যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে আমাদের সোচ্চার থাকতে হবে এ বিষয়ে কারো কোন সন্দেহ নেই। গতকাল ছবির হাঁটে ব্লগাররা সমবেত হয়েছিল তাদের এমন সংকল্প উচ্চারণের জন্য এবং কিভাবে সোচ্চার থাকা যায় তার কর্মপন্থা নির্ধারণে। উপস্থিত ৩০ জন ব্লগার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সশরীরে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্যম্পেইন পরিচালনা করতে এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলা ভাষার সবকটি ব্লগ কর্তৃপক্ষ ব্লগারদের এই উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ততা ঘোষণা করবেন।
সমবেত ব্লগাররা সর্বসম্মতভাবে যে সমস্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা হলোঃ
১. যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে একটা গণসাক্ষর কর্মসূচী পরিচালনা করা হবে। এই সাক্ষর সংগ্রহ মূলত প্রতীকি একাত্মতা প্রকাশ হলেও এর সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে প্রতিজন সাক্ষরকারীর কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীকে পৌঁছে দেয়া যায় এবং মনস্তাত্ত্বিকভাবে সাক্ষরকারী নিজের দাবীর বিষয়ে সচেতন হতে পারেন যা তাকে অন্য আরেকজনকে সচেতন করতে অনুপ্রাণিত করে।
ক. গণসাক্ষর সংগ্রহের জন্য একটা ফর্ম আজকের মধ্যে তৈরী ও বিতরণ করা হবে। এই ফর্মটি বিভিন্ন ব্লগ কর্তৃপক্ষ তাদের সাইটে ডাউনলোডযোগ্য হিসাবে উপস্থাপন করবেন।
খ. একটা গণসাক্ষর ফর্মে দশজনের সাক্ষরের ব্যবস্থা থাকবে এবং প্রতিটা ফর্মের শেষে সংগ্রহকারী সাক্ষরসহ তার নাম ও পরিচয় লিপিবদ্ধ করবেন।
গ. গণসাক্ষর ফর্মে কলম দিয়ে সাক্ষর করতে হবে এবং ফর্মটির হার্ড কপি পাঠাতে হবে স্ব স্ব ব্লগ কর্তৃপক্ষের অফিসে বা তাদের নির্ধারিত কোন একটা ঠিকানায়। কোন ধরণের স্ক্যান্ড সিগনেচার ও সফট কপি পাঠাবার দরকার নেই।
ঘ. আগামী ৯ই জানুয়ারী সকাল দশটা থেকে বাণিজ্য মেলায় উন্মুক্ত সাক্ষর গ্রহণ কার্যক্রম চালানো হবে। ব্লগার শফিকুল বাণিজ্য মেলার এই কর্মসূচীর বিস্তারিত জানিয়ে একটা পোস্ট দেবেন ৬ তারিখ। তিনি ব্যানার ও ফর্মও প্রস্তুত রাখবেন। ব্লগাররা সকাল দশটা থেকে সেখানে সমবেত হবেন এবং সারাদিন ব্যাপী এই কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে।
২. ব্লগাররা পর্যালোচনা করেছেন যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আইনের দিকটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং ব্লগারদের আইন বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকা অপরিহার্য্য। সেজন্য আইন অবহিতকরণের জন্য বিভিন্ন ফোরামে এ যাবত উত্থাপিত ও পর্যালোচিত আইন ও প্রবন্ধ সংকলন নিয়ে একটা বই ও অন্য আরেকটা বুকলেট প্রকাশ করা হবে।
ক. বইয়ের জন্য যাবতীয় আইনগুলো সংকলিত করবেন ব্লগার একরামুল হক শামীম। নানাবিধ তথ্য, উপাত্থ এবং পেপারকাটিং এর জন্য জন্য অমি রহমান পিয়াল, জেনোসাইড বাংলাদেশ ও অন্যান্য আর্কাইভ ব্যবহার করা হবে।
খ. বুকলেট হবে অল্প কয়েক পৃষ্ঠার, যা বিনামূল্যে বা মাত্র নামমাত্র মূল্যে প্রদান করা হবে।
গ. এই উভয় সংকলন প্রস্তুত ও সম্পাদনার জন্য লোকাল টককে অনুরোধ করা হবে।
ঘ. বই ও বুকলেটের জন্য আনুমনিক ৩০ হাজার টাকার একটা ফান্ড প্রয়োজন হবে। এজন্য আগ্রহীদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
৩. পোস্টারের প্রয়োজনীয়তার কথা ব্লগাররা বলেছেন তবে শেখ হাসিনার ভাষণ উদ্ধৃত পোস্টার কতটুকু পাঠযোগ্য হবে এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করা হলে একটা চমৎকার, নান্দনিক পোস্টার তৈরীর বিষয়ে আরো মতামত গ্রহণের কথা বলেছেন ব্লগাররা। কেউ কেউ বলেছেন সাক্ষর কর্মসূচীতে অংশ নেবার আহবান সম্বলিত পোস্টার হতে পারে। এছাড়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের ৫.১ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত “সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ শক্ত হাতে দমন করা হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করা হবে" কে জনসাধারনে প্রচারের জন্য পোস্টার হতে পারে। ব্লগাররা এ বিষয়ে আরো মতামত প্রদানের জন্য ব্লগারদের আহবান জানিয়েছেন।
৪. যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে আরো অসংখ্য ফোরাম, ফেসবুকের গ্রুপ সক্রিয়। এ সমস্ত উদ্যোগের সাথে সমন্বয় সাধণের জন্য এবং সাক্ষর কর্মসূচিতে সহযোগী হিসাবে রাখার জন্য ব্লগারা উদ্যোগী হবেন। এ কাজের জন্য ব্লগারদের মধ্যে স্বতস্ফূর্তভাবে নাম চাওয়া হচ্ছে।
৫. সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে পরিচালিত এই ক্যাম্পেইনকে বেগবান করার জন্য উপস্থিত ব্লগাররা বিভিন্ন দৃষ্টিকোন পর্যালোচনা করে বিচারের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক পোস্ট দেবেন। একাত্তুরের যুদ্ধে নির্যাতিত নারী ও শহীদদের আত্মত্যাগকে মাথায় রেখে এ ধরণের কোন পোস্টে অশালীন আক্রমণ ও পারস্পরিক অবমাননাকে উপস্থিত ব্লগাররা অত্যন্ত উদার ও সহনশীলতার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করবেন। ব্লগাররা বলেছেন যুদ্ধাপরাধ বিচারের দাবীকে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় ছড়িয়ে দেবার জন্য আমাদের পারস্পরিক ঐক্য বজায় রাখা সর্বাগ্রে প্রয়োজন।
৬. এমন একটা উদ্যোগকে আরো বেশী মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য মিডিয়াকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। ব্লগার মেজবাহ য়াযাদ সহ আরো উৎসাহীদের এ বিষয়ে সম্পৃক্ত হবার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে আয়োজিত সভায় উপস্থিত ব্লগারবৃন্দঃ
দাদুভাই, মারুফ হোসেন, আনিস সিজার, পথিক, শরৎ, সামী মিয়াদাদ, চৌধুরী ইশতিয়াক সাদমানী, মেসবাহ য়াযাদ, শেরিফ, যীশূ, জুবেরী, আহসান হাবিব শিমুল, অন্তিম, রাসেল....., অমি রহমান পিয়াল, বাপ্পাদিত্য, শওকত হোসেন মাসুম, জটিল, বৃত্তবন্দী, ভাস্কর চৌধুরী, জামাল ভাস্কর, নামহীন, মীতু, মিশু মিলন, শফিকুল, আরিফুর রহমান, স্বপ্নের ফেরীওয়ালা, একরামুল হক শামীম, লাল দরজা, কৌশিক
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:০৬