এইখানে পাইবেন মুক্তিযুদ্ধে জামাতের ভূমিকা নিয়া তার লেখার পিডিএফ
মওলানা আবদুল আওয়াল আলেম মানুষ। উনার একখানা দারুণ বই আছে ‘জামাতের আসল চেহারা’ নামে। তো একবার এলাকার জামাত কর্মীরা আসছেন মওলানারে দাওয়াত দিতে। তার নিজের মুখেই শোনা যাক :
১৯৮৬ সালের জানুয়ারি মাসের এক শুক্রবার বিকেলে তিন/চারজন যুবক আমার বাসায় আসে। দরজা খুলতেই তারা বলে, আপনার সাথে আমাদের কিছু কথা আছে। তাদের মধ্যে আমার সামনের বাসার একজন ছেলেও আছে। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। মেধাবী ছাত্র। ব্যবহারও অমায়িক। ঘরে বসার পর পরিচিত ছেলেটি সবার সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল। সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল ভাল বিষয়ে পড়ে। এরপর একটি ছেলে বলল, আমরা আপনাকে দাওয়াত দিতে এসেছি। ভাবলাম কোনো অনুষ্ঠানে বোধহয় যাওয়ার জন্য দাওয়াত নিয়ে এসেছে। বললাম, কোথায়। একজন বলল, ইসলামের দাওয়াত দিতে এসেছি। ইতিমধ্যে আমি ব্যাপারটা আঁচ করে ফেলেছি। বললাম, তোমরা কি আমাকে মুসলমান মনে করো না? আমার এ কথায় তারা একটু বিব্রত হয়ে পড়ল। একজন বললো, জামাতে ইসলামীর দাওয়াত। বললাম, তাই বলো। এ কথাটা আগে বললে তো আর এত কথা বলতে হতো না। তোমরা বোধহয় আমাকে চিনো না, চিনলে আসতে না। একজন বললো, না আপনাকে আমরা চিনি। জেনেশুনেই এসেছি। ইসলামের দাওয়াত আমরা সবাইকেই দিচ্ছি। বললাম, আবারো গোলমাল করে ফেললে। ইসলাম আর জামাতে ইসলামীকে এক করে ফেললে। আমরা কিন্তু ইসলাম আর জামাতকে এক মনে করি না। ইসলাম আমাদের ধর্ম আর জামাতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক সংগঠন। সে যাই হোক, তোমরা ছেলেমানুষ। কথা বাড়ানো ঠিক নয়। ইসলাম প্রচারের ব্যাপারে তোমাদের আন্তরিকতা সম্পর্কে আমার কোনো সন্দেহ নেই। তবে তোমাদের নেতাদের আন্তরিকতা সম্পর্কে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমি মনে করি তোমাদের নেতারা পবিত্র ইসলামকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।
তারা কি যেন বলতে যাচ্ছিল। বলার সুযোগ না দিয়ে বললাম, তোমাদের নেতাদের সম্পর্কে সন্দেহমুক্ত হলে কালই আমি তোমাদের দলে যোগদান করব। তবে এজন্য তিনটি বিষয়ে তোমাদের নেতাদের স্পষ্ট বক্তব্য এনে দিতে হবে। তারা জিজ্ঞেস করলো, সেগুলো কি কি? বললাম, প্রথমে আমার দেশের কথাই বলছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, এটা কি আল্লাহতায়ালার ইচ্ছের বিরুদ্ধে হয়েছে, না তার ইচ্ছানুযায়ী হয়েছে? তারা বললো অবশ্যই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে। তাহলে তোমরা আমার সঙ্গে একমত হবে, মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা বা সমর্থনকারীরা আল্লাহর ইচ্ছের বিরোধী কাজ করেছে। এ কথাটি তোমাদের নেতাদের স্বীকার করতে হবে। বলতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করেছি।
আচ্ছা ইসলামে কি শোষণমুলক অর্থনীতি অনুমোদন করে, নাকি শোষণমুক্ত অর্থনীতি? নিশ্চয়ই ইসলাম শোষণমূলক অর্থনীতি অনুমোদন করে না। আর ধনতন্ত্র হচ্ছে শোষণমূলক অর্থনীতির ফলশ্রুতি। সুতরাং ধনতন্ত্র বা পুজিবাদের বিরুদ্ধে তোমাদের নেতাদের স্পষ্ট বক্তব্য থাকতে হবে।
আমার তৃতীয় বিষয়টি হলো- গণতন্ত্র। তোমাদের কি মত- ইসলাম কি গণতন্ত্র সমর্থন করে, না রাজতন্ত্র? তারা বললো ইসলামে রাজতন্ত্রের কোনো অবকাশ নেই। বললাম বেশ ভালো কথা। তোমাদের নেতাদের বক্তব্যে এই কথাটা থাকবে যে ইসলাম রাজতন্ত্র সমর্থন করে না। মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত প্রভৃতি দেশের রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ইসলামবিরোধী রাষ্ট্রব্যবস্থা। এই তিনটি ব্যাপারে তোমাদের নেতাদের বক্তব্য যত তাড়াতাড়ি আনতে পার, তত তাড়াতাড়ি আমাকে তোমাদের দলের একজন কর্মী হিসেবে পাবে। শুধু তাই নয়, আমি তাদের বক্তব্য অর্থ ব্যয় করে হলেও সংবাদপত্রে ছাপার ব্যবস্থা করব। তারা বলল, এটা এমন কিছু নয়। আমরা আগামীকালই নিয়ে আসব। বললাম, যখনই আনো তখনই আমাকে তোমরা তোমাদের একজন হিসেবে পাবে। ছেলেগুলো চলে গেল, কিন্তু আজো তারা ফিরে আসেনি।
এ হচ্ছে জামাতিদের ইসলামের প্রতি আন্তরিকতার একটি দৃষ্টান্ত। আমি জানি জামাত নেতারা এই তিনটি বিষয়ে কোনোদিনই সত্যিকার ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে অভিমত দিতে পারে না। কারণ, মুক্তিযুদ্ধে তাদের অপরাধ তারা কখনো স্বীকার করবে না। তাদের আয়ের উৎস আরবের পেট্রোডলারসমৃদ্ধ রাজতান্ত্রিক দেশগুলো সম্পর্কেও তারা টু শব্দ করবে না। কারণ তাতে হালুয়া-রুটি বন্ধ হয়ে যাবে। অনুরূপ অর্থনীতির ব্যাপারেও একই কথা। যারা কায়েমী স্বার্থে পবিত্র ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, তারা আর যাই হোক, শোষণমুক্ত অর্থনীতি সমর্থন করতে পারে না।
প্রায় চার বছর আগের পোস্ট রিপোস্ট হলো