১ম পর্ব
২য় পর্ব
অমৃতসর
ষ্টেশন থেকে খানিকটা দূরে মূল শহর। ঢাকার মতই সিএনজি স্কুটারটা, শুধু রং আলাদা, কালো-হলুদ। ওরা বলে অটোরিকশা। ড্রাইভার সারাক্ষণ হিন্দী পাঞ্জাবী মিলিয়ে বকবক করতেই থাকলো। আমি খাঁটি বাংলায় তাল মেলানোর চেষ্টা করলাম। সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবার ভোর দেখে হয়ত রাস্তাঘাট জনশূন্য। ফাঁকা রাস্তায় দ্রুত ছুটে চলা স্কুটারে বসে মনে করার চেষ্টা করলাম অমৃতসর সম্বন্ধে কি পড়েছি।
অমৃতসর একটি পাঞ্জাবী শব্দ, এর অর্থ অমরত্বের সরোবর। ১৫৭৪ সালে শিখ সম্প্রদায়ের ১০ গুরুর ৪র্থ জন, গুরু রাম দাশ এ শহর প্রতিষ্ঠা করেন। অমৃতসর সারা বিশ্বের শিখ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান তীর্থ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এখানেই শিখদের পবিত্র মন্দির হরমন্দির সাহিব বা গোল্ডেন টেম্পল বা স্বর্ণমন্দির অবস্থিত। স্কুলে পড়েছিলাম ১৯১৯ সালে এ শহরের জালিয়ানওয়ালাবাগে বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশের গুলিবর্ষণে শত শত লোক মারা যায়, প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নাইটহুড খেতাব ত্যাগ করেন। ১৯৮৪ সালে শিখ চরমপন্থিদের দমনের জন্য গোল্ডেন টেম্পলে ইন্দিরা গান্ধীর শাসনামলে পরিচালনা করা হয় অপারেশন ব্লু স্টার, যার ফলশ্রুতিতে তাঁকে নিজ দেহরক্ষীর হাতে জীবন দিতে হয়। ভারতের সীমান্তবর্তী এ শহর থেকে পাকিস্তানের লাহোর মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরে। এ শহরের উপর দিয়েই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দিল্লী-লাহোর মৈত্রী বাস ও সমঝোতা এক্সপ্রেস নামের ট্রেন চলাচল করে।
চওড়া রাস্তার পাশে একটা দোতলা হোটেলের সামনে থামলো সিএনজি। ড্রাইভার স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে লাগেজ নামিয়ে লাউঞ্জে রাখল। ঘুমজড়ানো চোখে ম্যানেজার আসতে আমাদের পাসপোর্ট তার হাতে দিয়ে রুম দেখতে গেলাম। ফিরে এসে দেখি সে গম্ভীর মুখে সরি বলছে। আমাদের রুম দিতে পারবে না, ভালো হয় যদি আমরা অন্য কোন হোটেলে যাই। কি কারণ ষ্পষ্ট করে বলে না। কি আর করা, বের হয়ে এলাম। ড্রাইভার যশওয়ান্ত সিং হিন্দীতে যা বললো, দিনকয়েক আগে একদল বাংলাদেশী নারী ও শিশু অবৈধ ভাবে পাকিস্তান যাওয়ার সময় অমৃতসর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। তারপর থেকে পুলিশী ঝামেলার কারণে হোটেলগুলো সাবধান হয়ে গেছে। বাংলাদেশী পাসপোর্ট দেখলেই ইতস্তত ভাব দেখায়। পরে জানলাম পাকিস্তানে এবং সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যে মানব পাচারের একটা রুট হলো অমৃতসরের কাছে ওয়াগা বর্ডার।
পরের হোটেলটাতে কোন সমস্যা হলো না। আমাদের হয়ে যশওয়ান্ত সিং ম্যানেজারকে ঘটনা খুলে বললো। ম্যানেজার পাসপোর্ট দেখার ঝামেলাতেই গেল না। সরাসরি কলকাতার একটা ঠিকানা দেখিয়ে আমাদের ভারতীয় হিসাবে নাম রেজিস্ট্রি করে ফেললো। জিজ্ঞেস করলাম, পুলিশ টের পেলে? তিনি হিন্দী এ্যাকসেন্টে বাংলায় বললেন, আপুনারা বাংগালী আছেন ... বাংগালীকে আমি ভালো জানি। কুনু চিন্তা করবিন না। তারপরও একটু ভয় লাগছিল দুজনের। শহরের দ্রষ্টব্য স্থান দেখার কথা জিজ্ঞেস করলাম। কথাবার্তা আঁচ করে ড্রাইভার এগিয়ে এসে আমাদের গাইড হওয়ার প্রস্তাব দিল। যতক্ষণ থাকবো এখানে সে আমাদের সব ঘুরিয়ে দেখাবে এবং সবশেষে দিল্লীর বাসে উঠিয়ে দিবে। হোটেল ম্যানেজারের মধ্যস্থতায় ঠিক হল ১০:৩০টায় আমরা শুরু করব।
চলবে ...