সম্প্রতি আমাদের দেশ যেন এক অদ্ভুৎ উটের পিঠে সওয়ার হয়েছে। দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী দেখে আর কোন ভাবেই একথা বলা যাচ্ছেনা যে দেশ তার সঠিক ট্র্যাকে চলছে। দেশে এত বড় বড় সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছে, বাংলাদেশের এলিট বাহিনি RAB বা পুলিশ তার কোন হদিস করতে পারছেনা; অথচ ফেইসবুকে কে কোন নেত্রীর ব্যাঙ্গাত্মক ছবি প্রকাশ করেছে তাকে ধরে ফেলেছে আমাদের দেশের এই এলিট বাহিনি। তার চেয়েও বিস্ময়কর ঘটনা হচ্ছে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) -কে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক ছবি আঁকার প্রতিযোগিতার মত ন্যাক্কারজনন ঘটনা ঘটলেও তা’ নিয়ে মাথাব্যাথা হয়নি এদেশের নেতা-নেত্রীদের, বন্ধ হয়নি ফেইসবুক। কিন্তু নেত্রীদের নিয়ে কার্টুন প্রকাশ করার সামান্য তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে বন্ধ হয়ে গেলো বিশ্বের বৃহত্তম যোগাযোগের সাইট ফেইসবুক। সত্যিই সেলুকাস! বিচিত্র এই দেশ! এখানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) থেকেও বড় হয়ে গেলো আমাদের এই নেতা-নেত্রীরা।
ঘটনা শুধু এখানেই শেষ নয়। আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কার্টুন প্রকাশের ঘটনাকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করছে কিছু তরুণ জ্ঞানপাপী। বিষয়টা একটু খোলাসা করা যাক। এই তরুণ জ্ঞানপাপীদের মতে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবারই আছে। তাই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে নিয়ে ব্যাঙ্গচিত্র প্রকাশ কোন অন্যায় নয়। আর এর জন্য ফেইসবুক বন্ধ করে দেওয়ারও কোন দরকার নেই। মনে হচ্ছে স্বাধীনতা নতুন করে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে এই নব্য জ্ঞানপাপীদের হাতে। এখানে ন্যায় অন্যায়ের কোন বাছ-বিচার নেই। নেই কোন পাপ-পূন্যের হিসাব। নেই কোন হিতাহিত জ্ঞান। ব্যাক্তি স্বাধীনতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে যা ইচ্ছা তাই করা যেতে পারে।
তাহলে তো একথাও বলতে হয়ঃ চুরি করা বা খুন করা সেই চোর বা খুনির পেশার স্বাধীনতা। কেউ যদি খুন করে তাহলে তাকে আর খুনী বা অপরাধী বলা যাবেনা, কারণ সে যা করেছে তা করেছে তার স্বাধীনতা থেকে। যেহেতু সবাই স্বাধীন, সেহেতু চোর বা খুনিকে কিছু বললে তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়ে যেতে পারে। স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার ভয় থেকে যে যাই করুক না কেন তাকে কিছু বলা যাবে না; সে যত বড় অপরাধই করুক না কেন। সর্বোপরি, অত্যাচারীর অত্যাচার, ধর্ষকের ধর্ষন, জালিয়াতির জালিয়াত, লুন্ঠনকারীর লুন্ঠন এবং এহেন যে কোন অপরাধের অপরাধীকে তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার ভয়ে কিছু বলা যাবেনা বা শাস্তি প্রদান করা যাবেনা কারণ এগুলো তার পেশার বা কাজের স্বাধীনতা।
এইভাবে যদি স্বাধীনতা নতুন করে সংজ্ঞায়িত হতে থাকে, তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো নীতি-নৈতিকতা ভুলে যেতে পারে, পরিণত হতে পারে হিতাহিত জ্ঞানশুন্য বর্বর জাতিতে। তাতে কি? স্বাধীনতায় তো আর হস্তক্ষেপ করা হলোনা!
এমতাবস্থায় যে প্রশ্নটি না এসে পারেনা তা’ হলোঃ ফ্রান্সের বা বেলজিয়ামের মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরিধান করে স্কুলে যাওয়া কি তাদের স্বাধীনতা নয়? অথচ সেইসব মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরিধান করার অধিকা কেড়ে নেওয়া হলেও ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ নামধারী আমেরিকা ভিত্তিক একটি সংগঠনের কাছে এই বেলাতে ‘স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ’ নামক কোন ঘটনা ঘটেনি। তাই এক্ষেত্রে তাদের কোন বিবৃতিও নেই। বিস্ময়কর সত্য হলো, এই সংগঠনটির কাছে ফেইসবুকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে নিয়ে কার্টুন প্রকাশে বাধা দিলেই তা হয়ে যায় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। হিজাব পরতে বাধা দেওয়া স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কার্টুন আঁকতে বাধা দেওয়া স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ! দুমুখো নীতি আর কাকে বলে!
স্বাধীনতা একটি জন্মগত অধিকার। সেই স্বাধীনতা সত্য প্রকাশের বেলায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা সৎ পথে চলে জীবন যাপন করার স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা সৎ পথে উপার্জন করার স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা সৎ নেতা নির্বাচনের স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা যুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বাধীনতা। আর এর জন্য যদি হাজার বছরের পুরণো ঐতিহ্যকেও আঘাত করতে হয়, যদি চিরাচরিত ধর্মবিশ্বাসকেও দূরে ঠেলে দিতে হয়, তা করতে কুন্ঠিত না হওয়াই প্রকৃত স্বাধীনতা। কিন্তু স্বাধীনতার নামে হিংসাপরায়ণ হয়ে কোন বিশ্বাসকে যুক্তিহীনভাবে আঘাত করা কেবল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধেরই নামান্তর।