আমি বরাবরই নরম প্রকৃতির মানুষ। আমার দাঁতগুলোও তাই কিছুমাত্র ব্যতিক্রম নয়। এমনও দিন গেছে, আলুভাজি আর পরোটা দিয়ে নাস্তা করছি, কুড়মুড় করে শব্দ হল হঠাৎ, ভাবলাম আলুভাজির মধ্যে মাংসের হাড় কোত্থেকে এল? পরে দেখলাম, দাঁত ভেঙ্গে গেছে একটা। আবার আরেকদিন বাসায় আত্মীয় এসেছে মিষ্টি নিয়ে- লাল লাল লাড্ডু, খেতে গিয়ে মাঁড়ির দাঁত ভেঙ্গে অর্ধেক হয়ে গেছে! আম্মু বলেন আমার আলস্যিভরা খাদ্যাভ্যাসই নাকি এসবের জন্য দায়ী। জীবনে কোনদিন আখ, পেয়ারা, আপেল আস্ত কামড়ে কামড়ে খাইনি। যেখানে কুচি কুচি করে কেটে দেয়ার যন্ত্র আছে, সেখানে কেন এত কষ্ট করব? টিভিতে আকরাম খান, মোহাম্মদ রফিককে ম্যাজিক টুথ পাউডার দিয়ে দাঁত মাজতে দেখেছি দিনের পর দিন, তাতে আমার ভাবান্তর হয়নি কোনো। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে পেপসোডেন্ট দিয়ে কোনোরকমে ব্রাশ করে চালিয়ে দিয়েছি কাজ, ঘুমাতে যাবার আগে রাতে ব্রাশ করার উপদেশ আমলে নিইনি কখনো। "দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা নেই"-কথাটার ভাবসম্প্রসারণ করেছি অনেকবার, কিন্তু নিজ জীবনে প্রয়োগ করিনি একটিবার!
এই করে করে নিজের দাঁতের বারোটা বেজে গেছে বুঝেছি যখন, তখন আমার সবেমাত্র বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী বললেন, যা হবার হয়েছে, এখন থেকে দাঁতের যত্ন নিতে হবে নিয়মিত। প্রতিদিন রাতে ও সকালে দুইবার ব্রাশ করতে হবে। বাজার থেকে মাউথওয়াশ কিনে আনা হল, যেটা মুখে দিয়ে কুলি করলে নাকি সকল জীবানু নিঃশেষ হয়ে যাবে, দাঁত সুস্থ হবে। স্ত্রীকে খুশি করার নিমিত্তে প্রবল অনিচ্ছা-সত্ত্বেও দাঁতচর্চা শুরু করলাম।
এভাবেই চলে যাচ্ছিল দিন। তারপর এই সেদিন, ইদানিংকালে সমাজে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত খবরগুলি নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে স্ত্রী হাসতে হাসতে বললেন, দাঁতের যত্ন-আত্নি আমার আর না করলেও চলবে!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১১ সকাল ৭:৫২