রাতে বৃষ্টি হবে। চারদিক অন্ধকার করে ঝড় আসবে। আনিস তার ঘড়ের দক্ষিন দিকের জানালা টা বন্ধ করে দিল,জানালা পুরোপুরি বন্ধ হয় না,ছিটকানি ভাঙ্গা।ঘরে সামান্য আলো আছে। সেই আলো ঘড় আরো বেশি অন্ধকার করে দিল।এখন বৈশাখ মাস, ঝড় বৃষ্টির মাস,কাল বৈশাখি হতে পারে। আনিসের মনে পরল, অনেক কাল আগের কথা ঝড় বৃষ্টির রাতে সে তার বাবার গায়ের সাথে লেপ্টে থাকত,তখন বয়স আর কত হবে, চার কি পাঁচ। অথচ কি পরিস্কার মনে আছে। বাবা বলতেন ভয় কিরে ব্যাটা,আমি আছি না, তুই ঘুমা। পরদিন খুব ভোরে আম কুড়াতে যেত। অনেক কাল পরে আজ আবার বাবার কথা মনে পড়ল। তার চোখ ঝাঁপসা হয়ে এল। কত নিশ্চিতেই না বাবার পাশে ঝড়ের রাতে ঘুমানো যেত। অনেকদিন হল এখন আর কেউ সেইভাবে বলে না,ভয় কিসের আমি আছি না।
আনিসের মাথা ব্যাথা শুরু হল। ব্যাথাটা এতক্ষন টের পায়নি, এখন খুব বোঝা যাচ্ছে। ইদানিং তার এই রোগ শুরু হয়েছে। আগে ছিল না,মাথা ব্যাখা হচ্ছে বড়লোকের রোগ, ভুমি অফিসের একজন দ্বিতীয় শ্রেনীর কর্মচারির এই রোগ হবে কেন? অফিসে খুব ঝামেলা হচ্ছে, কয়েকটা ফাইল খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ ওই ফাইল গুলো আনিস খুব যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছে।কাজটা রফিক সাহেবের,আনিসের ধারনা কাজটা উনিই করিয়েছেন। হেসে হেসে একটা মানুষ কিভাবে যে অন্যের ক্ষতি করে!
কখন ঘুমিয়ে পড়ল সে নিজেই জানে না। ঘুম ভাঙ্গল বেলা করে। মাখা ব্যাথাটা এখন আর নেই। সকালের শুভ্র সতেজতা মনে শরীরে আরামদায়ক আলস্য।
আজ মিরাকে কথা দেয়া আছে রাতে তাদের বাসায় খাবে । মিরার মা খুব করে বলেছে যেতেই হবে। আনিস ঘড়ি দেখলো । অনেক বেলা হয়ে গেছে । এ সময় অফিসে যাওয়ার কোনো মানে হয় না । সে বিছানা ছেড়ে বাথরুমে গেল। মুখে দাড়ি গোফেঁর জঙ্গল। মনে হচ্ছে কতদিন সেভ করেনি। তার মনে হল এক রাতে বয়স অনেকখানি বেড়ে গেছে । চোখের নিচে কালি পরেছে।
সে অনেকটা সময় নিয়ে সেভ করল ।তারপর রওনা হলো নিউমাকের্টের দিকে । তাকে কিছু একটা উপহার কিনে দেয়া দরকার । আজ তার বিশতম জন্মদিন ।
ঠিক আটটায় আনিস উপস্থিত হলো । বেল দেয়ার সাথে সাথেই দরজা খুলে গেল । যেন কেউ আগে থেকেই জানত আনিস আসবে । আজ মিরাকে খুব সুন্দর দেখাচচ্ছে । এমনিতেও সে অসম্ভব সুন্দরী । চেহারায় কিশোরী সুলভ লাবন্যতা এখনো পুরোপুরি কাটেনী।
আনিস হেসে বলল শুভ জন্মদিন মিরা। মিরা কিছু বলল না, কেবল হাসলো । আনিস তার পিছু পিছু বসার ঘরে ঢুকল । সেখানে আরো একজন অতিথী আছেন । ভদ্রলোক নিচু স্বরে ফোনে কথা বলছেন । চোখ তুলে দেখলেন আবার ফোনে মন দিলেন । আনিস বসল । মিরাদের এই বসার ঘড়টা অনেক বড় । অনেকটা আগেকার জমিদারদের মত করে সাজানো । এক পাশের দেয়ালো একজন শুভ্র দাড়িওয়ালা লোকর ছবি টানানো । দোতলা বাড়িটাতে শুধু মিরা আর ওর মা থাকেন। আগে দু:সম্পকের এক খালা ও খাকতেন।বাড়ির অনেক ঘড় খালি পরে থাকে । মিরা মা আনিস কে এই বাড়িতে উঠে আসার জন্যে অনেক বার বলেছে ।আনিস আসেনি । একা থাকতেই তার বেশি ভালো লাগে ।
মিরার মা চা নিয়ে আসল । আনিস তাকে খালা ডাকে। আনিস চা নিল, অনেকটা সময় বসে গল্প করল ।মিরা চলে যেতেই খালা ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন । ভদ্রলোকের ডাক নাম জামিল। তিনি দেশের বাইরে থাকেন। এই কয়েকদিন হলো দেশে এসেছেন। এখানেই খাকবেন । সেই সাথে আরও জানা হলো এর সাথেই মিরার বিয়ের কথা ভাবছেন তিনি। আনিস মনযোগ দিয়ে তার কথা শুনছে । তিনি খুব সুন্দর করে গল্প করতে পারেন ।
কিছুক্ষন পরেই আনিস উঠল । তার আর ক্ষুধা নেই । মাথা ব্যাথাটা আবার বোধহয় ফিরে আসবে ।বাইরে বাতাস শুরু হয়েছে । গুরি গুরি বৃস্টিও হচ্ছে । সে পকেট থেকে বেলী ফুলের মালাটা বের করে হাতে নিল । হেটে হেটে বাসায় ফিরতে হবে, রাতে খুব বৃষ্টি হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:১৪