গাড়ীর গ্লাসটা একটু ফাকা থাকলেই হলো। বাইরে থেকে একজন ভিখেরী তার নোংরা ময়লা একটা হাত ভিতরে সেধিয়ে দেবে। আপনি দয়ালু হলে দুই/চারটাকা ধরিয়ে দেবেন। নইলে ঘিনঘিনে হাতটা দেখে গ্লাসটা বন্ধ করে দেবেন। অথবা এদের অভ্যাস বলে ইগনর করবেন। তবে আমি সাধারণত এমন বাড়ানো হাতে কিছু গুজে দেই। তবে ভুলেও ভাববেন না দয়াপরবশ হয়ে দেই। নোংরা, ঘিনঘিনে হাতের স্পর্শ থেকে বাচতে কিছু একটা গুজে দেই। তারপর বেশ দয়ার্ত একটা ভাব নেই। ভিখেরী খুশী, দর্শক খুশী, আমিও খুশী। কিন্তু ভিখেরী ভুলেও বুঝবে না কতটা ঘেন্নার সাথে আমি তার হাতে পাঁচ টাকার একটা কয়েন তুলে দিয়েছি।
নিজেকে উন্মুক্ত করে দিলাম। এটাই সত্যি। ভেতরে ভেতরে আমি এমনই। থুথু দিতে ইচ্ছে করছে, দিন ইচ্ছেমত!
আমাদের দেশে ভুরি ভুরি দাদা সরি দাতা সংস্থা। আমেরিকার ইউএসআইডি, ব্রিটেনের ডিএফআইডি, ইসি, ডানিডা, সিডা, জাইকা। উন্নত সব দেশগুলোর একটা সাহায্য সংস্থা আছে এদেশে। তারা নিজেদের টাকা পয়সা দিয়ে এদেশের মানুষকে সেবা করে থাকে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যাবতীয় অধিকার যেন এদেশের মানুষ পায় তার ব্যবস্থা করে। আমরা তাদের আসতে বলি নাই, কিন্তু তারা দয়াপরবশ হয়ে নিজেদের রাশি রাশি টাকা পয়সা খরচ করে আমাদের জন্য এত এত করছে। বিনেপয়সায় ক্যাপসুল খাওয়াচ্ছে, টিউবওয়েল দিচ্ছে, সড়ক করে দিচ্ছে। আমরা তাদের না ডাকলেও তারা যে কারণে এসেছে এবার তার আরেকটা কারণ ভাবা যায়।
বিভিন্ন দুর্যোগ, দুঃসময়ে আমাদের মত দেশের সরকারের অভ্যাস হলো বিদেশের কাছে সাহায্যের হাত বাড়ানো। বিষয়টা এমন মুলোমুলি পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায় যে ঐ সমস্ত দেশগুলো হয়তো আমি যেমন ভিক্ষুকের নোংরা, গলিত হাতের স্পর্শ এড়াতে কিছু দিয়ে বিদায় জানাই, তারাও তেমনি একটা সাহায্য সংস্থা তৈরী করে আমাদের ভিক্ষুক সরকারের বারংবার প্রসারিত হাতের ছোঁয়া থেকে নিজেদের মুক্ত রাখে।
আমি যখন পাঁচ টাকা ছুড়ে মারি ভিক্ষুককে তখন তাকে মুলত কিনে নেই। একশ টাকা দিয়ে তার হাত দিয়ে পাচার করতে পারি হেরোইনের কোটি টাকার চালান। সাহায্য সংস্থা যখন এদেশে এসে নিজেদের থেকেই নানা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তখন তারাও পারে এদেশে তাদের প্রস্তাবিত ঔষধ টেস্ট করে নিতে। ভিক্ষুক সরকারের সবকটা মন্ত্রীকে কিনে নিতে পারে কয়েকটা বিদেশ ট্যুর ও মাগীবাজীর অফারে।
এদেশে এত বৎসর পর্যন্ত সাহায্য সংস্থাগুলো কাজ করে কেবল একই পুকুর বারবার কেটেছে। নতজানু হয়েছে সরকার, কর্মকর্তারা হয়েছে বিদেশীদের বংশবদ। উন্নত বিশ্বের সাহায্য সংস্থাগুলোতে কয়েকজন দেশী স্টাফকে সরকারী কর্মকর্তাদের চেয়ে দশগুন বেশী বেতন দিয়ে রেখে কিছু উন্নত লেহনকারী তৈরী করেছে। এমন সংস্থাগুলোর কোথাও একজন ড্রাইভারের বেতনও ৩০/৪০ হাজার টাকার বেশী। অথচ কেবিনেট ডিবিশনের সেক্রেটারীর বেতনও চল্লিশ হবে না। প্রায় ত্রিশটার মত সাহায্য সংস্থার ৫/৬ হাজার স্টাফের যে পরিমাণ বেতন সরকারী কয়েক লাখ প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার বেতনও তত হবে না। অথচ দেশের মানুষের সত্যিকারের সেবা কেবল এই সরকারী প্রশাসন যন্ত্রইকরতে পারে। তারমানে একদল বংশবদ দেশীয় ভৃত্য তৈরী করে এদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতাধরদের মধ্যে সর্বদা দাতার ভূমিকা বজায় রেখে ভিক্ষুক দেশের বারবার নোংরা ভিক্ষাবৃত্তি থেকে উন্নতবিশ্ব গুলো মুক্ত থাকার দারুন কৌশল খাটিয়েছে। সাহায্য-ফাহায্য সবই চলে যায় বিশাল হা করা কুমিরের পেটে।
এদেশ থেকে এসমস্ত দাতা সংস্থাগুলোকে অনতিবিলম্বে লাথি মেরে বের করে দেয়া উচিত। আমাদের সাহায্যের দরকার নেই। আমাদের প্রতিষ্ঠান তৈরী হবে রিসোর্স ডেভলপমেন্টের জন্য, আধুনিক আইন প্রণয়নের জন্য, ই-গর্ভনেন্সের জন্য, প্রোডাক্ট, ইন্ড্রাস্টি ডেভলপমেন্টের জন্য। সেখানে বিদেশী রিসোর্স দরকার হলে আমরা ঠিক করবো কোন দেশ থেকে ট্রেইনার আনবো, কোন দেশ থেকে প্রযুক্তি আনবো। এখন যা হচ্ছে ঐ বিদেশী দাতারা আমাদের বলে দিচ্ছে তোমাদের আধুনিক কমিউনিকেশন ইনফ্রাশটাকচার দরকার, এই নাও আমরা করে দিচ্ছি তোমাদের ওয়েবসাইট, ডাটাবেইজ, সাজিয়ে দিচ্ছি সংসদের ওয়েব, প্রতি কার্যদিবসের ফাইলগুলো এভাবে রাখো, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো যেমন ধরো রাষ্ট্রীয় স্পর্শকাতর বিষয়গুলো এভাবে সেভ করতে হবে। বলে দিচ্ছে ইউএনডিপির সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প। যারা কাজ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও। আমদের দরকার নেই এসব সাহায্য। লাথি মেরে বের করে দিতে হবে। আমাদের প্রয়োজন বোধ করতে হবে আমাদের। প্রয়োজনে এদেশের মানুষ বাইরে থেকে ট্রেনিং নিয়ে আসবে, দেখে আসবে - কিন্তু আমাদের উপরে এক্সপেরিমেন্ট চালাবার সুযোগটা বন্ধ করে দিতে হবে চিরতরে।
এত শত সাহায্য সংস্থার বাৎসরিক বাজেট হিসাব করে দেখেন - এদেশের সরকারের উন্নয়ন খাতেও এত থাকে না। সকল সাহায্য সংস্থাগুলোকে অনতিবিলম্বে বহিস্কার করা হোক দেশ থেকে। জয় বাংলা।