সৃজনশীল পদ্ধতি ও নোট-গাইড কি সম্পর্কিত?
============================
বর্তমান সৃজনশীল পদ্ধতি যে শিক্ষকগণই আত্মস্থ করে উঠতে পারেন নি, তা স্বয়ং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই মনে করেন। তার প্রমাণ পাওয়া যায় ৮ম শ্রেণীর ম ল্যায়ন পরীক্ষা-২০০৯ এবং ২০১০ সালের এসএসসি পরীক্ষার প্রি-টেস্ট ও টেস্ট পরীক্ষা বাংলা ও ধর্মশিক্ষার সৃজনশীল প্রশ্ন প্রসঙ্গে। নিয়ম অনুযায়ী এ প্রশ্ন স্কুলের শিক্ষকগণ অভ্যন্তরীণভাবেই প্রণয়ন করার কথা। কিন্তু এ বছর সরকারিভাবে এ প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও সরবরাহ করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্কুলের শিক্ষকগণ যথাযথভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে পারবেন সে ব্যাপারে মোটেই আস্থাশীল নয় বলে দায়িত্বশীল স ত্র জানিয়েছে। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে সৃজনশীল পদ্ধতি নোট-গাইড শিক্ষার্থীদের জন্য বেশি জরুরি। নোট-গাইড পড়ে না, এমন কোন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মেধাবী ও ভালো রেজাল্ট করা শিক্ষার্থীদের টেবিলেও নোট-গাইড থাকে, এমনকি একাধিক পর্যন্ত । তারা আসলে গাইড পড়েনা বরং ঐসব বই থেকে পরীক্ষায় উত্তর দেয়ার জন্য ধারনা নিয়ে নিজেদের দক্ষতা বাড়ায়। বর্তমানে যে কোনো পেশায় নামকরা প্রায় সকলেই ছাত্রাবস্থায় কোন না কোনো গাইডের সহায়তা নিয়েছে, আমি নিজেও কয়েকটি গাইড ফলো করতাম। এছাড়াও প্রতিদিন বিভিন্ন পত্রিকায় পড়াশোনা, শিক্ষাসাগর ইত্যাদি বিভিন্ন চমকপ্রদ শিরোনামে বাজারের নামকরা নোট গাইড থেকে তুলে দেয়া হুবহু অংশ পাওয়া যায়। অতএব, মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলে না দিয়ে অথাৎ নোট বই নিষিদ্ধ না করে অন্য কোন উপায়ে এটি অব্যাহত রাখলে সমস্যা কোথায়। পৃথিবীর কোথাও এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও নোটবই অবৈধ নয়। প্রকাশনা সংস্থার পাশাপাশি কোচিং সেন্টার কিংবা প্রাইভেট টিউটরদের হ্যান্ডনোট বলে খ্যাত নোট-গাইডও বিক্রি হয়। এগুলো নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেই কেন? বাজারে ছাপা নোট বন্ধ হলে এসব কোচিং সেন্টার ও শিক্ষক টিউটরদের পোয়া-বারো অবস্থা হবে। যেখানে বাজারের একটি নোট ৫০/৬০ টাকা কেনা যায় সেখানে এসব নোট ৫০০/৭০০ টাকায় সংগ্রহ করতে হবে।
১৯৮০ সালের আইন বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারের করণীয় কি হতে পারে:
============================================
১৯৮০ সালে প্রকাশকরা বোর্ড বইয়ের সঙ্গে নোটবই জুড়ে দিয়ে বিক্রি করতেন বলে সরকার ২য়-৮ম শ্রেণী পর্যন্ত নোটবই নিষিদ্ধ করেছিল। বর্তমানে সরকার বিনামূল্যে ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণীর বই বিতরণ করছে, তাই এই বইয়ের সঙ্গে বিক্রির সময় সহায়ক বই জুড়ে দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু কিছূ অতি উৎসাহী প্রশাসনের কিছু লোক ইদানীং অবৈধ নোট গাইড জব্দের নাম করে লাইব্রেরী ও পুস্তক বিক্রেতাদের জিম্মি করছে। এর প্রতিবাদের সারা বাংলাদেশে কিছুদিন আগে পুস্তক বিক্রেতারা প্রতীকী প্রতিবাদ হিসাবে সারাদিন দোকান বন্ধ রাখে। ফলে এ সময় সারাদেশের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপকরণ কিনতে গিয়ে বাধাগ্রস্থ হয়।অতএব, এ আইনটি নিয়ে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারকে ভাবতে হবে।
জাতীয় গ্রন্থনীতিতে কি বলা হয়েছে?
===================
"অল্পশিক্ষিত-স্বল্পবিত্ত পরিবারের সন্তানদের সুবিধার্থে পাঠ্য বিষয়ে সহায়ক পুস্তক প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করা, তবে নিশ্চিত করা যে, সহায়ক বইয়ের গুণগত মান যেন সুরক্ষিত হয় এবং এসব পুস্তকের প্রকাশনা যেন কারও কেবল আর্থিক লাভের বিষয় হয়ে না দাঁড়ায়। "
সহায়ক বই যদি বৈধভাবে প্রকাশের সুযোগ থাকত, মান নিয়ন্ত্রণ করে প্রকাশের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে ছাত্রছাত্রীরা ভালো ভালো প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত সহায়ক বই পড়ার সুযোগ পেত এবং এর ফলে বিশাল জনগোষ্ঠী শিক্ষকদের দেয়া নোট ও প্রাইভেচ কোচিং এ পড়া থেকে রেহাই পেত, পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরাও অবৈধ নোট-গাইড জব্দ করার নামে দুর্নীতি করার সুযোগ পেতনা।