আমি প্রথমবার মারা গিয়েছিলাম শ্বাসকষ্টে
আমার শ্বাসযন্ত্র ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হয়ে আসছিল
বিষাক্ত সীসার উপস্থিতি টের পেতাম সেকেন্ডে সেকেন্ডে, নিঃশ্বাসে
হৃদযন্ত্রের রক্তিম আভা ঢাকা পড়েছিল কার্বনের পুরু প্রলেপে
আমার ত্বকের স্বর্ণ রঙ পুড়িয়ে দিয়েছিল গনগনে রোদ
ভয়াবহ বিপর্যয়ে মৃত্যু ক্রমাগত গ্রাস করছিল আমাকে।
আমার শ্বাসটান বেড়ে যেতো
যখন দ্বীপ রক্ষকেরা যন্ত্রদানব হাঁকিয়ে পিষে দিতো
একেকটা সবুজ শরীর
আমার চৌদ্দ পুরুষের ভূখণ্ড কেঁপে কেঁপে উঠতো দানবের চলাচলে
সবুজের আর্তনাদে বাতাসে উঠেছিল হাহাকার ঘূর্ণি
আমার নিঃশ্বাস পড়েছিল চাপা নিঃষ্প্রাণ সবুজের মৃত শেকড়ের তলে
শাখা থেকে শেষ পাতাটাও ছিঁড়ে ফেলা হলে,
মাত্র দু’দিন বেঁচে ছিলাম আমি
পাতাটার শুকনো খড়খড়ে হয়ে যাওয়া অব্দি
নগর পরিচর্যাকররা ওটাকে সরিয়ে ফেলেছিল দ্রুত
ঠিক যেমন করে ওরা আমার মৃতদেহের উপর ধূলোমাটি বর্ষণ করতে হয়ে উঠেছিল ব্যতিব্যস্ত
আমি খুশিই হয়েছিলাম ওদের ধুলো ওড়ানো শেষকৃত্যে
আমার সন্মানে দু’ফোটা অশ্রু যদি পড়ে ধূলোর বিছানায়
তবে সেখানে জন্মাবে মখমলি সবুজ
মৃত্যুর পর আমি নিঃশ্বাস নেবো সবুজের তলদেশে
সোঁদা শেকড়ের নির্যাসে
সিক্ত জমিন চুঁইয়ে পরিশোধিত আলো এসে পড়বে আমার শরীরে
আমি দ্বিতীয় জীবন লাভ করবো আমার প্রথম মৃত্যুর পর।
আমার ধারণা সঠিক হয়নি এতটুকু
এ দ্বীপের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান বড় বর্ণাঢ্য
ওরা আমার মৃত আবাসকে ঢেকে দিল দামি মর্মরে
পিচ্ছিল মর্মর ভেদ করে, সে সাধ্য হয় না মাটির সবুজের
কী দুর্যোগ!
আমি হাঁসফাঁস করতে থাকি
দু’দিন পর আমার পুনর্মৃত্যু ঘটে।
(উৎসর্গঃ মানব সভ্যতার ভয়ংকর আগ্রাসনে মৃতপ্রায় সবুজরাজিকে)
---------------------------------------------------
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১