১৯০৬ সালে ভারতীয় মুসলমানদের রাজনৈতিক সংগঠন মুসলিম লীগের জন্ম উপমহাদেশের ইতিহাসের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ভারতের মুসলমানদের মধ্যে স্বাতন্ত্র্যবাদী মনোভাব থেকেই এর প্রতিষ্ঠা।
উপবিংশ শতাব্দীর উগ্র হিন্দুবাদী কার্যকলাপ ও মুসলিম স্বার্থ-বিরোধী তৎপরতা মুসলমানদের স্বাতন্ত্র্যের দিকে ঠেলে দেয় এবং ক্রমশ নিজেদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ও স্থার্থ রক্ষার তাগিদে তারা পৃথক রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তা করে কেননা ইসলামের বিভিন্ন দিকই মুসলমানদের এসব কিছু পূরণ করতে পারে যা অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের কাছ থেকে মুসলমান জাতি কোন অংশেই পাননি। বরং উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে আরো কতিপয় ঘটনা মুসলমানদের মধ্যে পুনর্জাগরণের চেতনাকে শাণিত করে।
বেনারসে ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে হিন্দী-উর্দু বিতর্ক, হিন্দুদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় উৎসবাদির আয়োজন, যেমন-নবগোপাল মিত্রের হিন্দু-মেলা ও শিবাজী উৎসব, উত্তর ভারত জুড়ে গো-জবাই নিবারণ সমিতি ইত্যাদি ভারতীয় মুসলমানদের ধর্মীয় ও সম্প্রদায়গত চেতনাকে আহত করে।
এছাড়া ইংরেজী শিক্ষা গ্রহন না করে এবং ইংরেজ বিদ্বেষ পোষন করে এ সময় মুসলমানরা শিক্ষা-দিক্ষা এবং চাকুরীসহ সর্বক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়েছিল। মুসলমানদের এ দৈন-দশা তাদেরকে অস্তিত্ব রক্ষায় অনুপ্রাণিত করে।
যুক্ত প্রদেশের লেফটেনেন্ট গর্ভনর ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলের দিকে কতিপয় বিশেষ সরকারী কাজে উর্দুর বদলে দেবনাগরী হরফে হিন্দি ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দিলে সেখানকার মুসলমানরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। প্রতিবাদে ১৮ আগস্ট লক্ষৌতে মুসলমান প্রতিনিধিরা সভা ডাকে। গঠিত হয় "উর্দু প্রতিরক্ষা সমিতি"।
১৯০১ সালে আরেকটি সভায় মুসলমানদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার জন্য একটি জাতীয় সংগঠন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
১৯০৩ সালের জুলাই মাসে উত্তর প্রদেশে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে কিছুটা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দিলে সাহারানপুরের এক জনসভায় ভারতের মুসলমানদের জন্য একটি কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার দাবি উঠে।
১৯০৫ সালে নবগঠিত পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা অধিকতর সুযোগ সুবিধার আশায় নতুন প্রদেশ গঠনের সরকারী পদক্ষেপকে সমর্থন জানায়। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায় ও কংগ্রেসের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী সর্বাত্মক আন্দোলন এ অঞ্চলের মুসলমানদেরকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
তারা নিজেদের জন্য একটি রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা এ সময় আরো বেশি উপলব্ধি করে।
পরবতী বছরের জুলাই মাসে বৃটিশ পার্লামেন্টে এক বক্তৃতায় ভারত সচিব লর্ড মর্লে ভারতের জন্য শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের উদ্যোগের কথা ব্যক্ত করেন। এ সময় মুসলমান নেতৃবৃন্দ তাদের অনুভূতি ও বক্তব্য সরকারের কাছে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করেন।
এজন্যে ১৯০৬ সালের ১লা অক্টোবর ৩৫ সদস্যের মুসলিম প্রতিনিধিদল আগা খানের নেতৃত্বে সিমলায় ভাইসরয়ের সাথে দেখা করে মত বিনিময় করেন। ইতিহাসে একেই ""সিমলা ডেপুটেশন"" বলা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১০ রাত ১:২৫