তবে আপনার কাছে যদি যথেষ্ট টাকাপায়সা থাকে তাহলে লোডশেডিং আপনার জন্য কোন মাথাব্যাথার কারন না। আপনি চাইলেই জেনারেটর কিনতে পারেন, তেল কিনে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎবিভাগের লোকজনকে বুড়ো আন্গুল দেখিয়ে দিতে পারেন। আবার ছোটবড় আইপিএস ও কিনে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রনা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেতে পারেন। তবে যারা উপরের দুইটাই করতে পারছেন না তারা হয় ইমার্জেন্সি চার্জার লাইট ও ফ্যান কিনেন অথবা খাতা দিয়ে বাতাস খান আর মোবাইলের টর্চ জ্বলিয়ে লোডশডিংয়ের সময়টুকু সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন।
আমার বর্তমান লোডশেডিংয়ের সিডিউল অনুযায়ী ১ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে আর ৪ ঘন্টা থাকেনা। এই রেশিও তে বাজারের রেডিমেড চার্জারগুলি ঠিকমত চার্জ হবার পুযোগ পায় না, আবার এই চার্জার ফ্যান ও লাইটগুলির দামও বেশ এবং খুবই নিম্নমানের চাইনিজ যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি বিধায়, এগুলি তেমন একটা টিকেওনা।
তবে আপনার যদি নূন্যতম ইচ্ছাও থাকে তাহলে আপনি একটি মিনি আইপিএস বানিয়ে ফেলতে পারেন নিজ হাতেই। খুবই কম খরচে। খুবই অল্প সময়ে(২-৩ ঘন্টায়) চার্জ হয়ে যাবে আবার বেশী সময় আপনাকে আলো ও বাতাস দিবে। দরকার নেই যে আপনার এই ইলেকট্রনিক্স কাজে পূর্ব অভিজ্জতা থাকতে হবে। অথবা আপনি কোনদিনও এইসব ইলেকট্রনিক্স পার্টস চোখেও দেখেননি, আপনার দ্বারাও সম্ভব এই মিনি আই পি এস বানানো। আপনার শুধু দরকার এইটা বানানোর ইচ্ছা।
সংক্ষেপে সার্কিট ডায়াগ্রাম
এই কাজে আপনার লাগবে
আর চার্জার বানাতে যা লাগবে।
এই প্রজেক্টের সব পার্টস আপনি এই ছবির মার্কেটে পাবেন। সাথে দোকানের বিজনেস কার্ডের স্ক্যান কপিও দিয়ে দিলাম।
এই প্রজেক্টের কানেক্টিং তারগুলা একটু মোটা হতে হবে। আমি আমার প্রজেক্টে মনিটর বা সিপিইউর এসি তারের ভিতরের ৩ টি তার ইউজ করেছি। আপনাদের বাসায়ও এমন এসি পাওয়ার কর্ড অবশ্যই থাকবে।
প্রজেক্ট টির ডিটেইলসে যাবার আগে এই ডিডিওটা দেখুন
এবার ধাপে ধাপে এই আইপিএস এর যন্ত্রাংশ সংযোগর পদ্বতি ছবি সহ দেখানো হলো
১> বক্সের বাইরের স্ক্রু লাগানোর ছিদ্র, ট্রান্সফর্মার ও ব্যাটারী আটকানোর ক্লাম এর মাপ অনুযায়ী ক্যাসিংয়ে ছিদ্র করে ফেলুন। ব্যাটারী আর ট্টান্সফর্মার ও ব্যাটারী ক্লামের ছিদ্র একটু মোটা করুন, আর ক্যাসিং আটকানোর ছিদ্র একটু চিকন।
২> এসি সকেট ও এসি সুইচ সংযোগ করে ফেলুন। সুইচের দুটি ফাকা পোর্টে ২২০ ভোল্ট এসি পাবেন
৩> এবার ট্রান্সফর্মারের এসি দুটির তার কানেক্ট করে ফেলুন।
৪> এবার ছবির অনুযায়ী ২ টা ডায়োড আর একটা ক্যাপাসিটরের কানেকশন করে ফেলুন। ক্যাপাসিটরের নেগেটিভ পয়েন্ট টি ক্যাসিংয়ের সাথে ঝালাই করে লাগিয়ে দিন। ক্যাপাসিটরের দুই লেগে ১৫ ভোল্ট ডিসি পাবেন।
৫>ক্যাপাসিটরের পজেটিভ এ একটা ডায়োডের নেগেটিভ লেগ জয়েন্ট দিয়ে পজেটিভ লেগ এ দুটি তার সংসুক্ত করুন। একটি তার চলে যাবে ব্যাটারির পজেটিভ এ, আরেকটি তার যাবে ফ্যান ও লাইটের সুইচের মাঝের পোর্টে। ব্যাটারির নেগেটিভ তারটি আসবে ক্যাসিং এর বডি থেকে। ব্যাটারীর পজেটিভ ও নেগেটিভ অংশে ব্যাটারী ক্লিপ লাগাবেন ঝালাই করে।
৬>ফ্যান ও লাইটের সুইচের উপরের ফাকা পোর্টে ২ টি ১ কিলো রেজিষ্টর সংযুক্ত করুন। এই দুইটি রেজিষ্টের অপর প্রান্তে দুইটি LED বসবে। LED র নেগেটিভ থাকবে বডির সাথে সংযুক্ত। দুইটি সুইচের উপরের পয়েন্ট থেকে দুটি তার RCA Jack এর মিডল পয়েন্টে কানেক্ট করবেন।
৭>এখন আপনি যদি লাইট সার্কিট টি বক্সের ভিতরে ফিট করতে চান তাহলে ছবি অনুযায়ী সার্কিটের নেগেটিভ বক্সের বডির সাথে কানক্ট করুন। আর পজেটিভ অংশটি কানেক্ট করুন লাইট সুইচের পোর্ট থেকে। আর এই সার্কিটের আউটপুট কানেক্ট করুন একটা CFL light এর ফিলামেন্ট এ। তবে এই সার্কিট ফিট করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যাতে সার্কিটের হিটসিংকের সাথে বডির সংস্পর্শ না আসে। আমি AC Cord এর ফেলে দেওয়া কাভার এখানে ফিট করে দিয়েছি সুপার গ্লু দিয়ে।
৮>এবার ডায়োড আর সুইচের মাঝখানের তারটি কেটে ফেলুন। এই তারের দুই মাথায় একটি রিলে কানেক্ট করুন। রিলের পজেটিভ আর নেগেটিভ ক্যাপাসিটরের পজেটিভ নেগেটিভে যাবে। রিলের নেগেটিভ পজেটিভে একটা ডায়োড কানেক্ট করতে হবে। ডায়োডের পোলারিটি অনুযায়ি রিলের পজেটিভ নেগেটিভ নির্ধারন করবেন।
১০>এবার আপনার আপনার চার্জার রেডি। আপনি এখন একটা RCA Jack থেকে DC Fan আর একটা RCA Jack থেকে DC light এর ভোল্টেজ পাবেন। হলুদ তারের কানেকশনের অপর প্রান্ত থেকে সরাসরি ফিলামেন্ট জ্বালাতে পারবেন।
আপনার এলাকায় এসি ভোল্টেজ যদি লো(১৫০-১৮০) হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে ১৮ ভোল্টের ট্টান্সফর্মার লাগাতে হবে। সেক্ষেত্রে এসি তারের একটা ডায়োড কমে যাবে অথবা ৪ টা ডায়োড দিয়ে ব্রিজ কানেকশন করতে হবে।
এবার আমাদের চার্জার টেষ্ট করার পালা। ভিডিওটা দেখুন।
এই ধরনের আইপিএস বাজারে কিনতে পাওয়া যায় ৩০০০-৩৫০০ টাকায়। ফ্যান ছাড়া এবং সেখানে নষ্ট CFL ফিলামেন্ট জ্বালানোর কোন উপায় থাকে না, শুধু DC light জ্বালানোর উপায় থাকে। এবং বাজারের চার্জারে পুরাতন নষ্ট ব্যাটারি ও অতি নিম্ন মানের ট্রান্সফর্মার ইউজ করা হয়, যা বেশদিন টিকে না। আপনাকে ওরা ওয়ারেন্টি দিবে তবে ঐ নষ্ট ব্যাটারী ও নিম্নমানের ট্রান্সফর্মার দিয়ে সার্ভিস দিবে।
এই প্রজেক্ট টি খুবই সহজ। যে কোন বয়সের যে কেউ এই মিনি আই পি এস বানিয়ে ফেলতে পারেন কোন ধরনের অসুবিধা ছাড়াই। যদি কেউ এই প্রজেক্টে টাকা খরচ করে ব্যার্থ হন তাহলে এই ব্লগার সফল করার দায়িত্ব নিবেন। ব্লগ ফোন অথবা ইমেইল সাপোর্টের মাধ্যমে।
প্রথমবার সোল্ডারিং আয়রন, লিড, মাল্টিমিটার, ড্রিল মেশিন কিনার পরে প্রজেক্টটি আর্থিকভাবে লাভবান হবে না। তবে একের অধিক আই পি এস বানাতে গিয়ে এই প্রাথমিক খরচটা আর হবে না। সেক্ষেত্রে আপনার পরিশ্রম বৃথা যাবে না। প্রতিটা ইউনিটে বাজার মূল্যের ৪০০-৫০০ টাকা লাভ থাকবেই। আর ব্যাপারটা যদি স্রেফ শখের বশেই করার ইচ্ছা পোষন করেন, তাহলে লাভের কথা নাই বা বললাম।
(আমার বাংলা গদ্য ভালো না। ভাষার ব্যাবহারে কোন কারুকার্য নেই। তাই বাক্য গঠনে ভুল হওয়া স্বাভাবিক। এমনটা হলে ক্ষমা করে দিবেন প্লিজ। হোম মেইড ভিডিও দুটি দেখে হাসির উদ্রেক হইলেও হইতে পারে)
ইমেইল : [email protected]
ইলেক্ট্রনিক্সের টুকিটাকি নিয়ে ফেসবুকে একটা গ্রুপ খুলেছি। সেখানে জয়েন করতে পারেন। নিজেদের জিজ্ঞাসা, পরামর্শ, সমস্যা, অভিজ্ঞতা শেয়ারে খুব ভালো হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১২ সকাল ৯:০৭