সেই চিরচেনা শুক্রবার। ভোরের বাতাসে পরাটার মৌ মৌ গন্ধ। সপ্তাহ জুড়ে পরিশ্রম করে ক্লান্ত কাকেরাও ধীর লয়ে কা-কা করায় ব্যস্ত। একটু বেলা হলেই ছোট্ট উঠানে কিংবা বারান্দায় লুঙ্গি পরা বাবা অথবা ভাইয়ের নিশ্চিন্তে দাঁত মাজার দৃশ্য দেখি। রান্নাঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসা বোন, মা অথবা স্ত্রী। হাতে নাস্তার থালা। "খেয়ে নাও সবাই, কত বেলা হয়েছে দেখেছ?!!"
সময় যায়, গ্রীষ্মের উত্তাপ বাড়ে, চারপাশ সাদা হয় আরও আরও। বাথরুমে লাইন পড়ে। আজ জুম্মা-বার। গোসল করতে হবে। মা, পাঞ্জাবীটা বের করে রেখেছো তো? মাথায় টুপি দিয়ে সারি সারি লোক হেঁটে যায় আল্লাহর দরবারে। মাইকে চিৎকার করে ইমাম সাহেব বলেন, "ভাল-মন্দ বিচার করতে পারি বলেই আমরা মানুষ। ভাল কাজ করতে হবে।" ছোট্ট বাচ্চারা বাবার হাত ধরে মসজিদে আসে। আমি খুতবার আবেশ ফেলে শৈশবে চলে যাই। নামাজ শুরু হয়। মসজিদের জানালা দিয়ে ভুরভুর করে গরুর মাংসের ঘ্রাণ আসে। সাপ্তাহিক ঈদ আজ। একটু ভাল খাওয়া। নামাজ শেষে হুড়োহুড়ি, স্যান্ডেল হাতে চলন্ত মানুষ। ঝপঝপ স্যান্ডেল মাটিতে পড়ার শব্দ। সামনের গলিতে কাঁঠাল-আমের ভ্যান নিয়ে ব্যতিব্যস্ত ঘর্মাক্ত কিছু মানুষ। নামাজ শেষ, নামাজ শেষ!! ক্রেতা ধরতে হবে, কিছু বিক্রি করতেই হবে এই-বেলা, নইলে যে বাসায় মুখ দেখানোর জো নেই।
শুভ্র টুপি পরা মানুষের আনাগোনায় মুহূর্তে ঢেকে যায় চারপাশ। তীব্র গরমে কানের পাশ দিয়ে বেয়ে আসে নোনা ঘামের ফোঁটা। এই আমারই চিরচেনা মাতৃভূমি। এই আমারই দেশ, শত কষ্টেও হাসিখুশি থাকা আমার প্রাণের দেশ! আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১১ সকাল ৮:০০