somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকান ভোট কেন্দ্রে এগারো মিনিট

০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"আমেরিকান ভোট কেন্দ্রে আমার এগারো মিনিট"

ভোট শুরু হয়েছে গত একমাস থেকে। কেন্দ্রে গিয়েও ভোট দেয়া যায়। আবার ঘরে পাঠানো ব্যালট পূরণ করেও ভোট দেয়া যায়। ভোট কেন্দ্র সাত দিনই খোলা। ঘরে পাঠানো ব্যালট পুরণ করে রেখেছিলাম। কিন্তু গত রবিবার বিকেল পাঁচটার দিকে গ্রোসারি কিনতে গিয়ে দেখি ভোট কেন্দ্রের সামনে তেমন একটা লাইন নাই। গাড়ি পার্ক করেছি- দেখি এক বৃদ্ধাও গাড়ি পার্ক করে নামছেন। হেসে বললেন- ভোট দিবা নাকি?
বললাম - জ্বি।
উনি বললেন- চলো। মহিলা আমার আগে। আমি পিছনে।
বৃদ্ধা নিজে গাড়ি চালিয়ে ভোট দিতে এসেছেন। এ দেশের বৃদ্ধ মানুষদের যত দেখি তত অবাক হই। ছবির এই বাড়িটি আমার প্রতিবেশীর। উনার বয়সও ৮০ র কম হবেনা। এতো সুন্দর করে পুরো বাড়ি, বাড়ির চারদিকের উঠোন উনি গুছিয়ে রাখেন। বাড়িতে একাই থাকেন। স্বামী মারা গেছেন- প্রায় তিন বছর হলো। ছেলে মেয়েদের নাতি নাতনীদের নিয়ে মাঝে মাঝে উনার বাড়িতে আসতে দেখি।

কয়েকদিন আগে দেখি- উনি আমার উঠোনে এসে নাতিকে নিয়ে পাতা কুড়াচ্ছেন।
আমি বললাম- আমি খুবই দুঃখিত। শনি -রবিবার ছাড়া তো আমি সময় পাইনা। আর আপনার মতো পরিষ্কার করে রাখতেও পারিনা।
উনি হেসে বললেন- কোনো সমস্যা নেই। তোমার পাতাগুলো কুড়িয়ে দিচ্ছি- আমার স্বার্থেই। কারণ- তোমার উঠোনের পাতাগুলো বাতাসে উড়িয়েতো আমার উঠোনে নিয়ে আসবে। তোমার উঠোন সুন্দর থাকা মানে আমারটাও সুন্দর থাকা।
বাহঃ কী সুন্দর ভাবনা। বুঝলাম- চারপাশ সুন্দর না রেখে শুধু নিজে একা সুন্দর থাকা যায়না।

যাই হোক- ভোটের লাইনে দাঁড়ানো দেখে- এক মহিলা একটা ফর্ম আর একটা কলম এগিয়ে দিলেন। শুধু নাম -ঠিকানা-বয়সটা লিখে দিলাম। এরপর, উনি ভিতরে যেতে বললেন। ভিতরে গিয়ে দাঁড়ালাম। আরেকজন এসে আমার ড্রাইভার লাইসেন্সটা সহ ফর্মটা নিয়ে গেলেন। এরপর একজন লোক উনার ডেস্ক থেকে হাতে ওঠিয়ে একটা সাইন দেখালেন- মানে উনি খালি আছেন। উনার কাছে যেতে।

এরকম বেশ কিছু ভলান্টিয়ার ভিতরে কাজ করছেন। বেশ কয়েকজন নির্বাচনের কাজে নিযুক্ত লোকও আছেন। ভদ্রলোক ফর্মটা হাতে নিয়ে কম্পিউটারে নাম-ঠিকানা প্রবেশ করানোর পর বললেন- আপনার কাছে ব্যালট পাঠানো হয়েছিলো। ওঠা কি বাতিল করে দিবো?
আমি বললাম জ্বি, ওটা বাতিল করে দিন।
ধন্যবাদ বলে উনি আমাকে -একটা ডিজিটাল কার্ড দিলেন। লাইসেন্সটা ফেরত দিলেন।

আরেক মহিলা সেই কার্ড নিয়ে আরেকটা রুমে অনেকগুলো ভোটিং মেশিনের একটা দেখিয়ে বললেন- সেখানে গিয়ে একটা শ্লটের ভিতর ডিজিটাল কার্ডটি প্রবেশ করাতে।
আমি চেষ্টা করলাম। কার্ডখানা ঢুকলো না। বেশি চাপাচাপি করলাম না। যদি কোনো কিছু হয়ে যায়।
সাহায্যের জন্য হাত ওঠালাম।
চায়নীজ চেহারার এক মহিলা এগিয়ে আসলেন। উনার বয়সও ৭০/৮০র কম হবেনা। ভোটকেন্দ্রে দেখি আজ বয়ষ্কদের মেলা। ভাবছি ঘরে বসে টিভি না দেখে ভোট কেন্দ্রে এসে ইনারা ভলান্টিয়ার হিসাবে কাজ করছেন। কত স্টিমিনা।
উনি কার্ডটি একটু শক্ত করে প্রেস করে ভিতরে ঢুকালেন। আমি বললাম-সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ।
উনি হেসে বললেন- ভোট দিতে আসার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

ইংরেজি আর স্প্যানিশ ভাষা স্ক্রীনে ওঠলো। জানতে চাইলো- কোনো ভাষায় ভোট দিবো।

প্রেসিডেন্ট , ভাইস প্রেসিডেন্ট, সিনেটর ছাড়াও আরো নানা পদে নির্বাচন হচ্ছে । একের পর এক পছন্দের প্রার্থীদের সিলেক্ট করছি।

এরপর একেবারে শেষের দিকে এসে আমেরিকার নির্বাচনী ব্যালটে একটা নাম দেখে মনটা আনন্দে ভরে ওঠলো। প্রার্থীর নাম- শেখ রহমান। ডিস্ট্রিক্ট ৫ থেকে গতবারের নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশী মুসলিম জর্জিয়া স্টেট সিনেটর। উনার নামের পাশে আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।

সব প্রার্থীদের সিলেক্ট করা হয়ে গেলে- মেশিনের পাশে রাখা প্রিন্টার থেকে ব্যালট বের হয়ে আসলো।

আরেকজন ভলান্টিয়ার একটা স্ক্যানার দেখিয়ে দিয়ে বললেন- ব্যালট টা স্ক্যান করে দিতে। তাই করলাম।
এটা হয়ে যাওয়ার পর-ধন্যবাদ জানিয়ে উনি আমার শার্টের এক কোণায় -" আমি ভোট দিয়েছি"- এরকম লেখা একটা স্টীকার লাগিয়ে দিলেন।

আমি ভোট দিয়ে বের হয়ে আসলাম।

কেন্দ্রের ভিতর কোনো হাউ কাউ ছিলোনা। কোনো চিৎকার , চেচামেচি ছিলোনা। পুলিশ, মিলিটারি, র‌্যাব, ডিসি, ম্যাজিস্ট্রেটদের কোনো ঠহল ছিলোনা। দলবল নিয়ে কোনো প্রার্থীর কেন্দ্রের ভিতর মাতুব্বুরী ছিলোনা। বড় বড় ব্যানারে ভোট কেন্দ্র আচ্ছাদিত ছিলোনা। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার- রিপাবলিকান , ডেমোক্রেটদের এজেন্ট নামক কোনো মাস্তান বাহিনীও কেন্দ্রের ভিতর ছিলোনা।

বাইরে শুধু এক মহিলা একটা কার্ড দিয়ে বললেন- আপনার যদি সময় থাকে তবে এই ফোন নাম্বারে ফোন করে- আপনার ভোট দেয়ার অভিজ্ঞতাটা জানাবেন। আপনাদের ভোট দিতে কোনো রকমের সমস্যা হয়েছে কিনা- এটা জানা আমাদের খুবই দরকার।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫১
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্রিটেনকে জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করল রাশিয়া

লিখেছেন সরকার পায়েল, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪৭

রাশিয়াকে প্রথমবারের মতো ব্রিটেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার নিরাপত্তামন্ত্রী ড্যান জার্ভিস ঘোষণা করেছেন যে ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারের পক্ষে কাজ করা রাশিয়ান এজেন্টদের তাদের কার্যকলাপ নিবন্ধন করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ছোট কালের ঈদ।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৫



ঈদ মানেই ছিল নতুন জামা, নতুন টাকা আর আনন্দের ঝলক। ছোটবেলার সেই ঈদগুলো এখনো স্মৃতির মণিকোঠায় জ্বলজ্বল করে।



আমার নানা সোনালী ব্যাংকে চাকরি করতেন। আমি তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

পিটার প্যান সিনড্রোম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪২


প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও দায়িত্ব নিতে না চাওয়া, বাস্তবতা এড়িয়ে চলা এবং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেকের মাঝেই দেখা যায়। তারা শৈশবের মতো স্বাধীন, নিরুদ্বেগ জীবন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি কি ক্ষমতা কুক্ষিগত করবে না?

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:২২

ক্ষমতায় আসার পরে বিএনপির আচরণ কেমন হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিত ভাবে দেওয়া সম্ভব না। তবে আমরা কারো আচরণ কেমন হতে পারে সেটা তার অতীত থেকে খানিকটা আন্দান করতে পারি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারী

লিখেছেন এসো চিন্তা করি, ০২ রা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:৪৭


"নারী "
এ. কে . এম. রেদওয়ানূল হক নাসিফ

মন খারাপ কেন বসে আছো কেন হতাশ
ওহে আজ নারী তুমি ,
কি হয়েছে তোমার এতো , সবসময় ভাবছো কি এতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×