একটি ছোট শিশু এতো দৌড়াদৌড়ি, ছুটোছুটি করার পরও খুব সহজে ক্লান্ত হয়না। কিন্তু শিশুর চেয়ে আপনি অনেক শক্তিশালী হওয়ার পরও ক্লান্ত হয়ে পড়েন কেন? এর কারণ হলো- শিশুর স্ট্রেস লেভেল জিরো। আর তার প্রয়োজনীয় কোয়ালিটি সম্পন্ন ঘুমের লেভেল খুবই ভালো। এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় - ভিডাইস আসক্তি যে শিশুর যত বেশি - তার কর্মস্পৃহা তত কম। "বিয়ন্ড ম্যাডিসিন" প্রোগ্রামে স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় জীবনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ তিনটি টিপসের উল্লেখ করা হয়েছে। দয়া করে একটু ধৈর্য্য ধরে পড়ি।
স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় প্রথম টিপস হলো ঘুম। আর দৈনিক কত ঘন্টা ঘুমাবেন এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কত কোয়ালিটি সম্পন্ন ঘুমাবেন। কেউ পাঁচ ঘন্টা ঘুমিয়ে সজীবতা নিয়ে জেগে ওঠে। কেউ নয় ঘন্টা বিছানায় থেকেও তার ক্লান্তুি দূর হয়না। কারণ- বিছানায় শুয়ে থাকা আর ঘুমানো এক কথা না। নেটওয়ার্ক ওয়ার্ল্ডের এক প্রতিবেদন খুবই ভয়ঙ্কর তথ্য ওঠে এসেছে। মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডিভাইস। " Spending too much time with the blue-tinted screens creates sleeping problems. That lack of sleep can cause diseases, even death" । আর ইনসমনিয়ার অন্যতম কারণ আপনার স্মার্ট ফোন। মানুষ রাত বারোটা বাজে অন্যের স্ট্যাটাস পড়ে রাত কাটায় আর নিজের স্ট্যাটাসের বারোটা বাজায়।
প্রয়োজনীয় ঘুমের অভাবে মানুষের মাঝে ডায়াবেটিকস, ক্যান্সার, ব্লাড প্রেসার, ইনফ্লেমটরি জনিত রোগ বাড়ছে। সাধারণতঃ যে কোনো ফ্যাটি খাবার খেলে শরীরে খারাপ কলস্টেরল জমা হয়ে ব্লক তৈরি করে। এইচ ডি এল নামক শরীরে একটা ভালো কলস্টরল থাকে। এটা হলো ব্লক ক্লিন রাখার জন্য বিধাতার দেয়া বিনামূল্যে পাওয়া কর্মচারী। শরীরের অতি প্রয়োজনীয় এই ভালো কোলস্টেরলটি কিন্তু শুধুমাত্র ভালো খাবার খেলেই পাওয়া যায়না। যদি পাওয়া যেতো তবে পিল বানিয়ে খেয়ে ফেলা সহজ হতো। শরীরের নিজস্ব মেকানিজমে এই ভালো কলস্টরলটি শরীরে তৈরি হয়। আর যে মেকানিজম এটা শরীরে তৈরি করে তা হলো কোয়ালিটি সম্পন্ন ঘুম। আপনি প্রতিদিন ঘুমের অবহেলা করছেন তার মানে একটু একটু করে শরীরে বিষ তৈরি করছেন। আর ভালো কলস্টরলটিকে এই বিষ ক্লিন করার কাজে লাগাচ্ছেন না। মানে দুভাবেই নিজের শরীরের ক্ষতি নিজেই করছেন।
আপনি রাত জাগেন ভালো কথা। কিন্তু সকালে যদি প্রয়োজনীয় ঘুম ঘুমাতে পারেন। তবে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু জীবিকার প্রয়োজনে আপনাকে জাগতে হচ্ছে। আপনাকে ছুটতে হচ্ছে। ফলে, দেহের পূর্ণ বিশ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় ঘুম ঘুমাতে পারছেন না। মানুষ যখন ঘুমায় তার শরীরে সমস্ত প্রদাহ স্বয়ঙক্রিয় ভাবেই দূর হয়ে যায়। ঔষধ খান, পিল খান যা কিছুই খান না কেন যদি ভালো ঘুম না হয়। তবে আপনার শরীর কোনো ভাবেই হিল হবেনা। জগতের সমস্ত প্রাণীকুল তার নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমায়। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে জাগে। কিন্তু একমাত্র মানুষই প্রকৃতির বিরুদ্ধে যায়। নিজের দেহের উপর সে নিজেই অত্যাচার চালায়।
দুই নাম্বার টিপস হলো জীবনে শৃঙখলা। সুস্থ শরীরের জন্য মানুষ বিভিন্ন রকমের সুপার ফুডের লিস্ট গুগলে খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু শরীর গুগল অনুযায়ী চলেনা। শরীর চলে ডিসিপ্লিন অনুযায়ী। সেল্ফ ডিসিপ্লিনের উপরেই নির্ভর করে -আপনি মোটা হয়ে যাচ্ছেন না কি শুকিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আগলি থ্রুত হলো এই ডিসিপ্লিনটা সবাই মানতে চায়না। কারণ- যে কোনো কাজ শুরু করে দেয়া সহজ। এটা মেইনটেইন করাটাই কঠিন। আপনি জিমের মেম্বার হলেন, ট্রেডমেল কিনলেন, ভোরে একদিন দৌড়ালেন-এগুলো খুবই সহজ। কঠিন হলো এটা মেইনটেইন করে চলা। আরনল্ড শোয়ার্জনেগারের ছবি আপনার দেয়ালে শোভা পাচ্ছে- এর মানে এই না আপনি আরনল্ড হয়ে যাবেন।
একটা সমুচা খেয়ে হিসাব করলেন-এতে ৫০০ ক্যালরি আছে। এখন এই ৫০০ ক্যালরি বার্ণ করতে হবে। শরীর যেমন গুগল অনুযায়ী চলেনা। ঠিক তেমনি ম্যাথের প্রিন্সিপাল অনুযায়ী ও চলেনা। খাবার পছন্দ করেন। খান। তবে বেপরোয়া না। সবকিছু পরিমিত। আপনার ধন আছে, ক্ষমতা আছে, শক্তি আছে। তাই, নিজের ইচ্ছমতো লাগামহীন চললে-একসময় এর জন্য জীবন দিয়ে টোল দিতে হয়। বুঝার আগে সবকিছু ভস্ম হয়ে যায়। ইগোতে জীবন চলেনা। জীবন চলে শৃঙখলায়। আর এই ডিসিপ্লিন শুধু এক দিন, এক সপ্তাহ কিংবা এক বছরের জন্য না। এটা প্রতিদিনের দাঁত ব্রাশের মতো। পুরো জগৎ চলছে এক মহা শৃঙখলায়। আমরাতো এই জগতেরই অংশ। তাই, শৃঙখলা না থাকলে শুধু দেহের গণ্ডগোল না, পরিবার-সমাজ এমনকি রাষ্ট্রের মাঝেও গণ্ডগোল তৈরি হয়।
তিন নাম্বার টিপস হলো মানসিক শক্তি । নব্বই ভাগ অসুস্থতা মানুষের মন থেকেই শুরু হয়। শত শত কেইস এসেছে- যেখানে আতঙকগ্রস্থ মানুষ করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে ভয়েই হার্ট এ্যাটাকে মারা গেছে। মানুষের মাইণ্ডসেট তাই খুবই পাওয়ারফুল একটা টুল। পৃথিবীতে সমস্যা নাই এমন একজন মানুষ নাই। চিন্তা হলো বহমান নদীর মতো। প্রবাহমান নদীতে যেমন স্রোত আছে- জীবনেও তেমনি চিন্তা থাকবে। চিন্তাকে দূর করেও রাখা যাবেনা। আটকে রাখাও যাবেনা। সমস্যা আছে মানে চিন্তা আছে। আর চিন্তা আছে মানে স্ট্রেস ও আছে। কিন্তু এই সমস্যাকে ফেস করার ক্ষমতাও একেক মানুষের একেকরকম। অনেক আগে লেখা এক রেস্টুরেন্টের ভিতর একজনের গায়ে পড়া টিকটিকি তত্ত্বটির উদাহরণ এখানে দেয়া যেতে পারে। কারো গায়ে টিকটিকি পড়লে কেউ অতি স্বাভাবিক ভাবেই এটাকে মোকাবিলা করে। আর কেউ ভয়ে আতঙ্কে সবকিছু একেবারে তালগোল পাকিয়ে দেয়।
স্ট্রেসকে যত বেশি পারা যায় ডিটাচ করে রাখতে হয়। আর ইমোশনাল স্ট্র্যাংথকে এটাচড করে রাখতে হয়। কিছুদিন আগে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে বাংলাদেশি এক গবেষক সুইসাইড করে। এরপর আমি গুগল করে দেখলাম অনেক হার্ভার্ডে পড়ুয়া ছাত্ররাও সুসাইড করছে। যে লেভেলে গিয়ে ওরা সুসাইড করে, সেখানে পা রাখতে পারাটাই লাখো লাখো ছাত্রের জীবন স্বপ্ন হয়ে আছে।
ক্ষুধা, বাসস্থান, পরিধানের জন্য এরা সুইসাইড করেনা। প্রাপ্তির সাথে কোন একটা না মিললেই মানুষ যখন মনে করে আমার সব আইডেন্টিটিতো মুছে গেলো, আমার সোসাল স্ট্যাটাসতো বিপন্ন হয়ে গেলো, তখনই শুরু হয় মানুষের ডিপ্রেশন। আর এই ডিপ্রশন যখন মানসিক শক্তিকে কাবু করে ফেলে তখনই মানুষ সুইসাইড করে। যাবতীয় স্ট্রেস থেকে মুক্তির সবচেয়ে পাওয়ার ফুল একটা টুল হলো ইস্পাত কঠিন বিশ্বাস। আমি ন্যায়নিষ্ঠ, ধর্মনিষ্ঠ, কর্মনিষ্ঠ থাকলাম- এখন আমার সমস্যা থেকে উত্তোরনের ভার আমার বিধাতার। সমাজে আমার সম্মান যদি বাড়ে তাও আমার রবের ইচ্ছে। যদি আমার সম্মান নাও বাড়ে। তাও আমার রবের ইচ্ছে। সুরা আল ইমরানের আয়াত ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারী লোকদেরকে ভালবাসেন।’ মানসিক শক্তি বাড়াতে এর চেয়ে বড় কার্যকরী কোনো ঔষধ আর নেই।
আসুন সুস্বাস্থ্যের জন্য এই তিনটি টিপস নিজেরা পালন করি এবং প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করি।