somewhere in... blog

নুয়া করে চিনুরি মেয়েক || শুভাশিস সিনহার কবিতা

১৯ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভুমিকায় কবি বলছেন - এ কবিতাগুলো আমার বড়ো আদরের, ভালবাসার। খুবই নাজুক কবিতা, একটু বকাঝকা করলে কেঁদে ফেলবে, চড় মারলে তো বিপদ। চিৎকার চেঁচামেচি জুলুম আর ঝঞ্জাপীড়িত দুনিয়ায় এই নীরব আলুলায়িত কবিতার শরীর ভেতরে যে একটি প্রান্তিক বেদনার আত্মাকে ধারন করে আছে, সেইখানে নিমন্ত্রন।

সাধারন দুস্তবকের অক্ষরবৃত্তের হিসাব থেকে ইচ্ছে করেই দ্বিতীয় স্তবকে একটি লাইন কমালাম। চলনে একটি বিঘ্ন থাকুক, অসম্পুর্ণতা থাক; সেই এক লাইন আগামী সুন্দর ছন্দময় পৃথিবীর কাব্যাকাশে গিয়ে উড়ুক। কবিতাগুলো অনুবাদ নয়, যুগপৎ বাংলা এবং এবং আমার মাতৃভাষা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষায়, একই চিন্তার ঔরসে দুটো গর্ভে প্রসববেদনা হয়েতোবা।

... বাঙালী পাঠককে অনুরোধ, সে না বুঝার ভাষাটিকেও যেন একটু কষ্ট করে পাঠ করেন। ধ্বনির ভেতর দিয়ে ভাষা তার সব অর্থ ও অনর্থ হয়ে ধরা দেবে। তাতে করে ঐ অল্প মানুষের ভাষাটি ক্ষুদ্র পাঠকভান্ডারে সংখ্যাধন পাবে, ধন্যও হবে।


০১
যে ভাষায় কথা বলি, সেটাই কেবল ভাষা নয়
অক্ষরে অক্ষরে ফুটে ওঠে যে ভাষাটি, তার চেয়ে
আরেকটি ভাষা থাকে ভেতরে ভেতরে ভাঙাচোরা
প্রকাশ্যে যায় না আনা শৃংখলার দুনিয়ার ভয়ে
এ চোখ দেখে সে ভাষা, কান শোনে সে ভাষার ধ্বনি
আলাদা ধমনিপথে নিয়ত ভাষার আনাগোনা
চুপ হয়ে থাকলেও থাকি কোনো নীরব ভাষায়
আমার এ দেহ নিজে মুর্তিমান ভাষাভগবান।

অক্ষরের দাগে দাগে সেজেগুজে যে অর্থ প্রকাশ করে
পায়, শুধু তাই অর্থ নয়, জনমজঞ্জালে, ঘামে,
রক্তে রক্তে হারায় যে চিহ্নগুলো তার, থেকে থেকে
ভাসে চিৎকারে, বাজে নতুন ভাষার রিনিঝিনি
ভেতরে প্রবেশি তার অক্ষর নতুন করে চিনি।

≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈
যে ঠারে মাতুরি কথা, অহানই ঠারহান নাবে
মেয়েকে মেয়েকে শাত'পারের যে ঠার তার জিঙে
আরাক আহান থার বিতরে বিতরে - বাগাচুরা
ফঙেদে হাজানি নার শৃংখলার দুনিয়ার ডরে
আহিগি দেহের ঠার, কানহানি হুনের ঠার, প্রানে
তঙাল ধমনিপথে নিয়ত ঠারর আনাগোনা
ইংগ ইয়া থাইলেউ থাউরি গোপন ঠারে ঠারে
মোর দেহ এগ নিজে মুর্তিমান ঠারভাগবান।

মেয়েকর দাগে দাগে হাজিয়া যে অর্থ নিকুলের
অহানই নাবে অর্থহান; জনমজঞ্জালে, ঘামে
রকতে রকতে তার যে চিন মাঙর, থায়া থায়া
ফঙর তা চিকারিনো, ইকরের নুয়া করপেখ
মি তার বিতরে গিয়া নুয়া করে চিনুরি মেয়েক।


০২
মহাত্মা সকাল, জানি আঁধারের স্তন্য পান করে
শৌর্যে আর বীর্যে আজ উপচে পড়ে সব আপনার
উজ্জল আলোতে রঙে আয়নাটি সাজিয়ে দিলেন
নিজরূপ দেখে দেখে মানুষেরা মজে গেল রসে
তাদের চোখের তলে হারালো আধাঁর, - এসো এসো
সূর্যকে প্রণাম করি, আলোধোয়া জলে স্নান সেরে
নিজেকে পবিত্র করি, অশুদ্ধ রাতের যত ছাপ
মন্ত্র শ্লোকে মুছে দেই নিজের ভেতর থেকে সব...

মহাত্মা সকাল ওহে, তাই বলে আপনি আবার
যাবেন না ভুলে সব, যে আধাঁরস্তন্য ভরো প্রাণ
ঋণ তার শোধবার কালে পিছু নাহি তাকাবেন
পেছনেও রক্ষা নেই, চোখ মেলে চায় যত লাশ
বর্তমানে, -চারিদিকে ছড়ায়ে রেখেছে ইতিহাস।

≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈
ডাঙরিয়া বিয়ানহান, আধারর বুনি পিতে পিতে
বলিয়ে পাংকালে আজি মারংকাইছে হাবি তোর
ইঙাল মিঙালে রঙে হাজায়িলে মেঙসেল অহান
নিজ শাত চেয়া চেয়া মানু এতা কালাকপেলুইলা
তাঙর আহির তলে মাঙুইল আধার, -আহেই নে
বেনিগরে হমাদিক, মাঙপা রাতির যত ছাপ
মন্তরোনো মুকাদিক বিতরেত আকিহান করে।

ডাঙরিয়া হে বিয়ানহান, অতা বুলিয়া হাবি না
পাহুরেবেলিস, যে আধারস্তন্যে খৌনুগ বুজিলে
তার দান হুজানির কালে বার পিছবুলা নাদিছ
পিছেদেউ রক্ষা নেই, আহি মেলিতারা যত লাশ
বর্তমানে -চারিয়বারাদে তার থ'ছে ইতিহাস।


০৩.
তুমি ছাড়া কৃষ্ণকে তো আমি চিনতাম না হে রাধা
তোমার অন্তরপথে হেঁটে হেঁটে তার ঘরে যাওয়া
উঠার বারান্দা যদি আমাকে না চিনে চেয়ে থাকে
তখন প্রবোদ দেই, তুমিও তো পধরুদ্ধকালে
চেনো নাই তাকে, ডাকাতের বেশ ধরে যে তোমার
সব কেড়ে নিল, সবকিছু নিয়ে এসে সে তোমার
ভেতরেই জন্ম নেয়, আর তাকে জন্ম দিতে দিতে
রচিলে তারই সাথে অভিসার মিলন বিরহ...

নিজের সাথে আমার বিরহ মিলন অভিসার
শুধু এই ধুলি-মাটি-হিসাবের সংসারে হে রাধা
দূরকৃষ্ণকে আমার সাজালে এ হৃদয়মন্ডপে
চিনি আমি, তোমার ঐ হাতে তার পরশি চরন
তুমি হলে গোপীচান আমি হই হরিনারায়ণ।

≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈
তি ছাড়া কৃষ্ণরে মিতে নাউ চিনলু অউস হে রাধা
তোর অন্তরর পথে আতে আতে তার গরে যানা
উঠান মাংকল নাচিনিয়া চেয়া থাইলে মরে
দেউরি প্রবোধ -তিয়ৌ পথরুদ্ধকালে তারে নাউ
চিনেছিলে, ডাকাইতগো মালুয়া যেগই হাবি তোর
কারুনিয়া নিলগা, তা হাবিতানো আয়া বারো তোর
বিতরেই নেরগা জরম, তার জন্ম দিতে দিতে
রচিলে তি তার লগে অভিসার মিলন বিরহ...

নিজর লগেই মোর বিরহ মিলন অভিসার
হুদ্দা এরে ধুলি মাটি হিসাবর সংসারে তি রাধা
দুরিপা কৃষ্ণরে মোর হাজয়িলে হৃদয়মান্ডপে
মি তারে চিনুরি, দোর আতলো তার সকুরি চরণ
দি ইলে গোপীচান অউরি মি হরিনারায়ণ।

________________________________________________
শুভাশিস সিনহা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার কবি, গণ্পকার ও নাট্যকার। জন্ম বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলায়। প্রকাশিত গ্রন্থাবলী : ছেয়াঠইগির যাদু(২০০২), সেনাতম্বীর আমুনিগৎতো সেম্পাকহান পড়িল অদিন (২০০৩), নুয়া করে চিনুরি মেয়েক (২০০৫), রবীন্দ্রনাথের রুদ্রচন্ড(২০০৭), মণিপুরী সাহিত্য সংগ্রহ -১ম ও ২য় খন্ড(২০০৭) ইত্যাদি।
সুত্রঃ নুয়া করে চিনুরি মেয়েক, পৌরি, ২০০৮
ছবিঃ বারীন ঘোষের ফেসবুক থেকে
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ২:৩১
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

“বিবেকহীনদের জন্য কিছু প্রশ্ন”

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০

ফেসবুকে দেখি কিছু মানুষ “আপা আপা” বলে চাটুকারিতার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। মনে হয় তাদের আত্মা পর্যন্ত বেরিয়ে যাবে, তবু তারা অন্ধভক্তি ছাড়বে না! প্রশ্ন হলো—আপনারা কি সত্যিই অন্ধ, নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সারজিস আলম : শূন্য থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া একজন স্বপ্নবাজ তরুণ

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৫০


জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের তরুণদের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাংলাদেশের অগণিত তরুণ তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের উদ্দেশ্যে রাস্তায় নামলে সৃষ্টি হয় নতুন উপাখ্যান। বিগত সরকারের আমলের ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির বলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ: সেনাবাহিনী ও এনসিপির পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের প্রেক্ষাপট

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:০৬


শাহাবুদ্দিন শুভ :: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি গত কয়েকদিনে নাটকীয় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে নতুন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি (এনসিপি) এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনুসের বক্তব্যের ব্যাবচ্ছেদ

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ২৬ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৩:২০

আজ সন্ধ্যায় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ শুনলাম। প্রায় ৩৫ মিনিটের এই বক্তৃতা অনেকের কাছে হয়তো ঘ্যানঘ্যানানি আর প্যানপ্যানানির মতো মনে হতে পারে, কিন্তু আমি একজন রাজনৈতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগে বিচার , সংস্কার তারপরেই নির্বাচন

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ২৬ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:২২



জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন এক ঝাক তরুনদের রক্তের উপড় দাঁড়িয়ে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এ জ্বালাময়ী কর্মসুচী দিচ্ছিল , তখন বিএনপির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×