু পরে আসবে।
প্রথম বর্ষের শুরুর দিকে ইন্টারমিডিয়েটের জন্য রেজিষ্ট্রেশন করতে হয়। রেজিষ্ট্রেশন করছি, দেখি আমার পাশের ছেলেটা আমার জন্মতারিখ দেখে দেখে বসাচ্ছে। মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। বললাম, কি আশ্চর্য আমার জন্ম তারিখ তুমি লিখছ কেন? সেও মহা বিরক্ত হয়ে আমাকে বলে, তোমারটা আমি লিখব কেন? পরক্ষনে দুজনের জন্মদিন যে একই দিনে সেটা বুঝতে হো হো করে হেসে উঠলাম। পরিচয় হল জয়ের সাথে।
পরিচয়ের পরই টের পেলাম অতিরিক্ত কথা বলা এবং নিজেকে বিরাট বড় করে দেখা একটা চরিত্র হচ্ছে জয়। অনেকে তার দুটো স্বভাবের জন্য তেমন পছন্দ করে না। তবে যখন জানলাম এই ছেলে কিশোর পত্রিকায় লেখে তখন ভাবলাম নাহ এই ছেলের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে যদি লাইন ঘাট করে কিছু পাবলিশ করা যায়।
তখন অবশ্য আমি আর প্রলয় দুজনেই কবিতা লেখতাম। আর আমাদের কবিতার একমাত্র পাঠক ছিল জয়। জয় খুব আশ্বাস দিত খুব ভালো হচ্ছে। পরে জয়ের পরামর্শে একটা লিডিং নিউজ পেপারে (এখন নাম মনে পড়ছে না, সম্ভবত আজকের কাগজ হবে) যাই লেখা জমা দিতে। এ ব্যাপারে পরে আরো আসবে।
একদিন ঠিক করে লেখা জমা দিতে তিনজন মিলে চলে গেলাম মতিঝিল সেই পত্রিকা অফিসে। বাসে ঝুলে হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে আনন্দ করে গেলাম আমরা। তখন প্রলয় হাল্কা এমেচারিস সিগারেট ফুঁকত। আর আমি এক দুইটা খেয়েছি – কিন্তু এমেচারিস ও হয়ে উঠতে পারিনি। তো আমি পাকনামী করে সিগারেট কিনে ধরালাম। সঙ্গে সঙ্গে জয় আর প্রলয়ও।
এখন সেসব কথা ভাবলেই খুব অনুপ্রানিত বোধ করি। সদ্য কৈশোর পেরোনো তারুন্যের অনুভুতিটা জেগে ওঠে।
এভাবেই শুরু হয় আমার মেটামরফসিস।
(পরের পর্বে থাকবে আবৃত্তি সংগঠন নিয়ে কাজ কর্ম্ম আর আমার আরো পরিবর্তন)
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন